গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)
গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)
পর্ব সাত
ট্রাস্টি বোর্ডের সাথে তপনকিরণ চৌধুরীর যে মামলা কলকাতা হাইকোর্টে চলছিল আগামীকাল তার নিষ্পত্তি হবার সমূহ সম্ভাবনা । দুরু দুরু বক্ষে তপনকিরণ বাবু সপত্নী গিয়েছেন বৈদিক ভিলেজে তাঁর মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ।
প্রথমে তো বিশ্বময়ীদেবী অর্থাৎ তপনকিরণের মাতা ঠাকুরাণী সাক্ষাতের অনুমতিই দিলেন না। তখন অনুপ্রভা দেবী অর্থাৎ তপনবাবুর ধর্মপত্নী যখন কেঁদে কেটে বললেন - মা! আমাদের সর্বনাশ হতে চলেছে । আপনার এই বিশাল সম্পত্তি, ব্যবসা সবই হস্তান্তর হতে যাচ্ছে।
বিশ্বময়ী দেবী বিস্মিত হলেন না। বরং এটাই যে স্বাভাবিক সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে বললেন - দেখ বাছা , যে পিতামাতা কুলাঙ্গার পুত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না ; তাদের ললাটে এই লিখনই আঁকা থাকে । আমি কতবার সাবধান করেছি, তোমরা পাত্তা দাওনি। বয়স হয়েছে বলে ভেবে নিয়েছিলে হয়তো ভুল বকেছি । আজ চোখের সামনে সূর্য্য যখন বেহেড বেহায়ার মত ঘুরে বেড়াচ্ছে; সম্পত্তি তার হাতে চলে যেতে কতক্ষণ?
তার চেয়ে ভালো হবে ট্রাস্টি বোর্ডের হাতে গেলে অগাধ সম্পত্তির কোন সদগতি হবে সেই আশা নিয়েই তো উইল করেছিলাম ।
তপনকিরণ বললেন - কিন্তু মা ! আমরা কি কোনদিন আপনাকে বাড়ি ছেড়ে চলে আসতে বলেছি ?
- প্রকারান্তরে তাই বুঝিয়ে দিয়েছ । দেখ, জগতে আমি আর কতদিন থাকব ? জীবদ্দশায় সংসারের অবনতি দেখতে চাইনা বলেই তো এই নিসর্গে নিজেকে নিযুক্ত করে নিয়েছি । তোমাদের প্রতি আমার কোন অভিমান নেই; শুধু ক্ষোভ একটাই নাতির স্কন্ধে চাপতে পারলাম না ।
অনুপ্রভা দেবী বললেন - এ কেমন কথা বলছেন মা ? ঘর সংসার সবই তো আপনার । আপনি পারেন এই দুর্য্যোগ কাটিয়ে দিতে।
বিশ্বময়ী দেবী বললেন - সে ইচ্ছেটাই যে নেই মা ! তবে তোমরা নিশ্চিন্তে থাকতে পার ; সম্পত্তি ট্রাস্টির হাতে চলে গেলেও তোমাদের সংসার জীবনে গ্রাসাচ্ছাদনের কোনরূপ অসুবিধা হবে না । সেই রকম নির্দেশই দেওয়া আছে ।
তপনকিরণ চৌধুরী মায়ের এইরূপ অনীহা দেখে কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়ে বললেন - তাহলে আপনি আমাদের কোন অনুরোধ রাখবেন না ?
বিশ্বময়ী দেবী নিরুত্তর । অনুপ্রভা দেবী পুনরায় বললেন - আর যদি আমরা সূর্য্যকিরণকে সৎপথে নিয়ে আসতে পারি ?
- সেই সুযোগ কোথায় ? তোমরা তো ওকে ত্যাগ দিয়েছ।
- এ কথা আপনি জানলেন কি করে !
- দেয়ালেরও কান থাকে বউমা । হাওয়ায় যে সব খবর পাচ্ছি সেগুলো তো সব উড়িয়ে দেওয়া যায় না ! এই যে তোমার ছেলে একটা বাউণ্ডুলে মেয়েকে বিয়ে নামের প্রহসন করল ; তোমরা কি ভাবছ ও সত্যি সত্যিই ওকে বিয়ে করে ঘর বাঁধবে ?
ঈষৎ হেসে আরও বললেন - আমি তেমন ভাবি না। দেখ গিয়ে হয়তো কোন অঘটন ঘটিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। শুনেছি সে নাকি ওদের বেলেল্লাপনার ক্লাবে রাত কাটায় আর দিনের বেলায় কোথায় থাকে, কি করে সে খবর আর কে রাখে?
তপনকিরণ বললেন - আজই আমরা ওকে ফিরিয়ে আনব । যতই হোক আপন সন্তান! তাকে ছেড়ে কি থাকা যায় ?
বিশ্বময়ী দেবী এর কোন প্রতিক্রিয়াই দিলেন না। নিরুপায় হয়ে তপনকিরণ স্ত্রীকে নিয়ে নিজ গৃহ অভিমুখে যাত্রা করলেন ।
তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়েছে। বিলাসবহুল গাড়িটি যখন বাড়ির মেন গেটে এসে দাঁড়িয়েছে ; গাড়ি থেকে নেমে অনুপ্রভা দেবী কাউকে দেখে শিহরিত হয়ে উঠলেন। প্রায় আট ফুট লম্বা, মাংসল পেশীবহুল এবং লোমশ প্রাণীটিকে দেখে পুনরায় গাড়ির ভেতর ঢুকে পড়লেন । ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে স্বামীকে বললেন - ওই দেখ , পানামা সার্কাস থেকে কোন প্রাণী হয়তো পালিয়ে এসেছে।
তপনকিরণ বললেন - তাই তো !
খুব ভালোভাবে নিরীক্ষণ করে দেখলেন প্রাণীটি হয় গরিলা বা শিম্পাঞ্জি। বললেন - দাঁড়াও আগে থানায় খবর দি তারপর পুলিশ এলে গাড়ি থেকে নামবে।
সূর্য্য দেখল কেউ তো নামল না । তখন একপা একপা করে গাড়ির দিকে অগ্রসর হল । আরোহী দু'জন ভয় পেয়ে গাড়ির কাঁচ তুলে দিলেন । বিচিত্র দর্শণ প্রাণীটি গাড়ির দরজায় ধাক্কা দিতে থাকল । গলা ফাটিয়ে ' মা' বাবা' বলে চিৎকার করতে লাগল । ঠিক সেই মুহুর্তে কারেন্ট অফ হয়ে গিয়ে চতুর্দিক অন্ধকারে ঢেকে ফেলল। সূর্য্য সেই সুযোগে নিজের রূপ পরিগ্রহ করে গাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। তপনকিরণ সেখান থেকে চলে যাবার জন্য গাড়িতে স্টার্ট দিলেন । হেড লাইট জ্বলে উঠল। আর ওঁরা সবিস্ময়ে দেখলেন তাঁদের একমাত্র সন্তান সূর্য্য দাঁড়িয়ে আছে।
( চলবে )
