Sampa Maji

Fantasy Children

3  

Sampa Maji

Fantasy Children

গল্প মনে হলেও সত্যি

গল্প মনে হলেও সত্যি

6 mins
537


আজ কার মুখ দেখে কাজে বেড়িয়ে ছিলাম কে যানে, রাস্তার মাঝে বাইকটা খারাপ হয়ে গেল , তার পর কাছাকাছি কোনো গ্যারেজে দেখতে পেলাম না, যদিও একটা পেলাম সে বলল একটু দেরি হবে, হাতের কাজটা না শেষ করে আমার টা ধরতে পারবে না। এখন কিই বা করার আছে অগত্যা বসে রইলাম, বাইকটা সারানো হয়ে যাবে এটা শুনেই শান্তি। আজকের মধ্যেই মালটা ডেলিভারি দিতেই হবে না হলে সমস্যা। ডেলিভারির তারিখের মধ্যে দিতে না পারলে যদি না নেয় তখন আমার ওপর পেসার আসবে , যত দেরি হোক আজকেই পৌঁছে দিয়েই আসবে । অনেক টাকার জিনিস আগেই অনলাইনে পেমেন্ট করেছে ।


আমি ফিলিপ কার্ড সপিং এর ডেলিভারী বয়। পড়াশোনা শেষ করার পর যখন কোনো কাজ পাচ্ছিলাম না, তখন আমার এক বন্ধু এই কাজটা খুঁজে দিয়েছে। আমার বন্ধু ও এই কাজ করে। এখন গ্রাম গঞ্জের ও অনলাইনে সপিং হচ্ছে, গ্রাম ও এখন অনেক এগিয়েছে। বিশেষ করে অফারের সময় অর্ডার অনেক বেশি থাকে, তখন অভার ডিউটি করতে হয়।


বাইকটা সারাতে প্রায় ২ঘন্টা সময় চলে গেল , বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামবে নামবে করছে অথচ এখনো কতোটা পথ যেতে হবে সঠিক জানি না। কাস্টমার বলেছে পাকা রাস্তা থেকে ভেতরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার।এই রাস্তায় এই প্রথম, জায়গাটা নির্জন মনে হচ্ছে ,মেন রাস্তা ছেড়ে ১০ কিলোমিটার ভেতরে চলে এলাম কিন্তু পথে তেমন লোক দেখতে পেলাম না ঘরবাড়ি ও খুব একটা চোখে পরছে না।চলে তো যাচ্ছি কিন্তু ফেরার সময় রাত্রি হয়ে গেলে কিভাবে একা এই রাস্তায় আসবো ভেবে এখন থেকেই ভয় করছে। তবুও যেতে হবে না গেলে উপাই নেই, আমি তো ঠিক সময় বেরিয়ে ছিলাম কিন্তু বাইকটাই সব এলোমেলো করে দিল।


ফোন করে করে কাস্টমারের বাড়িতে পৌঁছে গেলাম , টাইম দেখলাম পৌনে ১০টা । জিনিসটা দিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য ব্যাগটা কাঁধে নিয়েছি এমন সময় বাড়ির ভেতর থেকে একটা বৃদ্ধ বেড়িয়ে এসে বলেন, দাদু ভাই অনেক রাত্রি হয়েচ্ছে তোমাকে অনেক পথ যেতে হবে , তাছাড়া ওই রাস্তায় রাত্রির বেলা একে বারে ভালো না , তুমি যতো তাড়াতাড়ি পারে ফিরে যাও আর রাস্তা কেউ যদি সাহায্যের জন্য থামতে বলে একদম দাঁড়াবে না।

দাদুটার কথাটা শুনেই আমার বুক ঢিপঢিপ করতে লাগল,এসব কি বলচ্ছে দাদু। মনে মধ্যে ভয় নিয়েই বাইক চালাতে লাগলাম ,একটা সমস্যা হয়েছে , বাড়ি থেকে পাওয়ার ব্যাঙ্ক আনা হয়নি এখন ফোনেতে ও চার্জ নেই । আমাকে এখন খুব খিদে পেয়েছে, কিন্তু খাব কোথায় এতো রাতে কোনো খাওয়ারের দোকান পাবো না ,সেই দুপুরে ভাত খেয়ে ছিলাম তার পর থেকে আর কিছু খাওয়া হয়নি  , ঠিকানা জিজ্ঞেস করতে করতে করতে খাওয়ার কথা ভুলেই গেছি। এই নির্জন রাস্তায় রাত্রি বেলায় একা ভয় করছে। ভূতকে তেমন ভয় পাইনা , ভয় বেশি মানুষ কেই। এই জায়গাটা খুব নাম করা , ছোট বেলায় পাড়ার এক ঠাকুমার কাছে শুনেছিলাম এই জঙ্গলে ডাকাতরা থাকত। আগেকার দিনে ডাকাতরা আগে থেকে পত্র পাঠিয়ে দিতো, তাতে যাওয়ার দিন ক্ষণ লেখা থাকতো ,তারা যেই দিনে আসবে সেই দিন বাড়ির মালিক যেন আগে থেকে দরজা খুলে রাখে, তাদের কথা মতো কাজ না করলেই বিপদ ।

এসব কথা কেন যে মাথায় আসছে বুঝতে পারছি না। মনকে সাহস দেওয়ার জন্য কালকের কাজের কথা ভাবতে লাগলাম। রাস্তাটা যেন কেমন পরিবর্তন লাগছে, এখানে একটা দোকান ছিল এখন নেই । একি রাস্তার মাঝে দুটো মেয়ে বাইক থামানোর জন্য হাত দেখাছে , হঠাৎ আমার দাদুর কথাটা মনে পরে যেতেই আর দাঁড়ালাম না , কিন্তু সামনে আর এক সাংঘাতিক ব্যাপার , দুটো লোক গাছের ওপর থেকে দড়ি ধরে আমার বাইকের সামনে নেমে এল, আমার বাইক থামানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমি বাইকটা থামাতেই মুহূর্তের মধ্যেই ছ-আট জন লোক আমাকে ঘিরে ধরলো । বলল, তোর কাছে যা যা আছে বের কর, আর চালাকি করার চেষ্টা করবি না, কাউকে ফোন করবি না, আগে ফোন টা দে।

আমি কি করবো বুঝতে পারছি না, ভয়ে ওদের কথা মতো ফোনটা দিয়ে দিলাম ,তার পর ব্যাগটা এগিয়ে দিলাম। আজ প্রায় সব কটা মাল অনলাইনে পেমেন্ট হয়েছে , আমার কাছে বেশি টাকা নেই ৫০০ টাকার মতো আছে আর ব্যাগেও তেমন কিছু নেই সব মাল ডেলিভারী হয়ে গিয়েছে।


আমি কিছু বললাম আগেই লোক গুলো আমার হাত আর চোখ বেঁধে আমাকে টানতে টানতে কোথায় যেন নিয়ে চলল । এই বিপদের সময় ও আমার খুব আনন্দ হচ্ছে,গল্পে পরেছিলাম ডাকাতের কাহিনী ,এই লোক গুলো ও ডাকাতের মতো দেখতে ,শুধু ডাকাতদের মতো দেখতে না গল্পের মতো আমাকে কোথায় যেন নিয়ে চলেছে । আমার  সব যেন স্বপ্ন মনে হচ্ছে ,এতো সামনে থেকে ডাকাত দল দেখছি শুধু দেখছি না আমাকে তারা ধরে নিয়ে চলেছে । জানিনা বেঁচে ফিরবো কিনা যদি ফিরতে পারি বন্ধুদের বলতে পারবো নিজের চোখে ডাকাত দেখেছি। এসব ভাবতে ভাবতে পথে চলেছি ,আমিকে এমন করে ধরে নিয়ে চলেছে মনে হচ্ছে যে আমি কাঠের পুতুল। 


আমাকে একটা আধো অন্ধকার ঘরে নিয়ে এসে আমার চোখের বাঁধন খুলে দিল। চেয়ারে বসে থাকা লোকটাকে সবাই সেলাম করছে , আমিও সঙ্গে সঙ্গে মাথা নিচু করে নমষ্কার করার চেষ্টা করলাম। মনে হচ্ছে ওই লোকটা এদের সর্দার। চেয়ারে বসা লোকটা লোক গুলোর কাছে থেকে আমার সমন্ধে জানছে , শুনতে পেলাম আমার কাছে বেশি কিছু পায়নি তাই আমাকে এখানে ধরে এনেছে। সব শুনে লোকটা আমাকে জিজ্ঞেস করল,

- এতো রাতে কোথায় গিয়ে ছিলি , না যাচ্ছিস।

লোকটার ভারি গলার আওয়াজ শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম, থতমথ বললাম - আমি জিনিস পত্র বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কাজ করি , কাস্টমারের বাড়িতে জিনিস পৌঁছাতে গিয়েছিলাম। রাস্তায় আমার বাইক খারাপ হয়ে গিয়েছিল তাই দেরি হয়ে গিয়েছে স্যার।


ব্যাগ থেকে সব কিছু বের করে ঘাটা ঘাটি করতে লাগল , লোকটা ব্যাগ থেকে কাগজ পত্র বেড় করে সর্দারকে দিল , কাগজ পত্র দেখে সবাই ফিস ফিস করে কি সব আলোচনা করতে লাগল। মনে হচ্ছে এরা আমাকে আর ছাড়বে না আমার মৃত্যু অবধারিত , আমার আর বাড়ি ফেরা হলো না, ডাকাতের গল্প আর বন্ধুদের শোনাতে পারলাম না ,এই জীবনে মা বাবার সাথেও আর কথা হল না ।এসব উল্টো পাল্টা ভাবছি ,এমন সময় একজন এসে আমাকে কিছু খাবার দিয়ে বলল , এগুলো খেয়ে নাও , মনে রেখো এটাই তোমার জীবনের শেষ খাওয়া। খুব খিদে পেয়েছে তাই বাঁচবো কি মরবো না ভেবে খেতে লাগলাম। খাওয়ার পর সর্দারকে বললাম, স্যার সত্যি বলছি খুব খিদে পেয়েছিল ,সেই দুপুরে ভাত খেয়ে ছিলাম তার পর থেকে কিছু খায়নি।একটা লোক ধমক দিয়ে বলল, জীবনে শেষ খাওয়া খেলে ভালো তো লাগবেই।

আমি কথা না বাড়িয়ে খাওয়া শেষ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলাম , এখন খুব ভয় করছে মনে ডাকাতের খপ্পরে পরেছি এখান থেকে বেরানো খুব মুশকিল, তার পর এদের ফিসফিসানি শুনে মনে হচ্ছে এটাই হয়তো আমার জীবনের শেষ খাওয়া ।  

হঠাৎ সর্দারকে বলতে শুনলাম, যা যা বলেছি তাই করবি , কোনো ভূল যেন না হয়। সর্দারের নির্দেশ শুনো একজন আবার আমার চোখ বেঁধে দিল এবং এক গ্লাস জল ধরিয়ে বলল, জীবনের শেষ জলটা খেয়েনে এবার তোকে মরতে হবে। আমি প্রায় কাঁদতে কাঁদতে বললাম, আমি তো কোনো অপরাধ করিনি তাহলে কেন আমাকে মারবে , আমার কাছে যা কিছু ছিল সব দিয়ে দিছি।

- তুই এতো রাতে এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলি ,এটাই তোর অপরাধ।

 হঠাৎ যেন আমাকে খুব খুব ঘুম পাচ্ছে , মনে হচ্ছে জলের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ছিল তাই এমন হচ্ছে, আর কিছু বুঝবারআগেই আমরা চোখ বুজিয়ে এল আর কথা বলতে পারলাম না।


পরের দিন সকালে আমি নিজেকে একটা ভাঙ্গা মন্দিরে আবিস্কার করলাম। মন্দিরের পাশে আমার বাইক দাঁড়িয়ে ছিল, আর ব্যাগ গুলো আমার পাসেই ছিল। তাড়াতাড়ি আমি ব্যাগ ভেতর দেখতে লাগলাম , ব্যাগের মধ্যে একটা টাকার ব্যান্ডেল এবং একটা চিঠি দেখতে পেলাম,তাতে লেখা আছে,

" বন্ধু , তুমি সব সত্যি বলেছো , তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে তুমি খুব চিন্তায় আছো , আমরা তোমার মায়ের রিপোর্ট দেখলাম তাই চিকিৎসার জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলাম তোমার মাকে ভালো ডাক্তার দেখিও ।আর হ্যাঁ ,যতই কাজ থাক এই রাস্তা দিয়ে রাত ১০টার পর আর কোনো দিন যাবে না। খুব ভালো থেকো" ।

          ‌‌     ইতি


            সর্দার দাদা 


চিঠি পরে বুঝতে পারলাম কালকে ফিসফিস করে কি বলছি , ওরা আমার মায়ের রিপোর্ট টা দেখেছে , সত্যিই "ভগবান যা করে মঙ্গলের জন্য " কথাটা ঠিক , কালকেই রিপোর্ট টা বাড়ি থেকে এনেছিলাম ফেরার পথে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করবো বলে আর কালকেই এমনটা হলো। মনে হচ্ছে জলে ঘুমের বড়ি দিয়েছিল তাই কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম। যাইহোক কালকের ঘটনাটা সত্যি না স্বপ্ন এখনো‌ বুঝতে পারছি না কিন্তু টাকাটা সত্যি, আজ আমি মায়ের রিপোর্টের জন্য বেঁচে ফিরলাম ।এখন আর এসব চিন্তা ছেড়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাই ,মা হয়তো সারা রাত জেগে আমার জন্য অপেক্ষা করছে ।এই যে সারা রাত বাড়ি ফিরিনি তার জন্য কতো কথা শোনাবো‌, আমি যে কি উত্তর দেবো বুঝতে পারছি না।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy