Manab Mondal

Abstract Comedy Inspirational

3  

Manab Mondal

Abstract Comedy Inspirational

ঘটি বাঙালের বিয়ে

ঘটি বাঙালের বিয়ে

5 mins
485


বিবাহ অনুষ্ঠান বর পক্ষের লোক হলে একটি বাড়তি দায়িত্ব থাকে।বিভিন্ন ছুতোয় মেয়ের বাড়ির খুঁত ধরার চেষ্টায় কোনো ত্রুটি থাকে না। খেতে বসে ইচ্ছাকৃত খাবার নষ্ট করা বা ইচ্ছাকৃতভাবে ঝামেলা পাকানো চেষ্টা ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার বাবা মার বিয়ের সময় শুনেছি দাদু নাকি অভিনব উপায় গ্রহন করেছিলেন যাতে কোনো বরযাত্রী যাতে খাবার নষ্ট না করে। বরযাত্রীদের আলাদা করার জন্য বা চিনবার সুবিধার কারণে তাদের গায়ে সুগন্ধি ছড়িয়ে দিয়েছিল।পরে বুঝলাম বিয়েবাড়িতে বরযাত্রীদের গোলাপ ফুল বুকে আটকে দেওয়া হয় চিনবার জন্য। যাইহোক শান্তু আর অমর বন্ধুত্ব ছোট বেলার । একই পাড়ায় থাকে এবং একই অফিসে কাজ করে। । শান্তুর বিয়ে ঠিক হলো। এখন হালতুতে যেখানে তারই আশপাশে কনের বাড়ি। তখন হালতু তখন বেশ ফাঁকা ফাঁকা ছিল। মাঠ ছিল,গাছ ছিল প্রচুর আর ছিল পুকুর। কলকাতার কাছে একটা প্রায় গ্রাম মতো ছিলো এই অঞ্চল তখন। দুই বাড়ির দেখাশোনা কথাবার্তার পর বিয়ের দিন ঠিক হলো। কৌতুহলি শান্তু অফিসতুতো ফ্রেন্ড নান্টুর কাছ থেকে কিছুটা জানল কনে আর তার বাড়ির সম্পর্কে। এই জানার পিছনে কারণ ছিল শান্তুরা পশ্চিমবঙ্গের অর্থাৎ ঘটি আর মেয়ের বাড়ি বাঙাল। এই ধরণের বিয়ে তখনকার দিনে বিরল ছিল। যেমন বাঙলা আর ঘটি পাত্র পাত্রী কেমন হয় তা নিয়ে অফিসে একটা কুরুক্ষেত্র বেঁধে গেলো।

একদল বললো "শোন বাঙালরা সবখানে মানিয়ে নিতে জানে"। অন্যদল বললো "ঘটিরা সবাইকে আপন করে নিতে পারে"। অমর সেদিন অফিসে জরুরি কাজ পরায় তা শেষ করে ,বরযাত্রী পৌঁছাবার ঘন্টা খানেক বাদে পৌঁছালো। ততক্ষণে বিয়েতে বসবার তোড়জোড় শুরু হয়ে যাওয়ায়। কনের দোতলা বড় বাড়ি তার সামনে বেশ বড় উঠান। সেখানে একদিকে বিয়ের জায়গা। বাড়ির বাইরে বড় প্যান্ডেল এবং তার সামনে বড়ো গেট তৈরি হয়েছে। সানাইবাদক উঠে সুন্দর করুন সুর তুলে বিয়ে বাড়ির আমেজটা আরো গাঢ় করছে। পাড়ার ছেলে হিসেবে নান্টু পরিবেশনের দ্বায়িত্বে। দু তিন মিনিট কথা বলে চলে গেল। অমর গিয়ে বরযাত্রীদের সাথে একটু সময় বসে, বিয়ের মণ্ডপের দিকটা পায়চারি করে এলো। বিয়ে শুরু হবার বেশ কিছু সময় বাদে বরযাত্রীদের ডাকা হল খেতে বসার জন্য। বাড়ির বাইরের প্যান্ডেলে ওদের বসানো হলো।

এমন সময় একজন কনে পক্ষের প্রৌঢ় ভদ্রলোক এসে বললেন "এ কি ওনাদের এখানে বসিয়েছ? ছিঃ ছিঃ। বরযাত্রী ভিতরের মণ্ডপে বসাও"। কিন্তু ভিতরের মণ্ডপে ওদের বসানোর তোড়জোড় চলছে তখন একজন জানালেন "এটা নিরামিষ যারা খাবে তাদের জন্য। দেখছ না পাশেই বিয়ে চলছে। বাড়ির ছাদে ওনাদের বসাবার বন্দোবস্ত কর"। ওরা ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। একতলার সিঁড়ির পাশে একজন দাঁড়িয়েছিলেন সে রে রে করে বললো "কি বেআক্কেলে সব? ওই জায়গায় গুরুদেব খাবেন। কি যে করে? বুঝতে পারছি খুবই খারাপ হচ্ছে আপনাদের সাথে কিন্তু গুরুদেব সাত্ত্বিক মানুষ তাই ওনার আর ওনার সঙ্গীদের আলাদা বসার বন্দোবস্ত। আপনারা কে এখানে পাঠালো?"

 আর যায় কোথায়? বরযাত্রীদের মধ্যে একজন চিৎকার করে বলল "এতো বড় অপমান! খাবই না এখানে। বাড়ি চল"। ওরা হাঁটা শুরু করল। অমরও পিছু নিল ওদের। নান্টু দেখতে পেয়ে ছুটে এসে অমরকে ধরে ফেলল। নান্টু "তুই যাসনা প্লিজ। তোকে এখানে খেতে হবে না। আমাদের বাড়িতে খাবি থাকবি। তিন নম্বর ব্যাচ শেষ হতে আর মিনিট দশেক লাগবে। তারপর তোকে আমাদের বাড়ী নিয়ে যাব"। এ কথা বলে নান্টু অমরকে বাইরের প্যান্ডেলের একটু দূরে আধা অন্ধকার জায়গায় একটা চেয়ার বসিয়ে দিয়ে, চলে গেল পরিবেশন করতে।

 অমর বসে সবে একটা সিগারেট ধরাতে যাবে। হঠাৎ দেখে পাঁচ ছয়জন হাতে লাঠি নিয়ে বেড়িয়ে পরেছে। "কোথায় গেল বরযাত্রীরা, কোথায় গেল? আরে বিয়ে হয়ে গেছে। ওরা এখন আমাদের আত্মীয়। একটু মানিয়ে নেবে না? এটা কি রকম?" এসব দেখে অমর ভয় পেয়ে পিছনে মাঠের দিকে পালালো। মাঠ ভেবে সে কুচিরি পানার পুকুরে হাবু ডুবু খেতে শুরদি করলো। এদিকে যারা বরযাত্রীদের ধরে আনার জন্য বেরিয়েছিল তারা ওকে চিৎকার করে বলে উঠল "একটাকে পেয়েছি"। অন্যরা ছুটে এলো অমরের কাছে। অমরের কাছে এসেই সর্দার গোছের একজন যে নাকি কনের বড়দা হাতে লাঠি বলে উঠল "এটা কি মজা হচ্ছে? আমাদের সুবিধা অসুবিধা একটু বুঝবেন না। এখন তো আমরা আত্মীয়"। অমর লাঠির ঘা খাবে মনে করে চোখ বন্ধ করে ফেলেছিল। হাতে টান পরতে চোখ খুলে দেখল , তাকে চ্যাঙ দোলা করে নিয়ে আসা যাওয়া হচ্ছে।ওই সর্দার ওকে টান নিয়ে বিয়েবাড়ির ভিতরে মাসিমা, পিসিমাকাকিমা গোছের একজনের কাছে দিয়ে বলল "এই একজনকেই পেয়েছি"। অমর আড় চোখে দেখলো।  ছয় সাত জন বরং যাত্রীকে চেয়ারে বেঁধে হাড়ি ভর্তি রস গোল্লা খাওয়ানো হচ্ছে।

নান্টু ইশারায় বললো খাবি না বলিস না। ভদ্রমহিলা খুবই আন্তরিকতার সাথে বলে উঠলেন "দেখতো বাবা কি বিচ্ছিরি কান্ড হলো। পরে একদিন ওনাদের সবাইকে এনে খাইয়ে দিতে হবে। তুমি বাবা এসো খাবে চলো ওরে উনাদের ছাড় তোরা "। ভদ্রমহিলা ওকে নিয়ে বাড়ির দোতলার একটা ঘরে বসিয়ে। অনেকগুলো নাম ধরে বারান্দা থেকে হাঁক দিলেন। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে সবাই এসে হাজির। কেউ মাসিমা,কেউ কাকিমা,কেউ পিসিমা আবার কেউ বা মামীমা। নান্টু বলল "এ হচ্ছে শান্তর ছোটবেলার বন্ধু। একসঙ্গে বড় হয়েছে আবার আমরা তিনজনই একই অফিসে কাজ করি"। অমরের জামা কাপড় বদল করার মধ্যে ই মেঝে মুছে,আসন পেতে খাবারের আয়োজন হয়ে গেছে।অমর পুরোপুরি মহিলামহলের মঝে ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছে। একজন বললেন "বাবা এবার আসনে বস"। অমর বাধ্য ছেলের মতো বসল। এবার আরম্ভ হলো ওনাদের প্রশ্ন "রেল লাইনের ওপারে অর্থাৎ কলকাতার মানুষজন ভাল কিনা? ঘটিরা কেমন মানুষ? ওদের নাকি এঁটো, আমিষের খুব বাদ বিচার করে? সেটা অবশ্য আমারও মানি। ওরা নাকি খুব মিচকে হয় আর মিষ্টি কথা বলে পিছনে থেকে মারে। মেয়েটা আমাদের খুব সাদাসিধা। ঘটিরা নাকি বেশি করে নিরামিষ খায়? আমাদের মেয়ে আবার মাছ ছাড়া খেতে পারে না। ওরা নাকি সকালবেলা শুধু গামছা পরে থাকে?এ বাবা ছি। আমাদের মেয়ে ওখানে মানিয়ে নিতে পারবে তো?" ইত্যাদি ইত্যাদি। অমর মনে মনে বলছে ঘটিরা দুই হাত দুই পা বিশিষ্ট সভ্য মানুষই আর চোখ বড় বড় করে দেখছে একটা বিশাল বড় থালায় নানা রকমের ভাজা, লুচি,ভাত আর ডাল দেওয়া হলো। থালার চার পাশে একের পর এক বাটিতে বিভিন্ন পদ দিয়ে গোল করে সাজিয়ে রেখেছেন ওনারা। এরপর অমর একবার বলতে গেল "এতো আমি খেতে পারব না"। "সেকি এই বয়সে এইটুকু খেতে পারবে না"? অমরের কোনো উপায় ছিল না ওগুলি খাওয়া ছাড়া। খাওয়া যখন প্রায় শেষ পর্যায়ে শুধু মিষ্টি আর দই বাকি এক প্রৌঢ়া পেল্লাই একটা মাছের মুড়ো ওর পাতে দিলেন আর বললেন "এটা কিন্তু খেতেই হবে"। মহিলারাই নিদান দিলেন ওর আজ আর বাড়ি যাওয়া হবে না। কাল একদম বরকনের সাথে যাবে। ওর শোবার আলাদা ঘর ঠিক করে দিলেন ওনারা। মশারি টাঙানো পরিপাটি করা বিছানা। প্রায় আধা বরের খাতির পেল। পরদিন পুরোটা কনের বাড়িতে। বিকাল হতে কনের শ্বশুরবাড়ি যাবার তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। অমর উঠানের একদিকে বসে দেখছিল সব। কত নিয়ম পালন হলো। এর মধ্যে অমরের কানে এলো। এ বাড়ির ছোট কন্যাকে ইতি মধ্যে তার পাত্রি হিসাবে নির্বাচিত করেছে তাঁর বাবা কালই। ঘটি বাঙলার লড়াইটা তাহলে এবার শুরু হবে তার ঘরেও এটা ভেবেই তার হেঁচকি ওঠা শুরু হলো। আর সেই হেঁচকি বন্ধ করতে তার পিঠে দুই তিনটে কিল চড় পরলো।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract