ঘনাদা রহস্য উন্মোচন পর্ব দুই
ঘনাদা রহস্য উন্মোচন পর্ব দুই
শ্যামাপদ ব্যানার্জি চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললেন ,
মিস্টার সমাদ্দার আমাকে আর বাঁচতে হবে না ওই মূর্তি ফিরে না পেলে । আমার আগের এক পিতৃপুরুষ মারা যান বিভৎস ভাবে । এই মূর্তি আমাদের কাছে বিশ্বাস ও ভয়ের জায়গা। রাগ হয় পূর্ব পুরুষদের উপর জানেন তো। কি দরকার ছিল ওসব মন্দির নির্মাণ করার । এখন সেই রাজত্ব তো নেই অথচ দায়িত্ব পালন করতে হয় ।
ঘনাদা সব কিছু শুনতে শুনতে ভালো করে জরিপ করছিল ক্লায়েন্টকে ।
আমাকে ইশারা করতে আমি বুঝলাম এবার কি করনীয় । এখন সিসিটিভি ক্যামেরা অন করে আসতে হবে। সবসময় ক্যামেরা অন রাখলে জ্যাঠা মশাই রেগে যান । তাই ক্লায়েন্ট এলে , বিষয়টা জমে উঠলে আমি টুক করে ক্যামেরা অন করে আসি ।
আমি ভিতর বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলাম ক্যামেরা অন করতে ।
জ্যাঠা মশাই আমাকে ক্যামেরা অন করতে দেখে ইশারায় জানতে চাইলেন কে এসেছে ?
আমি একটু ভয়ে ভয়ে বললাম , বর্ধমান থেকে এসেছেন একজন কেস নিয়ে ।
জ্যাঠা মশাই এসে আমার কান ধরে বললেন , ওই অকালকুষ্মাণ্ডটার সাথে তুই ও নিজের জীবন শেষ করে দে । তারপর ভাই আমাকে বলবে যে আমি কেন কিছু বললাম না । যা পড়তে বস গিয়ে ।
মা জ্যাঠা মশাইকে আমায় বকতে দেখে এগিয়ে এলো ।
মাকে দেখে জ্যাঠা মশাই বললেন , বৌমা বাবলুকে ওই ঘণার কাছে একদম ঘেঁষতে দেবে না । বজ্জাত ছেলে এটাকেও বরবাদ করবে।
মা ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিলো। মা কোনদিন ভাসুরের উপর কথা বলে না । জ্যাঠা মশাই নিজের ঘরে চলে গেলেন ।
মা তুমি আসতে বাঁচলাম । আজ কানের বারোটা বেজে যেত ।
মা হেসে বলল , বাবলু তুই ঘনার সাথে থাকলে আমার কোন আপত্তি নেই । তবে এমন কিছু করবি না যাতে এই পরিবারের সন্মান নষ্ট হয় ।
মা কথাটা কেন বলছে আমি জানি । দোতলায় ভাড়া এসেছে মিলি । আমার স্কুলেই পড়ে। ওর সাথে একটু চলছে আজকাল আমার । আর ঘনাদা নিজে আইবুড়ো বসে থেকে আমার কেস জন্ডিস করছে । মা আমাকে এটা নিয়েই একটু চিমটি দিয়ে গেল ।
ধুস শালা ভালো লাগে না। এই ঘনাদার একটা বিয়ে দেওয়া দরকার । নাহলে মিলি উড়ে যাবে , আমি বোকা বনে যাবো ।
বাবলু ....
হ্যাঁ যাই দাদা ...
এগিয়ে গেলাম আপিসের দিকে ।
ঘনাদা আমাকে দেখে বললেন , কি হলো ? গেলি তো গেলি । একেবারে লাপাতা !
দেখলাম ভদ্রলোক চলে গেছেন ।
আমি ভাবলাম কি হলো ! চলে গেল লোকটা !
ঘনাদা বলল , আমাদের একবার যেতে হবে চিত্রকূট। ওখানেই রহস্য উন্মোচন হবে।
মানে ! কি বলছে ঘনাদা !
কেসটা জানলাম না ঠিক করে ?
ঘনাদা : বলছি ভালো করে শুনে নে ।
শ্যামাপদ ব্যানার্জি আসলে চিত্রকূট পাহাড়ের ওই দিককার মানুষ । এককালে এরা জমিদার ছিল । সেই কোন এক কালে ওদের বংশের কেউ এক মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দেবী দুর্গার। অষ্ট ধাতুর মূর্তি আর দোচালা মন্দির ।
মাঝখানে আটকালাম দাদাকে । এই দোচালা বা একচালা বিষয়টা কনফিউসন আনে।
ঘনাদা মাথায় ঠোক্কর দিয়ে বলল , পাল শাসনের পর বাঙালি পৃথক ও তন্ত্র জাতি হিসাবে প্রকাশিত হয়। গুপ্ত যুগে স্থাপত্য ও শিল্পে যে উত্কর্ষতা লাভ করেছিল তা পাল যুগে আরও সমৃদ্ধ হয়। বাংলার শিল্পের এই ধারাটিকে পূরবী ধারা বলা হয়। সেই সময় বিতপাল, ধীমান ছিলেন পূর্বী ধারার বিখ্যাত শিল্পী। সেই সঙ্গে টেরাকোটা শিল্পেরও প্রভূত উন্নতি হয়। পাহাড়পুরের মন্দিরের আনুমানিক খ্রিস্টিয় নবম শতক টেরাকোটার অনেক উত্কৃস্ট নিদর্শন পাওয়া গেছে । পুরো বঙ্গ অঞ্চল ধরেই বাংলার মন্দির স্থাপত্য রীতির বিকাশ ঘটেছিল। বাংলার পশ্চিমে মালভূমি অঞ্চলে প্রথ দিকে বিস্তার একটু বেশি হলেও পরের দিকে সারা বাংলা জুড়েই মন্দির শিল্পরীতির নিদর্শন পাওয়া যায়।
বঙ্গীয় ধারায় যে সকল মন্দির হয়েছিল সেগুলো পূর্বে বর্তমান বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমে ঝাড়খণ্ডের পূর্বাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই বিশাল অঞ্চল জুড়ে বঙ্গীয় শিল্পরীতিতে মন্দির তৈরি হয়েছে।
বাংলার মন্দির গুলিকে স্থাপত্য শৈলী হিসাবে মূলত ছয়টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ চালা, রত্ন, দালান , মঞ্চ , মঠ , দেউল , মিশ্র , নিজস্ব ।
চালা শিল্পরীতির বাংলার সমাজজীবনের প্রতিফলন দেখা যায়। এটি খড়ের চালা দাওয়া মাটির ঘরের আদলে তৈরী। এই শিল্পরীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য চলার বাঁকানো শীর্ষ ও কার্নিশ। এটিও কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। দোচালা , জোড় বাংলা , চার চালা , আট চালা ।
আরে দাদা ব্যাস ব্যাস অনেক বুঝলাম । আর নিয়ে পারবো না ।
আমার কাতরে ওঠাতে ঘনা দা একটু হাসলো । তারপর টেবিল থেকে সিগারেটের প্যাকেট খুলে একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল , লোকটা খুন হতে পারে । আর লোকটা আমাকে ভরসা করছে । আমাকে রহস্য উন্মোচন করতেই হবে । আমি কোন ভুত , অলৌকিক কিছুতে বিশ্বাস করিনা । আমার মনে হয় এখানে অন্য রহস্য আছে । একটা মূর্তি চুরি গেল । তারপর আবার একটা চিঠি এলো বাড়িতে । তাতে লেখা মৃত্যু আসন্ন । কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে সবটা । আমাদের ওনার বাড়ি বর্ধমান গিয়ে লাভ নেই । ওখানে ওনারা থাকেন পরিবার নিয়ে । তেমন কিছু পাওয়া যাবে না । যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেখানেই থাকবে সব প্রশ্নের উত্তর ।
বাড়িতে বাবা জানলে আমাকে বিরক্ত হবেন তবে আটকাতে পারবেন না । তোকে যেতে দেবে না। তাই কাউকে বলবি না আমরা যাবো রহস্য উন্মোচন করতে । আমরা বলবো আমরা বেড়াতে যাবো ।
কিন্তু দাদা আমি যে জ্যাঠাকে বলে দিয়েছি কেস এসেছে বর্ধমান থেকে ...
ঘনাদা যারপরনাই রেগে গেল।
চোখ পাকিয়ে আমাকে বলল , এই তুই গোয়েন্দা হবি ? ছুঁচো একটা ...
আমতা আমতা করে দাদাকে বললাম , রাগ করে না দাদা । আমি তো চিত্রকূটের কথা বলিনি ।
দাদা বলল , কেতার্থ করেছ আমাকে ।
এবার চলো জল মুড়ি খেয়ে বেরোতে হবে । কিছু কেনাকাটা করতে হবে ।
ভাবলাম দাদা নতুন জমা কিনে দেবে আমাকে যাবার জন্য । আনন্দে নাচতে নাচতে জল মুড়ি খেতে দৌড় দিলাম । অথচ আমি মরে গেলেও জল মুড়ি খাইনা ।
খাওয়া হতে দাদা আমাকে বলল তার ঘরে গিয়ে দেখা করতে । ঘড়িতে দেখলাম প্রায় এগারোটা । গেলাম দাদার ঘরে । দাদা আমাকে বলল মিলি মেয়েটা কেমন ?
চমকে উঠলাম ! দাদা কি বুঝে গেল সব কিছু !
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম , মিলি না মলি দাদা ...
তা নিয়ে যাবে ভালো .. নিয়ে চলো ।
দাদা বলল, ওকে নিলে ভালো হয় তাই না ?
ভিমড়ি খেয়ে গেলাম । মলিকে নিয়ে যাবে মানে ? তাছাড়া ওকে ওর বাবা মা ছাড়বে কেন আমাদের সাথে ?
ঘনাদা বলল , নিলয় আমার বাল্য বন্ধু। তার দাদার মেয়ে মলি । ওর বাবা মানে কমল দা আমাকে ভালোবাসে । আমি বললে না করবে না । আসলে আমি চাই কয়েকটা বাচ্চা নিয়ে স্যার সেজে ওই চিত্রকূট পৌঁছাতে। সেখানে শ্যামাপদ ব্যানার্জির পুরাতন বাড়িতে উঠবো পর্যটক হিসেবে। তাই তুই , মলি আর দুটি ছেলে হলে ভালো হয় ।
