এক নারীর স্বাধীনতার লড়াই
এক নারীর স্বাধীনতার লড়াই
আমি লড়তে ভালোবাসি, প্রতিদিন-প্রতিরাত নিজের সাথে লড়ে চলেছি আমরা। নিজের স্বপ্ন সত্যি করার জন্য লড়ে চলেছি। পরিবারের মুখে হাসি দেখার জন্য লড়ে চলেছি। নিজের সঙ্গে এই সমাজের সঙ্গে। বেঁচে থাকার লড়াই লড়ছি।
অনেক সময় অনেক লড়াই লড়তে গিয়ে বিপদের মুখোমুখিও হতে হয়েছে, সম্মানহানিও হয়েছে। তা বলে নিজের লড়াই কখনো থামিয়ে দিইনি, নিজেকে শক্ত করেছি নিজের মনকে শক্ত করেছি। জানি আমার লড়াই আমাকেই লড়তে হবে একা।
আমি পিউ মুখার্জী। গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হতে আর মাত্র এক বছর। তারপর কোন জব পেলে বাড়ি থেকে বিয়ে দিয়ে দেবে। এটাই তো প্রতিটা মেয়েদের জীবন।
"মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়ার মধ্যে সারাটা জীবন চলে যায়"
কিন্তু আমার গল্পটা একটু আলাদা, আমি মেয়ে বলে কোনোদিনও আমাকে কথা শুনতে হয়নি, আমার পরিবার সবসময় আমার পাশে ছিল আর মনে করি এখনো আছে( তবে এটা আমার ভাবনা পুরোটাই কল্পনা বাস্তবে এমনটা না, এমনটা হয় না কোন মেয়ের জীবনে)।
আমি ঘুরতে, ছবি আঁকতে, ফটোগ্রাফি করতে, লিখতে, নাচ করতে, স্বপ্ন দেখতে, আর ভাবতে ভালোবাসি...তবে আমার এই ভালবাসার খবর কেউ জানেনা। কেউ কোনোদিন শুনতে এবং জানতেও চায় না।আমার ভালোবাসার,কষ্টের খবর আমি আর আমার ডাইরি প্রতিটা পাতা জানে।
অনেকে প্রেমে কষ্ট পায়, প্রেমে বিচ্ছেদ হলে কষ্ট পায়। তবে আমি আমার ছোট ছোট স্বপ্ন আর ইচ্ছে গুলো পূরণ না করতে পারলে কষ্ট পাই, মনের এক কোণে দুমড়ে-মুচড়ে যায়, প্রতিরাত ডিপ্রেশনে আসক্ত হয়, কারো সঙ্গে কথা বলার জন্য, নিজের ইচ্ছা স্বপ্নগুলো বলার জন্য গভীর রাতে কাউকে আঁকড়ে ধরতে চাই। একটা মানুষের খোঁজে থাকি... যে শুধু আমার কথাগুলো শুনবে, আমার সঙ্গে সময় কাটাবে প্রেমিক হয়ে নয় প্রিয় বন্ধু হয়ে।
আমি প্রেমে পড়ি, বারবার প্রতিনিয়ত দিনে-রাতে এই শহরের। এই শহর প্রানের শহর ভালোবাসার শহর। তবে আমার ভালোবাসা আবেগ, অনুভূতিতে ও স্বপ্নে ভরা।
আমি খুব দুরন্ত-পাগলি, বলতে গেলে একটা বাদরি, যা সবাই আমাকে বলতো। তব
ে এই পাগলি মেয়েটাও আজ খুব শান্ত, পরিস্থিতি তাকে শান্ত করে দিয়েছে। পরিস্থিতির চাপে সবাই শান্ত হয়ে যায়। আমাদের এই সমাজ আমার পরিবর্তনের মূল কারণ।
সমাজ আমাকে লড়াকু তৈরি করেছে। ছোটবেলায় আমার সাথে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার কারনে আজ আমি শান্ত। সেই এক ঘটনা প্রতিদিন প্রতিটা সময় আমাদের প্রত্যেকের সাথে হয়ে চলেছে... আমরা মুখ বুজে সবসহ্য করি প্রতিটা দিন। সহ্য করার কারণ এই সমাজ মেয়ে বলে আমাদের দাবিয়ে রেখেছে।
"আমরা নিজেদের অধিকার নিজেরাই ছিনিয়ে নিতে পারি না, এই অধিকার আমাদের নেই, কারণ আমরা নারী... নারীর নিজস্ব কোনো ঘর নেই, ওরা তো পরের ধন... মেয়েকে এত পড়িয়ে কি হবে, তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দাও... সেই তো একদিন পরের ঘরে খুন্তি নাড়তে হবে।"
এইসব সামাজিক কথায় আমরা বিশ্বাসী। আমরা মেয়ে বলে আমাদেরকে থামিয়ে দেওয়া হয় প্রত্যেকটা মুহূর্তে। মনের জোর দুর্বল হয়ে পড়ে আর আমরা পিছিয়ে পড়ি। নিজের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার বিশ্বাসটুকু আমরা হারিয়ে ফেলেছি।
আজ এতগুলো বছর পর সময়ের সাথে পথ চলাটা আমি শিখে গেছি। আজ আর সবটা মেনে নেই না। আর নিজেকে মানিয়ে নেই না আজ আমি লড়তে শিখেছি। নিজের অধিকার ছিনিয়ে নিতে শিখেছি। যা আজ আমাকে পরিবর্তন করতে সাহায্য করেছে।
এখন অন্যায় দেখলে আর চুপ থাকি না। প্রতিবাদ করতে জানি, আর ভয় করিনা আগের মত। আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা যেন আর কোনো মেয়ের সঙ্গে না হয়, সেই দিকটা দেখি। জানি কিছু করতে পারবো না, তবে মনের জোর আনতে সাহায্য করে তাদের যতটা সম্ভব।
তারা যাতে নিজের অধিকার নিজেরাই ছিনিয়ে নিতে পারে। নিজেদের সাথে অন্যায় হলে প্রতিবাদ করতে পারে। নিজের লড়াই নিজেকেই লড়তে হবে...এই বিশ্বাসটা যেন সবার থাকে। কারণ আমরা স্বাধীন, নিজস্ব স্বাধীনতার অধিকার প্রত্যেকটা নারীর আছে কোথাও কোনো অসুবিধা হলে নিজেকে গর্জন করতে হবে সময় থাকতে থাকতে। নিজেকে লড়াকু তৈরি করতে।