দত্তবাবুর গোয়েন্দাগিরি
দত্তবাবুর গোয়েন্দাগিরি


সবকিছুর মধ্যেই রহস্য খুঁজে বের করাটা দত্তবাবুর রীতিমতো বাতিক বলা যেতে পারে। অবসরের পরে এটাই তার এখন প্রধান কাজ!বিপিনচন্দ্র রায় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হয়ে পুরো জীবনটা কাটিয়ে দিলেন।অত্যন্ত দক্ষ ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের জন্য তাঁকে জানা যেতো।তাঁর স্ত্রীর কথায় অবশ্য এসব ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো। তা দত্তবাবু তাতে দমবার পাত্র নন,তাঁর সখের গোয়েন্দাগিরি চলতেই থাকে।
রোজ সকালে প্রাতভ্রমণে বেরোনো তাঁর আর একটি প্রিয় কাজের মধ্যে পড়ে। দিনটা ছিল সোমবার। সেদিনও সকালে তেমনি বেড়িয়েছিলেন তিনি।তাঁর বাড়ির থেকে কয়েকটা বাড়ি পরেই একটা তিনতলা বাড়ি ফাঁকা পড়ে আছে প্রায় মাসতিনেক হল। বাড়িটির মালিক হারাধন মল্লিক এমনি লোক খুব ভাল।কিন্তু শরীর ভাল করার জন্য ছেলের কাছে গিয়ে আছেন কদিন হল।
বাড়িটার সামনে অনেকটা ফাঁকা জায়গা অন্য বাড়িগুলোর থেকে আলাদা করে দিয়েছে। দত্তবাবু নিজের মনে হাঁটছিলেন বেশ।হঠাৎ খুব চাপা ফিসফিস কথার শব্দ শুনতে পেলেন। স্বভাবকৌতূহলী দত্তবাবু আর নিজেকে সম্বরণ করতে না পেরে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন। দরজায় কান পাততেই শুনলেন,
----অনেকদিন ধরে যেই দিনের অপেক্ষা করেছি সেই দিন উপস্থিত! যা করার কালকের মধ্যেই করতে হবে।
এরপরে আরো কিছুক্ষণ শোনার পর দত্তবাবু যা বুঝলেন তাতে তাঁর মতোন সাহসী লোকেরো বুক কেঁপে উঠল। অন্য কেউ হলে হয়ত তখুনি ওখান থেকে পালিয়ে যেতো।বিচক্ষণ দত্তবাবু অবশ্যই অন্য কিছু করলেন। আস্তে আস্তে করে সেখান থেকে সরে এলেন তিনি।যাতে তারা কেউ বুঝতে না পারে যে তিনি কিছু শুনতে পেয়েছেন। পাড়ায় এমনি তাঁর যথেষ্ট সুনাম।সেই সুবাদে থানার ওসির সাথে ভাল পরিচয় ছিল তাঁর।
নবীনবাবু এমনি বেশ রসিক লোক।কিন্তু একটু ঘাবড়ে গেলেই খালি 'কি বলছেন' বলে ফেলেন। এখনও সব ঘটনা শোনার পর চোখ গোলগোল করে বলে উঠলেন 'কি বলছেন'?
হেসে উঠলেন দত্তবাবু।
---সেকি? এইটুকুতেই ভয় পেয়ে গেলেন? তাদের গিয়ে হাতেনাতে ধরতে হবে যে!নইলে পাড়ার সকলেরই যে বিপদ!
---হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন আপনি।
দুজনে আরও চারজন কনস্টেবলের সাথে রওনা হয়ে পড়লেন।
দত্তবাবু যা শুনেছিলেন তা ছিল এক বিরাট ডাকাতির প্ল্যান।হারাধনবাবু তাঁর এক ভাগ্নেকে বাড়ির দেখভালের জন্য রেখে গেছিলেন।তার মাধ্যমেই দুষ্কৃতীরা এখানে ঘাঁটি গাড়ে। ঠিক সময়ে গিয়ে উপস্থিত হন নবীনবাবু ও দলবল। ধরা পড়ে চারজন সহ প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র আর নিজের বিচারবুদ্ধি ও বিবেচনার জন্য পাড়ার লোকের অনেক সম্মান ও ভালোবাসা পান দত্তবাবু। তাঁর স্ত্রীকেও স্বীকার করতেই হয় সারা পাড়ার মতো 'দত্তবাবু জিন্দাবাদ'।