ধস@ধোসা(তাতাইয়ের গল্প-১০)
ধস@ধোসা(তাতাইয়ের গল্প-১০)
রবিবার দুপুরের খাওয়া দাওয়াটা বেশ জোরদার হয়ে গেছে তাতাইয়ের। বাবা পাক্কা দু'সপ্তাহ বাদে দেশি মুরগির ঝোল রান্না করেছিলেন। আহা সেতো শুধু ঝোল নয় যেন অমৃত। লোভে পড়ে অনেকটা ভাত অতিরিক্ত খাওয়া হয়ে গেছে। এমনিতেই তাতাই ভেতো বাঙালী, ভাত আর বাবার হাতের রান্না করা মাংস--- এই হচ্ছে তার টপ ফেভারিট খাবার। তবে বাড়ির বাইরে পা রাখলে ভাতের জায়গাটা দখল করে বসে মশালা ধোসা। তো যাইহোক, আজকের দুপুরের জম্পেশ খাওয়া দাওয়ার পর তাতাই বেশ আরাম করে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল বিছানায়। বিছানায় শোওয়া মাত্রই নিদ্রাদেবী আদর করে হাত বুলিয়ে দিলেন তাতাইয়ের মাথায়। আরামে চোখ দুটো প্রায় বুজে এসেছিল ওর, কিন্তু বাধ সাধল হতচ্ছাড়া মোবাইলটা। বলা নেই কওয়া নেই দুম করে ঝনঝন করে গেয়ে উঠল…. "I wanna grow old with you/I wanna die in your arms…" কোনো মতে চোখটা একটু ফাঁক করে তাতাই দেখলো মোবাইল মহাশয় চার্জ হচ্ছেন ওপাশের টেবিলে, ফোনটা ধরতে হলে খাট থেকে নেমে যেতে হবে অনেকটা। ধুরর এই সময় কে যাবে! লেপটা মুখের ওপর ভালো করে চাপা নিয়ে শুয়ে পড়ল তাতাই। কেটে গেল ফোনটা। কিন্তু আবার পরক্ষণেই বেজে উঠল। তাতাই লেপের তলায় যেমন ঢুকেছিল তেমনই রইল। বেজে বেজে কেটে গেল ফোনটা। মনে মনে খুশি হল তাতাই। আর করবে না নিশ্চয়। কিন্তু ও হরি, আবার বাজছে যে! উফফ… হাড়তে হাতড়ে খাটের একপাশে পড়ে থাকা হেডফোনটা কানে গুঁজে লেপটা ভালো করে মুড়ি দিয়ে পড়ে রইল তাতাই। আবার কেটে গেল ফোনটা। কিন্তু সে হতভাগা কি ক্লান্ত হতে জানে! আবার ঝনঝন করে বাজতে শুরু করল। ওফফ… আর বরদাস্ত করা যাচ্ছেনা। কার কাজ নেই এই দুপুরবেলা জ্বালাতন করতে ফোন করছে কে জানে! মনে মনে লোকটাকে গালাগাল করতে করতে খাট থেকে নামলো তাতাই। ফোনটার কাছে গিয়ে দেখলো পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে লোকটা একগাল হাসি নিয়ে স্ক্রিনের ওপর ভাসছে। দাঁত কিড়মিড় করতে করতে ফোনটা রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে ওপ্রান্ত থেকে ভেসে এলো,
---- আর ঘুমোতে হবে না। জলদি ড্রেস কর।
---- জ্বালাস না বাজে লোক, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।
---- বললাম তো ড্রেস কর। আর এক ঘন্টা টাইম আছে তোর কাছে।
---- কি! মানেটা কি?
---- অতো মানে বুঝতে হবে না। যা বললাম তাই কর।
---- আশ্চর্য! খামোকা ড্রেস করতে যাবো কেন?
…….
এই এক মিনিট…. শান…. সত্যিই!
---- হুমম।
---- তুই আসছিস?
---- তা নয়তো এমনি এমনি ড্রেস করতে কেন বলবো?
---- আমার বিশ্বাস হচ্ছে না… তুই সত্যি সত্যিই?
---- উফফ… আর কিন্তু পঁয়তাল্লিশ মিনিট আছে তোর হাতে।
---- ওকে ওকে ওকে আমি এক্ষুণি রেডি হয়ে স্টেশনে যাচ্ছি।
★★★★★
কলেজ বেলা পেরিয়ে তাতাই আর দিশান এখন জীবনের ইঁদুর দৌড়ে ব্যস্ত। শান চাকরির প্রস্তুতির সুবাদে এখন অন্য জেলার বাসিন্দা, আর তাতাই বাড়িতে থেকেই মাস্টার্স করছে। তাই বহুদিন দুজনের দেখা সাক্ষাৎ হয়না। এই দু বছরে মাত্র দু'বার দেখা হয়েছে দুজনের। তাই তো আজকে শানের আসাটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল তাতাইয়ের কাছে। কালো রং শানের খুব প্রিয়, তাই ওয়াড্রব থেকে বেছে বেছে একটা কালো টপ আর হোয়াইট জিন্সটা পরল পরল তাতাই, সঙ্গে ম্যাচিং দুল। আর বেশি রেডি হওয়ার সময় নেই। তাই তড়িঘড়ি করে পার্সটা নিতে যেতেই একটা কথা মনে পড়ে গেল হঠাৎ করে।
●●●●●
---- প্লিজ প্লিজ তোদের বাড়ির ঠাকুরকে বল না আমাকে কম্পিটিশনটা জিতিয়ে দিতে।
---- বিনিময়ে কি পাবো?
---- যদি জিততে পারি তাহলে প্রাইজ মানিটা দিয়ে তোকে ধোসা খাওয়াবো।
---- আর না জিতলে?
---- না জিতলে আবার কি?
---- ঠাকুরকে বলবো তার জন্য কি পারিশ্রমিক দিবি বল? আমি বামুন লোক, এমনি এমনি কোনো কাজ করি না।
---- ধ্যাত।
●●●●●
কথাটা মনে পড়তেই মুচকি হাসলো তাতাই। কম্পিটিশনটা ও জিতেছিল সত্যি সত্যিই, কিন্তু তারপর থেকে শানের সাথে দেখা হয়নি আর। তাই ধোসা খাওয়াটা ডিউ রয়ে গেছে। ছেলেটাও তাতাইয়ের মতোই ধোসা পাগল। নিজে কোথায় বেরোলে তো খায়ই তারপর যখন বাড়িতে থাকত তখন ওর মা বাবা কোনো কাজে কোথাও গেলেই বাচ্চা ছেলের মত ধোসা নিয়ে যাওয়ার বায়না করত। তাতাই ওর শহরে যত ধোসা খেয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে ডিলাইট অফ সাউথের মশালা চিজ ধোসা। যতবারই ওখানে যায় তাতাই ততবারই মনে হয় একবার শানকে এখানে আনলে হত। কিন্তু সে সুযোগ আর হয়ে ওঠেনি এতদিনেও। আজকে যদিও পেটটা ভর্তি কিন্তু ডিলাইটের একটা ধোসা খাওয়ার জন্য জায়গা ঠিক হয়েই যাবে।
---- শান শোন, তুই স্টেশন থেকে সোজা সরল পালের মোড়ে আসবি।
---- কেন?
---- আমি বলছি তাই।
---- পারব না। তুই স্টেশনে আয়।
---- নাহ। তোকেই সরল পালের মোড়ে আসতে হবে, আমি কোনো কথা শুনবো না। এটা আমাকে ভাত ঘুম থেকে তোলার শাস্তি।
---- বুঝলাম।
★★★★★
ডিলাইট অফ সাউথের সামনে আসতেই মুখটা বেঁকে গেল শানের। তাতাই একটা খোঁচা দিল ওর পেটে। ব্যাজার মুখ করে শান বলল,
---- আজ না অনেকদিন পর বাড়ি ফিরেছি বলে মা অনেক রান্না করেছিল, পেট পুরো ভর্তি।
---- চুপ।
---- সত্যি বলছি।
---- না। আজকে খাওয়াবো বলেছি তো খাওয়াবোই।
---- প্লিজ পরে…
---- পরে আর তোকে পাচ্ছিটা কোথাও? আমার কথা কি আর তোর মনে থাকে আজকাল!
---- ঢঙ…!
---- হুঁ। শোন এই না খেয়ে খেয়েই তোর এরকম সিরিঙ্গের মত চেহারা হয়ে যাচ্ছে দিন কে দিন, আমার সাথে একদম ম্যাচ করছে না। চল খাবি চল, খেয়ে মোটা হবি একটু।
---- আর তুই দিন রাত ভাত খেয়ে খেয়ে এরকম ফুলছিস।
---- বাঙালী ভাত খাবে না তো কি খাবে! চল চল খাবি চল।
---- আচ্ছা। কিন্তু একটু তাড়াতাড়ি করতে হবে, আসার সময় ট্রেনটা এক ঘন্টা লেটে ঢুকলো তাই দেরি হয়ে গেল। ফেরার ট্রেন আর এক ঘন্টা পর। তাই…
---- ওকে নো চাপ। সব হয়ে যাবে।
এই বলে শানকে প্রায় জোর করে নিয়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকলো তাতাই। ওর ধারণা ছিল রবিবার এই ঘোর দুপুরে নিশ্চয় খুব একটা ভীড় হবেনা এখানে, কিন্তু ভেতরে ঢুকেই তো তাতাইয়ের চক্ষু চড়কগাছ। প্রায় সব কটা টেবিল ভর্তি। বিভিন্ন বয়সের মহিলা পুরুষ সব দল বেঁধে বসে সাউথ ইন্ডিয়ান খেতে ব্যস্ত। ওপাশের একদম কোণের টেবিলে এক জোড়া কম বয়সী যুগলকেও দেখা গেল। তারা একে অন্যকে খাইয়ে দিতে ব্যস্ত। বাধ্য হয়ে তাতাই আর শানকে একদম দরজার গোড়ার টেবিলটাতেই বসতে হল। বসার সঙ্গে সঙ্গে ওয়েটার এসে মেনু দিয়ে গেল ওদের। তাতাই সেটা শানের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
---- তুইই চুজ কর।
শান কিছু একটা বলবে বলে মুখটা খুলেছিল, কিন্তু তাতাইয়ের পেছন দিকে কিছু একটা দেখতে পেয়ে ওর মুখটা হাঁ হয়েই রয়ে গেল, কথাটা আর বলা হল না।
---- কি রে কি হল? মুখে মাছি ঢুকে যাবে যে!
শানের হাঁ'টা বন্ধ হল ঠিকই কিন্তু ওই দিকে তাকানোটা থামলো না। অবাক হয়ে তাতাই পেছন ফিরল একবার, দেখলো ওদের ঠিক পেছনের টেবিলটাতেই জন ছয়েক মধ্য বয়েসী লোক বসে খাচ্ছে। তারা আবার মাঝেমাঝে আড়চোখে একবার করে তাতাইদের দিকে দেখছে।
---- কি হয়েছে রে?
বলতে বলতে সামনের দিকে ঘুরল তাতাই, আর ঘুরেই আবিষ্কার করল ওর বিপরীত দিকের চেয়ারটা বেমালুম ফাঁকা। শান বা তার ব্যাগ কোনোটাই নেই।
---- ম্যাম অর্ডারটা দেবেন?
ওয়েটার এসে জিজ্ঞেস করল। হতভম্ভ তাতাই কয়েক সেকেন্ড ওয়েটারের মুখের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলল,
---- একটু পরে।
---- ওকে ম্যাম।
ওয়েটার চলে যেতেই ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে শানকে কল করতে গেল তাতাই। কিন্তু তার আগেই ওই কোণের টেবিলটা থেকে একটা চিৎকার ভেসে এলো। যে যুগল বসে একে অপরকে খাইয়ে দিচ্ছিল তাদের মধ্যে মেয়েটা চিৎকার করে বলল,
---- তোমার দ্বারা একটা কাজও ঠিক করে হয়না। কি করলে দেখো।
ছেলেটা মিনমিন করে কিছু বলার চেষ্টা করল। কিন্তু মেয়েটা আরও জোরে চিৎকার করে উঠল। একটু তাকাতেই তাতাই বুঝতে পারল ছেলেটা দই বড়া খাওয়াতে গিয়ে মেয়েটার জামায় ফেলে দিয়েছে। আরও একটু চেঁচামেচি করে শান্ত হল মেয়েটা। আর তখনই পিং করে একটা মেসেজ ঢুকলো তাতাইয়ের ফোনে;
"ফেসে গেলাম।"
"কেন? তুই কোথায়?"
"তোর পেছনের টেবিলে আমার দিকে মুখ করে যে লোকটা বসেছে সে আমার মামাবাড়িতে ভাড়া থাকতো।"
"তো?"
"তো মানে! যদি দাদুকে বলে দেয়!"
"তাহলে এখন কি করব?"
তাতাইয়ের মেসেজের আর কোনো রিপ্লাই দিলোনা শান। তাতাই খেয়াল করল যারা খাচ্ছিল সবার এবার অদ্ভুত দৃষ্টিতে ওকে দেখছে। ওয়েটারগুলোও আড় চোখে ওকে দেখছে আর নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কি সব বলাবলি করছে। তাতাই আরও কয়েকটা মেসেজ করল শানকে, কিন্তু নো রিপ্লাই।
---- ম্যাম অর্ডারটা দেবেন?
ঘড়ি দেখলো তাতাই, সাড়ে চারটা। শানের ট্রেন পাঁচটা পাঁচে। এখন অর্ডার না দিলে ওর ট্রেন ধরা চাপ হয়ে যাবে। তাই মনে একরাশ দ্বিধা নিয়ে তাতাই অর্ডারটা দিয়েই ফেলল,
---- দুটো মশালা চিজ ধোসা।
---- আর কিছু?
---- নাহ। একটু তাড়াতাড়ি সার্ভ করবেন, আমাদের ট্রেন ধরতে হবে।
---- আপনাদের! আচ্ছা আচ্ছা…
বলে লোকটা অদ্ভুত হেসে চলে গেল। তাতাই দেখলো বাকি লোকগুলো এখনও দেখে যাচ্ছে ওকে। একটু আগেই চিৎকার করতে থাকা মেয়েটা তাতাইয়ের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে কি যেন বলল ওর প্রেমিককে। ওর প্রেমিক যে কিনা একটু আগেও মিনমিন করছিল সে এখন গলা চড়িয়ে তার প্রেমিকাকে বলল, "ঝগড়া হল মনে হয়! সত্যি বাবা বাইরে এসেও ঝগড়া!"
মাথাটা ঝাঁ করে গরম হয়ে গেল তাতাইয়ের। ফোনটা তুলে শানকে কল করতে যেতেই ওপ্রান্ত থেকে একটা পরিচিত যান্ত্রিক কন্ঠ ভেসে এলো,
"দ্য নাম্বার ইউ আর ডায়ালিং ইজ কারেন্টলি সুইচড অফ।"
এবার চোখ ফেটে জল চলে এলো তাতাইয়ের। সে ভাবল অর্ডার ক্যানসেল করে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু সেরকম কিছু করার আগেই ওয়েটার দুটো ধোসা এনে নামালো তাতাইয়ের সামনে। তারপর তার পান খাওয়া দাঁতগুলো বের করে বলল,
"ম্যাডাম কথা মতো তাড়াতাড়ি সার্ভ করে দিয়েছি।"
তাতাই শুকনো গলায় লোকটাকে একটা থ্যাংক্স দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এতক্ষণে আশেপাশে সবার প্রায় খাওয়া হয়ে গেছে, কিন্তু তাতাইকে নিয়ে তাদের কৌতূহল এখনও মিটছে না। তারা সমানে তাকিয়ে যাচ্ছে ওর দিকে। কোণের টেবিলের যুগল আবার একটা কোল্ড ড্রিংক্স অর্ডার করল। আর বাকিরা এক এক করে পেমেন্ট সেরে বেরিয়ে যেতে থাকলো। সবার শেষ হেলতে দুলতে বেরোলেন শানের ত্রাস ভদ্রলোকটি। আবার একটা দীর্ঘশ্বাস ধোসার একটা কোণ ছিঁড়ে মুখে ভরল তাতাই। নরম হয়ে মুখের ভেতর দলা পাকিয়ে গেল সেটা। এখানের ধোসার বৈশিষ্ট্যই যে ক্রিসপিনেস সেটাই এতক্ষণ পড়ে থেকে উধাও হয়েছে। কি আর করা যাবে! এবার সত্যি সত্যিই চোখে জল যেন আর বাধা মানতে চাইছে না। মুখটা নামিয়ে চশমা খুলে রুমাল দিয়ে চোখদুটো মুছতে গেল তাতাই, আর তৎক্ষণাৎ ওর সামনের চেয়ারটা টেনে বসল কেউ। চমকে উঠে তাতাই দেখলো পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে লোকটা ফিরেছে, ফর্সা চোখ মুখ তার লাল। তাতাই একটাও শব্দ উচ্চারণ করল না মুখ দিয়ে। লোকটা নিজ থেকেই বলে উঠল,
---- সরি। ফোনটার চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিল। আর জানিস তো আসলে ওই লোকটা খুব পাজি...
কোনো প্রতিক্রিয়া জানালো না তাতাই। তাই শান আবার নিজ থেকেই বলে উঠল,
---- একবার বাপাই দাকে যা ফাসিয়েছিল না, লোকটা ভীষণ চুগলি করে…
তাতাই কোনো কথা না বলে চুপচাপ নরম হয়ে যাওয়া ধোসাটা গিলে যেতে থাকল। শান বুঝলো পরিস্থিতি ঠিক সুবিধার নয়। সে আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ আরেকটা প্লেট কাছে টেনে ধোসাটা মুখে ভরল,
---- উঁহ…! এটা…
---- ওদের দোষ নেই, দোষ আমার ভাগ্যের। ওরা ঠিকঠাকই সার্ভ করেছিল।
যান্ত্রিক সুরে কথাগুলো বলল তাতাই। আর তৎক্ষণাৎ আবার দরজা ঠেলে রেস্টুরেন্টের ভেতর ঢুকল সেই লোকটা, শানের ত্রাস। তাতাই ভাবল শান বুঝি আবার পালাবে। দাঁত কিড়মিড় করল তাতাই। লোকটা এসে সোজা দাঁড়াল তাতাইদের টেবিলের পাশে, তারপর ওয়েটারকে ডেকে বলল,
---- ভাই দুটো ধোসা প্যাক করে দাও তো। বউ ফোন করেছিল বুঝলে, আমি ধোসা খেয়েছি শুনে বউ আর মেয়ে বলল তাদের জন্যও নিয়ে যেতে হবে। হেঃ হেঃ…
লোকটা অদ্ভুত স্বরে হাসতে হাসতে একটা ফাঁকা টেবিলে গিয়ে বসল।
---- লোকটার তো বউ ছিল না…! দাদুর বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর এই বয়েসে বিয়েও করেছে আবার মেয়েও হয়ে গেছে!
বিড়বিড় করে কথাগুলো বলল শান। এতক্ষণ পর মুখ খুলল তাতাই; রাগী রাগী গলায় বলল,
---- মেয়ে ধোসা খাওয়ার বয়েসীও হয়ে গেছে বল! তা দাদুর বাড়িতে কতদিন আগে ভাড়া থাকতো?
---- তা বছর চারেক হয়ে যাবে।
---- কি?
---- বুঝলি এতক্ষণে না আমার মনে হচ্ছে এই লোকটা সেই লোকটা নয়। আমি ঠিক চিনতে পারিনি হেঁ হেঁ…
কথাগুলো বলতে বলতে বোকার মত হাসল শান।
একগাল ধসে যাওয়া ধোসা মুখে ভরে ভ্যালভ্যাল করে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইল তাতাই, ঠিক বুঝতে পেরে উঠল না যে এখন ওর কি করা উচিৎ… রাগবে না কাঁদবে?