Manab Mondal

Abstract Horror Crime

3  

Manab Mondal

Abstract Horror Crime

ড্রয়িং টিচার

ড্রয়িং টিচার

4 mins
221


সবুজ রং টা হঠাৎ আসতে আসতে বদলাচ্ছে। পাহাড়ি বাঁক বেয়ে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে বাহাদুর। তিন্নি জন্মদিনে কাল । ড্রাইভ হিসেবে খুবই ভালো বাহাদুর বিশ্বাস করা যায় । যে ভাবেই হোক ওর কাছে পৌঁছে ওকে সারপ্রাইজ় দিতে চাই কিন্তু পৌঁছতেই যে বেলা ফুরিয়ে আসছে। রাতে মধ্যে যেতে হবে অনেক টা পথ।

গাড়িটা বাঁদিকের রাস্তায় ঘুরতেই।  বিকট চিৎকার করে গোল হয়ে উড়ে লাগল। একদল বাদুড়।

সূর্যের আলো ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে। বাহাদুর গাড়ির স্পিডটা বাড়িয়ে দিল, রাস্তাটা দারুণ । ভাবতেই খেয়াল করল, সামনে দিগন্তবিস্তৃত চায়ের বাগান । আশেপাশে আর কোনো রাস্তাও নেই। বাহাদুর রাস্তা ভুল করার লোক নয়। সূর্যও প্রায় ডুবতে বসেছে, এক্ষুণি অন্ধকার নামবে, সূর্য ডুবে গেলেও তার লাল আভা আর এই পার্বত্য বনাঞ্চলের অন্ধকার মিশে একটা অদ্ভুত আলোর সৃষ্টি করেছে। হঠাৎ মনে হল, গাড়িটা আর সামনের দিকে চলছে না, ক্রমশ নীচের দিকে নামছে। অবাক হয়ে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেছে । আতঙ্কিত হয়ে গাড়ি থেকে নামতেই শিরদাঁড়া বেয়ে একটা হিমস্রোত বয়ে গেল! মাটি ফুঁড়ে অসংখ্য কঙ্কালের হাত উঠে এক হ্যাঁচকা টানে গাড়িটাকে মাটির তলায় মিশিয়ে দিল। এ কী?! সেও যে তলিয়ে যাচ্ছে মাটির নীচে। পাশে তাকিয়ে দেখলাম হাজার হাজার মৃতদেহ মাটির নীচে শায়িত..... আরও অন্ধকারে, গভীরে তাকে টেনে নামিয়ে দিচ্ছে তাদের হাতগুলো....। বাহাদুর নয় আমার সামনে বসে একটা কঙ্কাল। কিন্তু সেইটা একটা মেয়ে র মুখ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কার ঠিক বুঝতে পারলাম না

ঘুমটা ভেঙে গেল যে।‌।

"এগুলো কি এঁকেছো তুমি "চন্দ্রা চেঁচিয়ে উঠলো তিন্নির উপর। তিন্নি কাঁদছে।

"ননসেন্স বোগাস যত্তসব! এইসব আঁকার জন্য তোমায় পাঠানো হয় ড্রয়িংস্কুলে? কত টাকা খরচ হয় আমার জানো ওখানে পাঠানোর জন্য? ঠাম্মার কাছে ও আজ থেকে তোমার যাওয়া বন্ধ। দাঁড়াও, তোমার বাবা তো তোমাকে কিছু বলবে না, ফোন করতে হবে ওই মিস কে। উনি এসব শেখাচ্ছেন।"

রাগে গজগজ করতে করতে মেয়ে চন্দ্রার হাত থেকে তার আঁকার খাতাটা কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। উঠানে। তিন্নি ছুটে চলে আসে আমার কাছে। ও আমার নিজের মেয়ে নয়, আমি ওর সৎ বাবা। তবু লোকে ভাবে আমার মেয়ে ও, আর চন্দ্রাই ওর সৎ মা। আসলে কর্পোরেট কালচারের শিকার হয়ে তিন জনের জীবন ছন্নছাড়া হয়ে যেতো। আমার মায়ের প্রস্তাবে আজ আমার এক সাথে। আমার দুঃখ একটাই আমার কাপলে একটা গুছানো ঘর জুটলেও বাবার সে ঘরে জায়গা হলো না। তবে বাবা মায়ের এটা খুশি আমার ছন্নছাড়া জীবন কে চন্দ্রা একটু গুছিয়ে দিয়েছে।

কষ্ট হলো তিন্নিকে তাহলে আর পাঠাবে না ও বাড়িতে। অপরাধ রূপকথার গল্প শুনিয়ে কুসংস্কার ঢুকিয়ে দিয়েছে ওর মনে।আমি সরীসৃপের মতো , মাটিতে শুয়ে চলিফেরা করি মাথা নিচু করে, সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ফনা তুলে ফোস করার ইচ্ছা হলেও উপায় নেই। কয়েকটি বছরে চন্দ্রা আমার জীবনের লাটাই টা ওর হাতে নিয়ে নিয়েছে। যত আকাশ উরি সব কিছু ওর হাত। যদিও চন্দ্রা আমার কলেজের বন্ধু ছিলো। সুন্দরী এবং মেধাবী ভয়ঙ্কর কম্বিনেশন, যে কোনো পুরুষেকেই আঙ্গুল এর ডগায় নাচাতে পারতো। তাই প্রখ্যাত ব্যাবসায়ী জয় চ্যাটার্জীর সাথে ওর বিয়ে হলো আমি বিয়ে করলাম তনুশ্রী কে।

আমার বিয়ের সময় তনুশ্রী সাথে আলাপ হয়েছিল চন্দ্রার। আমি ছন্নছাড়া সব সময়। বিয়ের পরে না যদি পাল্টাই তার জন্য বোধহয় চন্দ্রার সাথে আলাপ টা জমিয়ে রেখে ছিলো। সময় মতো পরিচয়ের সুবাদে চাকুরী নিলো , ওদের অফিসে। আমার জীবন টা আরো ছন্নছাড়া করে একদিন চলে গেল ও ঘর ছেড়ে। আমি যদিও উদাসীন ছিলাম এ ব্যপারে। প্রতেকটা মানুষের ভালো থাকার অধিকার আছে নিজের মতো করে। আমি ওর বাধা হতে যাবো কেন? যদিও ও বড় অভাগী সুখ শব্দটি ওর জীবনে এলো না কোন দিন।আইনি জটিলতা জন্য একটা বন্দন ছিলো আমাদের মধ্যে। তাই মর্গ আমাকে যেতে হলো। ওর বাবাতো মৃতদেহর উপর কোন দাবি করবে না বলেই দিয়েছিলেন। মধ্যবিত্ত সেন্টিমেন্ট। রাতে বেলায় দার্জিলেং পাহাড়ী রাস্তায় একটা পর পুরুষের সাথে ও কি করছিলো?এ প্রশ্নতো ও লোকে করবেই।

জয় আর তনুশ্রীর দেহ একসাথে নিতে গিয়েছিলাম। তখনই চন্দ্রা সাথে বিয়ে ঠিক করে আমার আমাদের দুই বাড়ির লোকজন।

তিন্নি বললো "কিন্তু পাপা নতুন মিস যে বললেন আকাশে যখন টকটকে সূর্যটা পশ্চিমদিকে ডুবতে শুরু করে, তখন আকাশের রঙ লাল হয়ে যায়, আর তখনই অনেক অনেক বাদুড় উড়ে আসে, আর মাটি থেকে ঘাসের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে অনেক অনেক হাত। সেই হাত টেনে নেয় গাড়িটাকে, গাড়িতে তখন রাজা আর তার ছোট রানি। সেই ছবিই তো আঁকতে বললেন। তাই তো আঁকলাম। মা বোকলো কেন?"

ছবিটা দেখে আমি ও আতংকে উঠলাম। আমার স্বপ্নের সাথে হুবাহুব মিলে যাচ্ছে ছবিটা।

সেদিন রাতে চন্দ্রা অসুস্থ হয়ে গেলো হঠাৎ ই। বিকালে তিন্নি একটা ছবি এঁকেছে। একটা সাত -আট বছরে মেয়ে এতো সুন্দর ছবি কিভাবে আঁকে তা ভাবতে পাড়লাম না। দুর্ঘটনার একটা ছবি একটা সাদা গাড়ির দরজা খুলে রক্তাক্ত একটা মেয়েরে দেহ কিন্তু মুখটা তনুশ্রীর। আমার জীবন টা আবার ছন্নছাড়া করে চলে গেলো চন্দ্রা।

চন্দ্রার চলে যাওয়াটা তিন্নির জীবনে কোন প্রভাব ফেলে নি ও ওর ঠাম্মা , ঠাকুর দা কাকা কাকিমা কাছে ভালো ই আছে, আমি একা আছি এ বাড়িতে। হঠাৎ দেখি তিন্নি হাজির, এ বাড়িতে।

আজ ওর ড্রয়িং টিচারের আসবে ওকে আঁকা শেখাতে। ওর ড্রয়িং টিচার কে দেখে আমার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।, এ কি করে সম্ভব! এ মুখ গলা যে খুব চেনা, এতো তনুশ্রী। তনুশ্রী কে তিন্নি চেনে না।

তনুশ্রী বললো " একবার তোমার জীবন ছন্নছাড়া হয়েছিল আমার উচ্চাকাঙ্ক্ষা জন্য। এবার ছন্নছাড়া করলাম , আমার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে। চন্দ্রা আমার কাছে দোষী ছিলো। ওইদিন আমাদের দূর্ঘটনাটা ছিলো ওর ষড়যন্ত্র তাই ওর শাস্তি ও পেলো। কিন্তু তুমি কেনো কষ্ট পাবে, তোমার ছন্নছাড়া জীবন টা গুছিয়ে দেবার সুযোগ দাও , একবার বিশ্বাস করে।"



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract