ডার্ক ওয়েব
ডার্ক ওয়েব


:ডার্ক ওয়েব:
সি.আই.ডি অফিসার রবিন বসু।এখন পর্যন্ত অনেকগুলো খুনের পর্দাফাঁস করেছেন।সেভাবে বেগ পেতে হয়নি।কোন না কোন একটা ক্লু পেয়েছেন,প্রতিবার।এইবারের খুনেও তার অন্যথা হয়নি।কিন্তু সেই ক্লু টাকে তিনি কিছুতেই কাজে লাগাতে পারছেন না।
খুন হয়েছে একটি পনেরো বছরের কিশোরী মেয়ে।একদম বীভৎসভাবে।শরীরে কোন পোশাক ছিল না।সারা গা ব্লেড দিয়ে চেরা।হাত,পা বাঁধা ছিল।মুখে কাপড় গোঁজা।সবথেকে যন্ত্রণাদায়ক যেটা,সেটা হল কিশোরীর যৌনাঙ্গে কাচের বোতল ঢুকিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।তারফলে যা হওয়ার তাই হয়েছিল।
রবিনবাবুর মত একজন কঠিন পুলিশ অফিসার পর্যন্ত সেই দৃশ্য দেখে চোখদুটো কিছুক্ষণের জন্য বুজে ফেলেছিলেন।
ল্যাপ্সিতে সেই ছবিগুলোই এখন আর একবার খুঁটিয়ে দেখছেন।
একটা ফুলের মত নিষ্পাপ কিশোরী মেয়ে মৃত্যুর সময় ঠিক কতটা যন্ত্রণা পেয়েছিল!কথাটা চিন্তা করেই তার মাথায় কিছু কাজ করছে না।
খুনীকে ধরতেই হবে।সে যেমন করেই হোক।অথচ তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মত কোন পোক্ত প্রণাম তার হাতে নেই।
মৃত্যুর আগে কিশোরীটি,শুধুমাত্র রক্তাক্ত আঙুল দিয়ে পাঁচটে ইংরেজি সংখ্যা লিখে দিয়ে গেছে।
72221(সেভেন, টু,টু,টু,ওয়ান)
এরপরে আরো কিছু লিখতে চেয়েছিল নাকি ওইটুকুতেই কিছু লিখে গেছে,ঠিকভাবে বোঝা যাচ্ছে না। কখনো মনে হচ্ছে একটা ফোন নাম্বার লিখতে চাইছিল।যেটা শেষ করতে পারেনি।ওর আত্বীয়, স্বজন,বন্ধু,বান্ধব সকলের ফোন নাম্বার চেক করেও ওই নাম্বারের কোন হদিস পাওয়া যায়নি।
ওদিকে সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে প্রতিবাদের ঢেউ উঠে গেছে।মোড়ে,মোড়ে স্লোগান আর মোমবাতি মিছিলের চাপ।আর দিন দুয়েকের মধ্যে কিছু একটা না করতে পারলে,কেসটা সি.বি.আই-এর হাতে চলে যাবে।
সোজা কথা হল,আজ পর্যন্ত চাকরি জীবনে রবিনবাবুর এটাই প্রথম কেস।যেটাই তিনি পরাজিত হতে যাচ্ছেন।আর সেটা তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারবেন না।এক্ষেত্রে পরাজয়টা বড় কথা নয়।আসল কথা হল, তিনি নিজে হত্যাকারীকে ধরতে চান।তা নাহলে প্রতিশোধের আগুনে নিজেই পুড়ে শেষ হয়ে যাবেন।
কিশোরীর মুখটাকে দেখার পর থেকেই রবিনবাবু এখন রাতে ঠিকমত ঘুমোতে পারেন না। তার নিজেরও একটি মেয়ে আছে।কলেজে পড়ে।স্বপ্নের মাঝে সেই দুটো মুখ এক মনে হয়।চিৎকার করে তাকে ডাকে।
---বাঁচাও..বাঁচাও..ড্যাডি।
তখনি তিনি মুখের ঘাম মুছে বিছানা থেকে উঠে পড়েন।কিছুতেই নিজের অস্বস্তিকে দমাতে পারছেন না।
এখন মাঝরাত।ঘড়িতে বারোটা কুড়ি।ল্যাপটপ বন্ধ করে একটা নোটপ্যাড আর পেন নিয়ে বসলেন।
72221..ইংরেজি বর্ণমালা ধরলে হয় GBBBA..শব্দটার কোন মানে দাঁড়াল না।এবার যোগ করলেন।যোগফল দা
ঁড়াল 14..এখন হচ্ছে AD...এরও কোন মানে হল না।তাহলে হবেটা কী?
মেয়েটা অত যন্ত্রণার মাঝে শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে এমনি,এমনি এটা লিখে যায়নি।নিশ্চয়ই সে সংক্ষেপে কিছু একটা ইঙ্গিত করে গেছে।
রবিনবাবু চেয়ার ছেড়ে ওঠে অস্থিরভাবে বারান্দায় পায়চারি করতে লাগলেন।
এমন সময় ফোনে নোটিফিকেশন টোন বেজে উঠল।
চেক করলেন।মিসেস, হোয়্যাটস অ্যাপে মেসেজ পাঠিয়েছেন।গতকাল মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি গেছেন।আগামীকাল শালাবাবুর বিয়ে।তিনি যেতে পারবেন না। আগেই জানিয়ে দিয়েছেন।
লিখেছেন।
---এবার শুয়ে পড়ো।রাত অনেক হল।GN8
রবিনবাবুর ঠোঁটটা মুহূর্তে চওড়া হয়ে গেল।
সঙ্গে,সঙ্গে বাইকটা বের করে থানার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।
রবিনবাবু একটা সিগারেট ধরিয়ে এক মুখ ধোয়া ছেড়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লেন।
সামনে দুজন ছেলে নির্লিপ্তভাবে বসে আছে।দুজনই সমবয়সী।সতেরো কি আঠারো।
রবিনবাবু আবার তাদের দিকে মুখ করে চেয়ারটায় বসে পড়লেন।তারপর শান্তভাবে প্রশ্ন করলেন,খুনটা করলি কেন?
একজন শক্ত গলা করে বলে উঠল, খুনটা আমি করেছি।ও শুধু লাইভ ক্যামেরা অন করেছিল।
একমাস আগে হঠাৎ একদিন আমার ফোনে একটা গেমের লিংক ঢুকল।ক্লিক করতেই চালু হয়ে গেল।আমার তখন খুব টাকার দরকার ছিল।ড্রাগের স্টক শেষ।বাড়িতেও টাকা দিচ্ছিল না। ওই গেমটা তার সন্ধান দিল।প্রথম ধাপ পুরো করলেই দুশো ডলার।এমন কিছু নয়।শুধু নিজের হাতে ব্লেড দিয়ে নামটা লিখতে হবে।পেলামও।ধাপ বাড়ার সাথে, সাথে টাকার অঙ্কও বেড়ে গেল।তিনশো,পাঁচশো করতে,করতে শেষে পাঁচ হাজার ডলারে ছুঁলো।শর্ত দেওয়া হল,একটি কিশোরী মেয়ের সারা শরীর ব্লেড দিয়ে চিরতে হবে এবং যৌনাঙ্গে বোতল ভেঙে ঢোকাতে হবে।এবং সেটা ক্যামেরা অন করে লাইভ দেখাতে হবে।ড্রাগ আর ডলার তখন আমাকে পাগল করে রেখেছিল।সাথে নিলাম এই বন্ধুকে।আর সুনিতা আমাদের ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিল।তাই এক ডাকেই দেখা করতে চলে আসে।তারপর আমরা গেম শুরু করি।কষ্ট হচ্ছিল।কিন্তু ড্রাগের নেশায় অনুভব করতে পারিনি।খুনের শেষেই অর্ধেক ডলার ঢুকে যায়।বাকিটা পরের স্টেপ পুরো হলে পাব।
পিছন থেকে সাইবার সেলের একজন ইন্সপেক্টর বলে উঠলেন, ফোনটা চেক করা হয়ে গেছে। পুরো গেমটা ডার্ক ওয়েব থেকে পরিচালনা করা।
রবিনবাবু জুতোর ডগা দিয়ে নুন আর লঙ্কাগুড়ো কিছুটা উঠিয়ে ছেলেটার কাটা হাতে চেপে শক্ত চোয়াল করে বলে উঠলেন, 72(সেন্টু)221(টোটন)।মৃত্যুর শেষক্ষণে মেয়েটি কাচা রক্ত দিয়ে শুধু পাঁচটা সংখ্যায় খুনি দুজনেরই নামই লিখে যায়নি।তার মত অনেক সরল এবং নিষ্পাপ মেয়ের জীবনও বাঁচিয়ে গেছে।চল এবার।তোদেরকেও অন্ধকার জগতে পৌঁছে দিয়ে আসি।
-----সমাপ্ত-----