দৈনন্দিন
দৈনন্দিন
দৈনন্দিন
( পর্ব -৬ )
কলমে - কৃষ্ণ ব্যানার্জী
( প্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্য )
ঘড়িতে আট্টা দশ। অনির্বানদের গাড়ি এসে থামলো হোটেলের সামনে। একজন হোম সার্ভিসের লোক ছুটে তাদের গাড়ির সামনে উপস্থিত হলো। বয়স মেরে কেটে একুশ। অনির্বান গাড়িথেকে নেবে তাকে জিঙ্গাসা করল প্রিতম আমাদের জিনিসপত্র…….ছেলেটি কোন কথা বলতে না দিয়েই জানায় ' আপনার রুমে পৌঁছে দিয়েছি ওনারা একটু দেখে নিতে বলেছেন যদি কোন সমস্যা হয় আমাকে বলবেন আমি পাল্টে নিয়ে আসব। অপর দরজা দিয়ে তার স্ত্রী বেড়িয়ে অনির্বানের পাশে এসে উপস্থিত হয়। ছেলেটি বলে স্যার চলুন আপনাদের রুমটা দেখিয়ে দেই। অনির্বানের স্ত্রী বলেন তুমি আমাদের কাকা - কাকিমা বলেই ডাকতে পারো কারণ তোমার বয়সের আমার একটি ছেলে রয়েছে। ছেলেটি সন্মতি জানিয়ে বলে ঠিক আছে কাকিমা সারারাত পথে ছিলেন এখন রুমে গিয়ে একটু জিরিয়ে নিন। অনির্বান বলে বিশ্রাম নেবার সময় কোথায় ঘুরতে এসে ঘুমালে চলবে। ছেলেটি বলে না কাকাবাবু আমার বলার উদ্দেশ্য একটু বিশ্রাম করে ব্রেকফাস্ট সেরে তারপর ঘুরতে যাবেন যাইহোক ছেলেটি তাদের রুমে পৌঁছেদিয়ে বলল আমি কাউন্টারে রয়েছি ভিতরে কনিংবেল রয়েছে প্রয়োজন হলে বাজাবেন আমি চলে আসব। অনির্বান বলল ঠিক আছে জল…… কথা কেটে ছেলেটি বলল বাইরে নরমাল জল রাখা রয়েছে আর ফ্রিজে দুটো জলের বোতল রেখে দিয়েছি ঠান্ডা খেতে ইচ্ছে হলে নিতে পারেন। অনির্বান পুনরায় ধন্যবাদ জানাতে চাইলে ছেলেটি বলল এটাই আমাদের কাজ যাতে আপনাদের কোন অসুবিধা না হয়, এখন আমি চললাম প্রয়োজন হলে ডাকবেন কেমন। ছেলেটি চলে যায় অনির্বান দরজা বন্ধ করে স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে। স্ত্রী হাত ছাড়িয়ে বলে তোমার হয়েছেটাকি? অনির্বান বলে এতে আবার হবার কি দেখলে আমার স্ত্রী তাকে আমি জড়িয়ে ধরতে পারিনা? অনির্বানের স্ত্রী বলে অবশ্যই পারেন তবে এখন নয় সারাটা রাত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছি আমি এখন বাথরুমে যাবো একটু ফ্রেস না হলে হয়, গা হাতপা একেবারে ঘিন ঘিন করছে, আচ্ছা আমার জামাকাপড় কোথায়? অনির্বান বলে ঐ আলমারিতে রাখা রয়েছে পছন্দ মতো নিয়ে নাও। অনির্বানের স্ত্রী আলমারি খুলে দেখে এক গাদা জামা কাপড় টাল দেওয়া, সে বলে ' এগুলো কি করেছো? অনির্বান বলে কি এমন করেছি, জানো আমার জীবনে এমন একটা সময় গিয়েছে যখন স্কুল যাবার জন্য একটাই পোষাক ছিলো। বিকালে বাড়ি ফেরার সাথে সাথেই মা সেটা খুলে কেচে দিতেন, রাতে পাখার হাওয়াতে যতটুকু শুখাত বাঁকিটা ভোর হতেনা হতেই বাইরে মেলে দিতেন, আবহওয়া ভালো না থাকলে আর স্কুল যাওয়াই হতো না। ছোট বেলা থেকে অনেক কষ্ট দেখেছি বুঝলে। এখন ও সকল কথা থাক তোমার যেটা পছন্দ হয় সেটা নিয়ে বাথরুমে যাও তোমার পরে আমার লাইন বুঝলে। অনির্বানের স্ত্রী সম্মতি জানিয়ে একটা কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে যায়।
ঘরের জানালা থেকে সমুদ্র পরিষ্কার দেখা যায়। অনির্বান জানালার কাছে এসে দাঁড়ায় সে, পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বার করে একটা সিগারেট বারকরে সেটাকে ধরিয়ে একটা গভীর টান দিয়ে ধোঁয়াটাকে উড়িয়ে দেয় জানালার ফাঁকদিয়ে। কয়েক মুহুর্তের মধ্যে ধোঁয়াটা মিলিয়ে গেল আকাশের মধ্যে। খট করে একটা শব্দ করে অনির্বানের স্ত্রী বেরিয়ে আসে বাথরুম থেকে, খেয়াল করতে পারেনা অনির্বান তার মধ্যে আকাশ আর ধোঁয়ার মিলনের অঙ্কটাই চলছে, অনির্বানের স্ত্রী কাছে এসে বলে কি ভাবছেন বাথরুমে যাবেন না? স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলে ভাবছিলাম আকাশ আর সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে মানুষের জীবন আর মৃত্যুর কি মিল? স্ত্রী একটু অবাক হয়েই বলে তুমিনা কিসব বলো। অনির্বান বলে নাগো গিন্নি একটু ভাবলেই সমগ্র বিষয়টা জলের মতো পরিষ্কার সিগারেটের ধোঁয়াটাকে আমি যেই মুহুর্তে জানালার ফাঁকদিয়ে ছেড়ে দিলাম তখন কয়েক মুহুর্ত সেটা আমার চোখের সামনে ঘুরপাক খেয়ে মিলিয়ে গেল ঠিক তেমন ভাবেই আমাদের দেহের মধ্যে যে প্রাণবায়ুটা আছে সেটা যখন দেহথে বেড়িয়ে যায় সেও ঐ মহাকাশের মধ্যে মিলিয়ে যায়। পার্থক্য এটুকুই সিগারেটের ধোঁয়াটা কয়েক মুহুর্ত দেখা গেলেও প্রাণবায়ুকে আজপর্যন্ত কেউ দেখতে পেলনা, সুধুমাত্র একটা উপলব্ধি। বুঝলে কোন মৃত মানুষ যদি বলতে পারত মৃত্যুকে দেখতে কেমন তাহলেই সকল সমস্যাই মিটে যেত। এই শাড়িটা পড়ে তোমাকে কিন্তু দারুণ দেখাচ্ছে। তার স্ত্রী বলে ধুস তুমিও না কি যে বলো। অনির্বান বলে তুমি ততক্ষণে সাজুগুজু সেরে নাও আমি ফ্রেস হয়ে নেই তারপর ব্রেকফাস্ট করতে যাবো কেমন। বাথরুমের দিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে স্ত্রীর দিকে ঘুরে বলে ডেসিন টেবিলের ডয়ারে সাজের জিনিস রয়েছে দেখে নাও কেমন, এই বলে অনির্বান বাথরুমে চলে যায় কয়েক মুহুর্ত বাথরুমের দিকে তাকিয়ে থেকে তার স্ত্রী বলে হঠাৎ মানুষটার কিযে হলো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা তারপর সে ডেসিন টেবিলের সামনে গিয়ে সেখানে রাখা চেয়ারটার উপর বসে পরে।
চলবে…………………
