STORYMIRROR

আরিয়ানা ইচ্ছা

Classics

4  

আরিয়ানা ইচ্ছা

Classics

চুক্তিভিত্তিক বন্ধন (বিয়ে)

চুক্তিভিত্তিক বন্ধন (বিয়ে)

4 mins
293


 


১ম পর্ব,,,,


(চুক্তিভিত্তিক বন্ধন/বিয়ে)


★★বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের একটি এলাকা মগবাজার। এটি প্রশাসনিকভাবে ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত। 

___এই মগবাজার এলাকার রমনা থানার লোকাল পুলিশ ষ্টেশনের পুলিশের উচ্চতর কর্মকর্তা হলেন জনাব নওশেদ আলী। তিনি নিজের কেবিনের চেয়ারে বসে মাত্র একটা কেসের ফাইলে হাত দিতে যাচ্ছিলেন তখনই ঊনার মোবাইল ফোন টা ঝনঝন করে তার স্বরে বেজে উঠতে শুনা গেলো। ___

°°ঝনঝন আসলে কোনো আওয়াজ নয় এটার মানে হলো যখন অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ফোন টা বাজে তখনই তা বিকট শুনা যায়। কি আর করা যায় অনেক সময় অনেক জরুরী ফোন আসে বলেই যেকোনো ফোন ই ধরতে হয়।

কথা বলা শেষ হতেই তিনি ছুটলেন ইস্পাহানি গার্লস স্কুলের উদ্দ্যেশ্যে। স্কুলের গেটের কাছে আসতেই তিনি থমকে যান ওখানে অনেক ভীড় দেখে। অনেক জটলা পেকে কিছু একটা ঘিরে দাঁড়িয়ে সবাই।

❝ভীড় ঠেলে কোনরকম ভেতরে যেতেই তিনি দেখতে পেলেন তার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন একমাত্র ছোট্ট মেয়েটা চম্পার (কাজের মেয়ে) কোলে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। নওশেদ আলী দ্রুত পায়ে হেঁটে মেয়ের কাছে যান। মেয়েকে নিয়ে যেতে যেতে তিনি নিজেকে অসহায় অনুভব করেন। এ নিয়ে সাত সাতটাবার মেয়েটার উপর আক্রমণ হলো। ❞

তিনি পাশে অজ্ঞান হয়ে থাকা মেয়েকে ধীরে ধীরে ডাকেন 'নুশু মা আমার ও নওশী উঠো এবার মা! বাবা এসেছে তো ওঠো।'

'''ফ্লাটে আসার পর মেয়ের হাত ও গায়ের ক্ষত পরিস্কার করে দিয়ে স্কুল ড্রেসটা বদলে দেয়। বছর ঊনচল্লিশ এর নওশেদ আলী শক্ত কঠোর বাইরের জগতের কাছে হলেও মেয়েটা তার একমাত্র দূর্বলতা।


””


কাহিনী অতীতে,,,,

___এগারো বছর আগে সীমা আর সে দুই বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর বিয়ের সম্পর্ক শুরু করেছিলো। তারা দুজনেই এতিম ছিলো। সীমা অনাথ আশ্রমে থাকতো আর নওশেদ এর যখন ১৬ বছর বয়স তখন তার বাবা মারা যায়। তার বাবার অনেক সহায় সম্পত্তি রেখে যাওয়ায় নওশেদ এর কখনো অভাবে পড়তে হয়নি। ১৬ বছরে যখন আশ্রম থেকে বের হয় তখনই ২৮ বছর বয়সী নওশেদ এস সাথে তার বিয়ের ব্যবস্থা করে তার বাসার কাজ করতো জমিলা খালা সেই। তিনি নওশেদ এর বাসায় রান্না করতো। সীমার আঠারো বছর হয়নি তখনও তাই নওশেদ দুই বছর এক বাড়িতেই থেকে সীমাকে স্বাভাবিক হতে সময় দেয়। আর আঠারো বছর হতেই তারা সংসার জীবন শুরু করে। ভালোই চলছিলো তাদের সংসার জীবন। নওশেদ তখন লক্ষীপুর থানায় কাজ করতো।

সংসার জীবনের তিন বছরের মাথায় সীমা কন্সিভ করেছিলো। নওশেদ এর আজো সেইদিনগুলো মনে পড়ে সে আর সীমা কত খুশি ছিলো। কিন্তু হঠাৎ পাঁচ মাসের সময় মগবাজারে বদলী করে দেয় নওশেদ কে। সীমাকে এখানে সারাদিন একাই থাকতে হতো। লক্ষীপুর তারা যেখানে থাকতো পাশের ফ্লাটের ভাবীর সাথে সীমার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। ওই ভাবী ছিলো খুব ধার্মিক মহিলা। নওশেদ কখনো ওই মহিলাকে দেখেনি তবে শেষ কিছুদিন সীমা উনার সাথে সময় কাটাতো আর ধীরে ধীরে সীমা পর্দা করা শুরু করেছিলো। যেটুকু সময় নওশেদ বাড়িতে থাকতো সীমার খুব খেয়াল রাখতো।


তারপরে অনেক গুলো দিন কেটে যায় একদিন

তাদের ঘর আলো করে আসে তাদের একমাত্র কন্যা নওশী। নওশীর জন্মের পর থেকেই সীমা প্রায় অসুস্থ থাকতো। ডাক্তার ও অনেক দেখা হয়েছিলো তবে কেউ ভালো ভাবে সীমার রোগ ধরতে পারেনি এবং তাকে সাড়িয়ে তুলতে পারেনি।

নওশীর দুই বছরের সময় ঘটে এক হৃদয় মর্মান্তিক ঘটনা যেই দিনটা নওশেদ কখনো ভুলতে পারেনা। সেদিন সীমা তাদেরকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছিলো। নওশেদের কলিগ আর প্রতিবেশীরা সবাই আবারও বিয়ের পরামর্শ দেয় সে সাফ জানিয়ে দেয় সীমার জায়গা কাউকে দিতে রাজি না সে। 

সবাইকে জানিয়ে দেয় নওশেদ তার আর সীমার আট বছরের সম্পর্কের কথা স্মরন করেই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিবে বলে ঠিক করেছে।


,,


কাহিনী বর্তমানে,,,

আজ থেকে ঠিক পনেরো মাস আগে রাজু নামক এক সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছিলো নওশেদ আলী।

রাজুর বাবা একজন নামকরা দলনেতা হলেও রাজু খুন, ডাকাতি, ধর্ষণসহ বস্তি এলাকার মানুষদের স্বাভাবিক জীবনযাপন দূর্বিসহ করে দিয়েছিলো। 

___রাজুকে জেলে ঢুকানোর পর থেকেই নওশেদ আলীকে হুমকি দিতো রাজুর বাবা মিনিস্টার রজব আহমেদ। তারপর থেকেই পাঁচ বছরের নওশীর জীবন নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছে। আজতো ওর দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা চম্পা (কাজের মেয়ে) ও অনেক জঘম হয়েছে। চম্পার ছেলে কল করে বলেছে তার মা'কে আর পাঠাবেনা এ বাসায় কাজ করার জন্য। ___

''এতোদিন আড়াল থেকে নওশীকে ছোটখাটো ভয় দেখালেও আজকে একটা গুন্ডা বোরকা পড়ে স্কুলের মাঠে খেলতে থাকা নওশীকে তার বাবার লোক বলে ডেকে টয়লেটের ভেতর নিয়ে গিয়ে অনেক মারধর করে তারপর অজ্ঞান করে বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় দারোয়ানকে জানায় তার মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে তাই কোলে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গেটের বাইরে চম্পা দেখে ফেলে এবং চেচামেচি করলে নওশীকে ফেলে পালায়,, চম্পাকেও সাথে আঘাত করে। নওশীকেও বাজেভাবে আঘাত লাগে। কিছুক্ষণ আগে ডাক্তার এসে জানায় শারীরিক আঘাতের চেয়ে মানসিক ভাবে বেশী আঘাত পেয়েছে মেয়েটা। ওকে যতটা পারা যায় সাবধানে রাখতে বলেছেন ডাক্তার। 


****


নওশেদ রান্নাঘরে মেয়ের জন্য স্যুপ তৈরি করছিলো তখনই চিৎকার ভেসে আসে ঘর থেকে 'বাবা আমাকে বাঁচাও বাবা, লোকটা আমায় মেরে ফেলবে বাবা'..... নওশেদ আলী তৎক্ষনাৎ ছুটে চলে এসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন। অনেক আদর দিয়ে মেয়েকে বুঝাতে থাকে আমি চলে এসেছি মা আর কেউ তোমার ক্ষতি করতে পারবেনা এতো আমি,,। নওশী শান্ত হলে তাকে স্যুপ টুকু খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে বুকের মাঝে জড়িয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। তিনি দেখেন নওশী তাকে শক্ত করে ধরে আছে এখনও যেনো ওর ভয় ওকে ঘিরে রেখেছে,,। নওশেদ প্রথমে পাঁচদিনের ছুটির আবেদন করেন তারপর মেয়েকে জড়িয়ে ওর ভবিষ্যৎ ভাবনায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন,,,। নওশীর সুরক্ষার কথা ভাবতে ভাবতে সারারাত আর ঘুম এলোনা,,,,,,,।


চলবে,,,,,


(গল্পটি কেমন হলো অবশ্যই পড়ে জানাবেন,,, ভুল হলে অবশ্যই ভুল ধরিয়ে দিবেন,,,

আর পরবর্তী পর্বগুলো পড়ার আমন্ত্রণ রইলো সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।💖💖💖✨)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics