ছদ্মনাম (লেখালিখির অনুপ্রেরণা)
ছদ্মনাম (লেখালিখির অনুপ্রেরণা)


মাত্র আঠেরোতেই অনিমেষের সাথে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল সোমলতার। বিয়ের পর আরও পড়তে চাইলে,বাধা এলো পরিবার থেকে। মুখ বুজে সব মেনে নিলেন সোমলতা। সম্পর্কের বিষ মাখা তীরে আহত হতে হতে এক সময় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেল। সে সময় সোমলতার পাশে তার মা ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। কিন্তু সোমলতার এই আশ্রয়টুকুও একদিন হারিয়ে যাবার সময় হয়ে এলো।
মাকে শেষবারের মত দেখতে এসে নীরবে চোখের জল ফেলছিল সোমলতা। ফিসফিস করে বলেছিল
- তুমি চলে গেলে আমার তো আর কেউ থাকবে না মা। কাকে বলব আমার যন্ত্রনার কথা।
শারীরিক কষ্টকে দূরে সরিয়ে নিজের
রুগ্ন হাতটা মেয়ের হাতে রেখে মা বলেছিলেন
- তুই না স্কুলে পড়তে সুন্দর সুন্দর কবিতা গল্প লিখতিস। আবার লেখা শুরু কর। আমি যখন থাকব না এই কাগজ কলমই তোর বন্ধু হবে। তোর মনের কোণে জমে থাকা দুঃখ, যন্ত্রনা সব তুই কলমের আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলবি। আমি জানি তুই পারবি।
মায়ের কথা রেখেছিল সোমলত
া। জীবনের সব ঝড়-ঝাপটা সামলেও নীরবে সংসারের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব পালন করে যেত। কিন্তু তার কলম কথা বলতে শুরু করলো।
একদিন এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ এলো অনিমেষের। সপরিবারে উপস্থিত হলেন অনিমেষ।
উদ্বোধনী সঙ্গীতের পর পুরস্কার ঘোষণা শুরু হলো। নবীনতম সেরা সাহিত্যিকের পুরস্কার ঘোষিত হতেই মঞ্চের দিকে পা বাড়ালেন সোমলতা।
অনিমেষ হাত চেপে ধরলেন
- কোথায় যাচ্ছো?
- কেন, পুরস্কার নিতে।
- কি পাগলামি করছো? ডাকছে তো কোনো এক অনামিকাকে।
- আমিই অনামিকা।
- তুমি?
- হ্যাঁ, তোমাদের জন্য ছদ্মনামটা নিতে বাধ্য হয়েছিলাম তবে এবার থেকে লোকে আমায় ওই নামেই চিনবে।
সবার করতালির মধ্যে মঞ্চে উঠে পুরস্কার নিতে গিয়ে বুকটা আরও একবার চিনচিন করে উঠলো সোমলতার। যার অনুপ্রেরণায় এই দিন এলো সে যদি একটু দেখে যেতে পারত...!! মনে মনে সোমলতা বলল
"যেখানেই থাকো, তুমি ভালো থেকো মা"।