STORYMIRROR

Nikhil Mitra Thakur

Classics Inspirational

4  

Nikhil Mitra Thakur

Classics Inspirational

চারুশীলাদেবী

চারুশীলাদেবী

2 mins
292

চারুশীলাদেবী

অবিভক্ত জেলার মেদিনীপুর জেলার মেদনীপুর শহর সংলগ্ন একটি ছোট্ট গ্রাম হবিবপুর। বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত। এই গ্রামে বাস করতেন ত্রৈলোক্যনাথ বসু ও লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী। তাদের পুত্র অগ্নিযুগের বীর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর এখানেই জন্ম হয়।

হাবিবপুর গ্রামের খুব সাধারণ এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের বধূ ছিলেন চারুশীলা দেবী। ছেলেবেলা থেকে ক্ষুদিরামের সাথে আলাপ ছিল চারুশীলা দেবীর। বাবা-মা হারানো বাচ্চা ক্ষুদিরামকে চারুশীলা খুবই স্নেহ করতেন। এমন সুসম্পর্ক হওয়াতে ক্ষুদিরাম মাঝে মধ্যে চারুশীলা দেবীর বাড়িতে থাকতেন। নিজে হাতে রান্না করে তিনি অভুক্ত ক্ষুদিরামকে খাওয়াতেন। ক্ষুদিরামের ছোট্ট বেলা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ক্ষুদিরাম আর দশ পাঁচটা ছেলের মতো সাধারণ কোন ছেলে নয়।

তিনি সেই সময় গল্পের ছলে পরাধীন ভারতবর্ষে মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা ক্ষুদিরামকে শোনাতেন। বালক ক্ষুদিরামের মনে অত্যাচারী ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে রাগক্ষোভ জমা বাঁধতো। ছোট থেকেই তার মনে ইংরেজদের প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার এক শক্তিশালী স্পৃহা জেগে উঠেছিল। ছোট থেকে জমে থাকা ক্ষোভ ও রাগের বহিঃপ্রকাশ থেকে বালক ক্ষুদিরাম একদিন হেমচন্দ্র কানুনগোকে রিভলবার চেয়েছিলেন ইংরেজ হত্যা করার জন্য।

ব্যক্তিগত জীবনের নানা টানাপোড়েনের বানে ভেসে ক্ষুদিরাম গিয়ে পৌঁছায় মেদিনীপুর শহরে। এই শহরের স্বনামধন্য মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনার জন্য তাকে ভর্তি করা হয়। পরিচয় হয় বিপ্লবী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ভাই কলিজিয়েট স্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসুর সাথে। বালক ক্ষুদিরাম পরাধীন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের বহু ইতিহাস জানতে পারে। জন্ম থেকে তার হৃদয়ে খচিত ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার ইচ্ছা বাস্তব রূপ লাভের জন্য উন্মুখ হয়ে পড়ে।

এরপরেই ক্ষুদিরাম মেদিনীপুর থেকে ছুটে যান হাবিবপুরে গ্রামে। ক্ষুদিরাম দেশের জন্য নিজেকে নিবেদিত করবেন এই মনোবাসনা ব্যক্ত করে চারুশীলা দেবীর কাছে। চারুশীলা বুঝতে পারেন ছেলেবেলায় ক্ষুদিরামকে দেখে যেটা অনুমান করেছিলেন সেটা ছিল একশো ভাগ সত্যি। চারুশীলাদেবী দেরি না করে তখন ক্ষুদিরামকে রক্ততিলক পরিয়ে স্বদেশীর প্রতিজ্ঞা করিয়ে নেন।

১৯৩০ সালে ৬ই এপ্রিল গান্ধীজীর ডাকে সারা দিয়ে তমলুক মহকুমার সত্যাগ্রহীরা তমলুক শহরের রাজবাটি হতে গণমিছিল করে লবন আইন ভঙ্গ করার শপথ নিয়ে নরঘাট এর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সেদিন নরঘাট এক বিরাট জনসমুদ্রে পরিণত হয়। প্রায় ৩০ হাজার লোক ওই সভায় যোগদান করে। এই জনসভায় বক্তা ছিলেন ক্ষুদিরামকে রক্ততিলক পড়িয়ে দেওয়া অগ্নিকন্যা চারুশীলা দেবী।

চারুশীলা দেবীর মত দেশপ্রেমী মহিলারা কোন বিপ্লবী দলের সদস্যা না হয়েও,অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা না নিয়েও নিজের বাড়িতে বসে নিজের মতো করে অন্তরের টানে ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার জন্য চেষ্টা করে গেছেন। স্বাধীন ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখেছেন। তাদের অবদানেই আমরা ক্ষুদিরাম বসুর মত বীর বিপ্লবীদের পেয়েছি। কিন্তু তারা অনেকে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পান নি। তাদের অবদান অজানা থেকে গেছে। স্বভাব বশে তারা ছিলেন অগ্নিকন্যা,অজানা অগ্নিকন্যা।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics