Partha Pratim Guha Neogy

Abstract Comedy Others

3  

Partha Pratim Guha Neogy

Abstract Comedy Others

চালাকির দন্ড

চালাকির দন্ড

3 mins
197


সে অনেকদিন আগেকার কথা,তখন ইংরেজ আমল। ঢাকা তখন একটা এক ছোট মফস্বল শহর। কাজ-কর্ম-চাকরি বাকরি সব কিছুরই প্রাণকেন্দ্র কলকাতা। বিয়ের বাজার, রোগীর চিকিৎসা, ছেলের মুসলমানীর দাওয়াতিদের খাওয়ানোর বাজার-সদাইয়ের জন্য এমনকি ধনী লোকের মেয়ের নাক-ফোড়ানির উৎসব বা পুতুলের বিয়ের ‘লওয়াজিমা’র ফর্দ নিয়েও ছুটতে হতো কলকাতায়। এছাড়া তখন অবিভক্ত ভারতের রাজধানী ছিল কলকাতা। কলকাতায় তখন সমস্ত বড় বড় লোকের বাস। সেহেতু কলকাতায় সব বড় বড় দামী জিনিসের দোকানপাট হগ মার্কেট ( বর্তমানে নিউ মার্কেট ) বিপননের মধ্যমনি হয়ে তখন বিরাজ করত। আর গঙ্গার পাড় দিয়ে গড়ে উঠেছিল বাংলার শিল্প সংস্কৃতির স্বর্নযুগ। কলকাতা বন্দর সব দেশের থেকে আসা জাহাজে ভরে থাকত ,অর্থাৎ আমদানি - রপ্তানি ব্যবসা পুরোদমে চালু ছিল। বিদেশের বাজারে খুব চাহিদা ছিল ঢাকাই জামদানি, মসলিন, মুর্শিদাবাদের সিল্ক ইত্যাদির। কলকাতায় তখন সব বড় বড় স্কুল কলেজ ছিল যেখানে উচ্চমেধার ছাত্র - ছাত্রীরা লেখাপড়া করতে আসতো, অধ্যাপক হিসাবে ছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত, মহামতি ডেভিড হেয়ার, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মত মনীষীগন।

এককথায় তখন কলকাতা সব দিক থেকে দেশের ভরকেন্দ্র হিসাবে পরিগনিত হত। তাই যে কোন প্রয়োজনে মানুষ চলে আসতো কলকাতায় - সেটা পড়াশোনার কারণে হোক অথবা চাকরির জন্যই হোক, কিংবা গৃহের কোন শুভ অনুষ্ঠানের জন্য হোক।


একবার এক কৃপণ গৃহস্থ মেয়ের বিয়ের বাজার করতে কলকাতায় যাচ্ছে, মূল লক্ষ্য যাতে দরদামে কিছু সুলভে পাওয়া যায়

। তখন কলকাতায় যেতে হতো নারায়ণগঞ্জ বা কার্তিকপুর থেকে গোয়ালন্দ হয়ে স্টিমারে। স্টিমারে গোয়ালন্দ পৌঁছে সেখান থেকে ট্রেনে কলকাতা। গোয়ালন্দ স্টিমার ঘাট ছিল তখন বেশ জমজমাট। দোকান-পাট, ফেরিঅলা-হোটেল, নৌকায় ভাসমান হোটেল, কুলি-মিস্তির ছোটাছুটি হৈচৈ-এর এক এলাহিকাণ্ড। কৃপণ গেরস্ত ভাবছিল, রাস্তাঘাটে খেয়ে আর পয়সা নষ্ট করবে না। কলকাতায় পৌঁছেই একবারে যা হোক কিছু খেয়ে নেবে। কিন্তু সে খেয়াল করেনি যে নদীপথে যাত্রাকালে বাতাস ও নদীর সুমিষ্ট আবহাওয়ায় দ্রুত ক্ষুধা লাগে এবং ক্ষুধাটা চড় চড় করে বাড়তে থাকে। অতএব কিছু খেয়ে নেবার ইচ্ছায় সে ঘাটের এক হোটেলে ঢুকে পড়ে।


হোটেলে তখন মেলা লোক খাচ্ছে। গ্রাহকরা খেয়েদেয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পয়সা দিচ্ছে। ম্যানেজার একজন পয়সা দিতে তার সামনে আসলেই ক্রিং ক্রিং বেল বাজায়।

ওদিকে বয়রা চিৎকার দিয়ে ওঠে:

‘সামনে চার আনা, তার পেছনে তিন—

তার পেছনে সাড়ে ছ’আনা-গুনে বুঝে নিন।

তো, আমাদের কৃপণ লোকাটও গেছে, সেই হোটেলে খেতে। তার ভয়, ‘হৈটাল’ আলারা গলাকাটা দাম নেয়। তাই, এক টেবিল বয়কে কাছে ডেকে সে জিজ্ঞাসা করে : সস্তায় কি খাওন যায় ক’তো! ভাত খামু। 

বয় : ভাত, নুন পানি—সব চাইতে সস্তা, তিন পয়সা। আর লগে একখান পোড়া সিটি শুকনা মরিচ লইলে এক আধলা বেশি। 

কৃপণ লোক : নারে, অত শুকনা ভাত গলা দিয়া যাইব না।

বয় : পানি দুই গেলাস খাইবেন, তাইলেই যাইব।

কৃপণ : আর একটু দামী খাওনের কথা কও বাজান।

বয় : তাইলে ভাত লন, আর ইলশা মাছের ঝোল লন, সঙ্গে মাছ লইলে পড়ব ছয় আনা—শুধু ঝোল আর ডাইল লইলে পড়ব তিন আনা। আর এক কাম করবার পারেন—সে ব্যবস্থাও এই হৈটালে আছে।

কৃপণ লোক : কী ব্যবস্থারে বাজান!

বয় : আপনে ভাত আর ইলশা মাছের সুরুয়া লইবেন। আর আপনের সামনে একটা বাটিতে থাকব ফৈর-আলা তেলে-ঝোলের একখান ‘দবজ’ (পুরুষ্ট) পেটি; ভাত খাইবেন ইলশার সুরা দিয়া, তয় ঐ পেটি দেইখ্যা দেইখ্যা আর পেটিই খাইতেছেন মনে কইরা খাইতে পারেন। তাতে আর এক আনা বেশি পড়ব। ঐ এক আনা ‘চোখ লাগানি’র জন্য। যে মানুষটা পরে ঐ পেটি দাম দিয়া কিনা খাইব তার পেট সাথে সাথে গটরমটর করলে আমরা ফ্রি বড়ি সাপ্লাই দেই। হেই বড়ি কিনতে আধ আনা, আর আপনের ‘দেখন সুখ খাওনের চার্জ আধ আনা।

আমাদের কৃপণের এই ব্যবস্থা পছন্দ হয়। সে ‘দেখন সুখ’ খাওয়ার অর্ডার দেয়। আর চার আনা পয়সাও ‘খুতির’ ভিতর থেকে বের করে রাখে। খাওয়া শেষে বয় ম্যানেজারের ক্রিং গুনে বলে : তিন নম্বরে দেখন সুখ অলার ড্যামাইজ (ডেমারেজ) চার্জসহ সাড়ে চাইর আনা।

কৃপণ : কেন, কেন, আধ আনা বেশি কেন? বয় : ইলশার পেটিতে যে চাটন দিছ, তা কি আমরা দেখি নাই তার জন্য জরিমানা মাত্রই আধ আনা

নীতি : অতি চালাকের গলায় দড়ি।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract