বর্ণময় জীবনের স্বাদ
বর্ণময় জীবনের স্বাদ


জীবনটা একেবারে নোনতা হয়ে গেছে অমিতের কাছে। এতদিন ধরে পড়াশোনা করেছে চাকরির জন্য। কিন্তু লাভ হলো কি? চাকরির কোন নাম গন্ধ নেই। যাও বা কিছু ভ্যাকান্সি বের হয় একটা পোস্টের পেছন হাজার হাজার জনের লাইন থাকে। আবার যে পরীক্ষা দেয় সেটার নিয়োগ ঝুলে থাকে দিনের পর দিন।
তাই এবার ভাবছে চাকরির চেষ্টা না করে অন্য কিছু করবে। কিন্তু কি করবে তাই ভেবে পাচ্ছে না। ব্যবসা করতে গেলেও টাকার প্রয়োজন। কিন্তু অত টাকা থাকে কে দেবে? তাই প্রচন্ড এক অস্থিরতার মধ্যে ভুগছে অমিত। এত পড়াশোনা করে চাকরি না পেলে কি যন্ত্রণা তা ওই বুঝতে পারছে।
অবশেষে ও সিদ্ধান্ত নিল গ্রামে চলে যাবে। গ্রামে ওদের জমিজমা ভালোই আছে। ওর বাবা সব দেখাশোনা করে। কিন্তু তার ইচ্ছা ছিল ছেলে পড়াশোনা করে শহরে চাকরি করুক। কিন্তু সে ইচ্ছা আর পূরণ হচ্ছে না। মানুষের সব আশা তো আর পূরণ হয়না। তারে আসাটাও মনে হয় এরকম।
হঠাৎ অমিতকে ফিরে আসতে দেখে অবাক হলেন অমিতের বাবা। কোন কিছু না জানিয়ে ফিরে এসেছে সে। সব ঘটনা খুলে বলল অমিত। তার বাবা বুঝতে পারলে সব। শুধু সান্ত্বনা এটুকুই চেষ্টা তো করেছে ছেলে। জীবনের সব চেষ্টা তো আর সফল হয় না। তবে ছেলের মনের ইচ্ছা শুনে আনন্দিত হলেন তিনি।
পরদিন থেকে কাজে লেগে গেল অমিত। যেসব জমিগুলো পড়েছিল কোন চাষবাস হতো না সেগুলোতে গ্রামের কর্মহীন চাষিদের লাগিয়ে দিল। জমিগুলিকে চাষের উপযুক্ত করে তুলতে হবে।এতদিন জীবনকে শুধু নোনতাই মনে হতো। কিন্তু জমিজমার কাজে নেমে অমিত বুঝতে পারল গ্রামের মানুষদের অবস্থা। তারা কেমন কষ্টকর জীবন যাপন করে। তখন জীবনটাকে ঝাঁঝালো মনে হলো তার।
অবশ্য কয়েকদিনের কঠোর পরিশ্রম আর চেষ্টার পরে অমিত আর তার সহযোদ্ধারা সফল হল। সকলেই খুব পরিশ্রম করছিল। সিদ্ধান্ত হলো সেখানে বিভিন্ন রকমের ফুলের চাষ করা হবে। এগুলোর শহরে বেশ চাহিদা আছে।
এভাবে চলতে লাগল। গ্রামের কর্মহীন লোকগুলোর কর্মসংস্থান করল আরেক কর্মহীন শিক্ষিত যুবক। যে এতদিন চাকরির চেষ্টা করছিল সেই এখন অনেকের চাকরির ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। অমিত নিজে সেটা উপলব্ধি করতে পারছে কিনা কে জানে? পারলে হয়তো দেখছে তার হলদে পাংশুটে জীবন কিভাবে ধীরে ধীরে মিষ্টি হয়ে উঠেছে। নিজের জন্য করার চেয়ে অপরের জন্য কিছু করার মত জিনিস আর হয় না।
আসলেই মানুষের জীবন বর্ণময়। কখনও যে জীবন নোনতা হলদে পাংশুটে আর ঝাঁঝালো সেই জীবনই পরে হয়ে ওঠে মিষ্টতায় পূর্ণ। সবকিছু যেন এক সুতোয় বাঁধা।