STORYMIRROR

SUKANYA SAHA

Tragedy

2.5  

SUKANYA SAHA

Tragedy

বিসর্জন

বিসর্জন

2 mins
788


প্লেনের চাকা  বিমান বন্দরের রানওয়ে ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওমের চোখ খুঁজতে থাকে  কাউকে ... এয়ারপোর্টে মা বাবা হিয়া সব্বাই রিসিভ করতে এলেও... নাহ! সে  আসেনি ...সে মানে ঝিল... যার  জন্য এবার পুজোয় তড়িঘড়ি কোলকাতায় ছুটে আসা ...

কেন এল না ঝিল ? নিছক অভিমান ? মনখারাপ ? রাগ ?

ইমিগ্রেশান পেরিয়ে বাইরে বেরোতেই জড়িয়ে ধরেন বাপি ... ওম তো উচ্চতায় কবেই তাকে ছাড়িয়ে গেছে... বেশ কিছুদিন যাবৎ হাঁটুটা বেশ ভোগাচ্ছে  শিবতোষকে ... বয়েসের রোগ তাহলে তাকেও জাঁকিয়ে ধরল !!... উপযুক্ত ছেলেকে জড়িয়ে ধরার আনন্দই আলাদা ... সন্তান তো... একেই বলে বোধহয় রক্তের টান!

"তবে যে তুই বলেছিলি এবারে  আসবি না ? ছুটি নেই একেবারে ? " ওমের হাত থেকে ব্যাগ নিতে নিতে জিজ্ঞেস করেন প্রতিমা ... দাদা না  এসে  এবার থাকতে পারতো ! ফুট কাটে হিয়া , ওমের ছোটো বোন ... হঠাত ছায়া ঘনায় প্রতিমার চোখে ... অভিমান ? ওমের চোখ এড়ায় না ... কিন্তু এরা  একবারও কেউ ঝিলের কথা বলছে না কেন ??

এয়ার পোর্ট থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠে সকলে ... শিবতোষ বাবুর  নিজের গাড়ি ... কোয়ালিস ... ওম সামনে বসে ড্রাইভারের  পাশের সিটে ... পিছনে শিবতোষ বাবু প্রতিমা আর  হিয়া ... আজ নবমী ... শেষ পুজোর  আনন্দটুকু গায়ে  মেখে  নিতে সারা কোলকাতা যেন পথে বেড়িয়ে পড়েছে ... ওমের চোখ একজনকেই খুঁজছে ভীড়ের মাঝেও ... কি করছে ঝিল ? ঠাকুর দেখতে  বেরিয়ে পড়েছে ? না পাড়ার প্যান্ডেলে?


আমরি হাসপাতালের ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিটের ঘরটা বড় ছোটো বড়  দমবন্ধ লাগে ঝিলের ... নিঃশ্বাস যেন আটকে  আসে ... ওম কি আজ এসেছে ? আজকেই তো আসবার কথা ...নবমী না আজ ? সব হিসেব গুলিয়ে যায় ঝিলের ...আই সি সি ইউ য়ের হিমশীতল ঘরে খালি বিভিন্ন মনিটারিং মেশিনের  আওয়াজে আধেক ঘুম আধেক জাগরণে একটা ছবি ফুটে ওঠে ঝিলের চোখের সামনে ... একটা প্যান্ডেল , প্রচুর ভীড়... ঠেলাঠেলি ... হঠাত আগুন ধরে যায় প্যান্ডেলে ... ভয়ে  আতংকে দিশেহারা  মানুষগুলো দৌড়াতে থাকে ... ঝিল পারে না ওদের সঙ্গে ... মাটিতে পড়ে যায় ... উন্মত্ত জনতা ওকে পায়ে মাড়িয়ে ছুটে যেতে থাকে ... তারপর সব অন্ধকার ... জ্ঞান হারায় ঝিল


ব্যাগটা রেখেই ওম এক দৌড়ে ঝিলেদের বাড়িতে যায় । গেট খুলেই দেখতে পায় সারা বাড়ী নিঝুম । যেন শ্মশান পুরীর স্তব্ধতা । বুঝতে পারে না ওম । সব্বাই মিলে  এরা গেল কোথায় ? পঞ্চমীর দিনও তো কথা হয়েছে ঝিলের সঙ্গে । ফোনে হোয়াটস অ্যাপে ... একবার তো বলেনি পুজোয় কোথাও বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান আছে ... তবে ? কাকিমা বুবাই এরাই বা গেল কই ? সদর দরজার কোলাপসিবেলে একটা মস্ত তালা ... হতভম্ব ওম মনে করতে থাকে পঞ্চমীর পর ঝিলের মোবাইলটা কেবলই নট রিচেবেল বলছে ... আর চব্বিশ ঘণ্টা অনলাইন থাকা মেয়েটার হোয়াটস অ্যাপও বন্ধ...



আজ দশমী ... পাড়ায় মায়ের বরণ সিঁদুর খেলা শেষ হয়েছে ... হাতে বরণের থালা নিয়ে ছেলের ঘরে ঢোকেন প্রতিমা ... ওম বসে আছে চুপ করে পড়ার টেবিলে , ঝিলের ছবিটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ... ঘর অন্ধকার , আলো পর্যন্ত জ্বালে নি ... ছেলের মনের কথা অজানা নয় প্রতিমার , তাছাড়া সেই ছোট্টবেলা থেকে ঝিল তাদের বাড়ি আসত... মেয়েটিকে বড় স্নেহ করতেন তিনি । পিছন থেকে এসে ছেলের মাথায় হাত রাখেন প্রতিমা ... বলেন ,"ওরা ফিরে এসেছে শ্মশান  থেকে ... একবার যাবি না ও বাড়ি ?" মায়ের হাতের স্পর্শ পেয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে ওম, একেবারে বাচ্চা ছেলের মতো... ঝিলের ছবিটা হাতে নিয়ে বলে ," আমি গঙ্গার ঘাটে যাব মা, হাবুল , পচাদের দাঁড়াতে বলো ... আজ যে  আমার মনের ঘরের প্রতিমারও বিসর্জন ..."


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy