SUKANYA SAHA

Classics

2  

SUKANYA SAHA

Classics

প্রিয় বান্ধবী

প্রিয় বান্ধবী

4 mins
965


ইমনের ছোঁড়া বাস্কেট বলটা নেটে ঢুকতেই সাইড লাইনের ধার থেকে একটা তীব্র চিৎকার ভেসে আসতে শুনল সাহানা ... বা...স্কে...ট । গলাটা আর কারো নয় শুভম স্যরের ।তার মানে এই ইন্টার স্কুল বাস্কেট বল কম্পিটিশানে  জিতে  গেল তাদের টীম । কিন্তু কেন জানি না একটুও আনন্দ  হচ্ছে না সাহানার ... একটুও নয় ... মাঠের মধ্যে ততক্ষনে ইমনকে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন কোচ শুভম স্যর ... অন্যান্য মেয়েরা কাঁধে তুলে নিয়েছে ইমনকে ... সাহানা জানে আগামী কয়েক দিনের জন্য কলেজের হিরোইন হয়ে গেল ইমন ... পুরো লাইম লাইটটাই ঘুরে গেল ওর দিকে ...মুখ কালো করে ধীরে ধীরে মাঠ ছাড়ে সাহানা , মাথা নীচু , এখন  সব্বাই গোল্ডেন গার্ল ইমনকে নিয়ে ব্যস্ত ! তাকে কেউ খেয়াল করবে না ...

 

                    ড্রেসিং রুমে  এসে জার্সি চেঞ্জ করে সঙ্গের সাইড ব্যাগে ঢোকাতে  থাকে  সাহানা ... মাঠের ভীড়টা ড্রেসিং রুম অবধি পৌঁছানোর আগেই তাকে  পালাতে  হবে  এখান থেকে ... ইমনই চিরদিন গ্ল্যামার কুইন হবে আর  সে থাকবে সবার পিছে  সবার নীচে  সবহারাদের মাঝে !! অথচ তারা একটা গোটা টিম ; টিমের  এই জয়ে  তাদের  সকলের সমান অধিকার ... তবে  সেকথা  আর কবে  কে বুঝেছে ! বিশেষতঃ সেই টিমে  যেখানে কোচ নিজেই বিশেষ একজন খেলোয়াড়ের প্রতি ইনক্লাইনড... ড্রেসিং রুম থেকে বেরিয়ে রাস্তায় পা রাখে সাহানা ... এখন সে পি জি তে ফিরে যাবে ... স্টেডিয়াম থেকে সল্টলেক , অনেকটাই দূর ...

 

              পি জি তে ফিরে একটা বই খুলে নিজের খাটে গড়িয়ে  পড়ে সাহানা ... সে কি দিন দিন জেলাস  হয়ে পড়ছে  ইমন সম্বন্ধে ?অথচ এরকম তো হওয়ার  কথা  ছিল না ... সে আর ইমন এক জেলার  এমনকি একই শহরের মেয়ে ...স্কুলেও তারা ছিল বুজুম ফ্রেন্ড ... ছোটোবেলা থেকেই ইমনের গড়ন পুরুষালি ধরনের , লম্বা একহারা চেহারা , শ্যামলা মাজা মাজা রং , বয়েজ কাট চুল । খেলাধূলাতে চৌকস । অসম্ভবফিট বডি । তুলনায়  সাহানা অনেক মেয়েলি ধরণ ; গড়ন উচ্চতা , চুল এমনকি ব্যবহার সব দিক  থেকেই ...উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে দুজনেই কলকাতার এই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়তে চলে আসে ... বাবা হারা ইমনের মা প্রথম দিকে ইমনের কলকাতায় থেকে পড়া নিয়ে খানিকটা দুশ্চিন্তায় ছিলেন ; কিন্তু সাহানাও একই কলেজে চান্স পেয়েছে  জেনে নিশ্চিন্ত হন খানিকটা ... ঠিক হয় ইমন ও সাহানা একই পি জি তে থাকবে । সেই মতো সল্টলেকের এই পি জি তে গত দেড় বছর ধরে তারা রুম মেট...

         বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে সাহানা স্পষ্ট  দেখতে পায় সে আর  ইমন একটা ক্যাডবেরি নিয়ে  মারামারি করছে ... সাহানাকে  রোজকার সব কথা না বলতে  পারলে পেটের  ভাত  হজম হত না ইমনের ... সেই ইমন , তার পাশের খাটে শোয়া ইমন , তার  রুমমেট ইমন কবে  এরকম  চেঞ্জ হয়ে গেল ? আর সাহানা  টেরই পেল না ? চোখের কোল ভিজে ওঠে সাহানার ... মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে তার ...

 

       গত বছর মনে পড়ে সাহানার... সে আর ইমন  দুজনে  মিলে ভাইফোঁটার পর গিয়েছিল কুছ কুছ হোতা হ্যায় সিনেমাটা দেখতে ... কাজল  রানী আর শাহরুখ ...কাজলের জন্য খুব দুঃখ হয়েছিল সাহানার ; হলেই কেঁদে ফেলেছিল সে ... ইমন গলা জড়িয়ে  ধরে বলেছিল ধুর পাগলি! এটা তো সিনেমা ... আমাদের  মধ্যে  এরকম কিছু হবে না দেখে নিস ...সেই ইমন আবার  একদিন রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে গল্প করতে করতে বলেছিল , শুভমদা, আমাকে সত্যিই খুব ভালোবাসে  জানিস! চমকে  উঠেছিল সাহানা ... শুভমদা মানে শুভম স্যর ?

হ্যাঁ অকপটে কবুল করে ইমন ...

 

     ব্যাপারটা যে  একেবারেই আগে আঁচ করতে পারেনি সাহানা  তা নয় ! বরাবরই পড়াশোনায় ভাল সাহানা আর ইমন খেলাধূলায় ... কলেজের  যাবতীয় নোটস সাহানাই তৈরী করত।আর পরীক্ষার  আগে  ইমন সেগুলো  মুখস্ত করে  উগরে  দিত ... খেলাধূলায় চৌকস  হওয়ার  সুবাদে ইমন প্রথম থেকেই নজরে পড়ে যায় শুভম স্যরের ... দু জনের  মুগ্ধতা চোখের  ভাষা থেকে কিছুই বুঝতে বাকি ছিল না সাহানার ... কিন্তু সেটা যে ভেতরে ভেতরে এত দূর গড়িয়েছে জানত না সাহানা ... সেদিন খুব সকাল সকাল  ঘুম ভেঙ্গেছিল সাহানার ।হেমন্তের সকাল । কুয়াশা মাখা ভোরে একটা চাদর গায়ে  দিয়ে রুমের বাইরে বেরিয়ে আসে সাহানা । ইমন তখনও বিছানায় । হঠাৎ শোনে ঘুমের ঘোরেই বিড়বিড় করছে  ইমন ...

" আই লাভ ইউ শুভম ..." সক্কাল সক্কাল মুড  খারাপ হয়ে যায় সাহানার ...

 

  সেদিন বিকেলে ইমন রুমে এল  হাওয়ায়  উড়তে উড়তে ... জানিস শুভমদা , আমাকে  আজ ট্রীট  দিল ? সাহানা তখন  একমনে ব্যাগ গোছাচ্ছিল । ইমনের কথায় কোনো আগ্রহ দেখায় না সে ... তার নিরুত্তাপ হাবভাব দেখে রাগে জ্বলে ওঠে ইমন ... “কিরে  সানা ? কি হয়েছে তোর ?” “আর ব্যাগ গোছাচ্ছিস  কেন ? কোথায় যাবি তুই ?”

“আমি কাল সকালে  বাড়ি যাচ্ছি ... “একই রকম  নিরুত্তাপ ভাবে  জবাব দেয় সাহানা ।

“বাড়ি ? কই আমায় আগে  বলিস নি তো ? “চেঁচিয়ে ওঠে ইমন ...

“কেন সব ব্যপারে তোর পারমিশান নিতে হবে নাকি ? সাহানাও জবাব দেয় ঊত্তেজিতভাবে ... তুই কোন ব্যাপারে  আমার পারমিশান নিস ?”

“ওহ ! শুভমদা আমাকে ভালোবাসে বলে তোর  হিংসা  হচ্ছে ? আর  ইউ ফিলিং জেলাস ?”

“কেন আমি জেলাস  হব? অ্যাঁ ? তুই বড়  হয়ে  গেছিস ... লায়েক হয়ে গেছিস ! নিজের  বুঝ  বুঝতে শিখেছিস !  তুই যা খুশি কর ... আমি বলবার কে ? আর বললে  তুই শুনবিই বা কেন ?”

সাহানার একরোখা মেজাজের  সামনে চুপ করে যায় ইমন ! কেমন যেন মিইয়ে  পড়ে ...

 

            পরের দিন খুব ভোরবেলা বাড়ীর ট্রেন  ধরে  সাহানা ... ইমন তখনও ঘুমোচ্ছে । বাড়িতে ফিরে  বাবা মায়ের  আদরে মশগুল ছিল সাহানা । ভুলেই গিয়েছিল কলকাতায় ফেরার  কথা । ইমনের কথা ।একদিন বিকালে ফোন আসে  তাদের পিজির মাসিমার । ইমন নাকি খুব অসুস্থ । গত  কয়েকদিন ধরে  প্রচন্ড জ্বর । বিছানা থেকে ওঠার ক্ষমতা নেই ... মাসিমা  ইমনের মাকে  খবরটা দিয়ে দিতে  বলেন ।সেদিন  রাতেই ইমনের মাকে ফোন করে দেয় সাহানা । পরের দিন ইমনের মাকে নিয়ে কলকাতায় রওনা  দেয় সে ।

 

        পি জির  ঘরের দরজা আলগা ভাবে ভেজানো ছিল । রুমে ঢুকে সাহানা আলতো করে ডাক  দেয় ..." ইমন " কোনো সাড়া দেয় না ইমন । কপালে হাত ছোঁওয়ায় সাহানা ... জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে । জ্বরের ঘোরে বেহুঁশ হয়ে আছে  ইমন । খাটে বসে ইমনের  মাথাটা নিজের কোলে  তুলে নেয় সাহানা ... চোখ খোলে ইমন ... চোখে শূন্য দৃষ্টি । চোখ মুখ ফ্যাকাশে রক্তশূন্য ...

"আমাকে একটা ফোন করিস নি কেন বোকা মেয়ে ?" বিড়বিড় করে বলে সাহানা ।

সানা ... শুভম ... অস্ফুটে শুধু এই একটা  কথাই বলতে পারে ইমন ।

 

      পরের দিন খবরটা পায় সাহানা কলেজে  গিয়ে… রাজ্য বাস্কেট বল দলের কোচ শুভম সরকার একদিন ইমনকে  একা ঘরে পেয়ে বলপ্রয়োগ করতে যান। অনেক ধ্বস্তাধ্বস্তির  পর ইমন কোনক্রমে  পালিয়ে প্রাণে  বাঁচে ...এই খবর জানাজানি হয়ে গেলে প্রিন্সিপ্যাল কোচ শুভম সরকারকে বরখাস্ত করেন ।

 

     আজ দিন সাতেক হল ইমনের জ্বর কমেছে । প্রথমে  খুব দুর্বল ছিল । আজ প্রায় দিন পনেরো পর সাহানা্র সঙ্গেই কলেজে  গেছে...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics