Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

JAYDIP CHAKRABORTY

Classics

2  

JAYDIP CHAKRABORTY

Classics

বিসর্জন

বিসর্জন

9 mins
897


দশমী


- তোদের পাড়ার ভাসান কখন রে?

- প্রতিমা নামানো হচ্ছে। একটু পড়েই বিসর্জনে বেরবো। 

- ওকে, আমি আসছি। তোদের সাথে আমিও ভাসানে যাবো।তোর সাথে দরকারি কিছু কথাও আছে। 

- তুই যাবি আমাদের পাড়ার ভাসানে? 

- কেন, আপত্তি আছে? আমাদের পাড়ার ঠাকুরের আজ বিসর্জন হবে না।

- ওকে, তবে তাড়াতাড়ি চলে আয়। তুই আমার সাথে আমার বাইকে যাবি। 

ফোন রাখল সাম্রাজ্য। অনুশ্রুতির হঠাৎ এরকম একটা ফোন পেয়ে বেশ চমকে গেছে ছেলেটা। বাইক স্টার্ট দিয়ে অনুশ্রুতিদের পাড়ার দিকে এগোল সাম্রাজ্য। অনুশ্রুতিকে ওদের বাড়ির সামনেই পেয়ে গেল ও। একটা জিনস আর টপ পরে, হালকা সাজে বেরিয়েছে সাম্রাজ্যের স্কুল জীবনের বন্ধু। ওকে বাইকে বসিয়ে সোজা গঙ্গার ঘাটের দিকে রওনা হল সাম্রাজ্য।

- কিরে, পাড়ার প্রসেশনের সাথে যাবি না?

- না, আমরা অন্য সর্ট-কাট রাস্তা ধরে অনেক আগেই গঙ্গার ঘাটে পৌঁছবো।

- কিন্তু প্রশেশনের সাথে ঢাকের তালে নাচতে নাচতে যাওয়ার যে আনন্দ, সেটা তো মিস করবি। 

- যতই চেষ্টা করিস না কেন, জীবনে কিছু না কিছু মিস হবেই। তাই যেটা আছে, সেটা উপভোগ করাই ভালো না? 

- হু, বুঝলুম।

- তা হঠাৎ এমন জরুরী তলব?

- চল, গঙ্গার ঘাটে গিয়ে বলছি।

সাম্রাজ্য ও অনুশ্রুতি যখন গঙ্গার ঘাটে পৌঁছল, দিনের আলো নেভেনি তখনও। দুই-একটি প্রতিমা সবে বিসর্জনের জন্য আসতে শুরু করেছে। ঘাট ঘিরে রয়েছে পুলিশ। ঘাট থেকে একটু দূরে, তবে প্রতিমা নিরঞ্জন ভালোভাবেই উপভোগ করা যাবে, এমন একটা জায়গা বেঁছে বসে পড়ল ওরা। বাইক রাখল নিরাপদ, ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে। 

- এবারে বল অনু, হঠাৎ আমাকে এতটা দৌড় করালি কেন? 

- আমি কোথায় দৌড় করালাম? তুই নিজেই তো ….

- ঠিক আছে। বেশী ভণিতা না করে সাবজেক্টে আয়। বেশী সময় নেই। ফেরাটা কিন্তু ক্লাবের ছেলেদের সাথেই ফিরবো।

- একদম ঘেঁটে গেছি রে। কিছুই ভালো লাগছে না। …… একটা সিগারেট হবে?

- হ্যাঁ। এই নে।

- ধরিয়ে দে। পূজাটা কেমন হচপচ ভাবে কেটে গেল। 

- কিরকম? 

- বলছি।


সপ্তমী

ষষ্ঠী পর্যন্ত একটানা অফিস করেছে অনুশ্রুতি। সপ্তমী থেকে নিজের মত প্ল্যান করে রেখেছে ও। একটু বেলায় ঘুম থেকে উঠে, মোবাইল হাতে নিয়ে আঁতকে উঠল। সম্বিৎ ফিরে পেতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগল ওর। একটা অচেনা নম্বর থেকে হোয়াটস-অ্যাপে ওকে একটা লিঙ্ক পাঠানো হয়েছে। সেই লিঙ্কে স্পর্শ করতেই ও পৌঁছে গেল এক অজানা ওয়েব-সাইটে, যেখানে আপলোড করা আছে ওর কিছু নগ্ন, অর্ধ- নগ্ন ছবি। অন্তর্বাস পরা অনুশ্রুতি, বিনা পোশাকে দু হাত দিয়ে দুটি স্তন আড়াল করা অনুশ্রুতি। 

ছবি গুলো নিজেই নিজের মোবাইলে তুলেছিল এক সময়। মনের খেয়ালে নিজের সুন্দর যৌবনকে ক্যামেরা-বন্দি করে রাখতে ইচ্ছে হয়েছিল একদিন। তবে ছবিগুলো কাউকে পাঠায়-নি বা দেখায়নি ও। কারও কাছে এই নিয়ে গল্পও করেনি কখনও।নিজের ফোনের এক্সটারনাল মেমোরিতে বেশ গোপনেই রেখেছিল ছবিগুলো। সেই ছবি এভাবে রাষ্ট্র হল কিভাবে? আর এই কাজটা করলই বা কে?

ফ্রেস হয়ে ব্রেকফাস্ট টেবিলে যেতেই ওর মা বলল, 

- কাল সঙ্গত তোকে ফোন করেছিল?

- হ্যাঁ, অফিসের কাজের চাপে ফোন ধরতে পারিনি। 

- তাহলে পরে সময় করে তোর ওকে কল করে নেওয়া উচিৎ ছিল না? যাইহোক, ও এখন কোলকাতায়। আজ তোর সাথে মিট করতে চায়।

- আজ হবে না মা। আমার অন্য প্রোগ্রাম আছে। 

- অন্য প্রোগ্রাম মানে তো জামা-কাপড় খুলে ছবি তোলা। নইলে বন্ধু-বান্ধবের সাথে নেশা ভাঙ করে পড়ে থাকা, তাইতো? এরকম করলে সঙ্গতের মত ছেলে জীবনে জুটবে? সেধে হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলিস না। 

অনুশ্রুতির মুখে কোনও কথা নেই। তবে কি মাও দেখেছে ছবি গুলো? অসম্ভব কিছুই নয়। যে ওকে ছবিগুলো পাঠিয়েছে, সে ওর মাকেও পাঠাতে পারে। খানিক নিস্তব্ধতার পর, অনুশ্রুতির মাকেই প্রথম মুখ খুলতে হল।

- কি হল, কি ভাবছিস? এখনও কিন্তু তোর বাবা কিছু জানে না। এমন কিছু করিস না, যাতে আমি সব বলতে বাধ্য হই।

- ঠিক আছে, সঙ্গতকে ফোন করে নেব।

সঙ্গত এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে প্রোজেক্ট অফিসার পদে উত্তরপ্রদেশের কানপুর নগরের একটি সংস্থার সাথে যুক্ত রয়েছে। ওকে বিয়ে করলে অনুশ্রুতির ভবিষ্যৎ জীবন যে নিশ্চিন্ত ও নিরাপদ ভাবে কাটবে, তা মোটামুটি নিশ্চিত। সঙ্গতকে ফোন করে সন্ধ্যায় কোথায় কখন ওরা দেখা করবে ঠিক করে নেয় অনুশ্রুতি। 

উত্তর কোলকাতার বেশ কয়েকটা ঠাকুর দেখে, প্রাথমিক আলাপ পরিচয় এবং সাধারণ কিছু কথাবার্তা সেরে অনুশ্রুতি আর সঙ্গত একটা বাতানুকূল রেস্তরায় ঢুকল। বলুন কি খাবেন? কথাটা বলে সঙ্গতের দিকে মেনু কার্ড এগিয়ে দিল অনুশ্রুতি।মেনুকার্ড আবার অনুশ্রুতির কাছেই ফিরিয়ে দিয়ে সঙ্গত বলল,

- আপনিই অর্ডারটা দিন না। আমার যা হোক একটা হলেই হল।

- বহু প্রচলিত নিয়মের আজ নয় একটু ব্যতিক্রম হল। তবে এখন মেনু কার্ডের সব আইটেম পাবেন না। 

- সেই কারণেই তো বলছি। কোনটা পাওয়া যাবে আর কোনটা যাবে না, সেটা তো আমার ঠিক জানা নেই।তাই অর্ডারটা যদি আপনি দিয়ে দেন ভালো হয়।

- বেশ। চিকেন তন্দুরি চলবে?

- স্টার্টর হিসেবে চলতে পারে।মেইন কোর্সে কি বলবেন?

- বিরিয়ানি বলে দিচ্ছি। তবে বিলটা আমিই দেব। শুধু শুধু ঋণের বোঝা বাড়িয়ে লাভ নেই। আরেকটা কথা আগে থেকে বলে দেওয়া ভালো যে আপনি যত ভালোই পাত্র হোক না কেন, আমার পক্ষে আপনাকে বিয়ে করে কোলকাতা ছাড়া সম্ভব নয়। আমার চাকরি ও অন্যান্য কাজকর্ম আছে।আপনাকে বিয়ে করে আমার কেরিয়ারটা শেষ করে দিতে পারি না।

- বেশ তো, আমাকে নাই বিয়ে করলেন। আমরা বন্ধু হতে পারি তো? পূজার কটা দিন কয়েক ঘণ্টা আমার সাথে কাটালে খুব অসুবিধে হবে? 

- পূজায় আমার নিজের একটা প্রোগ্রাম আছে। ইনফ্যাক্ট আজকেও ছিল। আপনার সৌজন্যে ক্যান্সেল করলাম।  

- ঠিক আছে, কাল দুবেলাই বন্ধুদের সাথে ঘুরুন না। নবমীর দিন যেকোনো একবেলায় ঘণ্টা দুয়েকের জন্য আমার সাথে বেরোনো যায় কি? 

- সে যেতেই পারি। তবে একটা সর্তে। কাল সকালে আপনাকে আমাদের বাড়ি আসতে হবে। আমাকে বাড়ি থেকে একা বেরতে দিচ্ছে না। আপনার সাথে বেরলে কেউ কিছু বলবে না। 

- বেশ তাই হবে। আমি কাল আপনাকে বাড়ি থেকে বের করে আপনার পছন্দ মত জায়গায় পৌঁছে দেব। 

খাওয়া শেষে বিল মেটালো অনুশ্রুতি। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যে যার গন্তব্য-স্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হল। সঙ্গত অনুশ্রুতিকে ওর বাড়িতে পৌঁছে দিতে চাইলেও অনুশ্রুতি সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি।নিজের মত ঘুরে রাত করে বাড়ি ফিরল ও। 


অষ্টমী ও নবমী


অষ্টমী দিন সকাল সকাল স্নান সেরে শাড়ি পরে পাড়ার প্যান্ডেলে মা, বাবার সাথে অঞ্জলি দিয়ে বাড়ি ফিরল অনুশ্রুতি। বাড়ি ফিরে ব্রেকফাস্ট সারতে সারতেই সঙ্গত এসে হাজির। ওকে দেখে অনুশ্রুতির মনে যাই হোক ওর মায়ের মনে যে একটা স্বস্তি বাসা বেধেছে, তা ওনার আকর্ণ হাসিতেই প্রকাশ পায়। 

পোশাক বদলে, বাড়ি ফিরতে রাত হবে জানিয়ে সঙ্গতের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ল অনুশ্রুতি।সঙ্গত নিজের গাড়িতে নিজেই ড্রাইভারের ভূমিকায়। পাশের সিটে বসে ফোনে ব্যস্ত অনুশ্রুতি। বন্ধু সমীককে কোথায় দাঁড়াতে হবে তারই নির্দেশ দিয়ে চলেছে ও।

নির্দিষ্ট জায়গায় সঙ্গতের গাড়ি থেকে নেমে সমীকের বাইকের পেছনে বসল অনুশ্রুতি। গাড়ি থেকে নামার সময় সঙ্গতকে কাল সকালে আবার ওদের বাড়িতে আসতে বলল ও। 

সমীকের বাইক ছুটে চলেছে শহরের এক মাল্টিপ্লেক্সের দিকে। ওখানে সদ্য মুক্তি পাওয়া বাংলা ছবি দেখতে চলেছে ওরা। তবে শুধু সিনেমা দেখাই ওদের উদ্দেশ্য নয়। হালকা খাবার খেয়ে যথা সময়ে সিনেমা হলে ঢুকল ওরা। অষ্টমীর দুপুরে প্রেক্ষাগৃহ অপেক্ষাকৃত ফাঁকাই। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে দুটো শরীর শারীরিক উষ্ণতা বিনিময়ে লিপ্ত হল। পর্দায় কি হচ্ছে উপেক্ষা করে, চোখের পর্দা অগ্রাহ্য করে যতটা সম্ভব দুটো শরীর এক হল।  

সিনেমা শেষ হওয়ার অল্প সময় আগে সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে প্রসাধন কক্ষে গিয়ে নিজের পোশাক ঠিক করে নিলো অনুশ্রুতি। তারপর সমীকের সাথে নানা জায়গায় ঘুরে রাত করে বাড়ি ফিরল ও। অনুশ্রুতি এক সময়ে সমীকের প্রেমে পড়লেও এখন যেন একটা অভ্যাসেই মেশে। সুযোগ পেলেই নিজের শরীরটা অনুশ্রুতির শরীরের সাথে মিশিয়ে দেয় সমীক। আজকেও ফাঁকা ফ্ল্যাটে ওকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। অনেক কষ্টে এড়িয়ে গেছে অনুশ্রুতি। 

নবমীর সকালে সঙ্গতের গাড়িতে সমীকদের মেসের কাছে এসে ওকে ছেড়ে দিল অনুশ্রুতি। তবে কথা দিল আজ সন্ধ্যায় সঙ্গতের সাথেই সময় কাটাবে ও। আজ সমীককে না জানিয়েই ওদের মেসে যাচ্ছে অনুশ্রুতি। উদ্দেশ্য গতকালের সমীকের আবদারের কিছুটা হলেও মিটিয়ে দেওয়া। কিন্তু ওদের মেসে ঢুকতে না ঢুকতেই যে কথাগুলো ওর কানে এলো, তাতে অনুশ্রুতি বেশ বড়সড় ধাক্কা খেল। 

 সমীক ও ওর বন্ধুরা মিলে অনুশ্রুতির সম্পর্কেই আলোচনা করছে। কয়েকটা কথা কানে আসতেই ঘরের বাইরে একটু আড়াল করে দাঁড়িয়ে রইল ও। ঘরের মধ্যে তখন সমীক ওর বন্ধুদের কাছে বক্তব্য রাখছে।

- এই তোরা কি শুরু করেছিস বলত? তোদের জ্বালায় কি আমি মালটাকে শান্তি মত খেতেও পারবো না। অনুশ্রুতির ছবিগুলো নেটে আপলোড করতে তোদের কে বলেছে। এতো কষ্টে মেমরি কার্ড বদলে ছবিগুলো আমার মোবাইলে কপি করেছিলাম, সেটাকি তোদের ইন্টারনেটে আপলোড করার জন্য? তোদের ছবিগুলো পাঠানোই আমার ভুল হয়েছে। ভাগ্যিস এখনও অনুশ্রুতি কিছু জানে না। 

কোনোরকম শব্দ না করে খুব সাবধানে ওখান থেকে বেরিয়ে এলো অনুশ্রুতি। পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে ওর। তাহলে সমীকের বন্ধুদের মধ্যেই কেউ ওকে আর ওর মাকে হোয়াটস-অ্যাপে লিঙ্ক পাঠিয়েছে। একটা ক্যাব বুক করে প্রিন্সেস ঘাটে গিয়ে গঙ্গার ধারে বসে থাকল ও। নিজের সাথে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে লাঞ্চ সেরে সঙ্গতকে ফোন করে নিলো অনুশ্রুতি। 

সঙ্গতকে প্রিন্সেস ঘাটের গঙ্গার ঘাটেই ডেকে নিয়েছে অনুশ্রুতি। দিনের আলো তখনও বেশ স্পষ্ট। আশেপাশে তেমন লোক নেই। এমন পরিবেশে মনের মধ্যে জমে থাকা কথার ভিড় সবটাই উগরে দিল অনুশ্রুতি।

- আপনি তো আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন। কিন্তু তার আগে আমার সবটা আপনার জানা দরকার। আমি কিন্তু ভার্জিন নই। আমার নগ্ন ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে। আমার মদ, সিগারেট সবই চলে। বার দুয়েক গাঁজাও টেস্ট করে দেখেছি। এসব জেনেও কি কেউ বিয়ে করতে চাইতে পারে?

- দেখো, কিছু না কিছু পাস্ট সবারই থাকে। প্রেজেন্টটা বদলানোর দ্বায়ীত্ব তোমার আমার দুজনেরই।আমার সাথে বিয়ে হলে তোমার ঠিকানা, পরিচয় সবটাই বদলে যাবে। তখন তোমার অতীত নিয়ে কেউ মাথা ঘামাবে না। অতীতকে আঁকড়ে বেঁচে থেকো না। অতীতের কাছে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎকে সামনে রেখে এগিয়ে যাও। আমি তোমার সাথে আছি, থাকবো।  

- ধন্যবাদ। চলুন ওঠা যাক। এখানের আশে পাশে বেশ কয়েকটা বড় বড় ঠাকুর হয়। সেটা দেখবো চলুন। আজ কিন্তু একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবো। আপনি আমাকে পৌঁছে দেবেন।

- যথা আজ্ঞা ম্যাডাম। 


বিজয়া দশমী



   আজ একটু দেরীতেই ঘুম থেকে উঠল অনুশ্রুতি। সারাদিন শুয়ে বসে আলসি ভাবে বাড়িতেই সময় কাটাল। বিকেলে মাকে বলল,

- এই কটাদিন তো তোমার কথা অনুযায়ী তোমার পছন্দের ছেলেটির সাথে সকাল-সন্ধে সময় কাটালাম। আজ একটু সাম্রাজ্যের সাথে ওদের পাড়ার ভাসানে যাবো?

- সে যা। তবে তাড়াতাড়ি ফিরিস। বেশী রাত করিস না।

- থ্যাংক ইউ মা। একদম রাত করবো না।

মাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে, নিজের ঘরে এসে সাম্রাজ্যকে ফোন করে অনুশ্রুতি। 

গঙ্গার ঘাটের ভিড় আস্তে আস্তে বাড়ছে। এক এক করে প্রতিমা নিরঞ্জন হচ্ছে। সাম্রাজ্য মন দিয়ে অনুশ্রুতির কথা শুনছে। অনেকক্ষণ এক নাগাড়ে কথা বলে থামল অনুশ্রুতি। 

- বেশ ঘাঁটা কেস তো। 

- কেস যাই হোক, আমি তো ভীষণ ভাবে ঘেঁটে আছি। যাকে মন থেকে ভালোবেসে ছিলাম, সে শুধু আমার শরীরটাকে ভালো বেসেছে। সমীকের ওপর ভরসা হারিয়েছি। অথচ বাড়ি থেকে যে নিরাপদ, নিশ্চিন্ত আশ্রয়টাকে বেঁছে দিয়েছে, নিজের সব সত্ত্বা জলাঞ্জলি দিয়ে তার আশ্রয়ে যেতেও মন চাইছে না। 

- আচ্ছা, তোর কি সত্যিই একটা আশ্রয়ের দরকার? এতদিন এত পরিশ্রম করলি শুধু কি একটা নিরাপদ আশ্রয় বেঁছে বিয়ে করে নেওয়ার জন্য?

- একদমই নয়। আমি আমার কেরিয়ারটা নষ্ট করতে চাই না। 

- তবে সমস্যা কোথায়? সব কিছু বিসর্জন দিয়ে নিজের কেরিয়ারের পেছনে লেগে পড়। দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো।

- বিসর্জন দেব বললেই দেওয়া যায় না রে। এখানেই একটা ছেলের সাথে একটা মেয়ের তফাৎ। বাবা-মা জানে আমি পূজার তিনদিন ওর সাথেই ঘুরেছি। বাবা-মা তো এক রকম কথাই দিয়ে দিয়েছে। তার ওপর এতো বড় একটা স্ক্যান্ডেল।

- ঐসব ছবি ভাইরাল হওয়া পাত্তা দিস না তো। এখন ঐসব হামেশাই হচ্ছে। তোর আছে, দেখিয়েছিস। বেশ করেছিস। তোকে কটা লোক চেনে রে? আচ্ছা আচ্ছা সেলিব্রেটির নুড ছবি ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। তেমন হলে কোলকাতার বাইরে কোথাও চাকরি নিয়ে চলে যা। তার পরের ব্যাপারটা সময়ের হাতে ছেড়ে দে।

- সে তো দিল্লী থেকে একটা ভালো চাকরির অফার ছিলই। নিলাম না। এসব ঝামেলায় আর রেসপন্স করতে ইচ্ছে করেনি। 

- ইমিডিয়েটলি রেসপন্স কর। অন্যান্য কোম্পানিতেও সিভি পাঠা। আমাদের কোম্পানির চেন্নাই ব্রাঞ্চে তোর প্রোফাইলের লোক নিচ্ছিল। আমি খবর নিয়ে তোকে জানাচ্ছি। 

- চেষ্টা করলে একটা ভালো চাকরি আমি হয়তো পেয়ে যাবো। কিন্তু কোলকাতার বাইরের চাকরি, বাবা-মা কি করতে দেবে।

- ন্যাকামো মারিস না তো। কচি খুকি? মার কোলে গিয়ে শুয়ে থাক। কিছু বপারে ডেস্পারেটলি ডিসিশন নিতে হয়। আর তুই যদি তোর ইচ্ছেটা কাকু-কাকিমাকে ঠিক-ঠাক বোঝাতে পারিস, আমার মনে হয় ওনারা মেনে নেবেন। 

- সেটা হয়তো ঠিক। ভালো চাকরি পেলে বাড়ি ছাড়তে বাবা তেমন আপত্তি করবে না।

- চল এবার ওঠা যাক। আমাদের পাড়ার ঠাকুর চলে এসেছে। এক একটি প্রতিমার সাথে তুই তোর মন থেকে এক একজনকে বিসর্জন দিয়ে দিবি। 

- খুব না? সবাইকে বিসর্জন দিয়ে দেবো, আর মনের মধ্যে তুই একা বিচরণ করবি, তাইতো?

- একদম না। আমাকেও বিসর্জন দিতে পারিস। আপত্তি নেই।

ধুর, আমার শৈশবের, কৈশোরের, যৌবনের বন্ধুকে কি এত সহজে বিসর্জন দেওয়া যায়? কথা বলতে বলতে সাম্রাজ্যের নাকটা ধরে নাড়িয়ে দিল অনুশ্রুতি।

একে অপরের হাত ধরে, গঙ্গার ঘাটের দিকে এগিয়ে চলল ওরা। একটি প্রতিমাকে সাত-পাকে ঘুরিয়ে জলে ভাসানো হচ্ছে। মন দিয়ে দেখছে অনুশ্রুতি।হঠাৎ মনটা বেশ হালকা মনে হচ্ছে ওর। তবে কি অনুশ্রুতি সত্যি সত্যি দুর্গা প্রতিমার সাথে মনের সব আবর্জনাও বিসর্জন দিয়ে ফেলেছে? 


Rate this content
Log in

More bengali story from JAYDIP CHAKRABORTY

Similar bengali story from Classics