ভয়
ভয়
রাত তখন প্রায় ১টা , অমাবস্যার পরের দিন তাই এখনো দেখা মেলেনি চাঁদের ,চারিদিক ঝিম কালো অন্ধকার ,রাস্তায় কোনো জন প্রানী নেই, শম্ভুনাথ বাবু একাই তার প্রানের সাইকেল করে এক বন্ধু মেয়ের বিয়ে থেকে ফিরছে , সঙ্গে কোনো টর্চ নেই বোতাম টেপা ফোনের মৃদু আলোতে কোনো রকমে রাস্তা দেখা যাচ্ছে। বাড়ির পথে একটা ঘন জঙ্গল পেরিয়ে আসতে হয় জঙ্গলের মাঝখানে একটা মহা শশ্মান ও আছে , বড়দের কাছে গল্প শোনা যায় এই শশ্মানে মহামারীর সময় মৃত দেহ ফেলে যেত তাই এখানে ভূত পেতের বাস ।এই রাস্তাদিয়ে সন্ধ্যের পর কেউ ভালো যায় না ,যদিও যায় দল বেঁধে যায়। এতো রাতে শম্ভুনাথ বাবুর একা ফেরার কথা ছিল না, বন্ধু অনন্ত সাথে আসবে আগে থেকে ঠিক ছিল কিন্তু শেষ মুহূর্তে অনন্ত থেকে যাবে ঠিক করে , শম্ভুনাথ বাবুও থেকে যেত পারতো কিন্তু কাল সকালে অফিস আছে তাই একাই চলে আসে। রাস্তায় কোথাও কোনো অসুবিধা হয়নি কিন্তু এক জঙ্গলটায় আসতেই সব জেনে কেমন হয়ে যায় । মনে ভয় আছে জেনেও শম্ভুনাথ বাবু মনে সাহস নিয়ে জোরে সাইকেল চালাতে গিয়েছে অমনি সাইকেলের চেন পরে যায় । কথায় আছে না সেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। কোনো রকমে চেনটা লাগিয়ে সাইকেলে উঠেছে তখন পিছন থেকে কেউ যেন সাইকেল টা চেপে ধরে , এই অবস্থায় শম্ভুনাথ বাবুর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায় , শুধু পিছনে না সামনেও কেউ হ্যানডেল ধরে রেখেছে। ভয়ে শম্ভুনাথ বাবু,
- কে তোমরা কে ,এই ভাবে আমার সাইকেল আটকে রেখেছ কেন?
-( ক্ষনা গলায় ) কিরে শম্ভু আমাদের চিনতে পারছিস না ,আমরা তোর (একসাথে)বলাই কাকা , মাধব দাদু ,বিশা দাদা।( তিন জনেই আত্মহত্যা করে মারা গিয়েছিল)
- তোমরা তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও , আমাকে যেতে দাও , আর কোনো দিন এতো রাতে এই রাস্তায় যাবো না। এখন আমাকে যেতে দাও।
- আরে তোর কিছু করবো না, অনেক দিন বিড়ি খাওয়া হয়নি।
- আমার কাছে বিড়ি নেই সিগারেট আছে বিয়ে বাড়িতে খেতে দিয়েছিল।
শম্ভুনাথ বাবু ভয়ে ঠক ঠক করে কাঁপছে।
- এতেই চলবে দে , লাইটার আছে।
কাঁপা হাতে প্যাকেট টা এগিয়ে দিয়ে বলল- না নেই । এবার আমাকে যেতে দাও।
- ঠিক আছে যা , ভূতের কাহিনী শুনিয়ে কাউকে আর ভয় দেখাবি না তো।
- আমি তো ভূতের কাহিনী শোনাই না।
- আমরা জানি সব । এখন বাড়ি চলে যা, বাড়িতে তোর বউ অপেক্ষা করেছে।
শম্ভুনাথ বাবু সাইকেল টা নিয়ে ছুটতে লাগলো, ভয়ে সাইকেল উঠতেও ভূলে গিয়েছে , সাইকেল উঠেনি মনে হতেই কাঁদবে না হাসবে বুঝতে পারছেনা এখন শুধু অনন্তের ওপর রাগ হচ্ছে আর ভুতেদের হাত থেকে বেঁচে ফিরেছে ভেবে ভালো লাগছে । সাইকেল টা চালিয়ে কোনো রকমে বাড়ি ফিরে আসে ।
পরেরদিন সকালে বিশাল , সৌগত টিউশনি যাওয়ার জন্য অভিক কে ডাকতে আসে , সামনে শম্ভুনাথ বাবুকে দেখতে পেয়ে বিশাল জিজ্ঞেস করে,
- জ্যাঠামশায় কেমন আছো, কালকে কতো রাতে বাড়ি ফিরে ছিলে।
শম্ভুনাথ বাবু ভাবে এরা কি করে জানলো আমি কালকে রাত্রিতে ফিরেছি।
অভিক সাইকেল টা নিয়ে বলে বল যাই ,তোরা এতো ক্ষন জ্যেঠুর সাথে কি কথা বলছিলি।
- না মানে কালকে কখন ফিরেছে জিজ্ঞেস করছি।
- আমিও তো ভাবছি তোরা কি করে জানলি আমি কালকে রাতে ফিরেছি।
অভিক বিশাল কে একটা হালকা করে লাথি মেরে,
- আসলে জ্যেঠু ওরা কালকে সন্ধ্যে বেলা আমাদের বাড়ি এসেছিলি তখন জ্যেঠিমা মাকে বলছিল তখনই হয়তো শুনেছে।
- ও তাই বলো।
- আচ্ছা জ্যেঠু আমরা এখন আসি , আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
- ঠিক আছে আয় ।
বড় রাস্তায় এসে বিশাল কে অভিক আর সৌগত দুমদাম করে মারতে লাগে
- সালা তোদের জন্য এখুনি ফেঁসে যাচ্ছিলাম, তুই জেনে কি করবি কে কতো রাতে বাড়ি ফিরল। দেখেছিস তো কেমন কিটিকেল মানুষ,যদি কোনো ভাবে জানতে পারে না আমাদের তিন জনের হাড় মাংস আলাদা করে দেবে ।তোরা তো তবুও বেঁচে যাবি কিন্তু আমার অবস্থা কি হবে ভেবেছিস।
মার খেয়েও হাসতে হাসতে,
- কাল রাতে তোর জ্যেঠুর মুখটা দেখার মতো ছিল। যখন বলছিল তোমরা কারা তখন আমার মুখ দিয়ে নিজের নামটাই বেড়িয়ে আসছিল , ভাগ্গিস সৌগত আমাকে চিমটি কেটে দেয়।
- তুই তো ওই রকম, নিজেতো ফাঁসবি , সাথে আমাদের কেও ফাঁসাবি।
- তুই ফোন করে আইডিয়া টা দিয়েছিলি বলে ।অনেক দিন থেকে ইচ্ছে ছিল সব জান্তা ফটিক চাঁদ কে শিক্ষা দেব।সব সময় আমাদের পিছনে লাগা , রাস্তায় দেখা হলেও জ্ঞান দিতে ছাড়ে না।
- হয়েছে তো মনের আসা পূরন , মিটেছে তো রাগ ।চল এবার পড়তে যাই না হলে স্যারের হাতে মারের থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। আর কালকের রাতের ঘটনা এখানেই শেষ কর আর এই বিষয়ে আলোচনা করবি না।
- ঠিক আছে আর বলবো না, তবে তোর জ্যেঠুর মুখটা দেখার মতো ছিল।
- তুই কোনো দিন শুধরাবিনা।
- কি করবো বল মুখটা মনে পরলেই হাসি পেয়ে যাচ্ছে।