ভোরের সূর্য্য
ভোরের সূর্য্য
পর্ব এগারো
ডক্টর জেমস অক্টারলোনী সাইকিয়াট্রিস্ট । পেশায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। বিপাশাকে বাড়িতে রেখে তার চাল-চলন হাব-ভাবের উপর কড়া নজর রেখে চলেছেন ।জ্যাকলিনের সঙ্গে বিপাশার সখ্যতা গড়ে উঠেছে। তিনি আপাতত স্বস্তিতেই আছেন ।
বিপাশার গায়ের রঙ জ্যাকলিনের মত ধবধবে নয় তবে ফর্সাই । একমাথা কালো চুল, দেহের গড়ন প্রশংসার দাবী রাখে ।
বিপাশা পড়াশুনায় মেধাবী । তিনি জ্যাকলিনের কলেজেই এক ক্লাস নীচে বিপাশাকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন । নিজে সময় পান না বলে দেখিয়ে দেবার দায়িত্ব দিয়েছেন মেয়ে জ্যাকলিনকে ।
পড়তে বসে মাঝে মাঝে দু'জনের গালগল্প হয়েই থাকে । সেই সুযোগে জ্যাকলিন বিপাশার অতীত নিয়ে জানতে চায় । বিপাশা দোনামনা না করে অকপটে সব কথা জানিয়ে দেয় । বিশেষত শশাঙ্কর সেই কয়েকটা কথা যেগুলো শশাঙ্ক তার নগ্ন শরীরে চেপে কানে কানে বলেছিল ।
ডাক্তারবাবুও ক্রমে জেনে যান । কিন্তু শশাঙ্কের কোন সন্ধান না পেয়ে কিছুই করতে পারেন না । এই খোঁচাটা তাঁর বুকে বাজে ।
একদিন নাজিমূল হকের সঙ্গে নিউ মার্কেটে তাঁর দেখা হয় । হক সাহেব মজ:ফরপুর থানার আই সি । ডাক্তার বাবুর স্কুল জীবনের বন্ধু । অনেকদিন পর দেখা। ডাক্তারবাবু হকসাহেবকে ইনভাইট করে বাড়িতে নিয়ে এলেন ।
- হাই জ্যাক ! হাউ আর ইউ ?
জ্যাকলিনকে দেখে বললেন হকসাহেব । জ্যাকলিন তাঁকে দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল - অ্যাম ফাইন এণ্ড ইউ স্যার ?
দু'জনের কথাবার্তা শেষে হকসাহেবকে নিয়ে ডাক্তারবাবু বৈঠকখানায় বসলেন ।
চা ব্রেকফাস্ট নিয়ে বিপাশা ঢুকল রুমে । টেবিলে নামিয়ে রেখে বেরিয়ে এল । হক সাহেব কিছু ভাবলেন কি না বোঝা গেল না ; ডাক্তারবাবু বললেন- সি ইজ মাই এডপ্টেড ডটার ।
- হাউ ফানি !
হকসাহেব বললেন - তুই নিজের মেয়ে থাকতেও আর একটা মেয়েকে এডপ্ট করলি ?
- কেন দোষ কোথায়?
- দোষের কথা বলছি না । নিশ্চয় মেয়েটিকে কোন বিপদ থেকে উদ্ধার করে এনেছিস ?
- বলতে পারিস। রাঁচির পাগলা গারদে সামওয়ান গাজীসাহেব ওকে এডমিট করে দিয়েছিল।
হক সাহেবের খটকা লাগল - কি নাম বললি ? গা-জী-সা-হে-ব না কি যেন ?
- তাই তো জানি রে । এডমিশন ফর্মে সিগনেচার করেছিল ফকরুদ্দিন গাজী মোল্লা নামে ।
- ওহ্ ড্যাম ! হি ইজ এ নটোরিয়াস ক্রিমিনাল। ড্রাগ, জাল ওষুধ, পাচার, রেপ কত যে কেস আছে মজ:ফরপুর থানায় । ধরাই যাচ্ছে না । শালার হাত বিশাল লম্বা । ধরা পড়লেও কোন অজানা নির্দেশে ছাড়া পেয়ে যায় । তা' এই মেয়েটির সঙ্গে ওর যোগাযোগ হল কি ভাবে ?
- তা তো জানি না ফ্রেণ্ড । তবে মেয়েটির মুখে ওর সম্বন্ধে অনেক কিছু শুনেছি ।
- মেয়েটিকে একবার জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে ?
- না রে । অনেক কষ্টে ওকে সুস্থ করেছি । গাজীদের গণধর্ষণের শিকার হয়েছিল মেয়েটি । ওর বাড়িতে তারপর থেকে স্থান হয়নি । এক ছোকরা - কি নাম যেন - শশাঙ্ক ।
শশাঙ্কাও নাকি ওকে রেপ করেছিল । তবে শুনলাম বাধ্য হয়ে । গাজীর নির্দেশে । মেয়েটি বলছিল সেই সময় শশাঙ্ক নাকি ওর কানে ফিসফিস করে বলেছিল ' আমি বাধ্য হচ্ছি রে । তবে কথা দিচ্ছি তোকে আমি স্ত্রীর মর্য্যাদা দেব । মেয়েটিকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল । তখনও নাকি শশাঙ্ক ওকে নিয়ে পালাতে চেয়েছিল । পথে আবার গাজীদর্শণ, তার রক্ষিতা হয়ে থাকা, মানসিক অবসাদে ভুগছিল সে । শেষে ওই গাজী হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দায় সেরেছে ।
হক সাহেব অনেকক্ষণ ধরে চিন্তা করছিলেন ।
শশাঙ্ক ! মানে সেই ছেলেটা নয় তো! যাকে পঞ্চায়েত ইলেকশনের জমায়েতে বোমাবাজি করার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ।যার ছোঁড়া বোমার ঘায়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল। এই তো কবে যেন - মাস ছয়েক আগের ঘটনা । কল্হানপুরের ( কল্যাণপুর - ওই অঞ্চলে কলিহানপুর বলে খ্যাত ) পঞ্চায়েত ইলেকশনের সময় ।
হক সাহেব বললেন - শশাঙ্ক নামে একজনকে রেপ্তার করে ৩০২ ধারা দিয়েছিলাম । এই শশাঙ্ক সে নয় তো ? একবার ডাক না মেয়েটিকে । দুধ কা দুধ পানি কা পানি করে দেখি।
ডাক্তারবাবু বললেন - যদি মেয়েটা আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে?
- তেমন কোন জিজ্ঞেস করব না । শুধু বলব যে শশাঙ্ক মজ:ফরপুর সেন্ট্রাল জেলে কনডেমড সেলে রয়েছে তাকে সে চেনে কি না ।
( চলবে )