Nityananda Banerjee

Classics

4  

Nityananda Banerjee

Classics

ভোরের সূর্য্য পর্ব সাতাশ

ভোরের সূর্য্য পর্ব সাতাশ

4 mins
289


পর্ব সাতাশ

ব্যারিস্টার সর্বেশ্বর পাণ্ডে শশাঙ্ক বিষয়ক ফাইল জমা দিলেন হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে । সতর্কতার জন্যাই তিনি সিঙ্গল বেঞ্চে না গিয়ে , এ'রকম একটি ঐতিহাসিক ঘটনা যাতে সাকারাত্মক পরিণতি পায় তার জন্য ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করলেন ।

বিচারক ভিক্টর গোমস এবং বিচারক অনিন্দ্যসুন্দর মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ মামলা গ্রহন করলেন ।

ফাইল , চার্জশীটের কপি, জেলা আদালতের রায়, সাক্ষীদের বয়ান খুঁটিয়ে পড়তে সময় লাগবে । সুতরাং শুনানীর সময় দিলেন ২৩শে ডিসেম্বর দুপুর বারোটায় ।

পুলিশের আইজি, দিল্লি পুলিশ, 'র' এবং এন আই এ - সকলকে নোটিশ দিলেন গ্রেপ্তার হওয়া আসামীদের জেরা সম্পর্কিত তথ্য জমা দিতে ।

এন আই এ জানাল তিহার জেলে বন্দী কুখ্যাত জঙ্গী গাজীকে পাটনায় নিয়ে যাওয়া এবং নিয়ে আসা বিপজ্জনক । সুতরাং প্রয়োজন মত ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে তাদের সঙ্গে কথা বলার বন্দোবত করে দেওয়া হবে ।

সর্বেশ্বর পাণ্ডেজী আঁটঘাট বেঁধে আসরে নামলেন । অনুমতি চাইলেন তিহার জেলে বন্দী শ্যামল সামন্ত এবং ফকরুদ্দিন গাজী মোল্লার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ।

বেঞ্চ অনুমতি দিলেন । সেদিনের মত কোর্ট এডজোর্ণড হল ।

আদালত থেকে বেরিয়ে সম্মুখীন হলেন ড়ক সাহেব, ডাক্তার বাবু, বিপাশা এবং জ্যাকলিনের । পরিচয় পর্ব সমাধা করে পাণ্ডেজী বললেন - মিঃ হক ! দ্য কোর্ট হ্যাজ পারমিটেড টু মিট উইথ কালপ্রিটস কেপ্ট ইন তিহার জেল।

হক সাহেব বললেন - ইয়ে তো বহোত বঢ়িয়া কাম কিয়া আপনে । কব জা রহে হ্যায় সাব ?

উত্তরে পাণ্ডেজী বললেন - যব ভি যাউঁ আপকো সাথ লেকে জাউঙ্গা । ইসলিয়ে আদালত সে এপ্রুভ্যাল ভি মিল গয়া ।

তারপর ডাক্তার বাবুকে বললেন - আপনারা তো এখন পাটনাতেই থাকবেন ?

ডাক্তার বাবু বললেন - মাঝে তো পাঁচটা দিন । তারপর শুনানি। আমরা থেকে কি করব ?

পাণ্ডেজী বললেন - এই কয়েকটা দিন থেকেই যান । আমরা কাল সকালে দিল্লি যাব এবং খুব বেশী দেরী হলেও রাতেই ফিরে আসব । ব্রিফিং পেতে থেকেই যান ।

জ্যাকলিন বলল - খুব ভালো কথা বলেছছন স্যার । কি বিপাশা ?

বিপাশা বলল - স্যারের যদি অসুবিধা না হয় ....

ডাক্তার বাবু বললেন - আমি তাহলে হসপিটালে জানিয়ে দিই !

- সেই ভালো । উচ্ছ্বসিত জ্যাকলিনের মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল কথি দু'টো ।

পাণ্ডেজী হক সাহেবকে বললেন - আগামীকাল ভোরবেলার ফ্লাইটে বুকিং করে নিচ্ছি । আপনি রেডি হয়ে ঠিক সাড়ে চারটেয় দু'নম্বর টার্মিনালে ওয়েট করবেন ।

বিপাশারা থেকে গেল । হক সাহেবও তাদের সঙ্গে হোটেলেই উঠলেন ।

খাবার টেবিলে হক সাহেব প্রশ্ন করলেন - বিপাশাজী ! শশাঙ্কর সঙ্গে আপনার কোন পূর্ব-পরিচিতি আই মিন লাভ এফেয়ার্স ছিল ।

বিপাশা ত্বরিতে জবাব দিল - না না স্যার । স্কুল জীবনে একসঙ্গে পড়েছি । কো-এডুকেশন স্কুল ছিল তো ! মেয়েরা একদিকে এবং ছেলেরা আর এক দিকে ক্লাসে বসতাম । টিফিন পিরিয়ডে দেখতাম সবাই টিফিন খেতে বেরিয়ে যেত সেই সময় ও বই নিয়ে পড়ত ।

- কেন টিফিন খেত না ?

- না স্যারৎ, জিজ্ঞেস করলে বলত' এই তো দু'ঘন্টা আগে ভাত খেয়ে এসেছি । আবার বাড়ি ফিরে খেয়ে নেব । আমি বুঝতাম স্যার, ও সত্যি বলছে না । টিফিনের ভাগ অনেকেই দিতে চাইত; ও নিত না । কেমন যেন একগুঁয়ে ছিল ও

- তোমাদের খারাপ লাগত না ?

- নিত্য দিনের ব্যাপার ছিল স্যার; গা সওয়া হয়ে গেছল ।

- বেশ, শুনেছি শশাঙ্ক স্কুলে খুব ভালো রেজাল্ট করত । আর্থিক ক্ষমতা ছিল না বলে হায়ার স্টাডি করতে পারেনি।

- হ্যাঁ স্যার । তখন ওর বাবা গত হয়েছেন । মা ভীষত অসুস্থ । একমাত্র বোনের বিয়ে দিয়ে সর্বস্বান্ত । একটা চাকরি খুঁজে বেড়াচ্ছিল । তখন একবার আমাকে বলেছিল তোর বাবাকে বলে যে কোন একটা কাজ জোগাড় করে দিবি ? পারিনি স্যার । তারপর আর ওর সাথে দেখা হয়নি । শুধু সেদিন কলেজে যাবার সময় এক অশুভ ক্ষণে ওর সাথে দেখা হয়েছিল । যার ফলে আজ আমরা দু'জনই কত অসহায় হয়ে আছি ।

ডাক্তার বাবু বললেন - তুমি কোথায় অসহায় , বিপাশা ? আমি তো তোমার দায়-দায়িত্ব নিমেছি !

- আমার কথা আর ভাবি না স্যার । বড় ভয় হয় ওকে নিয়ে। ফাঁসি হয়ে যাবে ওর ।

বিপাশার চোখ ছলছল করে ওঠে । জ্যাকলিনও তাই । শুধু ডাক্তার বাবু আর ড়ক সাহেবের বুক থেক একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বের হয় । হক সাহেবের মনে হয় এ'জন্য তিনিই দায়ী । কেন যে নিখুঁত ভাবে ছাঁদবিন্ধ করিনি !

আসলে হক সাহেবই তো ওকে গ্রেপ্তার করে, চার্জশীট তৈরি করে, বিভিন্ন ধারায় জড়িয়ে দিয়েছিলেন । প্রমোশন হয়তো পেলেন; কিন্তু এখন মনে হয় এমনটা না হলেই ভালো হত ।

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics