ভোরের সূর্য্য পর্ব পঁয়তাল্লিশ
ভোরের সূর্য্য পর্ব পঁয়তাল্লিশ
পর্ব পঁয়তাল্লিশ
মজ:ফরপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মিঃ নাজিমূল হকের যে কি হয়েছে কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না । এমন একটা সময়ে তাঁর অনুপস্থিতি জেলার সাহেবকে খুব বিচলিত করে তুলল ।
মিঃ পাণ্ডে এবং ডাক্তার বাবুও অবাক হয়ে গেছেন । বিপাশা তো ছটফট করে বেড়াচ্ছে যত সময় এগিয়ে আসছে ততই।
শুধু জ্যাকলিন নিজের বিয়ে নিয়ে খুবই উৎসাহিত। নাগেশ্বরের সঙ্গে আলাপের পর তার মধুর ব্যবহার এবং বিনয় দেখে জ্যাক আপ্লুত । মনে মনে ' থ্যাঙ্ক ইউ ড্যাড' বলে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছে কাজ যেন ভালোভাবে মিটে যায় ।
বিপাশার অস্থিরতা দেখে ডাক্তার বাবু হক সাহেবকে ফোন করলেন।
- কি রে তুই কোথায় ? গত কাল থেকে নাকি তুই একবারও জেলার সাহেবের বাড়িতে আসিসনি ? আমরা কলকাতা, পাটনা থেকে চলে এলাম !
- একটা ভীষণ খারাপ খবর পেয়েছি রে ! সেজন্য যেতে পারিনি। তবে বিকেলের দিকে ম্যানেজ করে অবশ্যই যাব।
- কি খারাপ খবর ? বলবি তো ? আমরা চিন্তা করছি !
- বিকেলেই বলব । ফোনে বলা যাবে না ।
- লে হালুয়া ! তুই তো পালপিটেশন বাড়িয়ে দিলি । যাই হোক বিকেলে আসছিস তো ?
- অবশ্যই চেষ্টা করছি ।
- না না , চেষ্টা নয়। তোকে আসতেই হবে । জেলার সাহেবও খুব উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন ।
- ঠিক আছে , অত ভাবিস না । আমি যাবই ।
বিপাশা শুনল কথাগুলো। জিজ্ঞাসা করল - আসছে বললেন ?
- হ্যাঁ। কিন্তু সে বিকেলের আগে নয় ।
- তাই সই । উনি না থাকলে চলে !
ডাক্তার বাবুর চিন্তা বাড়িয়ে দিলেন হক সাহেব । কি এমন ঘটল যে সে আসাই বন্ধ করে দিল!
বিকেলের কিছু পূর্বেই হক সাহেব এলেন । মুখময় চিন্তার ছাপ স্পষ্ট । ডাক্তার বাবুকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বললেন - ডিমোশন হয়ে গেল রে !
- মানে ?
- মানে শশাঙ্ককে এরেস্ট করে ধারা সাজিয়ে সাজা দেওয়ালাম । আদালত নাকি বলেছে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ না নিয়ে ওকে সাজা পাইয়ে দিয়েছি । প্রমোশন তো ওই কেসটার বেসিসে হয়েছিল । এখন কোর্টের অর্ডারে ওটা কর্তৃপক্ষ বাতিল করে দিয়েছেন আর আমাকে গয়ায় বদলী করে দিয়েছেন ।
- ওহ্ সো স্যাড । তারপর কি ঠিক করলি ? কবে জয়েন করতে বলেছে ?
- ভাবছি চাকরিটাই ছেড়ে দেব । পিছনে তো দাগ পড়ে গেল ! আর চাকরি না করাই ভালো। এবার সম্মানটুকু না যায় ।
কোন ফাঁকে এসে জ্যাকলিন ওঁদের কথাবার্তা শুনছিল কেউ টের পায়নি ।
জ্যাকলিন বলল - এত বড় দু: সংবাদ! ড্যাড সময়টা বোধ হয় ভালো নয় !
হক সাহেব জ্যাকলিনের দিকে চাইলেন । সেই চোখ, সেই মুখ, সেই ভূবন ভোলানো হাসি কোথায় উবে গেছে । ভাবলেন এই মেয়েটাকে নিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন। একটা হাঁটুর বয়সী মেয়ে ! ছিঃ ছিঃ। আল্লা বুঝি এইজন্যই সাজা দিলেন ।
কিন্তু মুখে বললেন - ও তুমি ভেবো না মা !
মা সম্বোধন করলে যদি গুণাহ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় ।
বললেন - পুলিশের চাকরি তো! কখন কি ঘটে বলা মুশকিল। হয়তো শুনবে দুষ্কৃতি ধরতে গিয়ে দুষ্কৃতিদের হাতেই মরে গেছি ।
জ্যাকলিন দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে গেল ।
- এই যে মিঃ হক !!
বজ্রগম্ভীর কন্ঠে বিবেকানন্দ কুমার বললেন - এতক্ষণে সময় হল ? যান না একবার গিয়ে তদারকি করে আসুন। আমি একলা হাঁপিয়ে উঠেছি ।
হক সাহেব কিছু বলতে যাচ্ছিলেন ; ডাক্তার বাবু জেলারকে বললেন - একটা ব্যাড নিউজ আছে।
জেলারের চোখ দুটো গোল গোল হয়ে গেল ।
- ওর ট্রান্সফার অর্ডার এসে গেছে ।
জেলার বললেন - কোথায় ? আর সময় পেল না অর্ডার দিতে? দাঁড়ান তো দেখি এস পির সাথে কথা বলে ।
হক সাহেব বিনীত অনুরোধ করলেন - স্যার প্লীজ প্লীজ, এ নিয়ে মাথা ঘামাবেন না । আমাকে ডিমোশন দিয়ে গয়ায় বদলি করে দিয়েছে ।
- ডিমোশন ? পৃথিবী কি উল্টোদিকে ঘুরছে ? আপনি চিন্তা করবেন না এস পি মনোজ সিনহা আমার বন্ধু এবং ব্যাচমেট । আমি বললে কিছু একটা ব্যবস্থা করবেই ।
হক সাহেব বললেন - স্যার এটা কোর্টের নির্দেশে হয়েছে।
- হোক । ওতে কিছু আসবে যাবে না । লেট মি হ্যাভ এ টক উইথ হিম ।
তিনি ফোনে ধরলেন মনোজ সিনহাকে । প্রথমে কিছুক্ষণ তর্ক-বিতর্ক হল । তারপর দেখা গেল জেলার সাহেবের মুখে প্রশান্তির হাসি ।
হক সাহেব , ডাক্তার বাবু বুঝে গেলেন একটা পছিটিভ আনসার পেয়েছেন ।
জেলার সাহেব বললেন - বলছিলাম না , কথা বলতে দিন। আপনার কিছু হবে না। আপনি এখানেই একই পদে বহাল রইলেন ।
হক সাহেব ভাবলেন সারাদিন চিন্তা করে মরলাম । সকালে এলেই তো ঝামেলা মিটে যেত !
থ্যাঙ্ক ইউ স্যার বলে হক সাহেব জেলের অভ্যন্তরের মাঠে চলে গেলেন তদারকি করতে ।
( চলবে )
