ভোম্বলের বিয়ে
ভোম্বলের বিয়ে
ছোট থেকেই ভোম্বল দৈর্ঘ্যে কম প্রস্থেই বেশী বাড়ে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ভোম্বল তরতাজা নাদুস নুদুস এক যুবকে পরিণত হল। ওর গায়ের রং বলতে গেলে একেবারে দুধে-আলতা, পরিশ্রম করলে ওর মুখ একবারে লাল টকটকে হয়ে যায়। ভোম্বল প্রতিদিন স্কুলে যেত, ক্লাসে মন দিয়ে সব শুনত, বাড়িতেও মন দিয়ে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে পড়তো কিন্তু পরীক্ষার খাতায় লেখার সময় কিছুতেই যা পড়েছে মনে আসতো না, প্রায় খালি খাতাই জমা দিত । স্কুলের জীবন মাস্টার একদিন আক্ষেপ করে বললেন, "আমার জীবনে অনেক ছাত্র মানুষ করেছি কিন্তু ভোম্বল তুই আমাকে শেষ বয়সে ফেল করিয়ে দিলি"। ভোম্বলের পড়াশোনা গড়িয়ে গড়িয়ে বেশি দূর আর এগোলো না।
বাপ্ মরা ছেলেকে ভোম্বলের মা খুব আদরের সাথে মানুষ করেছে। পাড়ায় সকলেও শান্ত স্বভাবের ভোম্বলকে খুব ভালোবাসে। ভোম্বল বড় হতেই ওর মা নানা জায়গায় দৌড় ঝাঁপ করে একটা প্রাইভেট অফিসে পিওনের চাকরী ওকে জোগাড় করে দিল। মায়ের কথায়, "যেটুকু সম্পত্তি আছে তা দিয়ে ভোম্বলের অনায়াসে চলে যাবে কিন্তু আজকাল মেয়ের বাড়ীর লোকেরা দেখে পাত্রর চাকরী"। সকাল নটায় বড় তিন ডিপেওলা টিফিন বাক্স নিয়ে ভোম্বল বাসস্ট্যান্ডে মানেই ও অপিস যাচ্ছে। পাড়ার অল্পবয়সী চেংড়াদের কাছে অবশ্য ভোম্বল এক বিনোদনের বস্তু । কেউ এসে জিজ্ঞেস করে, "ভোম্বলদা এতে কি দু দিনের খাবার আছে? টিফিনবাস্ক কি পুরো ভর্তি? তুমি কি নিয়ে যাচ্ছ?" বিরক্ত ভোম্বল, রোজ একই প্রশ্নে রেগে গিয়ে গালিগালাজ করে। সকলেই জানে ভোম্বল অত্যন্ত ভোজনরসিক, পাড়াঘরে অনুষ্ঠানে নেমন্তন্ন বাড়িতে লোকে নিজের খাওয়া ছেড়ে ভোম্বলের খাওয়া দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে । বিশ-পঁচিশটা ফুলকো লুচী, প্রায় এক কিলো মাংস, আধ সের দই, ৫০-৬০ টা রসগোল্লা অনায়াসে ওর মুখ দিয়ে পিছলে ওর বিশাল বাপুতে গিয়ে জমা হয়।
ভোম্বলের বয়স যখন পঁচিশ, তখন থেকেই ভোম্বলের মা ওর বিয়ের চেষ্টা করছে কিন্তু কেন জানি না ভোম্বলকে দেখেই সব পাত্রী বেঁকে বসে। ফলে বিশের ঘর পেরিয়ে তিরিশের ঘর শেষ হলো বলে তবুও ভোম্বল আইবুড়ো। এখন পাড়ার চ্যাংড়ারা ভোম্বলকে ক্ষেপায় অন্য ভাবে। একদিন সন্ধ্যে বেলায় ভোম্বল অপিস থেকে ফিরছে কোথা থেকে কালটু আর বুলটু এসে হাজির।
বুলটু - "ভোম্বলদা কেমন আছো?"
ভোম্বল - "ভালো রে, কেন?"
কালটু - "না মানে তোমাকে আজ খুব ক্লান্ত লাগছে।"
ভোম্বল- "গরমে সারাদিন অপিস করে ...."
বুলটু - "ভোম্বলদা কোনো ডাক্তার দেখাচ্ছ?"
p>
ভোম্বল- "ডাক্তার দেখাব কেন? আমার কি হয়েছে?"
কালটু- "ঐযে পাড়ায় সবাই বলাবলি করে তোমার শরীরে কি যেন নেই বলেই তোমার বিয়ে হচ্ছে না,ডাক্তারের ওষুধে যদি গজায় ....."
এটুকু বলেই কালটু আর বলটু মার পিঠটান আর ভোম্বল রাস্তার আধলা ইঁট তুলে ওদের লক্ষ্য করে ছোঁড়ে, "শালা শুয়োরের দল, হারামজাদা,"
কিন্তু ভোম্বল চল্লিশে পা দিতেই, কোথা থেকে মেঘ না চাইতে বৃষ্টি এসে হাজির । পাত্রীর বাবা একপ্রকার বোবাই কম কথা বলেন, পাত্রীর মা হলেন সর্বে সর্বা । তাঁর একটাই চাহিদা বিয়ে এখুনি করতে হবে। ফর্সা সুন্দরী বাইশ বছরের পাত্রীর সঙ্গে দুদিনের কথায় চল্লিশ বছরের ভোম্বলের বিয়ে হল । খুশি ভোম্বল তার থেকেও আনন্দ ওর মায়ের।
ভোম্বল সবে বিবাহিত জীবনের গুপ্ত জ্ঞান অর্জন করতে শিখছে। বিয়ে সবে দু সপ্তাহ হয়েছে, ভোম্বলের মা এক আত্মীয়র বাড়ি গেছে, অপিস থেকে ফিরে অবাক ভোম্বল, দেখে শাশুড়ী এসে হাজির। । ভোম্বলকে দেখেই শাশুড়ী মিষ্টির বাক্স খুলে একটা রসকদম ভোম্বলের মুখে ঠুসে ওর চিবুক ধরে আদর করে বলে, "ওঃ মরদ পেয়েছে আমার মেয়ে।"
অবাক ভোম্বল ব্যাপারটা কি?
শাশুড়ী বলে, "তুমি বাবা হতে চলেছো গো ভোম্বল বাবু, মেয়ে তোমাকে বলতে লজ্জা পাচ্ছে তাই আমাকে ডাকলো তোমাকে খবরটা দিতে ।"
"মাকে খবরটা দিতে হবে,"
"না না মাকে এক্ষনি নয়, মাসখানেক পরে চমকে দিও সুখবরটা দিয়ে, কেমন? মনে থাকবে?"
আনন্দে শিহোরিত হলেও ভোম্বল মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
আজকাল ভোম্বল খুবই উৎফুল্ল, ওর জীবনের ধিমে চলা লোকাল ট্রেন সহসা যেন গতি পরিবর্তন করে সুফারফাস্ট এক্সপ্রেসে পরিণত হয়েছে।
একদিন হাসপাতালে বাচ্চা ভূমিষ্ট হল, ভোম্বলের আনন্দ চরমে। কিন্তু বাচ্চাকে দেখেই গম্ভীর মুখ মায়ের, ভোম্বল অবাক ! মা আড়ালে ভোম্বলকে ডেকে বলে, "তোরা দুজনেই ফর্সা তাহলে বাচ্চা এমন কুচ কুচে কালো হলো কেন? বৌকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর।"
আমতা আমতা করে ভোম্বল বৌকে জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা আমরা দুজনেই ফর্সা তাহলে আমাদের বাচ্চা এমন কালো হলো কেন ?"
বৌ মিচকি হেঁসে বলে, "বাবাঃ তুমি যা গরম পুরুষ,আর তোমার সঙ্গে থেকে আমিও, দুজনের ভীষণ উত্তাপে বাচ্চার রং জ্বলে গেছে।"
সন্তুষ্ট ভোম্বল মাকে বৌয়ের যুক্তি বলতেই, মা আরও বিরক্ত, বিড়বিড় করে কি যেন বলে সবটা ভোম্বল শুনতে পায় না, শুধু শোনে, "সবই আমার ভাগ্য...........কাকের বাসায় কোকিলের..."