Sanjoy Dutt

Comedy Classics Crime

4.2  

Sanjoy Dutt

Comedy Classics Crime

ভীম ও হাতি

ভীম ও হাতি

4 mins
228


আজ অনেক পুরনো একটা গল্প শোনাচ্ছি, আমাদের গল্পের নায়কের নাম ভীম চন্দ্র। নামটা শুনে আবার মহাভারতে ভীম চন্দ্রকে ভেবে বসবেন না যেন। মহাভারতের ভীম ছিলেন বিরাটকায় সুদর্শন, সুস্বাস্থ্য এবং বিপুল শক্তির অধিকারী। আমাদের ভীম একেবারে তার উল্টো, রং ময়লা, চেহারায় একেবারে তালপাতার সেপাই। ভীমে তার মায়ের চোখের মনি কিন্তু হতাশা মায়ের গলায়, "এত খাঁটি দুধ, সবজি, ফলমূল, মাখন, মাছ, মাংস তোকে যে রোজ খাওয়াচ্ছি, সেগুলো যাচ্ছে কোথায়?" গ্রামে ছোটদের কাছে ভীমের অন্য একটা নাম আছে 'খ্যাংরা কাটি আলুরদম'


 ভীম শারীরিক ভাবে কমজোরি হলে কি হবে দুষ্টুমি বুদ্ধিতে সে সকলের থেকে চার কাটি এগিয়ে। গ্রামে পাড়া পড়শিরা অত্যন্ত বিরক্ত ভীমের দুষ্টুমিতে । কার বাগানে আম, কারোর পেয়ারা চুরি করা। গঙ্গা থেকে কাঁকড়ার বাচ্চা বালতিতে করে এনে অন্যের পুকুরে ছেড়ে দেওয়া, ওগুলো একটু বড় হলেই পুকুরে যেই স্নান করতে যায় তাকেই পিঁপড়ের মত কামড়ায়। গ্রামবাসীর দৈনন্দিন নালিশে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ভীম চন্দ্রের বাবা ঠিক করলেন, ভীমকে বকে মেরে যখন কাজ হচ্ছে না তখন তাকে কাছের শহরে ওনার ভাইয়ের কাছেই পাঠাবেন পড়াশুনা করতে।

প্রথম কয়েক বছর, পনেরো বছরের ভীম, কিছুটা সংযত থাকলেও ধীরে ধীরে তার বুদ্ধির পরিচয় পেয়ে তার বছর বারোর খুড়তুতো ভাই তার অত্যন্ত ভক্ত হয়ে যায়। দুজনের দারুন জমে গেছে। ওদের বাড়ির কাছে জেলার মাঠে প্রতি বছরের মত এবারেও জাকজমক করে মেলা বসেছে। দুভাই মহা আনন্দে মেলায় ঘুরছে।

মেলাতে অনেক ঘোরাঘুরির পর ভীম কিনলো একটা নিরেট রবারের বল। সেটা যেমন ভারী তেমনিই পাথরের মত শক্ত। ওটাকে আবার কেউ কেউ রাবার ডিউস বল বলে। অবশেষে মেলার শেষ প্রান্তে ঘুরতে ঘুরতে ওরা পৌঁছে গেল যেখানে হাতির খেলা হচ্ছে।

একটা বছর বিশ বাইসের ছেলে মাইকে বলছে, "আসুন আসুন আপনার শক্তির পরীক্ষা দিন আর জিতে নিন দশ হাজার টাকা,"

ভীম এগিয়ে গিয়ে ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করল, "খেলাটা কি, বলবে দাদা?"

ছেলেটি প্যাকলা ভীমের দিকে একবার তাকিয়ে তাচ্ছিল্লের মিচকি হেঁসে বলে, "শরীরে জোর থাকলে টিকিট কেটে ভিতরে যাও ওখানে হাতির মালিক আছে খেলা বুঝিয়ে দেবে?"

হাতির সঙ্গে গা জোয়ারি শুনেই ভাই বলছিল, "চলো দাদা আমাদের জোর দেখিয়ে কাজ নেই, আশেপাশের অনেক পালোয়ান ফেল হয়ে গেছে,"

কিন্তু ভীম হারবার পাত্র নয়, পকেটে কুড়িয়ে বাড়িয়ে দশ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে সে ভেতরে গেল।

তাঁবুর ভেতরে মধ্যিখানে শিকলে বাঁধা এক বিশাল মদ্দা হাতি দাঁড়িয়ে, হাতি ভীমকে তাঁবুতে ঢুকতে দেখে বুঝি মিচকি হাঁসে, "এসো খোকা," পাশে একটা চেয়ারে বসে আছে হাতির মালিক। ভীমকে দেখে তার একগাল হাসি যেন, 'আরেকটা মুরগি এসেছে,'

সে চেয়ার থেকে উঠে কাছে এসে বলে, "এসো এসো তোমাকে আমি খেলার সহজ নিয়মগুলো বুঝিয়ে দিচ্ছি। এই যে হাতি দাঁড়িয়ে আছে ওর একটা পা যদি তুমি মাটি থেকে তুলতে পারো পাবে পাঁচ হাজার টাকা, আর যদি দুটো পা তুলতে পারো তাহলে এক্কেবারে দশ হাজার টাকা পুরস্কার পাবে। তোমার হাত পা যেমনভাবে ইচ্ছে ব্যবহার করতে পারো।"

"মানে আমি যেমন ভাবে খুশি?"

"হ্যাঁ হ্যাঁ! আমি দেখেই বুঝেছি তুমি অত্যন্ত শক্তিমান, তুমি নিশ্চয়ই পারবে," মালিকের মুখে রসিকের হাঁসি ভাবখানা 'এলাকার কত পালোয়ানকে দেখলাম, প্যাটকা সেপাই এখন তোমাকেই দেখা বাকি,'

ভীম সোজাসুজি হাতির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, সে ও হাতি একে অপরকে নিরীক্ষণ করে কিছুক্ষন। এরপর সে ধীর পদক্ষেপে হাতিটাকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে, একবার.. দুবার.. তিনবার। হাতির মালিক তো অবাক এই ছোকরা আসল কাজ ছেড়ে এটা কি করছে? নিশ্চই ব্যাটা ভয় পেয়েছে? যা চেহারা। হাতিও এতক্ষনে ভীমের অদ্ভুত কাণ্ডে অস্থির সেও ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করছে, মালটা করে কি? কখন ও আমার পা ধরে তোলার চেষ্টা করবে?


কয়েকবার প্রদক্ষিণের পরে হাতির পিছনে গিয়ে দাঁড়ায় ভীম, নিজের প্যান্টের পকেট থেকে সদ্য কেনা রবারের বলটা নিয়ে একেবারে সপাটে ছুড়ে মারে হাতির অন্ডকোষে।

ওঃ যন্ত্রণায় কুঁকিয়ে ছটফট করে শিকলে বাঁধা হাতি, সামনের দু পা তুলে মুখ দিয়ে প্রচন্ড জোরে 'ওওহআঁহা' আর্তনাদ করে হাতি । স্তম্ভিত হাতির মালিক, ভীমকে দশ হাজার টাকা দিয়ে সে তার তাঁবু নিয়ে মেলা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।


এরপর দু বছর কেটে গেছে, ভীম চন্দ্র এখন কলেজে পড়ে। কলেজের ছুটিতে ওর এক প্রিয় বন্ধু ওকে আমন্ত্রণ করে ওদের বাড়িতে যাবার জন্য । প্রিয় বন্ধুর আমন্ত্রণ কি উপেক্ষা করা যায়? ছুটির মধ্যেই একদিন ভীম পৌঁছয় বন্ধুর বাড়ীতে। বন্ধুর সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে জানতে পারে ওদের ওখানে বিশাল জাঁকজমক করে মেলা হচ্ছে। ছোট শহর, গ্রাম, কসবার লোকেদের কাছে মেলা একটা বিরাট সমাজিক সেতুবন্ধনের জায়গা। ছুটির দিনে সারাদিন আর এমনি দিনে বিকেল বেলা আশপাশের লোকেরা পৌঁছে যায় মেলাতে। মেলা থাকে জমজমাট।

বন্ধুর সঙ্গে বিকেলে মেলায় গিয়ে ভীম জানতে পারে এখানেও একটা হাতির খেলা চলছে। খুব আগ্রহ নিয়ে ওরা দুজনে সেই হাতির তাঁবুর সামনে পৌঁছে দেখে যে ছেলেটি মাইক নিয়ে সকলকে হাতির সাথে খেলার জন্য ডাকছে, "আসুন সবাই, নিজের শক্তি পরীক্ষা করে জিতে নিন দশ হাজার .." ভীমকে দেখেই সে চমকে ওঠে। ভীমও চিনতে পারে আরে এতো দু বছর আগের সেই ছেলেটা!

ভীম টাকা বের করে টিকিট কাটে, ছেলেটি মুখে কিছু না বলে চুপ চাপ টিকিট কাটে। ভীম ভেতরে ঢুকে দেখে এ তো সেই মালিক লোকটা, সেও ভীম কে দেখেই চিনতে পেরে লাফিয়ে নিজের চেয়ার থেকে উঠে সোজা ভীমের সামনে এসে বলে,"দাঁড়াও হাতে কোন কিছু নিয়ে যেতে পারবে না,"

ভীম হাত উল্টে দেখায় তার হাতে কিচ্ছু নেই।

"শোনো আজকের খেলা হচ্ছে হাতির মাথা ওপর-নিচে আর ডাইনে-বাঁয়ে নাড়াতে হবে, শুধু মাত্র হাতির মাথাকে দু হাত দিয়ে ধরে তোমার শক্তি.."

ভীম বলে, "তাও আমার লাগবে না,"

ভীমের উত্তরে তাজ্জব মালিক।

কথায় আছে হাতির স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত প্রখর।


ভীম সোজা গিয়ে হাতির সামনে দাঁড়ায়, হাতি ওকে দেখা মাত্রই চিনতে পারে।

ভীম চেঁচিয়ে বলে, "কিরে হাতি আমায় চিনতে পারছিস?"

 হাতি অমনি সঙ্গে সঙ্গে বারবার নিজের বিশাল মাথা ওপরে নিচে নাড়তে থাকে, যেন বলছে, "হ্যাঁ চিনেছি, খুব চিনেছি,"

 মিচকি হেঁসে ভীম বলে, "সেবারের মত আবার দেব নাকি?"

 অমনি হাতি ডান দিক থেকে বামে বার বার মাথা নাড়ে, যেন বলতে চাইছে, "না না আর না,"


 হতবাক হাতির মালিক অজ্ঞান হয়ে পতিত হয় ভূমিতে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy