করোনা কড়চা
করোনা কড়চা
রিটায়ার্ড পটলবাবু এমনিতেই খুঁতখুঁতে আর খিটখিটে মানুষ তারমধ্যে করোনার বাজারে আজকাল বাড়ী বন্ধী। রোজ বাড়ীর এক মুখ গুলো আর এক ঘেঁয়ে টিভির খবর শুনতে শুনতে এক্কেবারে বিরক্ত হয়ে পড়েছেন। আজ সকালে তাঁর ইচ্ছে হয়েছে ঝিঙে পোস্ত খেতে।
সকালে গিন্নিকে মোলায়েম সুরে বললেন, "ওগো শুনছো আজ একটু ঝিঙে দিয়ে পোস্ত খেতে ইচ্ছা করছে, করবে নাকি?"
"ইচ্ছে করলেই তো হবে না জানো তো ছেলে ঝিঙে একদম খায় না, বাজার থেকে নিয়েও আসে না। তোমাকেই গিয়ে ঝিঙে নিয়ে আসতে হবে, আমি করে দিতে পারি,"
যাক ভালোই হল করোনার বাজারে 'রথ দেখা কলা বেচা' বাড়ীর বাইরে বেরোনো আর ঝিঙে কেনা দুই হবে। বাড়ীর থেকে খানিকটা হেঁটে একটা সবজিওয়ালা পাড়ার মোড়ে তার ভ্যান গাড়ি নিয়ে বসে, পটলবাবু দূর থেকে দেখেন ব্যাটা এসে বসেছে, কিন্তু ওরে বাব্বা কি ভীড়। গুটি গুটি পায়ে তিনি গিয়ে কেনার লাইনে দাঁড়িয়েই চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলেন, "হ্যাঁরে তোর ঝিঙে কত করে?"
আজকাল বাজার ওলাদের এমনিতেই পোয়া বারো সে গম্ভীর ভাবে উত্তর দেয়, "কাকু এখন লাইনে দাঁড়ান আপনার লাইন এলে তখন জানবেন কেসের কি দাম? বাজার নিতে হলে চুপ করে লাইনে দাঁড়াতে হবে, বেশি তাড়া থাকলে নিজের রাস্তা দেখুন। আমার সব্জি নেবার অনেক লোক আছে,"
"শালা এই দিনও ও দেখা বাকি ছিল, সামান্য বাজার ওয়ালার কি দেমাগ!" পটলবাবু গোমড়া মুখে মনে মনে ভাবেন।
এদিকে ঝিঙে পোস্ত খেতে ইচ্ছে তাই কথা না বাড়িয়ে লাইনে চুপ করে দাঁড়ালেন। ওনার সামনে দাঁড়ানো ছেলেটা মনে হয় সাতদিন চানই করে নি। সারা শরীরে ঘামের বিচ্ছিরী বোটকা গন্ধ। পটল বাবু থাকতে না পেরে নাক সিঁটকে বলেই ফেললেন, "বাব্বা তুমি কতকাল চান করোনি? গা দিয়ে কি দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে,"
ছেলেটি পটল বাবুকে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে ফিসফিস করে যা বলল পটল বাবু আজকাল কানে কম শুনলেও বাপ মা তুলে গালাগালি টা ঠিকই শুনতে পেয়েছেন।
আর শুনেই মেজাজ সপ্তমে, প্রচন্ড প্রতিবাদি সুরে গলা ঝাঁজিয়ে বললেন, "অকালকুষ্মাণ্ড আমাকে গালাগাল দেওয়া হচ্ছে? শালা বো****দা বললে?"
ছেলেটি অকুতভয় একটুও না দমে বলল, "এই যে কাকু আপনার মাস্কটা ঠিক নেই, রাস্তা থেকে কুড়িয়েছেন বুঝি? তাই দুর্গন্ধ পাচ্ছেন। আমি ফিসফিস করে নিজের মনে কি বল্লাম কি করে শুনলেন? এখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা, খবরও শোনেন না বুঝি? যান মশাই আরো দূরে গিয়ে দাঁড়ান।"
সত্যিই পটল বাবু খেয়াল করলেন তাড়াতাড়ি ঝিঙে কেনার তাগিদে এক্কেবারে ছেলেটির পিঠের কাছে উনি দাঁড়িয়েছিলেন। আর কোন বাক্যব্যায়ে না করে নিজের ভুল বুঝে গোমড়া মুখে চুপচাপ ছেলেটির থেকে আরো দুপা পিছিয়ে গিয়ে দাঁড়ালেন।