ভালোবাসার টানে
ভালোবাসার টানে
রিয়ার শরীর কিছুটা খারাপ, মাথা ব্যথা আর বমি বমি ভাব জানান দিচ্ছে সংসারে নতুন অতিথির আগমন ঘটতে আর বেশি দেরি নেই। তাছাড়া দিনটি রবিবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। পিনাক ঐ দিন বাসায় থাকে। ঘরের কাজ একটু বেশী। রিয়া ঘরের কাজেই ব্যস্ত। এমন সময় কলিং বেলটা বেজে উঠল। রিয়া বিরক্তি নিয়েই দরজা খুলল।
তুমি? দরজা খুলেই অবাক হয়ে রিয়া প্রশ্ন করে।
সপ্তম হাসতে শুরু করল। সেই বিখ্যাত হাসি। যে হাসির কারণে গোছালো রিয়া খুব সহজেই একদিন এই অগোছালো সপ্তমকে ভালোবেসেছিল, সেই হাসি। রিয়া ধমকের সুরে বলল, হাসি থামাও। বল ঠিকানা কোথায় পেলে? কেন এসেছ? সপ্তম শান্ত কণ্ঠে বলল, এখনো অগাধ অধিকার নিয়ে ধমকের সুরে কথা বলো?
একবার কাউকে কোন অধিকার দিলে তা কি তুলে নেয়া যায়? যাহোক এতদিন পরে কেন এসেছ বল? রিয়া শান্ত কণ্ঠে বলল।
সপ্তম বলে, তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে। ইদানীং খুব বেশি ইচ্ছে করছে। আজ আর মনকে আটকাতে পারলাম না। দেখার জন্য ছুটে এলাম।
অনেকদিন পর সপ্তমকে দেখে রিয়া কছুটা স্তব্ধ হয়ে গেল। তবু নিজেকে সামলে নিয়ে বলল বিয়ে করোনি এখনো?
সপ্তম চুপ থাকে। ওর নীরবতার কারণ রিয়া বুঝতে পেরে একসময় নিজেই বলে, করোনি তাহলে, ঐ যে নীলা না কি একটা মেয়ে তোমার খোঁজ খবর নিত, ওকে বিয়ে করতে পারো।
-নীলার কথা জানতে তুমি? তোমাকে কখনো বলেছি?
-জানবো না মানে? খোঁজতো ঠিকই রাখতাম। যাকে ভালোবাসতাম তাঁকে আর কে কে ভালোবাসে খোঁজ রাখবো না?
সপ্তম মলিন হাসি হাসলো। এই সংসারটা রিয়া আর সপ্তমের হবার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। পৃথিবীতে অনেক কিছুই হবার কথা থাকে। হয় না।
বাইরেই দাঁড় করিয়ে রাখবে? ভেতরে ঢুকতে বলবে না? সপ্তম শান্ত কণ্ঠে বলে।
-আজ না সপ্তম। অন্যদিন এসো। বাসায় পিনাক আছে।
-কই? ঘরেতো কাউকে দেখছিনা।
-ও একটু বাইরে। এখনই এসে পড়বে।
-বেশিক্ষণ থাকবো না। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া হয়নি। এতদিন পর দেখা হলো একটু ভালো মন্দ খাওয়াবেনা?
-প্লিজ সপ্তম, পাগলামি করো না। বোঝার চেষ্টা করো, আমি এখন তোমার প্রেমিকা নই। একজনের বিবাহিতা স্ত্রী। আজ চলে যাও অন্যদিন এসো।
বুক বরা ব্যথা নিয়ে দু'ফুটা অশ্রু ফেলে সপ্তম "তবে আসি। সুখে থেকো।" কথাটি বলে ধীরে ধীরে চলে গেল। বার বার পেছনে ফিরে রিয়ার দিকে তাকাচ্ছে আর চলছে।
রিয়া সপ্তমকে বিদায় করে দিয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে ভাবতে থাকে, মনে পড়ে সপ্তমের সাথে থাকা দিনগুলো। একসময় দু'জন কি ভয়ানক পাগলামি করতো। কলেজ জীবনে সব সময় একসাথে থাকতো। বেশ জনপ্রিয় জুটি ছিল বন্ধু মহলে। সবাই জানতো ওদের বিয়ে হবে। কিন্তু হয়নি। হয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত বিচ্ছেদ। মনে পড়ে সেদিন জরুরী কথার জন্য পার্কে ডেকে এনে সপ্তমকে বলেছিল- "তুমি বেকার বলে আমার পরিবার আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে পারছেনা। আমাকে অন্যত্র বিবাহ দিবে ঠিক করেছে। তুমি আমাকে ভোলার চেষ্টা করো। অন্য কাউকে নিয়ে নিজের মতো করে সংসারটা গুছিয়ে নিও।" শেষ, চারটি বাক্যে চার বছরের রিলেশন শেষ করে দিয়েছিল। এরপর যে যার নিজের পথে হাঁটা। সেই স্মৃতিগুলো রিয়াকে কাবু করে দেয়। যার হাত ধরে সংসার গড়ার স্বপ্ন দেখেছিল তাকে ফিরিয়ে দিয়ে রিয়া স্তব্ধ হয়ে দরজার চৌকাঠ ধরে দাঁড়িয়ে রইল।