Md Zakir Hussain

Tragedy Others

4.3  

Md Zakir Hussain

Tragedy Others

উপহার

উপহার

3 mins
467



পাশাপাশি বসে অনেকক্ষণ গল্প করার পর হঠাৎ রুমি দেবুকে প্রশ্ন করে --- "আচ্ছা, তুমি আমায় কতটুকু ভালোবাসো?"

"আমার জীবনের চাইতে ও বেশি।"--- দেবু উত্তর দেয়।

"ও তাই! তুমি যে এতো ভালোবাসো তার প্রমাণ কী?"

"আমি প্রমাণ করতে পারব।"

"কীভাবে?"

"তোমার জন্য আমি মরতে পারি, মরে প্রমাণ করতে পারি আমি তোমাকে জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসি।"

"তুমি না খুব খারাপ ছেলে, শুধু মরার কথা বলো; তুমি মরতে যাবে কেন? আর তুমি মরে গেলে আমি কাকে নিয়ে বাঁচব?"

"না, তুমি যদি প্রমাণ চাও তাই বললাম, না মরে তো আর প্রমাণ যায় না যে আমি তোমাকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।"

"অকে, আর প্রমাণ করতে হবে না, এখন উঠো সন্ধ্যার আগেই বাড়ি পৌঁছতে হবে।"--- বলে রুমি ব্যঞ্চ থেকে দাঁড়াল। রুমির সাথে দেবু ও দাঁড়াল।

       

                    রুমি হলো রুমেলা রায় আর দেবু হলো দেবাশিশ রায়। ওরা দুজনের ঘর পাশাপাশি গ্রামে। দেবু রুমির তিন বছরে বড়ো, ও বাণিজ্যে স্নাতক, একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করে আর রুমি কলা বিভাগে স্নাতক সিক্সত সেমিস্টারের ছাত্রী, দেবুর ছোট বোন রূপার সহপাঠী ও ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। রূপার সাথে ও প্রায়ই এ বাড়িতে আসা যাওয়া করে তাই দেবুর সাথেও দেবুর পুরো পরিবারের সাথে ওর ভালো সম্পর্ক রয়েছে। দেবুকে ও প্রথম প্রথম দাদা বলে ডাকত কিন্তু আজ দুই বৎসর ওদের এফেয়ার্স চলছে। ওরা একজন অপরজনকে খুব ভালোবাসে।বন্ধু মহলে ও তারা বেশ জনপ্রিয় জুটি। দু'জনের ভালোবাসার বিষয়টি উভয় পরিবারে ও জানা হয়ে গিয়েছে। ওরা দুজন নিয়ম করে প্রতি সপ্তাহে একদিন ঘুরতে যায়। ঐদিন ও ওরা একটি পার্কে ঘুরতে গিয়েছিল।


                          দু'জন একসাথে পার্ক থেকে বেরিয়ে এসে পার্কের সামনে একটা কফি হাউসে বসে কল্ড কফি পান করলো। ওরা দুজন এখন বাড়ি যাবে। বাড়ি যেতে হলে এই হাইওয়ে অতিক্রম করে, উল্টো পাশ থেকে গাড়ি ধরতে হয়। এখানে যানবাহন খুব বেশি, রাস্তা অতিক্রম করতে অনেক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। কিছু সময় অপেক্ষা করার পর রুমি অধৈর্য্য হয়ে রাস্তা অতিক্রম করার‌ জন্য ছুটল আর ওদিক থেকে দ্রুত গতিতে একটি বাস আসছে। রুমির দুর্ঘটনা নিশ্চিত দেখে দেবু আর স্থির থাকতে পারেনি, ও‌ রুমির পিছনে দৌড়ে এসে একটা ধাক্কা দিয়ে রুমিকে সরিয়ে দিয়ে ওকে বাঁচালো ঠিকই কিন্তু পা ছিটকে সে নিজে পড়ে গেল। বাসের ডান পাশের চাকাগুলো ওর দুটো পায়ের উপর দিয়েই চলে গেল। তার পর আর কিছুই দেবুর মনে নেই।


                     আজ পাঁচ মাস থেকে হুইল চেয়ারে বসে বসে দেবুর দিন যাচ্ছে। ও এখন প্রতিবন্ধী, দুটো পা বিকল। হাঁটতে পারে না, কোনো কাজে ও সক্ষম নয়। ঘরের বারান্দায় হুইল চেয়ারে বসে ও প্রতিদিন একবার করে রুমির দেওয়া সর্বশেষ চিটিটা পড়ে, যাহা রুমি আজ থেকে দু'মাস আগে দিয়েছিল। চিটিতে যা লেখা আছে --- "প্রিয় দেবু, আমি ভালো আছি। আশা করি তুমিও ভালো আছো। তোমাকে একটা কথা বলছি তুমি মন খারাপ করবে না। শুনো --- তুমি এখন প্রতিবন্ধী তাই আমার বাবা তোমার সাথে বিয়ে দিতে রাজি নয়, উনি অন্যত্র পাত্র দেখছেন। আমারো মত তাই। তুমি আমাকে ভুলে যেও আর একজন প্রতিবন্ধী দেখে বিয়ে করে নিও। ভালো থেকো। ইতি --- তোমার স্নেহের রুমি।" আজও দেবু চিটিটা একবার পড়ে নিল। ওর চোখ থেকে দু'ফোটা অশ্রু ঝরে পড়ল। চিটিটা পড়ে সযত্নে আবার বুক পকেটে রেখে দিল। ভাবলো --- এটাই রুমির কাছ থেকে পাওয়া তার ভালোবাসার শ্রেষ্ট উপহার।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy