বেহুলা (পর্ব এক)
বেহুলা (পর্ব এক)
তিলোত্তমা তিন তলা সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত উঠতে উঠতে বেশ হাঁপিয়ে গেছিল।কদিন থেকে লিফটটা অকেজো, ভাদ্রের গুমোট গরম, এসি থেকে বেরিয়ে গরমটা যেন বেশী অনুভব হয় ।মানীব্যাগটা আজ যাবার সময় ঘরে টেবিলে রেখে ভুলে চলে গেছিল।
যাবার সময় অফিসের গাড়ী তুলে নিয়ে যায় ঠিক আটটায়। ফেরার পথে রিকশার আসে।বাড়ি থেকে তার কর্মস্থল পাঁচশো মিটারের কম নয়।এই গরমে হেঁটে দর দর করে ঘেমে তার ফর্সা মুখ রাঙ্গা,টপ টপ করে ঘাম ঝরছে, ব্লাউজ অন্তর্বাস ভিজে সপসপে। এসবে তার ধ্যান নেই। অসুস্থ স্বামী অভির জন্য তার যত চিন্তা।
ঘরের দরজা ভেজানো, ঠেলে ঢুকে, অভির দিকে নজর পড়ল। কাপড়ের আঁচল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে, বিস্মিত হয়ে বলল "একী! তুমি খাও নি! শরীর ঠিক আছে তো! "
অভি চোখ বুজে, কেমন উদভ্রান্ত বিষন্ন দেখাচ্ছিল। তিলোত্তমার গলার আওয়াজ পেয়ে তাকাল। কেমন নির্লিপ্ত উদভ্রান্ত উদাসীন চাহনি। কোন কথা না বলে আবার চোখ বুঝল।
তিলোত্তমা,এক নার্সিংহোমের রিসেপশেন গার্ল। কাজ করেছ এই কদিন। সকাল আটটায়, ডিউটি যাবার আগে,অভির জন্য তার টি টেবিলে কলা ডিম সিদ্ধ ছানা আপেল, ও জলের বোতল রেখে তাকে খেয়ে নিতে বলে। অন্য দিন,অভি খেয়ে নেয়। মনটা প্রফুল্ল থাকে। স্ত্রীর এই হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের জন্য নিজের ভাগ্য ও অসুস্থতাকে দায়ী করে। ঘন্টা তিন চার পর আবার তাকে ডিউটি যেতে হয়,ফিরতে রাত আটটা। আর এই তিন চার ঘন্টায় সে স্নান সেরে, রান্না করে, অভির সেবাযত্ন ,তাকে স্নান করতে সাহায্য, খেতে দেওয়া ,নিজে খেয়ে,স্বামীর সাথে একটু গল্প,একটু ভালোবাসা,উৎসাহ শ্বান্তনা ,এক সাথে সেই যেন অভির স্নেহময়ী মা, নিষ্ঠাবান সেবিকা, আদর্শ স্ত্রী ।
তিলোত্তমা বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে বলে তুমি এখনও বেশ অসুস্থ, খাবার ওষুধ নিয়ম মেনে না খেলে সুস্থ হবে কী করে! শরীর খারাপ লাগছে?"
অভি মুখে এক তীব্র ঘৃনা, তাচ্ছিল্য আর অবিশ্বাস ফুটে ওঠে, বলে "কত নাটক করবে! তোমার উপার্জনের খাবার বিষ তুল্য, ওষুধগুলো গরল মনে হচ্ছে। তোমার ভালোবাসার অভিনয় ছলনাময়ী বেশ্যাদেরও হার মানায়।"
বিধ্বস্ত হতবাক তিলোত্তমা, চরম উদ্বিগ্ন ,অবাক হয়ে বলে "কী এসব বলছ! তোমার কী হয়েছে আজ! "
অভি এবার গম্ভীর হয়ে বলে, "বিষধর সাপের সাথে ঘর করা ,আর অবিশ্বাসী চারিত্রহীনা স্ত্রী সাথে বসবাস সমান নির্বুদ্ধিতা,আর বিনাশের কারণ, আমার নয় এটা চানক্যের বানী । নিজেকে যতই চালাক ভাবো সত্য একদিন প্রকাশ পাবেই। "
তিলোত্তমার পা থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছিল। কাতর অনুরোধে বলল "আমার সম্পর্কে তোমার কী ধারনা সেটা পরে বিবেচনা করো, আগে তুমি সুস্থ হও, প্লিজ আমার উপর রাগ দুঃখ করে নিজের শরীরের ক্ষতি করো না,তুমি বড় অপারেশন থেকে উঠেছে!"
অভি চরম আফসোস আর নিজের প্রতি ক্ষোভে গ্লানিতে বলে,"বাজারি বস্তির মেয়ের জন্য মা বাবাকে কাঁদিয়ে বাড়ি ছেড়েছি, তাদের অভিশাপ যাবে কোথায়! আর এজীবনে বাঁচতে চাই না "
তিলোত্তমা এবার অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, "তুমি আমায় ভুল বুঝছ, তোমার সাথে আমি কোন বিশ্বাসঘাতকতা করি নেই, তার আগে যেন আমার মৃত্যু হয়।"
অভি হাত তালি দিয়ে বলল, "নটী বিনোদিনী তোমার কাছে অভিনয়ে শিশু। তা বলি, তুমি নাকি জমিদার কন্যা বাংলাদেশের মুসলিমদের ভয়ে এদেশে ভিখারী বস্তিবাসী! আর তোমার ধনী জেঠতুতো দাদার সাথে হঠাৎই দেখা পরিচয়ের পর,সাহায্যে নাকি সে ঝাঁপিয়ে পরে! আমার লাখ লাখ চিকিৎসা খরচ,এই ফ্রাটে বিনা ভাড়ায় থাকতে দেওয়া, তোমায় নাকি নার্সিংহোমে কাজও দিয়েছেন।এ তোমার কত নম্বর বাবু?"
তিলোত্তমা কোন উত্তর দিল না,"মাথা নামিয়ে দুঠোঁট চেপে নীরব কাঁদছিল। "
"ছলনাময়ী নারীর কান্না ছাড়া কী উত্তর আছে! মানী ব্যাগটা ভুলে টেবিলে রেখেছিলে, নজরে আসায় নিয়ে জানলা দিয়ে ডাকলাম, শুনতে পেলে না, মানী ব্যাগ কত কী নগদ আছে বা কিছু খরচের হিসেব পাবার চেষ্টা করি। আর কী দেখলাম ! তোমার গর্ভনিরোধ ট্যাবলেট, আর কন্ডোম, সোনার গহনা, আর তোমার দাদা রূপী রসিক নাগরের ব্রজবলী মাখা প্রেম নিবেদন কৃষ্ণের রাধা প্রেম হার মানায়। আমি আয়ান নই। আর তোমার দাদা শ্রীকৃষ্ণ নন! ঠিক করি প্রায়চিত্ত্য করব। এই অনশন আমার আমরন চলবে।"
তিলোত্তমা হাত পা হতাশয় দুর্ভাবনায়, যেমন অবশ হয়ে আসে।কাতর ভাবে বলে,"আমি মেনে নিচ্ছি,আমি খারাপ মেয়ে, আবীর দার সাথে শারীরিক সম্পর্ক আছে।কিন্ত আমি যা কিছু করেছি তোমার জন্য। "
"নষ্ট মেয়েরা অজুহাত খোঁজে।তোমার প্রতি আমি আর বিশ্বাস রাখি না---"
"রেখো না ,আমাকে তুমি ঘৃনা করো, বাঈজী বেশ্যা যা ইচ্ছা ভাবো।তোমাকে তো ছলনা আর রূপের মোহে তোমার ধনী প্রতিষ্ঠিত বনেদী বাবা মায়ের কাছ থেকে কেড়ে এনেছি! ভাবো আবীর বাবুকেও আমার রূপে বশীভুত করে লাখ লাখ টাকা তোমার চিকিৎসা, এই ফ্ল্যাট, আমার চাকরী অনেক গহনাও পেয়েছি।" হতাশায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে "আমাকে স্ত্রী হিসাবে মানতে হবে না,তোমার বাবা মায়ের কাছে তোমায় সুস্থ করে দিয়ে আসব। সেদিন তুমি তোমার মা আমায় যত ঝাঁটা জুতো পিঠা করুক,আমি কাদঁব না, চেঁচাব না, নীরব সহ্য করব,তুমি আমার চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে বাড়ি থেকে বের করে দিও,কোন প্রতিবাদ করব না,আমি তো বস্তির বাজারী মেয়ে। তোমাদের বাড়ীর তোমার ঠাকুরমার পাইখানা পেচ্ছাপ পরিস্কার করার রাতের আয়া! আমার কোন সম্মান নেই। আমি কথা দিচ্ছি ,কিন্তু এখন তুমি ভীষণ অসুস্থ আমাকে একটু সহ্য করো , আর কটা দিন আমার সেবা যত্ন নাও।তোমার মা বাবার জন্য তোমাকে বাঁচতেই হবে। "
ব্যাঙ্গ স্বরে অভি এবার বলে "তোমার উদারতার এ অভিনয়, শাজাহান নাটকে ঔরংগজেবকে হার মানায়! এত সব শিখলে কোথায়?"
"তোমাদের ভদ্রলোকের সভ্য সমাজে ,সেদিন যখন শেষ সম্বল দিয়ে, তোমার ওষুধ কিনতে যাই,একুশ শো বারো টাকা বিল হল, আমার কাছে আঠারোশো, দোকানদার ওষুধ ট্যাবলেট আমাকে দিয়েও আবার কিছু টাকা কম থাকায় সব কেড়ে নিল,তুমি তখন শ্বাসকষ্ট ছটছট করছ,বললাম আমার কানের দুটো খুলে দিচ্ছি। দোকানদার কঠোর ভাবে বলল তিনি সুদিকারবারী নয়,দরকারে সোনা অন্যত্রে বেচে,সব দামমিটিয়ে , ওষুধ ট্যাবলেট নিয়ে যাবেন। আমার কিছুই চেনা নেই হাউ হাউ কাঁদছিলাম,তোমার কষ্ট সহ্য করার সাধ্য আমার ছিল না।এক মাঝ বয়সী ভদ্রলোক, পাশে ছিলেন, দোকানদার কে তুমি সম্বোধন করে বলল,অমল তোমরা টাকা ছাড়া কিছুই জানলে না।বলে আমার একুশ শো বারো টাকার সব বিল মিটিয়ে ওর কাছ থেকে ঐ ওষুধ ট্যাবলেট ছিনিয়ে আমাকে দিয়ে বললেন, তুমি বাড়ী যাও। আমি খানিক এসে ঐ মানুষটিকে কৃতজ্ঞতা জানাব বলে দাঁড়ালাম,"
তিলোত্তমার ক্ষনেক কেমন ভাবুক হয়ে আবার বলতে লাগল "ঐ ভদ্রলোক আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল, তোমার বাড়ী কোথায়, কার কী অসুখ, কী সমস্যা জানতে চাইলেন। আমি পা ছুঁয়ে তাকে প্রনাম করতে গেলাম,নিলেন না,বরং আমার সাথে ঐ বস্তির ঘরে গেলেন, তোমার ডাক্তারী প্রেশক্রাপশন দেখলেন, এ বিষয়ে অভিজ্ঞ মনে হল,বললেন, তোমার স্বামীকে এখনই, নার্সিংহোমে ভর্তির দরকার, ডাক্তারবাবুও সেটাই বলেছিলেন,আমাদের এত টাকা ছিল না,তুমি ধুকে ধুকে শেষ হচ্ছ আর আমি অসহায় হয়ে কাঁদছি। উনি বললেন কোন চিন্তা নেই। আমি দেখছি,ফোন করলেন, একটু পর অ্যাম্বুল্যান্স এল,তোমায় নার্সিংহোমে ভর্তি করলেন।"
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলল" আমাকে বললেন, এখানে একা তুমি নিরাপদ নয়,এত রূপ তোমার এই বস্তিতে বিপদ আনবে।আমার একটা ফাঁকা ফ্ল্যাট পড়েই আছে। "
"এই ফ্ল্যাটে আনলেন। দুপুরে হোটেল খাওয়ালেন, তোমায় নার্সিংহোমে আই সি ইউ ওয়ার্ডের ভর্তি করা হয়েছিল। বিকালে উনার সাথে তোমায় দেখতে গেলাম সেলাইন অক্সিজেন চলছিল,ওষুধে অবসন্ন করে রাখা হয়েছিল, হয়ত তোমার যন্ত্রণা আর শ্বাসকষ্ট থেকে রেহাই দিতে। "
"সন্ধ্যার পর এই ফ্ল্যাটে উনার সঙ্গেই এলাম, আমার জন্য সব সাজিয়ে গুছিয়ে রেডি, কী ছিল না! রান্নার সামগ্রী থেকে বাথরুমে সবান সেন্ট শ্যাম্পু,খাট বিছানা সোফা ডাইনিং ড্রেসিং টেবিল সব কিছু, আর আমার জন্য শাড়ি থেকে পায়ের মোজা চটি চপ্পল।
রাতে রান্না করতে বললেন, ঘন্টা তিন মত একা ছিলাম সে সময়ে রান্না করলাম, আবার রাত সাড়ে দশটার সময় এসে সোফায় বসলেন। গম্ভীর হয়ে বললেন, "তোমার বরকে কমপক্ষে দেড় দুমাসের আগে নার্সিংহোম হোম থেকে রিলিজ করা যাবে না। জটিল হার্টের অপারেশন করতে হবে । ততদিন এখানেই থাকো। "
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিলোত্তমার বলল"রাত বাড়ল, একসাথে খেলাম, রান্নার প্রশংসা করলেন। ওর মুখ চোখে কেমন আমার প্রতি ভীষণ লালসার চাহনি দেখতে পারছিলাম, বললেন তোমার একা থাকতে এখানে ভয় করবে না তো! না আজ আমি থাকব? আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম, এত কিছু কেন আমার জন্য উনি করছেন। তোমার চিকিৎসার খরচ এগার বারো লাখ বা যাইহোক এটাও খরচ করতে রাজী, উনার পরিচয় সঠিক আজও দেন নি। তবে খুব ধনী আর প্রভাবশালী ব্যক্তি এটা বেশ বুঝছি।"
খানিকক্ষন থেমে হতাশা আর অসহায় ভাবে বলল "ডেবে দেখলাম আমি যদি উনাকে, তোমারদের সভ্য সমাজে রীতি মেনে ,শরীরের ইজ্জত আর মেকী সতীত্বের অহংকার দেখাই, আর উনি যদি লাথ মেরে ফ্ল্যাট থেকে বের করে দেন,রাতে পথে হাজার হায়না আমায় খাবলে খাবে,আর তোমার মৃত্যু নিশ্চিত, আমি ছাদ থেকে লাফিয়ে তোমাদের সমাজে সতী হতেই পারতাম,মোটে একবার তো কষ্ট, কিন্ত পারি নেই, শুধুমাত্র তোমার জন্য, ভাবলাম যদি সব সত্য তুমি জানতেও পারো, বড়জোর ত্যাগ করবে,চড় মারবে,বা রেগে উন্মাদ হয়ে গলার টুঁটি টিপে মেরেই ফেলবে ।
,কিন্ত বিধবা হয়ে সতী হওয়া যায় কী! আর এই রূপ দেহের ইজ্জত সম্মান সতীত্ব তোমার জীবনের কাছে তুচ্ছ নগন্য ,যদি পাপ হয় হোক,তোমাকে বাঁচতে আমার শেষ শ্বাস অবধি লড়ব। তোমাদের বনেদী সমাজে সৎচরিত্র আর সতীত্বের বিশ্বাস নিয়ে তোমায় মরতে দেবো না ।আভিজাত্যের অহংকার তোমার রক্তে যদি মেরে ফেলতে চাও আমার কোন আপত্তি নেই,তোমার হাতে মরলেও আমার তৃপ্তি!তুমি বাবা মা সম্পদ সব ছেড়েছ শুধুমাত্র আমায় জন্য, এইটুকু কষ্ট সহ্য কেন করতে পারব না!"
কেমন উদাসভাবে খানিক চুপ থাকে বিষন্ন তিলোত্তমা অপরাধীর মুখে উদাসীন ভাবে বলল "ঘর বদ্ধ ছিল, খুব ভয় হচ্ছিল। লজ্জা সংশয় ছিল, তবে মানুষটা মনে হল বিশ্বাসযোগ্য, হিংস্র নয়। তাই বেড সুইচ অফ করে ঘরটা অন্ধকার করে দিলাম।"
তিলোত্তমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকে তার পর "কাঁদতে কাঁদতে বলে,হ্যাঁ আমি আবীর দার রক্ষিতা ,দুটো মাস আমাকে যেমন খুসী যখন খুশী যে ভাবে চেয়েছে, উজার করে দিয়েছি, এক বেশ্যা যেমন বাবুকে বা তার খদ্দেরকে সুখী করে ,অর্থের কারনে জীবিকা আর সুখ সাচ্ছন্দের জন্য, কিন্ত আমি যা কিছু করেছি বিশ্বাস করো তোমার জন্য!আর তুমি বিশ্বাস করো না করো আমার তাতেও কিছুই যায় আসে না। তুমি তোমার বাবা মায়ের কাছে যদি আমায় ঘৃনায় ত্যাগ করে ফিরে যাও ,আমি তো আবীর বাবুর রক্ষিতা হয়ে থাকতে পারব!"বলেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে খুব কাঁদল।
চোখের জল মুছতে মুছতে আমার স্বাভাবিক গলায় বলল,"তুমি যদি না বাঁচতে এ জীবন রাখতাম না,আমি আবীর বাবুকে সতর্কও করে বলেছিলাম,উনি বললেন আমি শঠতা বেইমানি করি না,আমার সাধ্য মত ওর চিকিৎসা করাবো,যত খরচ হয় হোক।তোমাকে সুখী দেখতে চাই। বললেন উনার নাকি টাকার হিসাব নেই।"
অভি এতক্ষণ সব কিছু একমনে ,চুপচাপ মন্ত্র মুগ্ধের মত শুনেছিল। এবার বিষ্ময়ে আবেগে আর তীব্র আত্মগ্লানি অনুসোচনায় বলল," তুমি আমার বেহুল্লা। সে তো লখীন্দরের মরা আঁকরে নদীতে নির্জনে কত রাত কাটায়,দুষ্ট মানুষের নজরে পরে, শেষে স্বর্গে বাঈজী নর্ত্যকী হয়ে দেবতাদের তুষ্ট করে স্বামীর জীবন ফিরিয়ে আনে,তাকে তো আমরা পাঁচ সতীর একজন বলি।তাহলে তুমিও আমার সতী সাধ্বী স্ত্রী, তোমার মন নিষ্পাপ পবিত্র" এবার পায়ে কাছে বসে অঝোরে কাঁন্নায় ভেঙ্গে পরা তিলোত্তমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে। তিলোত্তমা মুখে হাসি ,চোখে আনন্দ অশ্রু। আবেগ বলে "আমার হাতে খাবে তো!"
"এমন কথা বলে আমায় পাপী করো না , তোমায় খুব দুঃখ দিলাম, কাঁদালাম, আমি লজ্জিত, পারলে ক্ষমা করে দিও। "
তিলোত্তমার মুখে পরিতৃপ্তির হাসি,খুসীতে আত্মহারা , বলল, "বস্তির মেয়ে হয়ে, এমন বড় ঘরের ঘরনী হলে, মাঝে মধ্যে এমন কান্নায় আমার কোন আফসোস নেই।" মিষ্টি হেসে একটু আভিমানী গলায় বলল,"এক গ্লাস গ্লুকোজ জল এনে আমার বাবুর আগে অনশন ভাঙ্গাই ,তার পর স্নান করব।"
