অত্যাচার
অত্যাচার


একতলার এই ঘরটার পাশেই একটা বাড়ির দেওয়াল উঠে গেছে, না এক চিলতে আকাশ দেখা যায়, না কারো মুখ। মাঝখান দিয়ে দু'বাড়ির ড্রেন গেছে--হাওয়া দিলেই তা থেকে বিশ্রী গন্ধ ভেসে আসে। নীচে আরেকটা ঘর বন্ধ পড়ে আছে, কশ্চিৎ কদাচিৎ কেউ এলে খুলে দেওয়া হয়। আর আছে একটা ঢয়লেট কাম বাথরুম। পাশে গ্যারেজ। রোজ রাতে বাবুর গাড়ি ঢোকানোর আওয়াজ পেলেই সন্ধ্যা দেবীর চোখ দুটো অপেক্ষা করে থাকে, যদি একবার আসে বাবু বলে। কিন্তু বাবু আসে না। বরং বৌমা, দেবিকা-ই এক-আধদিন ঘরে উঁকি মেরে একটু - আধটু কথা বলে যায়।বাবুর জন্য ছটফট করে, দু-একবার বৌমাকে আকারে ইঙ্গিতে বলেছেন - - কিন্তু কই আসে না তো!
সন্ধ্যা দেবী সারা জীবন দাপটে বেঁচেছেন। স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে চাকরিটা পেয়েছিলেন - - সেই জোরেই অবশ্য জীবনটা উপভোগ করতে পেরেছেন। বাবু তখন খুব ছোটো, কিন্তু শাশুড়ি থাকায় কোনো অসুবিধা হয় নি। সেই শাশুড়ি অবশ্য শেষ জীবনে বেশ ঝামেলা দিয়ে মরেছেন। কিডনি ফেলিওর, তখন যা বয়স তাতে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট অসম্ভব ছিল না, কিন্তু ডোনার পাওয়া যায় নি। ঐ ডায়ালেসিস করে করে চলছিল। তখন উনি এই নীচে তলার ঘরটাতে থাকতেন। শেষের দিকে বিছানাতেই করে ফেলতেন, আয়ারাও বিরক্ত হত। কিন্তু ঐ কয়েক মাস, তারপর মারা গেলেন।
কিন্তু তার এই দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে না কেন! গত তিনবছর প্যারালাইজড হয়ে শয্যাশায়ী কথাও বন্ধ হয়ে গেছে। ইশারাতে বোঝাতে হয়।বাবু তাকে ওপরের নিজের ঘর থেকে এখানে নামিয়ে রেখেছে--ওপর তলায় নাকি তিনি থাকলে ওদের অসুবিধা হচ্ছে। এখন সবকিছুতে আয়াই ভরসা।আয়া বেশিরভাগ সময়ই খেয়াল করে না সেসব ইশারা, বরং ফোনে ডুবে থাকে। বিছানাতে করে ফেললে রেগে যায়, খিস্তি দেয়। আর বাঁচতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু মৃত্যুও তো আসে না।
আজ রবিবার। বাবু সবে পেপার খুলে সোফায় আয়েস করে কফি নিয়ে বসেছে। ফোনটা তখনই এল দেবিকার মোবাইলে।
আড় চোখে জরিপ করে বুঝলো, কিছু সমস্যা। ফোন রাখতেই জিজ্ঞেস করলো, "কি গো কিছু সমস্যা!"
"আয়া আজ আসতে পারবে না।", বিরক্ত হয়ে উত্তর দেয় দেবিকা।
"সো হোয়াট!", হাসতে হাসতে বলে বাবু।
"আরে ঐ পায়খানা পেচ্ছাপ কে পরিষ্কার করবে?", দেবিকা চেঁচিয়ে ওঠে।
"আরে ধুর, কেউ করবে না। ওভাবেই পড়ে থাকবে। আমার ঠাকুমাকেও ওভাবেই থাকতে হতো, আয়া না এলে। ", বাবুও গলা চড়িয়ে জবাব দেয়।
নীচে সন্ধ্যা দেবীর ঠোঁট দু-টো নিষ্ফল আকুতিতে কেঁপে কেঁপে ওঠে।