Sankha sathi Paul

Romance Tragedy

3  

Sankha sathi Paul

Romance Tragedy

অন্তরালে

অন্তরালে

3 mins
306



কিছুক্ষণ আগে সোনাই - এর বন্ধুরা সবাই মিলে একসাথে চলে গেল ।মনটা কেমন কষাটে হয়ে গেল ।আর একটু বেশি সময় যদি থাকতো ওরা, কী ভালো হত ।কিন্তু সোনাই তো আর অবুঝ নেই ।সময় আর পরিস্থিতি - তাকে অনেক কিছু বুঝতে শিখিয়েছে এই শেষ তিন মাসে।সবার নিজের ব্যক্তিগত ব্যস্ততা সবার আগে, তারপর তো অন্যের চাওয়া - পাওয়া ।এখন সব বোঝে সোনাই ।কিছুদিন আগের জেদী অভিমানী মেয়েটা আজকাল ভীষণ রকম শান্ত হয়ে গেছে ।


ডাক্তার আঙ্কেলের ডাকে ঘোর কাটল সোনাই - এর ।কখন যে সন্ধ্যা নেমেছে টেরও পায় নি সোনাই ।মা রোজ সন্ধ্যায় তুলসী তলায় একটা করে মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে দিত।এখনও কী তেমনই রোজ সন্ধ্যায় মা প্রদীপ জ্বালিয়ে দেয়?? কে জানে ।মাকে কিছু জিজ্ঞেস করলেই কাঁদে ।খালি ভোলায় সোনাইকে, বলে - এই তো তোকে বাড়ি নিয়ে যাবো ।সোনাই আর কিছু বলে না ।মাকে এমনিতেই বড় ক্লান্ত দেখায় আজকাল ।ভালো লাগে না আর এই একা একা।নার্সিংহোমের কেবিনটাকে কেমন খাঁচা মনে হয় সোনাই-এর।


আগে মা রোজ থাকতো, এখন সোনাই থাকতে দেয় না ।কী হবে কাউকে কষ্ট দিয়ে ।বুঝতে শিখলে আর কিছুই চাইতে ইচ্ছা করে না ।এমনিতেই কত টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে ।কী জানি, কেন যে বারবার ঠাকুরকে একটা বড় রোগ দিতে বলত মনে মনে ।আসলে সোনাই ভীষণ রকম ভাবে বিশ্বাস করত, ও কষ্ট পাচ্ছে দেখলে বাবুয়া ঠিক সব কাজ ফেলে ছুটে আসবে ।কিন্তু সেই বিশ্বাসটা কত বড় ভুল ছিল তা বুঝে গেছে সোনাই ।বাবুয়া আসে নি।


বাবুয়ার কথা ভাবতে ভাবতে চোখটা জলে ভেসে যাচ্ছে সোনাই - এর ।গত তিন মাসে তার তিনটে কেমো হয়ে গেছে।কাল সকালে ফোর্থ কেমো ।কোনো মেসেজ করে নি সোনাই এই তিনমাসে ।লাস্ট মেসেজ করেছিল এম. আর. আই হওয়ার আগের দিন ।একবার আসতে বলেছিল বাবুয়াকে ।বাবুয়া কথা দিয়েছিল - "আসব ।চোখ খুলে তুমি আমাকেই দেখবে ।" সত্যি চোখ খুলে সেদিন বাবুয়াকে খুঁজেছিল সোনাই ।অ্যাজ ইউজুয়াল, বাবুয়া আসে নি সেদিনও ।সমস্ত বিশ্বাস শেষ হয়ে গিয়েছিল সেদিন ।বাড়ি ফিরে মেসেন্জারে অনেক মেসেজ পেয়েছিল বাবুয়ার ।অনেক অনেক অভিমানে ব্লক করে দিয়েছিল বাবুয়াকে ।


বাবুয়া তাতে বুঝে নিয়েছিল, এতদিনের চেনা সোনাই - কে, সোনাই-এর ভালোবাসাকে।বাবুয়া ডিস্টার্ব করে নি কখনো সোনাই-কে আর।

দিন কেটে যাচ্ছে এভাবেই।অভিমান কমে গেছে সোনাই - এর । এম আর. আই রিপোর্ট পেয়ে ভেবেছিল জানাবে ।কিন্তু কী জন্য ।বেঁচে থাকতে হাজার অনুরোধ যে উপেক্ষা করে গেছে, কী লাভ নিজের দুর্বলতাকে শিখণ্ডী করে তাকে পাওয়ার শেষ চেষ্টা করে ।

বায়োপসি রিপোর্ট পাওয়ার পরে চিকিৎসা শুরু হয়ে গেছে ।তিনটে কেমো কমপ্লিট ।বন্ধুরা অনেক বুঝিয়েছে সোনাই-কে ।বন্ধুরা অবাক হয়েছে, কখনও চোখে না দেখা একটা মানুষের জন্য পাগলামি করতে দেখে।ভুল যাওয়ার সহজ পরামর্শ দিয়ে গেছে অবলীলায় ।সোনাই কাউকে বোঝাতে পারে নি ।কল্পনার সহবাসে তার অন্তর যেন স্মৃতির ভারে গর্ভবতী ।


গভীর রাত ।ঘুম নেই চোখে ।ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ।নার্স দিদি ঘুমিয়ে পড়েছে চেয়ারে বসেই ।অনেক পুরনো অভ্যাস ভীষণ রকম টানছে আজ সোনাই - কে।স্মার্ট ফোন তো নেই আর সোনাই - এর কাছে ।তবে নার্স দিদির ফোনটা রয়েছে টেবিলে ।বেড থেকে হাত বাড়িয়ে ফোনটা নেয় সোনাই ।ডায়াল করছে সেই চেনা নাম্বার ৯০০৭........।ফোনটা বেজে যাচ্ছে - একবার, বারবার ।শ্বাসকষ্টটা ভীষণ রকম বাড়ছে ।ইনহেলারটা নিতে গিয়ে পড়ে গেল বেড থেকে ।অস্ফুট গোঁঙানি কানে যাচ্ছে না ঘুমন্ত নার্সের ।সোনাই - এর দুর্বল শরীর আস্তে আস্তে নেতিয়ে পড়ছে শ্বাসবায়ুর অভাবে ।

***************************************

বাবুয়া একটার পর একটা পেগ শেষ করে যাচ্ছে - - - সোনাই - এর বিশ্বাসঘাতকতাকে ভুলতে ।ফোনটা সাইলেন্ট মুডে রাখা একপাশে ।

****************************************

সোনাই একটা ঘড়ি কিনেছিল, প্রথম দেখার দিন বাবুয়াকে দেবে বলে ।মনে মনে ভেবেছিল, ভুলো বাবুয়াকে ঘড়িটা সবসময় তার কথা মনে করিয়ে দেবে ।বাবুয়ার সাথে দেখা হয় নি সোনাই - এর ।সোনাই - এর পড়ার টেবিলে এখনও ঘড়িটা টিকটিক করে চলেছে নিজস্ব নিয়মে ।।

---------



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance