STORYMIRROR

Dola Bhattacharyya

Classics Inspirational

4  

Dola Bhattacharyya

Classics Inspirational

অসহনীয় দুঃখের মাঝে একঝলক খুশি

অসহনীয় দুঃখের মাঝে একঝলক খুশি

8 mins
260


মা ডাক টা শোনার জন্য আমাকে অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল জানেন পাঠক । একটা সময়ে এই ডাকটা শোনার জন্য কি আকুলী বিকুলীই না করেছি। ঘরে বাইরে গঞ্জনা। মা হওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। সুস্থ সবল গাছটায় কেবল কুঁড়ি আসে। কিন্তু ফুল ফোটে না। অকালে ঝরে যায়। সবাই ভাবত, আমি অপয়া। আমি নিজেও একসময় মনে মনে সেটাই বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম। কিন্তু না, কারণ তো একটা আছেই। বিয়ের একবছর পরেই আমার প্রথম সন্তান সম্ভাবনা দেখা দেয়। বাড়ির সকলে খুব খুশি। তিনমাস পর ঘটে বিভ্রাট, হঠাৎ, বিনাকারণে ।তারপর থেকেই শুরু হয় সমস্যা। পরবর্তী কালে অন্যান্য ডাক্তার বাবুরা যখন আমাকে পরীক্ষা করেন, নানা ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় আমার। তখন উঠে আসে এক কঠিন সত্য। দোষটা ছিল ওই ডাক্তার বাবুর। সঠিক পথে এগোলে আমার ওই প্রথম বাচ্চাকেই নিরাপদে ভুমিষ্ঠ করানো যেত। এতটা কঠিন পথ আমাকে অতিক্রম করতে হতো না। 


    প্রতিবেশীর মেয়ের বিয়ে। বাড়ি শুদ্ধ সকলের নিমন্ত্রণ। সকলের সঙ্গে আমিও গিয়েছিলাম সেদিন । ছাদনাতলায় তখন বর কনের মালাবদল হচ্ছে। শাশুড়ি, জায়ের সাথে আমিও দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। কয়েকজন মহিলা এসে আমাকে বলল, "এই, তুমি খাবার জায়গায় যাও।" 


আমি তো অবাক। আমার বাড়ির সকলেই তখনও ওখানে দাঁড়িয়ে। জিজ্ঞেস করলাম, "কেন"? আমার পেছনে কোনো একজন বয়স্কা মহিলা বলে উঠলেন, 

"বাঁজা মেয়েমানুষ। তাই বা বলি কি করে। বাচ্চা তো আসে। নিজের বাচ্চা গুলোকে নিজেই খেয়ে নেয়। আবার জিজ্ঞেস করছে কেন? তোর দৃষ্টি লেগে আমাদের মেয়েটার ক্ষতি হোক আর কি"। কেউ একজন বলে উঠল, "আঃ। পিসি। কি হচ্ছে! ওরা আমাদের নিমন্ত্রিত অতিথি"। আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তখন বিয়ের অনুষ্ঠানে মেতে আছে। আমার হেনস্থা তাদের চোখে পড়ে নি। কিন্তু একজনের পড়েছিল। তিনি আমার স্বামী। আমার হাত ধরে সেই মুহূর্তেই বিয়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। বেরিয়ে আসার সময়েও তপ্ত শলাকার মতো কানে এসে বিঁধল," এমন বৌ নিয়ে ঘর করে কি করে"! 


এই তো অপমানের শুরু। এরপর অপমানিত হলাম নিজের ননদের বাড়িতে। ননদের সাধের সময়। বাড়ির সব মেয়েদের নিমন্ত্রণ। আমি যাব না বলায় খুব রেগে গেলেন শাশুড়ি। অবশেষে যেতে বাধ্য হলাম। 

  থালায় ভাত, পঞ্চ ব্যঞ্জন, মাছ, চাটনী, দই, মিষ্টি সাজিয়ে খেতে দেওয়া হয়েছে ননদিনী কে। সবাই ওকে ঘিরে রয়েছে। শাশুড়ি আমাকে ডেকে বললেন, "বৌমা, তুমি ওর পাশে বস। ওর ছোঁয়ায় যদি তোমার বরাত খোলে। তোমার কোল আলো করে কেউ একটা আসুক, আমরাও তো চাই।" কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। এও তো এক রকম অপমান। এখানেই শেষ নয়। অপমান আরও বাকি ছিল। ভীষণ রেগে গেল আমার ননদিনী। ভাতের থালা ফেলে উঠে পড়ে আর কি। 


"তুমি কি মা! ও একটা অপয়া মেয়ে। আর ওকেই তুমি কিনা আমার পাশে বসতে বলছ! যদি আমার কোনো ক্ষতি হয়ে যায়! ওর এখানে থাকার কোনো অধিকার নেই। তুমি ওকে এখানে এনেছো কেন? নিঃশব্দে ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। শাশুড়ি বাড়ি ফিরে আমাকে খুব একচোট বকাঝকা করলেন," আমাকে না বলে চলে এলে কেন? আর না খেয়ে আসারই বা কি ছিল। দুটো খেয়ে এলেই পারতে। এমন আচরণ করছ, আমরা যেন কত অন্যায় করছি তোমার প্রতি। আমার মেয়ে তো ভুল কিছু বলেনি।" 


বিয়ের পর পাঁচ বছর কেটে গেল। আমরা তখনও নিঃসন্তান দম্পতি। বাড়িতে ছোট ননদের বিয়ে লাগল। এখানে কিন্তু বিয়ের কাজকর্মে আমাকে হাত লাগাতেই হল। এইসমস্ত কাজ শাশুড়ি করতে পারবেন না, শারীরিক অসুস্থতার কারণে। লোকজনও বিশেষ কেউ নেই কাজ উৎরে দেবার জন্য। শুধু বড় জা এবং আমি। প্রয়োজনের সময় আমার অপয়া বদনাম গেল কেটে। 


    এই অনুষ্ঠানেই ঘর ভর্তি নিমন্ত্রিতের সামনে, আমিও সেখানে উপস্থিত, শাশুড়ি বললেন, "এবার আমার মেজ ছেলের জন্য আবার পাত্রী দেখো তোমরা। মেজ বৌমার তো বাচ্চা কাচ্চা কিছু হল না। তাই মেজ ছেলের আবার আমি বিয়ে দেব" । কথাটা বলেছিলেন স্রেফ মজা করতে। সকলেই জানেন এযুগে এক স্ত্রী থাকতে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করা যায় না। 


1993 থেকে 1998 পর্যন্ত এভাবেই কেটেছে। চোখের জল শুকিয়ে গিয়েছিল। আমার দ্বিতীয় সন্তান সম্ভাবনা। 1995 সাল। এবারে কিন্তু আগের ডাক্তারবাবুর কাছে যাইনি। দ্বিতীয় বাচ্চা টা রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন এই ডাক্তারবাবু । কিন্তু সফল হননি। আমার স্বামী কে উনি বলেছিলেন কলকাতায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে। তাই করেছিলেন আমার স্বামী। একদিকে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা, আর অন্যদিকে বাড়িতে নিদারুণ গঞ্জনা। ডাক্তার বলেছেন, আমার মন ভালো রাখতে। কিন্তু মন ভালো থাকার মতো পরিবেশ কোথায়! 


শুধু পাগলের মতো দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে বেরিয়েছি বাড়ির মানুষগুলোর দূর্ব্যবহার থেকে বাঁচতে। 

   1998 তে এল খুশির খবর। আমি আবার মা হতে চলেছি। কিন্তু খুশি হতে পারলাম না তো। এ ও হয়তো আমাকে কাঁদিয়ে চলে যাবে। ডাক্তারবাবু অভয় দিলেন। আমি নিশ্চয়ই এবারে মা হতে পারব। একদম বেড রেস্ট এ রাখা হল আমাকে। বাড়িতে সকলে খুব অসন্তুষ্ট। "এরকম ভাবে বাচ্চা হবার কি দরকার! ঝাড়া হাতপায়ে তো ছিলি বেশ। সুখে থাকতে ভুতে কিলোয় তোদের।" 


দিনে কোনোরকমে একথালা ভাত আর আলুসেদ্ধ আমার ঘরে এসে পৌঁছতো। আর রাতে আমার রান্নাই হতো না এখানে। আমার বাপের বাড়ি থেকে বাবা বা ভাই এসে আমার রাতের খাবার দিয়ে যেত। তখন একটু তৃপ্তি করে খেতে পারতাম। কিছুদিন বাদে বড় জা চলে গেল ওদের নতুন ফ্ল্যাটে। এতদিন ওই ফ্ল্যাট পড়েই ছিল। ওর মেয়েটাও একটু বড় হয়েছে তখন। আমি বাড়িতে যে কাজগুলো করতাম, সেগুলো ওকে করতে হচ্ছিল। তাই কষ্ট হচ্ছিল খুব। করতেই যখন হবে, তখন নিজের সংসারের জন্যেই করবে। অন্যদের জন্যে কেন করবে? 

বিপদে পড়ে শাশুড়িও জবাব দিল, আমি একা কি করে এত কাজ করব। আমার স্বামী বললেন, "একটা রাঁধুনি রেখে দিচ্ছি। অসুবিধে হবে না।" শ্বশুর, শাশুড়ি দুজনেই তারস্বরে বললেন, "ও বাবা, রাঁধুনির রান্না খেতে পারব না। রান্নায় তেল বেশি দেবে, কি ঝাল বেশি দেবে। তারপর অসুখ করে মরব নাকি। মেজ বৌমা একটু রান্না করলে কি হবে! ডাক্তারের সব কথা শুনতে হবে নাকি, আর কারো যেন বাচ্চা হয় না, শুধু ওরই হচ্ছে"। সেই সময়ে সপ্তাহে একটা করে ইনজেকশন দেওয়া হত আমাকে, বাচ্চা টা ধরে রাখার জন্য। ওই ইনজেকশনের একটা আ্যম্পিউলের দাম তখন ছিল ছশো টাকার কাছাকাছি। 


    আমার স্বামী তখন নিজে রান্নার দায়িত্ব নিলেন। রান্না করে নিজে খেয়ে, বাবা, মা আর আমার খাবার ঢেকে রেখে স্কুলে চলে যেতেন। হ্যাঁ। উনি একজন শিক্ষক। ফিরে এসে আবার রাতের রান্না। শেষে বড় ননদ একজন রাঁধুনি কে জোর করেই ঢোকালেন, ভাইয়ের এত কষ্ট দেখে। শ্বশুর, শাশুড়ি তখন আর আপত্তি করেন নি। 

ধীরে ধীরে নতুন একটা প্রাণের স্পন্দন টের পাচ্ছিলাম শরীরের মধ্যে। এক অপরিসীম আনন্দে ভরে উঠত মনটা। পাঁচ মাসে পড়ে একটা অপারেশন হল আমার, ছোট্টো সোনাটাকে আরও খানিকটা সুরক্ষা দেবার জন্য। কারণ, সোনাটা এখন বড় হচ্ছে ধীরে ধীরে। ইনজেকশনে আর কাজ হবে না। আর একটু বেশি সুরক্ষা দরকার। এই অপারেশনের মাধ্যমে আমার শরীরের মধ্যে একটা বাঁধন দেওয়া হল । এর ফলে মিসক্যারেজ হবার সম্ভাবনা অনেক কমে গেল। 


জীবনে প্রথম অপারেশন টেবিলে শুয়ে। চারদিকে অজস্র অচেনা যন্ত্রপাতি দেখে ভয় লাগছিল খুব। টেবিলের ওপরেই বিশাল একটা আলো রয়েছে। সেটাকে আমার গিলোটিনের মতো লাগছিল। নিজেকে মনে হচ্ছিল ফরাসি বিপ্লবে নিহত ফ্রান্সের সম্রাট ষোড়শ লুই এর স্ত্রী মারি আঁতোয়ানেত। ওই গিলোটিনের সাহায্যে এখনই আমার শিরোচ্ছেদ হবে। আসলে গিলোটিন কিরকম দেখতে, সে সম্পর্কে আমার কোনো আইডিয়া নেই। ঘটনা গুলো শুধু ইতিহাসে পড়েছি। 


জ্ঞান ফেরার পর একটু লজ্জা জনক পরিস্থিতিতে পড়লাম। ডাক্তারবাবু আমার স্বামী কে বলেছেন, আমায় যখন আ্যনেস্থেশিয়া দেওয়া হচ্ছিল, তখন আমি, ফরাসি বিপ্লব, গিলোটিন, ষোড়শ লুই, রোবসপিয়ের, খাপছাড়া ভাবে এমন কিছু শব্দ উচ্চারণ করেছি। উনি হাসতে হাসতে বলেছিলেন, "অনেক পেসেন্ট তো দেখলাম। অজ্ঞান হয়ে যাবার আগে অনেকেই তাদের অবচেতনে জমে থাকা অনেক কথা বলে। সব কথা আমরা প্রকাশ করি না। কিন্তু এরকম ইতিহাস আওড়ানো পেশেন্ট আগে তো কখনও দেখিনি।" 


  মাঝে মাঝেই মনে হতো, কই, আমার সোনা তো আর নড়াচড়া করছে না। তুমুল আতংক। কি হল ওর! ডাক্তারের নির্দেশে আলট্রাসোনোগ্রাফি করা হল। দেখা গেল ও ঠিকই আছে। আসলে বাঁধন দেওয়ার ফলে ওর নড়াচড়া করার সম্ভাবনা টা কমে গিয়েছিল। ডাক্তারবাবু বললেন," একদম প্যানিক করবে না তুমি। তোমার বেবি খুব ভালো আছে। এরপর কিন্তু আলট্রাসোনোগ্রাফি করতে আমি দেব না।" সাত মাসের শেষের দিকে ফলস পেন উঠল। ডাক্তার অভয় দিলেন, "এমন হতেই পারে।" আমার শরীর ভীষণ খারাপ হয়ে যাচ্ছিল আস্তে আস্তে। ঘরের বাইরে আমাকে নিয়ে জোর আলোচনা চলত, "যা অবস্থা, বাঁচবে বলে তো মনে হয় না। আর বাচ্চা টা যদি বেঁচে থাকে, তাহলে ওকে মানুষ করবে কে!"

বারবার ফলস পেন উঠতে থাকায় আমাকে নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হলো। শরীর তখন খুবই খারাপ। আসলে এই সময়ে যে যত্নের দরকার, সেটা করার মতো কেউ ছিল না । আমার মা নেই। তাই বাবা, ভাই একা। কাজের লোকের হাতে সংসার। সেখানেও আমি থাকতে পারব না। আমার স্বামীর পক্ষে যতটুকু সম্ভব, তা তিনি করেছেন। 

22 শে জুন ভর্তি হলাম নার্সিংহোমে। স্কুল ছুটির পর আমার স্বামী রোজ আসতেন আমাকে দেখতে। আমার বাবাও আসতেন। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির কেউ কোনোদিন আসেন নি। 

12ই জুলাই আমার ডেলিভারি। ওই দিনই আটমাস পূর্ণ হয়ে ন মাসে পড়েছে। দশমাস অবধি রাখতে ডাক্তারবাবু সাহস পান নি। আমার শরীর ক্রমশই খারাপ হয়ে আসছিল।


 শ্রাবণ মাস। অঝোরে বৃষ্টি পড়ছিল সেদিন। অপারেশন টেবিলে তোলা হয়েছে আমাকে। সেদিন আর একটুও ভয় করছিল না। বরং অনির্বচনীয় এক সুখানুভূতি তে ভরে উঠেছিল মন টা। আজ আমি মা হতে চলেছি ।হে ঈশ্বর! আমি যদি না ও বাঁচি আমার বাচ্চা টা যেন বেঁচে থাকে। তুমি দেখো ঠাকুর। আমি ওকে না পেলেও, ওর বাবা যেন ওকে পায় ।বড্ড বাচ্চা ভালোবাসে মানুষটা। 


কাঁচের জানলা দিয়ে ঘরের বাইরে টা চোখে পড়ছিল। বৃষ্টি তে ঝাপসা চারিদিক। ঝাপসা আমার মন, ঝাপসা আমার দৃষ্টি। ডাক্তারবাবু জিজ্ঞেস করলেন, "কি ভাবছো"? বললাম, "কিছু না। একটা গান মনে পড়ছে"। 

"কি গান?" 

"আজ যেমন করে গাইছে আকাশ তেমনি করে গাও গো"। 


"গাইতে পারবে"? 

শুরু করলাম, "আজ হাওয়া যেমন পাতায় পাতায় /মর্মরিয়া বনকে কাঁদায় /


তেমনি আমার বুকের মাঝে কাঁদিয়া কাঁদাও গো।" গান শেষ হল। ধীরে ধীরে ঘুমের অতলে তলিয়ে গেলাম আমি। জটিল অবস্থার পেশেন্টদের সঙ্গে এরকম আচরণ ই করা হয় এখানে। 


ঘুমটা কাটছিল আস্তে আস্তে, একটা তীব্র যন্ত্রণাময় অনুভূতির মধ্যে দিয়ে। বহুদূর ভেসে আসছিল একটা বাচ্চার কান্নার আওয়াজ। কারা যেন বলছে ," মেয়ে হয়েছে ওর। রাখে হরি মারে কে।" অনেক দূর থেকে শুনতে পাচ্ছি কাদের কথা বলার শব্দ । একটা পুরুষকন্ঠ আমার নাম ধরে ডাকছে। কারা যেন আমাকে গড়িয়ে গড়িয়ে কোথায় যেন নিয়ে চলেছে। ঘুমের অতলে তলিয়ে যেতে যেতে শুনতে পেলাম আকুল স্বরে কে যেন আমাকে ডাকছে। 

    তিনদিন পরে ওকে আমার কোলে তুলে দেওয়া হল। ঠিকঠাক সেন্স আসতেই আমার পুরো দেড় দিন কেটে গেছে। তার পরেও আচ্ছন্ন অবস্থায় কাটিয়েছি অনেকটা সময়। 


সাদা টাওয়েলে মোড়া পুতুলটাকে সিস্টার যখন আমার কোলে প্রথম তুলে দিল, আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে এটা আমার মেয়ে! সত্যিই তাহলে মা হতে পারলাম! দুহাতে ধরে অবাক হয়ে তাকিয়েছিলাম ওর দিকে।ঠিক যেন একটা আধফোটা গোলাপ ফুল। টুকটুকে ফর্সা রং। আকাশের মত ঘন নীল ওর চোখ। এক মাথা রেশমের মত চুল। ওও তখন অবাক দৃষ্টিতে দেখছিল আমাকে। আসলে অনুভবে চিনে নিতে চাইছিল নিজের মাকে। হঠাৎ কান্না জুড়ল ছোট্ট পুতুল টা ।সিস্টার বলল,


"খিদে পেয়েছে ওর। ওকে খেতে দাও"। প্রথম ব্রেস্ট ফিডিংএর অনুভূতি। প্রথম টা ও মুখে নিতেই পারছিল না। তারপর চকচক করে টানতে লাগল। কি আনন্দ! তীব্র খুশির উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছিলাম। সকলকে ডেকে ডেকে বলতে ইচ্ছে করছিল, আমি মা হতে পেরেছি, ব্যর্থ নই আমি। এ খুশি যে অবর্ণনীয়।




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics