অপ্রত্যাশিত
অপ্রত্যাশিত
ধরো হঠাৎ কোন সন্ধ্যে তোমার দেখা আমার সঙ্গে
গানের কথা গুলো কেমন যেন একটু বেশিই কষ্টের
কষ্টের বললাম এ কারনে না চাইতে যখন অপ্রত্যাশিত ভাবে কারো সাথে দেখা হয়ে যায় তখন বুকের ভেতরটা কেমন যেন হয়ে যায় ।
যেমন করে হঠাৎ দেখা চেনা হয়েও অচেনা হয়ে যাওয়া মানুষের সঙ্গে ।
মাসটা ছিল শ্রাবণের মাস , শ্রাবণের মতোই জলধারা
হঠাৎ মেঘ হঠাৎ বৃষ্টির মতো সব কিছু,
বেশ কিছুদিন আগে আমি কলেজ থেকে সদ্য বের হয়েছি , আকাশ টা তখন কালো কালো মেঘের ভেলায় ভাসছিল ।
এই বুঝি রোদ কে উপেক্ষা করে একফোঁটা দু ফোঁটা করে বৃষ্টির জলপ্রাতে পরিণত হবে ।
আমি রিক্সা ওয়ালা মামাকে ডাকলাম দাম ঠিক করতে করতেই হঠাৎ আকাশ থেকে জলধারা সৃষ্টি হলো ,
আমি কোন রকম দর দাম ঠিক করে হুড তোলা রিক্সায় উঠে পড়লাম, আমি একা তবে একা থাকার নিজস্ব কিছু সুখ আছে।
বৃষ্টিতে রাস্তার মানুষ গুলো এদিক ওদিক ছুঁটছে , কেউবা প্রিয়জনের হাত ধরে ভিজে ভিজে রাস্তা পার হচ্ছিলো , ঠিক তখন মনের মধ্যে কেমন যেন একটা অনুভূতি বয়ে গেলো,
রাস্তার পাতাগুলি ভিজে কী সুন্দর শুচিশুভ্র লাগছে! বৃষ্টিতে ভিজলে আমার ভীষণ শীত করে, মাথা ধরে। ঠান্ডার ধাত তো!
তবে বৃষ্টিতে শহর দেখতে আমার বেশ ভালোই লাগছে ।
শহরের পিচঢালা ভেজা রাস্তা , বিদ্যুতের আলোয় সব কিছু মায়ায় আবর্তিত হচ্ছিল বার বার। কী যে মায়া! কী যে অদ্ভুত মায়া! আমার একটুও খারাপ লাগছিল না; মনেই হচ্ছিল না, আমি আসলে একা একা চলছিলাম।
হঠাৎ কি মনে হতেই আমি রিকশার হুড খুলে ভিজতে থাকলাম। বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটা মায়া আমাকে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রেখেছিল প্রতিটা ক্ষণ!
আপন মনে আমি ভিজতে ভিজতে কল্পনার জগতে হারিয়ে যাচ্ছিলাম বার বার । আর রিক্সা ওয়ালা মামা
খুব শান্ত আর ধীর গতিতে রিক্সা চালাচ্ছিলেন ।
সুরভি উদ্যানের সামনে হঠাৎ জ্যামে আটকে গেলাম , প্রতিদিন জ্যাম আমার অনেক বিরক্তিকর লাগলেও আজ কেমন যেন একটা অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছিল ।
গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে হঠাৎ চোখ গেলো সুরভি উদ্যানের সামনে ফুলের দোকানে , তাকাতেই আমার চোখ আটকে গেলো , অপ্রত্যাশিত ভাবে দেখা হয়ে গেলো চেনা সেই মানুষটার সাথে যে এখন বড্ড অচেনা হয়ে গেছে ।
উষ্কখুষ্ক মানুষ টা কেমন যেন একটু বেশি গোছালো হয়ে গেছে, দায়িত্বশীল হয়ে গেছে কেমন যত্ন করে ফুলের দোকান থেকে ফুল কিনছে তার প্রিয় মানুষটার জন্য, কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমার চোখ থমকে গিয়েছিলো । আকাশটা আজ একটু বেশিই কেঁদেই চলেছে। আমার মাথা দিয়ে বৃষ্টির পানি চোখের কোণে এসে গাল বেয়ে পড়ছে , হুশহাশ করে দু-চারটে গাড়ি ছুটে যাচ্ছিল।
হঠাৎ জ্যাম উপেক্ষা করে রিক্সা ওয়ালা মামা রিক্সা হাওয়ার বেগে নিয়ে যাচ্ছিল । রিকশাওয়ালা মামা হঠাৎ বলে উঠলেন এসে গেছি আপা?' আমি কিছুই শুনতে পাইনি সেদিন কারণ
মাথায় তখন তুমি জড়িয়ে ছিলে । এইতো কিছুদিন আগেও আমরা দু-জন হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সেদিন লিখেছিলাম, আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি... কাউকেই দেবো না! এই শ্রাবণ টা শুধুই তোমার আমার!
কিন্তু দেখো আজ সব কিছু এলোমেলো ।
এরপর খুব ঠান্ডা লেগেছিল, তবে জ্বর হয়নি। আমার কেন জানি জ্বর আসে না। অসহ্য রকমের মাথাব্যথা হয়েছিল। বৃষ্টির পানি মাথায় পড়লেই মাথায় যন্ত্রণা করে ভীষণ। সেদিনের যন্ত্রণাটাও কী রকম জানি একটা অসহ্য রকমের অনুভূতি দিচ্ছিল!
সবটা এলোমেলো তো নাও হতে পারতো কিন্তু কি আর করার হয়েই গেলো।
আজও শ্রাবণ মাস এলে আমি সেদিনটায় চলে যাই বার বার...