Arpita Pal

Crime Thriller

3.4  

Arpita Pal

Crime Thriller

অন্তরাল-প্রথম পর্ব

অন্তরাল-প্রথম পর্ব

4 mins
517


দোলনায় দুলতে দুলতে কদম ফুলের গাছটা একবার কাছে আসছে আবার দূরে সরে যাচ্ছে। গত সাত দিন হল শান্তিনিকেতনের ছিম্ছাম্ দোতলা বাংলোটায় উঠে এসেছে শিঞ্জিনী। আর এই সাত দিনে কদম ফুল গাছটার সাথে তার বেশ সখ্যতা জমে উঠেছে। বাংলোটায় এসে প্রথমেই সে দোতলার বারান্দায় উঠে আসে। আর তখনই চোখে পড়ে বারান্দার এক পাশে কদম ফুল গাছটার কিছু ডাল ঝুঁকে পড়েছে। সেই সময় তার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল এই বাংলোর কেয়ারটেকার নকুল। বারান্দায় একটি গাছের অনধিকার প্রবেশ নিয়ে অভিযোগ জানানোর আগেই নকুল বলে উঠেছিল-

 " আমি আজকেই এই ডাল গুলো কেটে দিতাম। আপনারতো দুদিন পর আসার কথা ছিল। আজকেই যে আসবেন সেটা আগে থেকে জানলে সব কিছু ঠিকঠাক করে রাখতাম।"

 শিঞ্জিনী এই কথার প্রতিবাদ করে বলেছিল-

 " আপনি আর যাই করুন এই ডাল গুলো কাটার দরকার নেই। যতক্ষণ না খুব বেশি বিরক্ত করছে ততোক্ষণ এই ভাবেই থাক।"

এখানে কথা বলার লোক তেমন নেই। তিনজন কাজের লোক ছাড়া। তাই শিঞ্জিনী তার মনের কথাগুলো ঐ গাছটার সাথেই ভাগ করে নেয়। আর ততো যেন সেটা বেশি করে নিজের ডালপালা নিয়ে বারান্দার উপর ঝুঁকে পড়ছে। শিঞ্জিনী সেরকম খাদ্যপ্রিয় মানুষ নয়। তবুও তার ইচ্ছে মতো খাবার তৈরি করে দেওয়ার জন্য একটি মেয়ে রয়েছে। মেয়েটির বয়স শিঞ্জিনীর থেকে ছোট হলেও প্রথম দিন তার হাতে রান্না করা সরু চালের ভাত, রুই মাছের মাথা দিয়ে ঘন মুগের ডাল, রুই মাছের কালিয়া, বেগুন ভাজা, চাটনি আর পায়েস খেয়ে শিঞ্জিনী এক বাক্যে স্বীকার করে নিয়েছিল এই মেয়েটির রান্না যেকোনো বড়ো হোটেলের শেফেদের রান্নাকে টেক্কা দিতে পারে। একদিন দুপুরে খেতে বসার সময় মেয়েটি শিঞ্জিনীর সামনে নানারকম সুগন্ধি খাবারের পাত্রগুলো সাজিয়ে দিচ্ছিল। মেয়েটিকে সে জিজ্ঞেস করেছিল "এতসব খাবারের রান্না কোথা থেকে শিখলে? মেয়েটি কোনো উত্তর না দিয়ে শুধু হেসেছিল। মেয়েটার নামটা তার বেশ পছন্দ হয়েছে, সরুজিনী।

শান্তিনিকেতনে আসার দু-মাস আগে শিঞ্জিনী বিশ্বভারতীতে কমার্সের স্ট্রিমে ভর্তি হয়। কবি গুরু যবে থেকে তার কাছে আপন হয়ে উঠেছে তবে থেকে তার মনে একটাই ইচ্ছা ছিল, চিরাচরিত পড়াশুনোর শেষ অধ্যায়টা কবি গুরুর স্থানেই করবে। আর শিঞ্জিনীর মনের এই ইচ্ছেটাকে সমর্থন জানিয়ে তার মেসো শান্তিনিকেতনে নিজের বাংলোতে তাকে থাকার অনুমতি দেন। শিঞ্জিনীর মেসো অর্থাৎ প্রত্যয় হালদার লাল বাজার থানার একজন বড়ো পুলিস অফিসার। বিশ্বভারতীতে ক্লাস করে শিঞ্জিনী খুব আপ্লুত। তার এতদিনের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। তার মা-বাবা সর্বদাই চিন্তায় থাকে তাকে নিয়ে। এই প্রথম বার ঘরের মেয়ে বাড়ি থেকে এতটা দূরে গিয়ে পড়াশুনো করছে। তাও আবার সেখানে বসবাস করে। তার মা একদিন দুঃখ করে তাকে বলেছিল-

 " একদিন তো তোকে দূরে চলেই যেতে হবে। তবে সেটা এখনি কেন? "

শিঞ্জিনী হেসে বলেছিল-

 " আমি কিন্তু বিয়ে করছি না। "

শান্তিনিকেতনে আসার পর তিন-চার মাস ধরে সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ ধরে ঘটে চলা একটা ঘটনা শিঞ্জিনীকে বেশ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। কলেজ থেকে বিকেলের মধ্যেই সে বাংলোয় ফিরে আসে। হাত-মুখ ধুয়ে যখন সে বারান্দায় এসে গরম কফির কাপটা নিয়ে ইজি চেয়ারটায় গিয়ে বসে ঠিক তখনই তার চোখে পড়ে বাংলোর একদম উলটো দিকে মেইন রাস্তাটার অপর প্রান্তে একজন লোক দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে বাংলোটার দিকেই তাকিয়ে থাকে। তবে সে লোকটি প্রতিদিন নয়। দুদিন অন্তর অন্তর আসে। শিঞ্জিনী নকুলকে বলেছিল লোকটার কথা। কিন্তু সে নাকি এরকম কাউকে দেখেইনি। তবে এবার থেকে সে খেয়াল রাখবে। শিঞ্জিনী যদি মেসোকে এই কথাটা বলে তাহলে তিনি সাথে সাথেই কয়েকজন পুলিসকে পাঠিয়ে দেবে। তার মা-বাবার কানে কথাটা গেলে ওনারাও আর শিঞ্জিনীকে এখানে থাকতে দেবেন না। এতসব হাঙ্গামা সে একেবারেই চায় না। সে নিজেই এর রহস্য উদ্ঘাটন করতে চায়। 

আজ শিঞ্জিনী বড্ড ক্লান্ত। কলেজের ক্লাসের শেষে এক বন্ধুর বাড়িতে গেছিল তার জন্মদিনের পার্টি আ্যটেন্ড করতে। এই বন্ধুটি আজকাল তার বিশেষ বন্ধু হয়ে উঠেছে। তবে সেই বিশেষ বন্ধুটি যে কে সেটা না হয় গল্পের মধ্যেই ধীরে ধীরে প্রকাশ পাবে। বাংলোতে ফিরতে ফিরতে তার সন্ধ্যে হয়ে যায়। ফ্রেশ হয়ে রাতে কিছু না খেয়েই শুয়ে পড়ে। কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়েছিল বুঝতে পারেনি। ঘুম ভাঙল এক অদ্ভুত আওয়াজে। তার মনে হল নিচের হল ঘরের দরজাটা কেউ যেন খুলল। সে বিছানায় উঠে বসলো। আবার আরেকটা আওয়াজ শোনা গেল। এবারে কেউ যেন দরজাটা বন্ধ করল। এখন কিন্তু শিঞ্জিনী ঘুমিয়ে নেই। পুরোপুরি সজাগভাবে জেগে শব্দটা সে শুনতে পেয়েছে। বালিশের পাশে রাখা মোবাইলটা অন্ করে দেখল এখন ১ঃ৩০ টা বাজে। এতো রাতে কে আসলো? তার ঘরের সামনে করিডোরটা থেকে নীচের হল ঘর এবং তার মেইন দরজাটা দেখা যায়। সে তাই-ই করল। কিন্তু কাউকে কোথাও দেখতে পেল না। সমস্ত হল ঘরটা জুড়ে একটা হালকা নীলচে আলোর আভা ছড়িয়ে আছে। সে মনে মনে ভাবল তবে কি নকুল কোন কারণে বেড়িয়েছিল? তবে তাই যদি হয় তাহলে কি এমন দরকার পড়ল যে তার এতো রাতে বেরোতে হল? এই বাড়িতে রাতে নকুল, সরুজিনী আর শিঞ্জিনী বাদে আর কেউ থাকে না। বাগানের মালি মহেশের বাড়ি এখান থেকে বেশি দূরে নয়। তাই সে বিকাল হলে বাড়ি চলে যায়। আবার পরের দিন ভোর বেলায় আসে। তবে কি সরুজিনী? কিন্তু একা একটা মেয়ে কেনই বা এতো রাতে বাড়ির বাইরে বেরোতে যাবে? শিঞ্জিনীর মনে পড়ল আজ সন্ধ্যে বেলায় বাড়ি ফেরার পর থেকে সে আর সরুজিনীকে দেখেনি। রাতের খাবারের খোঁজ করতে নকুলই এসেছিল তার ঘরে। যেটা প্রতিদিন সরুজিনী করে। কিন্তু সেটার জন্য তো তাকে সন্দেহ করা যায় না। হতে পারে তার শরীরটা খারাপ বা অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত ছিল। তাই সে নকুলকে পাঠিয়ে দিয়েছিল। সবশেষে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। এতো রাতে দরজাটা খুলল কে? শিঞ্জিনী একবার ভাবল করিডোর থেকেই নকুলকে ডাকবে। আবার ভাবল নিজেই নীচে গিয়ে ব্যপারটা দেখবে। কিন্তু এতো রাতে নিজে নীচে নেমে দেখাটা ঠিক হবে না ভেবে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল। কাল সকালেই নকুল আর সরুজিনীকে যা জিজ্ঞেস করার করবে।   

ক্রমশ......


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime