অজান্তেই
অজান্তেই


গল্পের নাম - অজান্তেই…
লেখায় - সায়নদীপা পলমল
ট্রেন থেকে নেমে চারিদিকে একবার ইতিউতি তাকিয়ে নিলো মঙ্কু। ছোট্ট স্টেশন তাই লোকজনের ভীড় নেই বিশেষ, তবে মানুষের সাথে সমানতালে চলছে পশু পাখিরও আনাগোনা। প্ল্যাটফর্মে সব মিলিয়ে খান তিনেক বসার বেঞ্চ, তারই একটায় লোকটাকে দেখলো মঙ্কু। শীত যদিও সেভাবে পড়েনি তাও হলদেটে পায়জামার ওপর একটা ফুলহাতা সোয়েটার পরেছে লোকটা, মাথা আর মুখ জুড়ে মাঙ্কিক্যাপ, তার ফাঁকেই উঁকি দিচ্ছে একটা পুরুষ্ট সাদাটে গোঁফ, অনেকটা সেই পাঞ্জাবীদের মতন। মুখ থেকে চুকচুক করে একটা আওয়াজ বের করল লোকটা আর সঙ্গে সঙ্গে স্টেশন চত্বরে ছড়িয়ে থাকা কুকুরগুলো এক দৌড়ে পৌঁছে গেল তাঁর সামনে, যেন এতক্ষণ ধরে এই ডাকেরই অপেক্ষায় বসে ছিলো তারা। লোকটা বিড়বিড় করে কি যেন বলতে বলতে পাশে রাখা ব্যাগ থেকে একটার পর একটা বিস্কুট বের করে দিতে লাগল কুকুরগুলোকে, আর তারাও মহোৎসাহে লেজ নাড়তে নাড়তে খেয়ে চলল।
এমন দৃশ্য যে মঙ্কু আগে কখনও দেখেনি তেমনটা নয়, কিন্তু তাও কেন না জানি এই বৃদ্ধ মানুষটার প্রতি একটা বিশেষ আকর্ষণ অনুভব করল সে। কুকুরগুলোর খাওয়া শেষ, তারা একেক করে ছত্রভঙ্গ হতে শুরু করেছে। মঙ্কু এবার গিয়ে দাঁড়ালো সেই বৃদ্ধের সামনে। ব্যাগ গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত মানুষটা আচমকা নিজের খুব কাছাকাছি কোনো মানুষের উপস্থিতি টের পেয়েই বোধহয় উত্তেজিত ভাবে ডেকে উঠলেন,“খোকা!” তারপর মুখ তুলে চাইলেন। মঙ্কুর মনে হল মানুষটা বোধহয় কারুর প্রত্যাশাতে ছিলেন, তাই ওকে দেখে ক্ষনিকের জন্য আঁধার নেমে এলো তাঁর মুখে, মুহূর্তের মধ্যে অবশ্য মিলিয়েও গেল তা। শান্ত গলায় তিনি বললেন, “কিছু বলবে?”
আচম্বিত প্রশ্নে খানিকটা থতমত খেয়ে গেল মঙ্কু, তারপর আমতা আমতা করে বলল, “না… মানে… আপনি কুকুরগুলোকে খেতে দিচ্ছিলেন…”
“হ্যাঁ, সে তো রোজই দিই। ওদের এই আনন্দে খেতে দেখাতেই আমারও আনন্দ।”
“রোজ দেন! ভয় করে না? এতগুলো কুকুর…”
“ভয় কেন করবে? ওরা কি মানুষ নাকি? ওরা অকারণে কারুর ক্ষতি করে না বরং একটু ভালোবাসা পেলেই আর সঙ্গ ছাড়তে চায়না।”
“তাও… আপনার বাড়িতে কেউ কিছু বলে না?”
“কে বলবে! বাড়িতে তো আর বলার কেউ নেই। তোমার ঠাকুমা তো বড় অভিমান নিয়ে আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন আজ বছর তিনেক হলো… আর কে কি বলবে!”
“অভিমান কেন?”
মঙ্কুর প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েও আচমকা সতর্ক হলেন বৃদ্ধ; একটু তীক্ষ্ণ গলায় জিজ্ঞেস করলেন, “কি ব্যাপার বলতো? তোমাকে তো আগে এ চত্বরে কখনও দেখিনি!”
বৃদ্ধের সাবধানী দৃষ্টি দেখে একটা ঢোঁক গিলল মঙ্কু; তারপর গলা নামিয়ে উত্তর দিলো, “আমি এই প্রথম এলাম এখানে।”
“কার বাড়িতে?”
“কারুর না...আসলে... আমার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।”
মঙ্কুর উত্তরে ভ্রু কোঁচকালেন বৃদ্ধ, “যাওয়ার জায়গা নেই! মানে?”
দু’মিনিট ভেবে নিয়ে মঙ্কু উত্তর দিলো, “আসলে যাদের বাড়িতে থাকতাম তারা আমায় বের করে দিয়েছে।”
“বের করে দিয়েছে!” অবাক হলেন বৃদ্ধ, “আর তোমার বাবা মা?”
বৃদ্ধের প্রশ্নে আরেকবার ঢোঁক গিলল মঙ্কু, ওর অবস্থা দেখে তিনি বোধহয় আন্দাজ করে নিলেন কিছু। তারপর নরম গলায় বললেন, “কোথায় যাবে কিছু ভেবেছো?”
দু’দিকে মাথা নাড়ল মঙ্কু। ওকে খানিকক্ষণ জরিপ করে নিয়ে বৃদ্ধ বললেন, “তোমার পোশাক দেখে তো বেশ ভালো বাড়ির বলেই মনে হচ্ছে!"
বৃদ্ধের কথা শুনে মাথা নিচু করে ফেলল মঙ্কু, কিন্তু জবাব দিলো না কিছু।
ওর কথা শুনে মিনিট দুয়েক ওর দিকে তাকিয়ে রইলেন বৃদ্ধ, তারপর আস্তে আস্তে বললেন, “আমি তবে উঠলাম। দেখো কি করতে পারো।” এই বলে বেঞ্চ ছেড়ে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেন তিনি, বেগতিক দেখে মঙ্কু উদ্ভ্রান্তের মত ডেকে উঠলো, “দাদু।” ঘুরে তাকালেন বৃদ্ধ।
“আপনার বাড়িতে একটু আশ্রয় দেবেন ক’টা দিন, তারপর নাহয়...”
**********
মর্নিং ওয়াক সেরে এসে উঠোনে পা রাখতেই মাথাটা টলে গেল বিকাশবাবুর, পড়ে যেতে গিয়েও কোনোরকমে সামলালেন তিনি। বুকের ভেতর হঠাৎ করেই একটা চিনচিনে ব্যাথা আরম্ভ হয়েছে কিছুদিন ধরে আর এই মুহূর্তে সেই ব্যথাটাই যেন আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। হাতের লাঠিটা শক্ত করে ধরে ঘরে ঢুকতে গিয়েই চমকে উঠলেন তিনি। বাইরের গ্রিল গেটটা থেকে শুরু করে দরজাটা অবধি হাট করে খোলা। ভেতর ঢুকেও কারুর সাড়া শব্দ পেলেননা। কিছুদিন আগে অবধিও অবশ্য তাঁর ঘর জুড়ে সবসময়ই এরকম অদ্ভুত নৈঃশব্দ্য বিরাজ করতো কিন্তু এখন তো পরিস্থিতি অন্য। ইদানিং তো ঘরে ঢোকা মাত্রই হইহই করে ছুটে আসে সে। আজ তবে কি হল! বুকের ব্যাথাটা বেশ লাগছে, জোরে হাঁক পাড়তে গিয়েও গলাটা সায় দিলোনা, ক্ষীণ গলাতেই তাই ডাকলেন, “মঙ্কু… এই মঙ্কু…”
নাহ সাড়া এলো না তার, বাড়ির নিস্তব্ধতা অবশ্য বলেই দিচ্ছে যে বাড়িতে এই মুহূর্তে সে কোত্থাও নেই।
ধপ করে সোফাটায় বসে পড়লেন বিকাশবাবু। মনে পড়ে গেল কিছুক্ষণ আগেই জ্যোতির্ময় হালদারের বলা কথাগুলো, “মশাই সারাদিন তো খবরের কাগজ পড়ে আর নিউজ চ্যানেল দেখে সময় কাটান তাহলে কোন বিবেচনায় আপনি একটা অচেনা ছেলেকে একেবারে সিধে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তুললেন! দেখবেন একদিন আপনার সব নিয়ে যখন চম্পট দেবে তখন বুঝবেন।”
শুধু জ্যোতির্ময় বাবুই নয়, এপাড়ার অনেকেই সাবধান করেছে বিকাশ বাবুকে কিন্তু বিকাশ বাবুই শুনতে চাননি তাদের কথা। তাঁর মনে হয়েছে একটা বছর তেরো চৌদ্দর ছেলে কি আর অপরাধী হতে পারে! তাঁর তো বরং মনে হয়েছিল মঙ্কু আসলে কোনো ভালো বাড়ির ছেলে, হয়তো বাড়ির থেকে পালিয়েছে। তাই তিনি ছেলেটাকে নিজের বাড়িতে আনতে দ্বিধা করেননি। ভেবেছিলেন ওনার আশঙ্কা সত্যি হলে ওর বাড়ির লোক নিশ্চয় খোঁজ শুরু করবে, এখন টিভি খবরের কাগজের যুগে কোনো খবর পাওয়াই শক্ত নয়। কিন্তু...
বুকটা চেপে ধরে একটা ঢোঁক গিললেন বিকাশবাবু, আর তখনই তাঁর নজর পড়ল সোফায় পড়ে থাকা সেদিনের সংবাদপত্রটা। শিরোনামে লেখা, “বাড়ির পনেরো বছরের পরিচারকের সঙ্গে আঁট বেঁধে ডাকাতি…” খবরটার কালো অক্ষরগুলোয় একবার চোখ বোলাতেই গা’টা গুলিয়ে উঠল তাঁর, নিশ্বাস ঘন হলো। তবে কি পাড়ার সবাই ঠিক বলতেন! কোথায় গেল মঙ্কু! সে কি তাহলে…! উফফ… আর ভাবতে পারলেন না বিকাশবাবু, দু’হাতে মুখটা ঢেকে ফেললেন। কিন্তু তখনই পেছন থেকে কে যেন ডেকে উঠল, “দাদু।”
চমকে উঠলেন বিকাশ বাবু, দেখলেন এক মুখ হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মঙ্কু, তার হাতে ধরা একটা প্যাকেট। বিকাশ বাবু কিছু বলার আগেই সে বলে উঠল, “দাদু জানো তো ইডলি বিক্রি করতে এসেছিল, আমি বেরোতে বেরোতে লোকটা সাইকেল নিয়ে কতদূর চলে গিয়েছিল কিন্তু আমি তাও ছুটে গিয়ে ধরে ফেললাম। তুমি বলেছিলে না ইডলি তোমার ফেভারিট, ঠাকুমা চলে যাওয়ার পর থেকে আর খাওনি, তাই তো আনলাম…”
কোনো উত্তর দিতে পারলেন না বিকাশ বাবু, ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলেন ছেলেটার দিকে। মঙ্কু ভয় পেয়ে বলল, “তোমার শরীর খারাপ নাকি দাদু?”
মুখে কিছু না বলে মঙ্কুর হাতটা ধরে টেনে ওকে জড়িয়ে ধরলেন বিকাশবাবু। আসলে দীর্ঘদিন নিঃসঙ্গ থাকার পর সেদিন যখন আচমকা ছেলেটা বলে উঠেছিল, “আমাকে একটু আশ্রয় দেবে দাদু?” না বলতে পারেননি বিকাশবাবু। মঙ্কুর প্রয়োজন একটা আশ্রয়ের আর বিকাশ বাবুর প্রয়োজন একটা অবলম্বনের। মঙ্কু জানে দাদুর ঠাম্মা ছাড়া কেউ ছিলো না কোনোদিন; কিন্তু বিকাশ বাবু তো জানেন দক্ষিণের বন্ধ ঘরটার ভেতর আজও বন্দি আরেকজনের স্মৃতি, যে আজ মঙ্কুর মতোই থাকতে পারতো তাঁর বুকে। মঙ্কুকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন তিনি, ওরা যে যাই বলুক সেটা সত্যি হোক কি মিথ্যা কিন্তু বিকাশ বাবু জানেন এই মুহূর্তে এই নিষ্পাপ ভালোবাসার থেকে সত্যি তাঁর কাছে আর কিছু নেই। মঙ্কুর পরিচয় যাইহোক না কেন তিনি আর ভাববেন না সে নিয়ে, তাঁর হারাবার মত আর আছেটাই কি! এ’কদিনেই যে অদ্ভুত ভালোবাসার বাঁধনে তাঁকে জড়িয়ে ফেলেছে ছেলেটা তার কাছে সব পার্থিব জিনিসের মূল্য তুচ্ছ…
**********
বিকেলে স্টেশনে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তাঁর জামা টেনে ধরলো মঙ্কু। অবাক হয়ে বিকাশ বাবু প্রশ্ন করলেন, “কি রে?”
“দাদু আজ যেয়ো না প্লিজ।”
“কি বলছিস কি? ওরা সব অপেক্ষায় থাকবে যে…”
“না দাদু, প্লিজ।”
“কি হয়েছে?” মঙ্কুর মাথার চুল গুলো ঘেঁটে দিয়ে জানতে চাইলেন বিকাশবাবু, ছলছল চোখে ছেলেটা বলল, “আজ মনটা কেমন একটা লাগছে দাদু...”
মঙ্কুকে কথা শেষ করতে না দিয়েই বিকাশবাবু বললেন, “যেতে তো আমাকে হবেই, তা তুইও চল না আমার সঙ্গে। মনটা ভালো লাগবে দেখিস।”
বিকাশবাবুর এই প্রস্তাবে খানিক অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাজি হলো মঙ্কু।
স্টেশনে পৌঁছতেই আজ বিকাশ বাবুর মনে হল অন্যদিনের তুলনায় একটু বেশিই লোকের আনাগোনা। আজ তো সপ্তাহান্তও নয়, তাহলে? কিছুক্ষণ চারিদিকে তাকিয়ে থাকার পরেই নিজের মধ্যেই একটা অস্বস্তি শুরু হল বিকাশবাবুর, মনে হল স্টেশনের এই ভীড়ের মাঝেও কিছু চোখ যেন তাঁর দিকেই স্থির হয়ে আছে। ব্যাপারটা কি! কিছু একটা বলবেন বলে পাশ ফিরতেই আচমকা আবিষ্কার করলেন মঙ্কু নেই; চমকে উঠলেন বিকাশ বাবু, বুঝলেন নিশ্চয় কোনো গন্ডগোল আছে। বুকের ব্যাথাটা আবার যেন শুরু হলো হঠাৎ করে। আশেপাশে তাকিয়েও মঙ্কুকে দেখতে পেলেন না কোথাও, একটা অজানা ভয় এসে যেন ক্রমশ ঘিরে ধরল তাঁকে। বিকাশবাবু ঠিক করলেন এক্ষুণি বাড়ি ফিরে যাবেন। কিন্তু তার আগেই আচমকা কতকগুলো ষন্ডামতন লোক এসে ঘিরে ধরল তাঁকে। তাদের মধ্যে একজন তাঁর কলার খামচে ধরে জিজ্ঞেস করল, “বলুন ছেলেটা কোথায়?”
লোকটা হয়তো আরও কিছু বলছিল কিন্তু সেসব আর শুনতে পেলেন না বিকাশবাবু, তার আগেই চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে এলো তাঁর...
আস্তে আস্তে চোখ খুলতেই বিকাশবাবু বুঝতে পারলেন হসপিটালের বেডে শুয়ে তিনি। তাঁর জ্ঞান ফেরাতে কেউ যেন উচ্ছসিত হয়ে সে খবর জানাতে জানাতে বেরিয়ে গেল রুমটা থেকে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজা ঠেলে সেই ঘরে ঢুকলেন একজন ডাক্তার, যাকে দেখেই চমকে উঠলেন বিকাশবাবু। ডাক্তার এসে স্টেথোস্কোপটা বাড়াতেই সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার করে উঠলেন তিনি, “খবরদার… তুমি ছোঁবে না আমায়।”
ডাক্তারবাবু অপরাধীর মত গলায় ডেকে উঠলেন, “বাবা...”
“আমি কারুর বাবা নই।” গর্জে উঠলেন বিকাশবাবু।
“আয়াম সরি বাবা।”
“সরি! আজ কুড়িটা বছর পর হঠাৎ এই বোধোদয়!”
“বাবা প্লিজ উত্তেজিত হয়ো না…”
“আমার চিন্তা তুমি কবে থেকে করতে শুরু করলে?” উষ্মা ঝরে পড়ল বিকাশবাবুর গলায়।
ডাক্তারবাবু এগিয়ে এসে হাত দুটো ধরে নিলেন তাঁর, হয়তো দু’ফোঁটা জলও গড়িয়ে পড়ল তার চোখ দিয়ে, “বাবা আমি জানি আমার ওপর তোমার অনেক অভিমান, সেটাই স্বাভাবিক, আমি আমার কোনো কর্তব্যই তো করিনি তোমাদের প্রতি…
কিন্তু আজ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারছি কতটা আঘাত আমি দিয়েছি তোমাদের। আমি তো এই ক’টাদিনেই পাগল হয়ে গিয়েছিলাম আর তোমরা এতগুলো বছর…”
“কি বলতে চাইছো কি?”
“বাবা, আমার ছেলে রাগ করে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিল। পাগলের মত…”
“তোমার ছেলে! আ… আমার নাতি?”
“হ্যাঁ বাবা।”
“কোথায় সে? ঠিক আছে তো?” উত্তেজিত হয়ে উঠলেন বিকাশবাবু।
“থাকবেনা কেন বাবা! সে যে তার অজান্তেই একজন খুব কাছের মানুষের কাছে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল।”
“মানে?”
“মঙ্কু আমার ছেলে বাবা…”
“কি!” আরও একবার চমকে উঠলেন বিকাশ বাবু।
এমন সময় হঠাৎ মঙ্কু ছুটে এলো সেই ঘরে, “দাদু” বলে জড়িয়ে ধরল তাঁকে। কোনোমতে ডান হাতটা তুলে মঙ্কুর মাথায় রাখলেন বিকাশবাবু। দু’চোখ বেয়ে জল গড়াতে শুরু করেছে তাঁর, বুকের ব্যাথাটা যেন উধাও হচ্ছে আস্তে আস্তে, পরিবর্তে এক অন্যরকমের ভালোলাগা যেন ছেয়ে যাচ্ছে তাঁর শরীরে, এমন ভালো বহুদিন লাগেনি। হঠাৎ বিকাশবাবু দেখতে পেলেন তাঁর স্ত্রী এসে দাঁড়িয়েছেন সামনে, মুখে হাসি তাঁরও। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন বিকাশবাবু, তারপর বিড়বিড় করে নাতির কানে বললেন, “তোর ঠাম্মা আমায় ডাকছে রে দাদুভাই, আমি এবার আসি। তবে তোর বাবাকে ছেড়ে আর কোনোদিনও যেন পালাসনা যেন দাদু, ছেলে ছেড়ে গেলে বড় কষ্ট হয় রে…বড় কষ্ট…”
শেষ।