অজানা পথে পর্ব ১২
অজানা পথে পর্ব ১২
গোপাল ঘুম থেকে উঠে বাবার সাথে ময়নাকে দেখল। বিনয় বলল,
"গোপাল,বাবা এ তোমার নতুন মা এখন থেকে সব সময়ই বাড়িতে তোমার সঙ্গী হয়ে থাকবে,তোমাকে যত্ন করবে, ভালবাসবে,আদর করবে আবার এ মা তোমার সাথে খেলা করবে, গল্প বলবে। খুশী তো!"
গোপাল একমুখ হেসে বলল"নতুন মা আমার সেই আগের মায়ের মত বিছানায় পাশে শুয়ে আমার মাথা গা হাতে টিপে হাত বুলিয়ে আরাম করে দেবে তো!"
ময়না বলল, "হ্যাঁ বাবা সব করব,তোমার আগের মায়ের কাছে যেমন আদর আবদার করতে তেমন আমার কাছে করবে। আমি তোমার নতুন মা তবে তুমি আগের মায়ের মতই ভাববে।"
ময়না গোপালকে আদর করে কোলে তুলে বলল "চল বাবা বাথরুমে তোমায় হিসি করিয়ে আনি।"
গোপাল খুশী খুশী মুখে ময়নার কোলে চেপে বাথরুম গেল।হিসি করে আবার খাটে এসে বসল।
বিনয় বলল,"গোপালের জন্য তুমি রান্নার ঘরে দুধ গরম করে দেখো কাচের জারে প্রোটিন পাওডার ফুড আছে, দুচামচ নিয়ে গুলে খেতে দাও।চিনি দেবার দরকার নেই। "
ময়না বলে "ঠিক আছে,আমি এখুনি বাবুসোনার খাবার করে আনছি।"
বিনয় বলল,"বাবুসোনা ওর মায়ের আদরের নাম ছিল, গোপাল বলত না, তুমি জানলে কী রে !" বিনয় একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
"বা রে বাবুসোনা ওকে দেখলেই যে কেউ আদর করে ডাকবে! কী সুন্দর বাবার আমার আদুরে আদুরে মুখ তেমন চাহনি, আমি বাবুসোনা বলেই ডাকব। তুমি গোপাল বলো।" ময়নার কথায় বিনয় যাই ভাবুক, গোপাল খুব খুশী মনে বলে,তুমি ঠিক আমার আগের মায়ের মত।"
বিনয় আর কিছু বলল না, একটু যেন বিস্মিত তা হোক মনে মনে প্রসন্ন হল, গোপালের মনে যাক এই নতুন মা ময়নার প্রতি বিশ্বাস ভরসা এক দেখেই এসেছে।এটা তার কাছে বিরাট স্বস্তির। ময়নার উদ্দেশ্যে বলল,
আমি এবার বাইরে থেকে চাবি লাগিয়ে বাজার যাব ঘরের সব জানালা বন্ধ আছে।খোলার দরকার নেই কেউ বাড়িতে আছে বাইরের মানুষ জানার এখন দরকার নেই।আমি এসে তোমাকে নতুন শাড়ি শাঁখা সিঁদুর পড়তে দেবো।আমার স্ত্রীর বেশে আজ থেকে তুমি থাকবে।বাইরের মানুষকে বলব,তুমি আমার স্ত্রী, তোমাকে রেজিস্ট্রেশন ম্যারেজ করেছি।সত্যিই তাই করব,তবে একটু কাগজ পত্র আর রেজিস্ট্রারী অফিস ল ইয়ার একজন আমার খুব ঘনিষ্ঠ ওর সাথে এসব ব্যাপারে যোগাযোগ করতে হবে।সব কিছু আইনী ভাবে করতে একটু দেরী হবে।"
অনেক রকম বাজার হাট করতে বিনয়ের একটু দেরী হয়েছিল।
প্রায় একঘন্টার পর বিনয় বাইরে থেকে চাবি খুলে ঘরে ঢুকল।ময়নার এক জোড়া করে আপাতত তার শাড়ি ব্রাউজ শায়া,বাড়িতে পরার মত আজ কিনে এনেছিল।এক সাথেই শাঁখা সিঁদুর পলা নোয়া সব কিছুই এনেছিল ।
ময়নাকে বিনয় বলল,"এই নতুন শাড়ি ব্লাউজ শাঁখা সিঁদুর পরে একবারে গৃহ বধু সাজে ঘরে থাকবে।কিছু দিন আপাতত তুমি কিন্তু বাড়ির বাইরে যেও না। বলা যায় না।দুষ্ট চক্র তোমার উপর নজর করতে মরিয়া চেষ্টা করবে কীনা জানি না।কেউ তোমার বিষয়ে জানতে চাইলে বলব, তোমাকে রেজিস্ট্রেশন ম্যারেজ অ্যাক্টে বিয়ে করেছি।শ্বশুর বাড়িতে একই কথা বলব তোমাকে কেউ যদি জিজ্ঞেস করে তাই বলবে। তারিখ বার এ সব বলা দরকার নেই। আমি সে সব ম্যারেজ করে নেব।পরে সত্যিকারের ম্যারেজ সার্টিফিকেট পেলে আর কোন টেনশন নেই।"
ময়না খুব খুশীতে বিনয়ের কথামত সব নতুন পোশাক আগে বাথরুমে ঢুকে স্নান করে নতুন সাজে বাথরুম রুম থেকে বের হল লাজুক হাসি হাসি মুখে বিনয়কে প্রনাম করে বলল,
"আপনি আমাকে যাই ভাবুন ,আমি আপনাকে নিজের স্বামী ভাবব।"
বিনয় বলল,"তোমার ইচ্ছা,যে ভাবে তুমি আনন্দ পাবে তাতে কোন আপত্তি নেই তবে আমাকে যেন তোমার সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য চাপ দিও না।"
দাদা আমি অমানুষ নই, আমি এই শর্তেই আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন। ঘরে দেওয়ালে ঝুলানো দিদির ছবি দেখেছি আপনার সঙ্গে।কী সুন্দরী উনি যেন অপ্সরা উর্বসী দেবলোক থেকে নেমে এসেছেন।"
"তুমি সব জানো!"
"আমার সব জানা দাদা।"
"যাক এখন ক্ষিদের জ্বালায় মরছি দেখো আলুর চপ আর বেগুনী গরম গরম এনেছি মুড়ি দিয়ে খাওয়া যাবে।"
ময়না মুড়ি চপ বেগুনী তার সাথে পেঁয়াজ ,কাঁচা লঙ্কা আর জলের পাত্র সমেত বিনয়কে ডাইনি টেবিলে পরিবেশন করল।
"তোমার কৈ!" বিনয় জিজ্ঞেস করল।
"আমি ভাতটা চাপাই তারপর খাবো।"
বিনয় বলল,"সে ভাত চাপানো, রান্না বান্না পরে হবে
তুমি আমার সাথে একসঙ্গেই খাবে,না হলে আমি খাবোই না।"
ময়না একটু যেন বিব্রত হয়ে বলল,"দাদা আপনি খেতে শুরু করুন আমি আমার খাবার আনছি।"
'আমার এককথা ময়না।তুমি খেতে শুরু না করলে আমিও খাব না।"
ময়না তাড়াহুড়ো করে নিজের খাবার নিয়ে ডাইনিং টেবিলে এনে খেতে শুরু করল।তারও খুব ক্ষিদের ছিল, গতরাতে তেমন ভারী খাবার খায় নেই,তাই খাবার গোগ্রাসে খাচ্ছিল।
বিনয়ের খাবার আগেই ময়নার খাবার খাওয়া হয়ে গেছিল।
বিনয় বলল,"আমার একটু চায়ের নেশা আছে, পরিমানে কম আর বার বার, দুধ ছাড়া লিকার।"
"আমি এখুনি করছি দাদা। আমি কিন্তু সকালে দুধ ছাড়া লিকার চা করেছিলাম! আপনার পছন্দ কী ভাবে জানলাম জানি না।" ময়না হাসল।
"তুমি লিকার চা খাও না!"
"আমার চায়ের নেশা নেই এবার আপনাকে দেখে আমিও চা নেশা করব।" বলে ময়নার হাসল।
ময়না শুধু লিকার চা নিয়ে এসে বলল,"আপনি বিস্কুট নেবেন দাদা?"
"এই তো মুড়ি খেলাম, বিস্কুট খাব না।শোন আজ খাসীর মাংস এনেছি ,ঝোল ভাত আর শাক ভাজা, বেগুন ভাজা আর কিছু দরকার নেই, তোমার এতে হবে তো!"
:কী যে বলেন দাদা!খাসীর মাংসের ঝোল! কত দিন খাইনি আমার খুব প্রিয়।"
"তুমি রাঁধতে জানো!"
"খুব জানি। রান্না খেয়ে ভালো না লাগলে বলবেন দাদা, তবেই আরও ভাল শিখব।"
পেপার টা আজ একটু দেরি করে দিয়েছিল। বিনয়ের অবসর পেলে ,ছেলের ঘরে গেল।গোপাল বাল্য থেকেই বড় গাড়ীর নেশা।খেলনা গাড়ী নিয়ে বিছানার উপর চালিয়ে তার সময় কাটে সঙ্গে গাড়ী চালানোর শব্দ।কত সব বাসের হর্ন থেকে ইঞ্জিনের আওয়াজ করে।
পেপার পড়তে পড়তে বিনয় একটু স্তম্ভিত হয়ে গেল।
ক্রমশ
