অভয়ের ভয়
অভয়ের ভয়
অভয়ের সবেতেই ভয়। একটা অতি সামান্য চাকরি করে অভয় । মাইনেটা এত সামান্য যে কেউই ওকে মান্য করে না । বাড়ির অন্য ভাইরা, এমনকি মা বাবাও ওকে একটু এলেবেলে ভাবে । আর অভয়ও নিজেকে কখনও বড় ভাবতে শেখেনি ।
-তুমি একটা বিয়ে কর ।দুবছর চাকরি করার পরই এই প্রস্তাবটা বাবা দিলেন ।
- কি তোমার অমত আছে?
অভয় হ্যা বা না কিছুই বলে না । কোন কথাটা বললে বিরুদ্ধাচারন হবে না সেটা ভাবতে থাকে ।শুধু মনে মনে বলে ‘আমার মাইনেটা বড্ড কম’। ওর বাবা শুনতে পায় না।
-তুমি যে কী ধাতু দিতে তৈরি কী জানি। ওর নীরবতায় বাবা রেগে যায় ।
অভয় বিস্মিত হয়ে ভাবে, ‘আশ্চর্য বাবাও জানেন না আমি কী ধাতু দিয়ে তৈরি!’ ওর চোখের ওপর হঠাত মানবজন্মের কলা, কৌশল, রহস্য সব উন্মোচিত হতে থাকে। ও ওগুলো তাড়ানোর জন্যে মাথা ঝাঁকায় ।
ওর বাবা ওর মাথা ঝাঁকানোয় বোঝেন ওর অমত নেই। বলেন,’ এতক্ষন লাগলো উত্তর দিতে?’
অভয় চারপাশে দ্যাখে। কেউ কি ওর হয়ে উত্তর দিয়েছে? ওর বাবা চলে যায়। যেতে যেতে বলে, ‘আমিও বিয়ে করেছি, ভয় পাবার কিছু নেই’
মাস তিনেকের মধ্যেই বাড়ির পাঁচিলের ধারে অনেক বাঁশ জড়ো হয়। প্যান্ডেল, লোকজন, গায়ে হলুদ, উলু, আর চারপাশের যত অসভ্য মজা সব অভয়ের দ
িকে তেড়ে আসে। ভয়ে বুকটা ধকধক করতে থাকে। এক বৌদি কানের কাছে মুখটা নিয়ে এসে বলে, ‘পারবে তো?’
অভয় বুঝতে পারে পৃথিবীতে অসভ্যতা বড় সুলভ ।
অভয়ের বউ শিউলি ফুলশয্যাতেই বুঝে যায় এই ছেলেটার রীতিমত শুশ্রুষা দরকার ।শিউলি ক্লাস শুরু করে দেয়। কানের কাছে ফিসফিস, ঠোঁটের খুব কাছে ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে আসা, ওর বুকের খুব কাছে নিজেকে নিয়ে যাওয়া এইসব করতে করতেই অভয়ের শরীরটা জেগে ওঠে ।
এক বছর ঘুরতে না ঘুরতেই অভয় বাবা হয়। একটা কচি মেয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে অভয়কে দেখে কেঁদে ওঠে।
অভয় এক জোড়া ছাত্র পেয়েছে । খুদে ছাত্র। পড়াশোনার প্রতি তীব্র বিতৃষ্ণা দুজনেরই। দুটো ছাত্রের মায়ের মাস্টারমশাইয়ের প্রতি খুব শ্রদ্ধা ।একদিন অভয় পড়াতে গিয়ে দেখে ছাত্ররা নেই, মা অপেক্ষা করছে মাস্টারমশাইয়ের জন্যে।
-আমার ছাত্ররা কোথায় ?
-ওদের মাসির বাড়ি।
-তাহলে?
-আমিতো আছি। ভালো লাগছে না আমায় ? এর আগের মাস্টারমশাই আমাকে এই দুটোকে দিয়ে গেছেন। আমার স্বামী ভীষণ হ্যাপি হয়েছে।
-আমি আসছি, আপনি অন্য মাস্টারমশাই খুঁজে নিন।
দরজার খুলে বেরিয়ে চলে যায় অভয়। নিজেকে খুব ভালো লাগে সাহস দেখাতে পেরে। শিউলির মুখটা মনে পড়ে।