প্রাগৈতিহাসিক অসুখ
প্রাগৈতিহাসিক অসুখ


অনেকদিন আগের মানুষ আমি। প্রতি দুশো বছর অন্তর আমি আমার মেমরি ডিভাইস রিপেয়ার করি। লক্ষ লক্ষ সেপ্টিলিয়ন বাইটস স্ক্যান করে, রিভিউ করে, ক্লিন করি। মুছি না, তাকে ফ্লাইং ড্রাইভে পাঠিয়ে দি। আমি চিন্তা করলেই আমার সামনে মেমরি ইমেজ আসে, তারা নিজেরাই এগোতে থাকে, পিছোতে থাকে, আমার ইচ্ছের সঙ্গে ঢেউয়ের মতো ওঠা নামা করে।
কী বললে? আমার বয়েস কতো? দাঁড়াও বলছি।
হ্যা, মেমরি ইমেজ বলছে আমি দু হাজার তিনশো বত্রিশ বছর অতিক্রম করেছি।
এতে তুমি হাসছ কেন? আমার গ্রহতে বৃদ্ধ হওয়া, মৃত্যু কোনোটাই নেই। তোমাদের পৃথিবীতে আছে। আমরা স্বয়ম্ভু। আমাদের কেউ তৈরি করে না। আমরা প্রাকৃতিক।
আমি কিছুক্ষন চুপ করে থাকলাম। সমুদ্রের ঢেউ শব্দ করছে। আমাদের ওখানে সমুদ্র নেই।
রিউলি আমার দিকে তাকিয়েছিল। সমুদ্রের ধারে বসে আছি আমরা দুজন। সূর্য ডুবে যাচ্ছে। চারপাশে ছায়া নেমে আসছে। আমার জায়গায়, ম্যাকেস নক্ষত্রে কখনও আলো নেভে না। আমরা আলোর মধ্যে থাকি।
- তুমি আমার কথা বুঝতে পারছো?
রিউলি মাথা নাড়লো। ও খুব হাসছে । ওর হাসিতে আমার হাসি পাচ্ছে। কিন্তু কোথায় একটা অসুবিধা হচ্ছে। আমি মেমরি ইমেজ দেখলাম গত পাঁচশো বছর আমি হাসিনা। টোটাল হিস্ট্রি খুললাম। হিস্ট্রি বলছে আমি জন্ম থেকেই কখনও হাসার সুযোগ পাই নি।
- তোমার নাম রিউলি? আমি ওকে প্রশ্ন করলাম।
-হ্যা , তুমি কী করে জানলে?
-আমরা কখনও জানতে চেষ্টা করি না। যা দেখি, যা শুনি তা জেনে ফেলি। যেমন তোমার ভাষা, তোমার হাসি, তোমার চিন্তা।
-কী চিন্তা করছি আমি?
-আমাকে বাবার কাছে নিয়ে যাবে ভাবছো। ভাবছো আমি বিপজ্জনক কি না? আমাকে তোমার ভালোলাগছে।
-কী নাম তোমার? রিউলি আমাকে প্রশ্ন করে?
- নাম নেই। আমাদের নক্ষত্র ম্যাকেস-এ নামের প্রয়োজন হয় না। পাখিরা কি নাম ধরে ডাকে? পশুরা?
-ম্যাকেস কতদূরে? তোমাদের ওখানে যেতে কতদিন লাগবে?
-এক পলকের খুব ছোট্ট ভাগ। এক বালুকনাকে একটা মরুভুমি দিয়ে ভাগ করলে যা পাওয়া যায় ততভাগ। তোমার বাবা ডাকছে!
- তুমি কি সত্যি? অন্ধকারে আমি তোমায় দেখতে পাচ্ছি না।
আমি একমুঠো বালি নিয়ে আমার মুখের কাছে নিয়ে আসি। বালিগুলো আলোর কণিকা হয়ে জ্বলে ওঠে। ম্যাকেসের সবাই আলো জ্বালাতে পারে। মনে হয় ও একটু ভয় পেয়েছে।
-ভয় নেই। আমরা শুধু আলো জ্বালাই, আগুন নয়। এবার চলে যাবো। এই দেখো মেমরি ইমেজ মেসেজ দিচ্ছে আমার সিস্টেমে অদ্ভুত কিছু একটা ঢুকেছে।। আমায় যেতে হবে রিউলি।
-তুমি একটা শেষ বিকেলে এসে আমায় অস্থির করে দিলে। তুমি মানুষ না রোবট।
-মানুষও একটা পরিকল্পিত রোবট।
-না! রিউলি জোরে বলে ওঠে।
-কী হয়েছে? ওর বাবা, মা, দাদা সবাই এগিয়ে আসে। আমি ইতিমধ্যে আমার ইমেজ তুলে নিয়েছি। আমি সুনিশ্চিত ইতিমধ্যে আমায় কেউ দেখেনি। একটা ইমেজ ট্রান্সফার অপারেশন। ম্যাকেস থেকে আমি মেমরি ইমেজ দেখছি। রিউলিকে দেখতে পাচ্ছি। রিউলি কাঁদছে। পৃথিবীর লোক চোখ দিয়ে জল ফেললে তাকে কান্না বলে। কিন্তু কাঁদছে কেন রিউলি? আমি তো শুধু বেড়াতে গিয়েছিলাম!
আমাকে ম্যাকেসের আলোরা ঘিরে ধরে। একজন বডি ইঞ্জিনীয়র আমাকে পরীক্ষা করতে থাকেন। আমার সিস্টেমে ভাইরাসের মতো অদ্ভুত কিছু। আমার বুকে একটা ঢেউ। সেই ঢেউ আর একটা কিছু তৈরি করছে।
যেটা তৈরি হচ্ছে সেটাও ম্যাকেসে অপরিচিত। লক্ষ লক্ষ সেপ্টিলিয়ন বাইটস এর সার্চ ইঞ্জিন পরীক্ষা করতে থাকে। পাওয়া যায়। একটা প্রাগৈতিহাসিক অসুখ, পৃথিবীর লোক একে ‘প্রেম’ বলে।
***