বিষম
বিষম


- কতটা খুঁড়বেন?
-প্রাইমারিলি সতেরো কিলোমিটার ।আমরা ট্রাফিক কন্ট্রোল করতে পুলিশকে হেল্প করব স্যার।
-আর হেল্প করার পর জ্যাম হবে।আপনারা ধ্যারাবেন আর লোকে গালাগালি করবে মেয়রকে। বলবে আমার আশ্রয়ে আপনারা যা ইচ্ছে করছেন ।তার ওপর আপনারা বিদেশী কোম্পানি । আপনাদের মুখে চকলেট আর কাজে গুবলেট । ঝোলাবেন না তো?
- না স্যার। আমি হাসবার চেষ্টা করি । প্রদীপও ।দুজনেই দাঁত না বের করে হাসি।
আমি একটা ভারি প্যাকেট টেবিলের ওপর তুলতে যাই । মেয়র চোখ বন্ধ করে মাথা নাড়েন। অর্থাৎ ওপরে উঠিও না । আমি আমার চেয়ারের পাশে বস্তুটাকে ফেলে দি। প্যাকেটটাও পরিত্যাজ্য বস্তুর মতো নিরাপদে ওখানে পড়ে থাকে ।
আমার মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগে ।এই যে এক হাজার তুলে দিয়ে দু হাজারের নোট করা হল তাতে এসব কাজে সুবিধে হল বটে, কিন্তু দশ হাজারের নোট করলে এইসব ভাব ভালবাসায় আরোও সুবিধে হত। প্যাকেটের ওজন , আয়তন দুটোই কমতো ।
আমি নিচু গলায় বলি , ‘স্যার, দশ আছে’।
-হুঃ , কাজ ভালো করে করুন । আর কাউকে এক পয়সাও দেবেন না ।
-অবশ্যই স্যার। স্যার কাল কি অর্ডারটা...
-একটা অর্ডার পেতে সাত মাস লাগালে হবে । আমি MAY আর OR নই , আমি মেয়র । I do what I ought to do. কাল দপ্তরে আসবেন ।
খুব কম কথার মানুষ উনি ।আমরা বারান্দায় জুতো পরতে চলে যাই ।
ইতিমধ্যে একটা পিঠভাঙা বুড়ো মানুষ বাঁহাতে চায়ের কাপ ট্রেতে সাজিয়ে তার পাশে উপেক্ষিত প্যাকেটটা নিয়ে ভেতরে চলে যায় ।বারান্দায় জুতো পরতে পরতে আমরা এই অপ্রয়োজনীয় দৃশ্য থেকে নিজেদের চোখ সরিয়ে নিই ।
পরের দিন দপ্তরে এসেছি ।আমি আর প্রদীপ ।সাহস করে দুজনেই দাঁত বার করে হেসেছি।
-ভালো আছেন স্যার? যেন আজই দেখা হল ।
-বসুন, আগে এদের একটু ছেড়ে দিই ।
মেয়রের সামনে দুজন স্বাস্থ্যবান লোক ।
- আমার সম্পর্কে বাজে কথা বলার সাহস হয় কি করে আপনার অফিসারের?
-ক্ষমা করবেন স্যার , অল্প বয়েস স্যার। কোম্পানি ওকে শো কজ করেছে স্যার ।স্বাস্থ্যবান লোক দুটোর গলা শুকিয়ে গেছে ।
-এই যে দেখুন , পেছনে বসে আছেন বিদেশী কোম্পানির ঠিকেদার। ছদিন আগে প্রোজেক্ট জমা দিয়েছে। আজ অর্ডার নিতে এসেছে। জিজ্ঞেস করুন, একটা সিগারেটও নিয়েছি ওদের কাছ থেকে?
প্রদীপের হঠাত বিষম লাগে। মেয়র কী মানবিক। দূর থেকে বলেন, ‘জল খান ভাই, জল খান’।