STORYMIRROR

Partha Pratim Guha Neogy

Abstract Tragedy Others

3  

Partha Pratim Guha Neogy

Abstract Tragedy Others

আত্মমর্যাদা

আত্মমর্যাদা

4 mins
137

আজ বহুদিন পরে প্রিয়া শপিং করতে বেরোলো, আসলে কয়েকদিন ধরেই ও ভাবছিল বেরোবে বেরোবে, কিন্তু নানা কারণে আর ওর বেরোনো হয়ে ওঠেনি। তাই আজ ঠিক করেই নিয়েছিলাম যে ও বেরোবেই এবং সেই অনুযায়ী বেরিয়ে পড়েছিল। কলকাতার নামকরা শপিং মলের মধ্যে সাউথ সিটি মল খুবই ভালো - নানাধরণের জিনিসপত্র পাওয়া যায়। তাছাড়া বিশ্বায়নের পর

এখন কলকাতাতেই সব দেশের সব ব্রান্ডের জিনিস পাওয়া যায় - সাউথ সিটি মলে তো কথাই নেই। নানা চোখ ধাঁধানো দোকান দেখতে দেখতে হঠাৎ ওর চোখ চলে গেল সামনের একটা শপে, মনে হল এক ভদ্রমহিলা যিনি ওখানে শপিং করছেন - ওর খুবই পরিচিত। ভদ্রমহিলা ওর দিকে ঘুরতেই, প্রিয়া অবাক হয়ে গেল।


কিরে প্রিয়া বেশ অনেকদিন তো হল তোর ব্রেকআপ হয়ে গেছে। সেদিন একটা ম্যাগাজিনে তোর দেওয়া

সাক্ষাৎকারে দেখলাম তোকে এই নিয়ে প্রশ্ন করেছে একজন সাংবাদিক। যাক বাদ দে এবার অন্তত ওই দীপায়নের কথা ভূলে যা। কাকু কাকিমার পছন্দমত একটা ছেলে দেখে বিয়ে করে ঘর সংসার শুরু কর। নতুন সংসার সামলে তারপর বাচ্চাকাচ্চা হোক দেখবি পুরনো কথা সব হাওয়ায় ভেসে গেছে। শুধু গানবাজনা নিয়ে থাকলে হবে?” সাউথ সিটি মলের একটি নামকরা কফিশপে বসে কলেজ জীবনের বান্ধবী প্রিয়াকে কথাগুলো

বলছিল জয়া ।


এমনিতে মুঠোফোন বা সোশ্যাল মিডিয়াতে ওদের দুজনের যোগাযোগ থাকলেও অনেকদিন পর হঠাৎই ওদের দুজনের দেখা হল লেক গার্ডেন্স এলাকার এই শপিংমলে টুকটাক কেনাকাটা করতে এসে। জয়া বর্তমানে বিবাহসুত্রে মুম্বাইয়ের বাসিন্দা। মাঝেমধ্যে কলকাতায় বাপের বাড়ি আসে। পূরনো বন্ধুবান্ধবদের সাথে সেভাবে দেখাসাক্ষাৎ হয় না। আজ তাই প্রিয়ার সাথে দেখা হতেই কফিশপে আড্ডার সুযোগটা হাতছাড়া করতে চায়নি ও। সেইসাথে চলতে থাকে নানা আলোচনা, গায়িকা প্রিয়ার ব্যক্তিগত জীবনও বাদ যায়না সেখানে । আসলে এই সোশাল মিডিয়ার দৌলতে প্রেম,বিরহ ব্যক্তিগত সবকিছুই এখন সকলের কাছে জলের মত পরিষ্কার। কোথাও না করার বা এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই। অগত্যা তাই ক্যাপুচিনোর কাপে আলগোছে চামচটা ঘোরাতে ঘোরাতে এতক্ষণ ধরে জয়ার কথাগুলো শুনছিল প্রিয়া। আচ্ছা শিল্পী বলে কী ব্যক্তিগত বলে কিচ্ছুটি থাকতে নেই।


হঠাৎই চামচ চালানো থামিয়ে দেয় প্রিয়া তারপর শান্ত গলায় বলে, নারে এখনই আমি বেশ আছি।সম্পর্কের বেড়াজালে নিজেকে আর আটকাবো না। শূন্যতা আমার ভালো লাগে। একলা পথ চলার, আপন শর্তে বাঁচার মধ্যে একটা আলাদা আনন্দ আছে। অন্যের তৈরি করা রুটম্যাপ দেখে অনেকেই পর্বতশৃঙ্গ জয় করতে পারে কিন্তু নিজে রাস্তা বানিয়ে যদি সেটা জয় করা যায় তাহলে আনন্দটা দ্বিগুণ হয়। শূন্যতা আমাকে অনেককিছু শিখিয়েছে রে..”


__”কিন্ত কেন বল তো?”বলে জয়া ।


সানগ্লাসটা ঠিক করতে করতে প্রিয়া মৃদু হেসে বলে,তাতে অন্যের চাহিদা পূরণ করার তাগিদ থাকেনা বলেই। আজ দীপায়ন আর ওর পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে গেলে আমার নিজের প্রথম ভালোলাগা গানটাকেই ছেড়ে দিতে হত। কিন্তু আমি রাজি নই। ওকে ছেড়ে সেদিন শূন্য থেকে শুরু করেছিলাম বলেই আজ আমি নিজের গানের ব্যান্ড নিয়ে এই জায়গায় পৌঁছেছি আরো অনেক পথ চলার বাকি। আচ্ছা বলতে ভুলেই গেছি - তুই তো এখন কদিন কলকাতায় আছিস।আগামী রবিবার কলামন্দিরে আমার প্রোগ্রাম আছে আসিস কিন্তু।’আজ আসি আমার রিহার্সাল আছে…”কথাগুলো বলে ইনভাইটেশন কার্ডটা জয়ার হাতে ধরিয়ে দেয় প্রিয়া। তারপর বেরিয়ে যায় দরজা ঠেলে। বাইরে তখন গ্রীষ্মের প্রখর দাবদাহে চারদিক ঝলসে যাচ্ছে। জয়া বলে,”সত্যি জেদটা তোর আগের মতই রয়ে গেলো রে প্রিয়া।”


-এটা ঠিক জেদ নয় রে। আত্মসম্মান বাঁচিয়ে রাখার লড়াই আর বাকিটা নেহাতই ব্যক্তিগত”; কথাগুলো শেষ করে সানগ্লাসটা চোখে লাগিয়ে নিয়ে গিটারটাকে কাঁধে নিয়ে দৃপ্ত ভঙ্গিতে হেঁটে চলে প্রিয়া সামনের দিকে। যেতে ভাবতে লাগলো - আত্নবিশ্বাস বৃদ্ধি করার সর্বপ্রথম শর্ত হল নিজেকে জানা। নিজের ভুল-ত্রুটিকে মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া। যাদের মধ্যে আত্নবিশ্বাসের অভাব রয়েছে - বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা ইম্পোস্টার সিনড্রোমে ভোগে।


ইম্পোস্টার সিনড্রোম হলো এমন এক ধরণের মানসিক অবস্থা যে একজন মানুষ নিজের যোগ্যতা বা অর্জনকে সন্দেহের চোখে দেখে ও নিজেকে অযোগ্য মনে করে। মনে মনে সে ভয় পায় যে অন্যরা হয়তো তার অযোগ্যতা জেনে যাবে। তাই আত্নবিশ্বাস বৃদ্ধি করার জন্য আমাদের তিনটি ধ্রুব সত্য মেনে নিতে হবে।


*মানুষ হিসেবে আমরা কেউ পরিপূর্ণ হতে পারব না। সবার মধ্যেই অসম্পূর্ণতা থাকবে যা খুব স্বাভাবিক।


** যা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে শুধু আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা জিনিসগুলোর দিকে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে।


*** সর্বদা নিজের প্রতিযোগী হিসেবে নিজেকে চিন্তা করতে হবে। কাউকে নিজের প্রতিযোগী ভাবা যাবে না। অন্যকে টপকানোর চেষ্টা বা চিন্তা না করে নিজের আত্নউন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।


আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ সমালোচক বা অন্তর্দ্বন্দ্ব সম্পর্কে সচেতন হব, অন্তর্দ্বন্দ্ব গুলোকে বন্ধ করব এবং তাকে ভুল প্রমাণ করব।

আর সেটাই প্রিয়া করে চলেছে - কিভাবে নিজেকে আরও উন্নত করে তোলা যায়। যার ফল আজকে ওর নিজস্ব পরিচয় এবং প্রতিষ্ঠা। এগুলোই ওর আত্মসম্মান বৃদ্ধি করে ওকে মানুষ হিসাবে পূর্ণ করেছে - তবুও এখন অনেকখানি পথ চলা বাকী। এই সময় 

শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কফিশপের সাউন্ড সিস্টেম থেকে ধিমি সুরে বেজে ওঠে,” প্রেমে পড়া বারণ/কারণে অকারণ/ওই মায়া চোখে চোখ রাখলেও/ফিরে তাকানো বারণ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract