আমি আলাদা লেখক
আমি আলাদা লেখক
অরিন্দম- রিষভ কি রে,কি করছিস ?
রিষভ- খানিক্ষন চুপ রইল,
তারপর একটু হাসলো
রিষভ- সাজতে আমার,ভালো লাগেরে অরিন্দম
অরিন্দম- কেন এই ভাবে নিজের জীবনটা শেষ করছিস ?
তুই কি জানিস,
তুই কি করছিস ?
তোর কারণে কাকু কাকিমার পাড়ায় থাকাটা পর্যন্ত দুষ্কর হয়ে উঠেছে ৷
রিষভ- আমার কারনে....
হেসে বলল
আমি কিরকম সেটা আমার মা বাবা জানেরে,আর
তুই যেদিন থেকে আমার বন্ধু হয়েছিস সেদিন থেকে আশা করি তুইও সেটা জানিস ৷
যখন ছোট ছিলাম আমার খেলনা বাটি খেলতে ভালো লাগতো,পুতুল নিয়ে খেলতে ভালো লাগতো,মেয়েদের মতো সাজতে,চুরি পড়তে ভালো লাগতো আবার কখনও মায়ের শাড়ি পরে বউ সাজতেও ভালো লাগতো ৷ আমার সাথে কেউ খেলতে চাইতো না শুধু মাত্র তুই ছাড়া ৷
কিছুদিন স্কুলে গেলাম,
তারপর স্কুল থেকে বাবাকে একদিন ডাকা হলো
অধ্যাপক বললেন আপনার ছেলের কারণে
ছেলে বলাটা ভুল হবে যাই হোক আমরা ওকে আর স্কুলে রাখতে পারবোনা ৷
কারণ ওর জন্যে স্কুলের অন্য বাচ্চাদের তো আমরা ক্ষতি করতে পারিনা ৷
তাছাড়াও অন্যান্য বাচাদের মা বাবারাও নিজের সন্তানদের ওর সাথে ক্লাস করতে দিতে চাইছে না ৷
কারনটা হয়তো আপনাকে আমার বলতে হবেনা সেটা আপনি জানেন ৷
তবে আমার মতে ওহ যেহেতু সবার থেকে আলাদা
তাই ওকে একটু আলাদাই রাখুন কেমন
বলে উনি হাসতে হাসতে চলে গেলেন ৷
আর আমার চোখের পাতাটা জলে ভিজে গেলো
সেদিনের পর আর কোনদিনও স্কুলে যাওয়া হল না,
বন্ধুদের সাথে খেলতে যাওয়া হল না,
কারন আমি তো আলাদা...
সেই থেকে বাড়িতে নিজের লোকেদের থেকেও আলাদা হয়ে রয়েছি,
মা আসে দুবেলা খাবার টুকু দিয়ে চলে যায়
বাবার ভয়ে কথাটুকু ঠিকভাবে বলে না ৷
শরীর খারাপ করলে ডাক্তার অবধি বাড়ি আসেনা
কারন আমি তো আলাদা যদি সেটা ডাক্তার জেনে যায় তাহলে আমার মা বাবার মান সম্মান হানি হবে না,তাই কোনও মতে শরীর খারাপের কারনটা বলে তারা আমায় শুধু ওষুধটুকু এনে দেয় ৷
এই ভাবেই এতগুলো বছর নিজের বাড়িতেই জেল খানার কয়েদির মত সাজা কাটছি ৷
এক কথায় বলতে পারিস যাবজ্জীবনও ৷
আমার দোষটা কোথায় বলতে পারিস ?
জন্ম নিয়েছি সেটা দোষ ?
নাকি নিজের মত নিজে বাঁচতে চেয়েছি সেটা আমার দোষ ?
ছোট থেকেই শুনে আসছি আমি সবার থেকে আলাদা
তারপর বড় হওয়ার সাথে সাথে দেখলাম
আমাকেই আলাদা করে দিলো সবাই,
দোষ শুধু একটাই আমি সবার থেকে আলাদা ৷
অরিন্দম- তোকে বোঝান সম্ভব নয়
তুই থাক নিজের সাজ নিয়ে
আসি....
রিষভ- বন্ধুদের মধ্যে শুধু তুই আমাকে বুঝেছিলি
আজ তুইও আমায় আলাদা ভেবে চলে গেলি...
একদিন পর......
অরিন্দম- কি রে কেমন আছিস ?
রিষভ- আলাদাই আছি
অরিন্দম- কে বলল তুই আলাদা ?
রিষভ- কেন ? সমাজ,বাবা,মা আর শেষে তুই...
অরিন্দম- আমি ভুল ছিলাম রে,আমায় প্লিজ তুই ক্ষমা করিস, আমি অনুতপ্ত ৷
আসলে আমি তোকে সেদিন ওই ভাবে কথাটা বলতে
চাইনি, কিন্তু কেন জানিনা হঠাৎ খুব রাগ হলো আমার
আর কেনই বা রাগবোনা বলতে পারিস,
কারণ আমার বোনও তো সবার নজরে আজ আলাদা
অরিন্দম- কিছুক্ষণ চুপ করে রইল,বলল
কিন্তু না আর না,
তোদেরও সমাজে বাঁচার অধিকার আছে,বাকিদের মতো ৷ তোরাও সমাজে একসাথে বাস করবি,চাকরি করবি এবং কাধে কাধ মিলিয়ে সকলের সাথে চলবি ৷
কাকু কাকিমার সাথে আমি কথা বলব ৷
অরিন্দম- শোন না তুই কোন কালারের লিপস্টিক
পছন্দ করিস রে ?
