"দোলার আগমন" "অভিরাজ শর্মা"
"দোলার আগমন" "অভিরাজ শর্মা"
গল্প : "দোলার আগমন"
আমি উৎসব ,
সেবছর আমি একটু আগেই কলকাতায় চলে আসি
আসলে বিদেশ বিভুয়ে থেকেও এই দিনটার প্রতি টানটা ভুলতে পারি না সেটা,দোল |
আমি সাউথ কলকাতার বাসিন্দা,
মা বাবার আমি একই ছেলে
ছোট বেলাটা আমার কেটেছে একান্নবর্তী পরিবারে |
মা, বাবা,দাদু , ঠাম্মা , কাকা , কাকী ও ভাই বোনদের সাথে |
পড়াশোনা শেষ করে বিদেশ চলে যাই পড়াশোনার জন্যে সেখানেই পড়াশোনা শেষ করতেই চাকরি পেয়ে যাই |
বিদেশে থাকি কিন্তু মনটা পড়ে থাকে এই কলকাতা শহরে |
সকাল হলে রেডিওতে পুরোনো গান শোনা ,খবরের কাগজটা,মায়ের হাতের চা,দুপুরে মায়ের হাতের আলু পোস্ত , মাছের ঝোল আর সন্ধায় পাড়ায় কানাই দার দোকানের সেই চিংড়ির চপ,সিঙ্গারা এই সাদ গুলো টাকা দিয়েও বিদেশে পাওয়া যায় না |
তাই সুদূর দিয়ে ছুটে চলে আসি বছরে এই একটা দিন
নিজের মানুষগুলোর কাছে , ভালো লাগে |
আমাদের বাড়িতে বরাবর দোল উৎসব এবং দূর্গা পুজোটা বড় করে,অনুষ্ঠিত হয়| এই একটা দিন বছরে অনেকের সাথে দেখা হয় অনেক আত্মীয়রা আসেন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন ,দুপুরে পেট পুজোর পালা মিটিয়ে দিন শেষে মিষ্টি মুখ করে ফিরে যান |
সে বারটা হলো একটু অন্য রকম আমি প্রতি বারের মতো দোলের আগেই এসে শপিংএ বেড়িয়েছি কিছু কেনার ছিলো বাড়ির সকলের জন্যে তার সাথে কেনার ছিলো আবির এবং মিষ্টি |আমার কেনাকাটা প্রায় সবই শেষ শুধু মিষ্টিটা কিনে বাড়ি ফেরার পালা | হঠাৎ দেখতে পেলাম মিষ্টির দোকানটার সাথে লাগোয়া ফুটপাথে বসে একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে বয়স আন্দাজ এগারো অথবা বারো হবে খিদেতে খুব কাঁদছে , রাস্তার লোকগুলো মেয়েটিকে দেখে হেসে চলে যাচ্ছে কিন্তু সাহায্য টুকুও কেউ করছে না |বিশ্বাস হলো মনুষত্ব্য মরে গেছে অথবা আমরা মনে হয় একটু বেশি ব্যস্ত হয়ে পরেছি |আমার ওকে দেখে চোখে জল চলে আসলো |আমি আর দেরি না করে মেয়েটির কাছে গেলাম ,ওর নাম জিগেস করলাম ওহ বলতে পারলো না,শুধু বললো খিদে পেয়েছে ,ওর যা যা খেতে ইচ্ছে হলো আমি খাওয়ালাম কিছুক্ষন পরে মেয়েটি একটু স্বাভাবিক হলো ,তখন আমি জিগেস করলাম বাড়ী কোথায় তোমার ?বললো মনে নেই হঠাৎ বলে উঠলো আমার বেলুন খুব ভালোলাগে আমার মা বেলুন আনতে গেছে আমার জন্যে ,কিন্তু এখনো এলো না কেন তুমি কি দেখেছো আমার মা কে ?আমি পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম | আমি ওকে নিয়ে গেলাম নিজের বাড়ি |কি সম্পর্কে নিয়ে গেলাম সেটার নাম নয় মনুষত্ব্য থাক মা,বাপি বাদে
কেনাকাটা করে বাড়িতে পৌঁছতে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছিল সেদিন আমার
গভীর রাতে বাড়ির বাকিরা আমার সঙ্গে ওকে দেখে একটু অস্বস্থিতে পড়েছিলো ঠিকই কিন্তু দোলের দিন থেকে নিজের ব্যবহারে সকলের মন জিতে নেয় "দোলা"
নামকরণটা বাপিই করলো |
দোলের পর আমি ফিরে গেলাম,দোলার সমস্ত পড়াশোনার দায়িত্বটা আমি নিলাম | এখন দোলা স্কুল যাচ্ছে ,পড়াশোনা করছে | ওর ইচ্ছে পড়াশোনা শিখে , অভাবের হাত ধরে অন্ধকারে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো সমস্ত দোলাদের শিক্ষার আলো দেখিয়ে শিক্ষিত করে তোলা|
