"সন্তান সুখ"
"সন্তান সুখ"
দিনটা আমি কোনো দিন ভুলতে পারবো না ,
যেদিন তুই প্রথম আমাদের ঘরে এসেছিলি |
অচেনা হয়ে এসে কিভাবে যে চেনা হয়ে উঠলি বুঝিনি রে | আমি ও আমার স্ত্রী হয়তো আমাদের একমাত্র সন্তান নিয়ে ভালোই ছিলাম,কিন্তু যেদিন তুই ওর কোলে চেপে আমাদের বাড়ি আসলি ,আমার মনে হলো যেনো আমার আর এক সন্তান আজ জন্ম নিল পৃথিবীতে | প্রথমে তুই আমার দিকে তাকিয়ে ছিলি,আমার গায়ের গন্ধটা অনুভব করলি তারপরে ছোট্ট ছোট্ট হাত দিয়ে ,আমায় স্পর্শ করলি |
আমার অন্তর আনন্দে ভরে উঠলো ,আমিও তোকে খুব আদর করলাম,তোকে সাহস করে কোলে নিলাম |
আসলে অনেক দিন অভ্যাস নেইতো , একটু ভয় পাচ্ছিলাম আমি তোর যেন কোথাও লেগে না যায় |
তুইতো অনেক ছোটো মাত্র ২৫ দিন তোর বয়স |
তুই খরগোশ হলেও সন্তান আমাদের |
আমি আর আমার স্ত্রী দুজনেরই মনে একটা ছেলের ইচ্ছে ছিলো ভগবান তোকে দিয়ে যেন সেটা পূরণ করলেন | আমরাও খুব আনন্দিত কারণ নতুন করে আবার বাবা মা হলাম | প্রথমে তোর নামকরণ হলো তারপরেই তোর জন্যে নতুন জায়গা তৈরি হলো , যেখানে ছেলে খেলবে,ছেলে কি খাবে সমস্তটা নিয়ে তোর মা সারা বাড়ি মাথায় করলো | তবে তোকে স্নান করানোর দায়িত্বটা আমাকেই দেয়া হয়েছিল সেটা আমি খুব ভালোই পালন করলাম |
স্নানের পর তোর গায়ের পশম গুলো একটু এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল , আর তুই ঠান্ডায় কাপছিলি , তখন তোর মা তোকে রোদে নিয়ে গিয়ে নিজের বুকের সাথে নিয়ে বসেছিল অনেকটা সময় , তারপরে গিয়েই তুই একটু স্বাভাবিক হলি |
আমি স্নান সেরে পুজোয় বসতেই তুই এসে পুজোয় বসলি , দুপুরে খাওয়ার পর আমাদের সাথে ঘুমিয়েও পড়লি , সারা সন্ধ্যা দুষ্টুমি করলি, মায়ের কাছে আদর পেলি , সাথে সাথে ঘুরেও বেড়ালি | রাত হতেই তোকে খাইয়ে আদর করে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম |
জানিস আমি ও তোর মা রাত এ ঘুমোবার আগে ঠাকুর প্রণাম করে বললাম , যে ধন্যবাদ তোমায় এত সুন্দর একটা উপহার দেওয়ার জন্যে ,আমাদের ঘরে খুশি দেয়ার জন্যে | জানিস তোর মা সারা রাত তোকে উঠে উঠে দেখেছে যে তোর কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা , আমাকেও বুঝতে দেয়নি সে কিন্তু জেগেই ছিল,ভোরের দিকে তোর মা একটু ঘুমিয়ে পরেছিল |
কিন্তু সে কি জানতো যে সকালে ঘুম ভাঙতেই তার জন্যে কি দৃশ্য অপেক্ষা করে আছে আর না আমি জানতাম |
সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গলো তোর মায়ের চিৎকারে
সে আমায় বললো ,
ওগো দেখো আমাদের সোনা কি ভাবে মাটিতে পড়ে আছে | তুমি শিগগিরই একবার ওকে দেখো আমার খুব ভয় করছে | আমি ঘুম চোখে উঠেই তোর কাছে যেতেই যেন আমার বুকটা খালি হয়ে গেল |
যখন দেখলাম অন্ধকার ঘরের এক কোনায় তোর নিথর দেহটাকে পরে থাকতে |
আমি ঐখানেই কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম |
পরোক্ষনে নিজেকে সামলে নিয়ে তোর ছোট্ট দেহটা হাতে নিয়ে ঘরের বাইরে আসতেই তোর মা চিৎকার করতে শুরু করলো |
কোথায় নিয়ে যাচ্ছ আমার সন্তানকে ?
কোথায় নিয়ে যাচ্ছ ?
ফিরিয়ে দাও আমার সন্তানকে
আমি বলছি ফিরিয়ে দাও আমার সন্তানকে
হে ভগবান এটা তুমি কি করলে দিলে যখন একদিনের সন্তান সুখ কেন দিলে ?
কেন ওকে কেড়ে নিলে ?
কেন আমার কোল শুন্য করলে ?
বলো কেন কেন কেন ???
সে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো |
আমি কোনো দিক না ভেবে তোকে নিয়ে বাইরে এসে ,ঘরের সামনে মাটি খুঁড়ে তোকে সেখানে পুঁতে দিলাম আর তার সাথে একটা সুন্দর ফুলের গাছ সে মাটিতে আমি লাগিয়ে দিলাম |
আমি ঘরে এসে দেখি তোর মা মাটিতে পড়ে আছে তাকে উঠিয়ে জল খাইয়ে সুস্থ করে বললাম ,
আমাদের সোনা ছেলে কোথাও যাইনি ঘরেই আছে |
চলো দেখবে বলে তোর মাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে গাছটি দেখিয়ে বললাম ,
"আমাদের সোনা ছেলে" ||