STORYMIRROR

Aviraj Sharma

Tragedy Inspirational

3  

Aviraj Sharma

Tragedy Inspirational

"তোমার সঙ্গ মহামারীতে"

"তোমার সঙ্গ মহামারীতে"

6 mins
313


দেড় বছর আগের কথা আমি অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিলাম ,

খবরে শুনলাম লকডাউনের কথা |

কারণটা ছিল এক অজানা ভাইরাস ভারতে প্রবেশ করেছে ,

নামটা হলো করোনা |

সেই ভাইরাসের প্রকোপ চলে আসে কলকাতা শহরে |

যেখানে আমি থাকি নিজের পরিবারের সাথে ,

সবে সংসার পেতেছি মনের মানুষের সাথে |

প্রথমে ভাবলাম যে ঠিক হয়ে যাবে সব কিছু

কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই চারিদিকে মহামারীর প্রকোপে ,

অভাব এবং মৃত্যু মিছিল শুরু হয়ে গেলো |

মানুষ সংক্রমিত হয়ে উঠলো এই ভাইরাসের দ্বারা এবং বহু মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারাও যেতে লাগলো ,

কিছুদিনের মধ্যে কর্ম সংস্থান গুলো বন্ধ হয়ে গেলো |

উপার্জনের যতটুকু উপায় ছিলো সেটাও আর থাকলো না |

নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেললাম ,

তার উপর সংক্রমন এতটাই বেড়ে গেল যে সম্পূর্ণ লকডাউন ছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিলো না সেটাই হলো |

এদিকে আমার নতুন একটা চাকরি সেটাও প্রাইভেট ,

সেটাও এই লকডাউনের জন্যে বন্ধ হয়ে গেলো |

ঘরবন্দী হয়ে পরলাম আমি ও আমার স্ত্রী |

থাকি কলকাতা শহরে এক ভাড়ার বাড়িতে ,

দিন রাত শুধু একটাই চিন্তা মাথায় ,

বাড়ি ভাড়াটা দেবো কোথা থেকে,তার সাথে ইলেকট্রিক বিল এবং জলের টাকা এই ভাবতে ভাবতেই দিন কাটতে লাগলো আমাদের |

বাড়ীওয়ালা ছিল এমন যে শুধু টাকাকেই বেশি ভালবাসতেন নিজের প্রানের চেয়েও বেশি | 

মাসের পয়লা তারিখে ঘর ভাড়া না পেলে কিংবা ভাড়াটে যদি সেটা দিতে একটু দেরি করে তাহলে তার আর রক্ষা নেই | 

যাই হোক আমি থাকতাম ওনার বাড়ির ছাদের ঘরটি ভাড়া নিয়ে ,আরও দু'ঘর থাকতো নিচের তলায় |

প্রথম যখন আমি ঘরটা ভাড়া নিয়েছিলাম ,তখন আমার চাকরি ছিল এমনকি আমার স্ত্রীও চাকরি করতো একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে |

তখন আমাদের ভালো মাইনে ছিল এবং নতুন বিবাহিত সংসারটা আমাদের সুখ সাচ্ছন্দে ভরে উঠলো |

সেই সময় বাড়ি ভাড়াটাও আমরা সময় মতো দিতাম ,আবার কখনো সময়ের আগেও অনেক সময়ে দিয়ে দিতাম | 

কিন্তু এমনটা হবে সেটা কে জানতো ?

এই ভাবে জীবন বিপন্ন হয়ে উঠবে সেটাই বা কে জানতো ???

এই সবে বিয়েটা করেছি ,

নতুন সংসারটা ঠিক ভাবে পেতে পারলাম না তার উপর এই মহামারী,এবং লকডাউন |

একদিকে এই ভয়ঙ্কর মহামারী মানুষ মারতে শুরু করলো মারণ রোগ দিয়ে ,

অপর দিকে লকডাউন মারতে শুরু করলো মানুষকে অভাব অনটন দিয়ে |

হওয়াটা স্বাভাবিক ,

প্রথম লকডাউনের কিছুটা সময় খুব একটা অসুবিধা হয়নি কিন্তু লকডাউনের মেয়াদ যত বেশি বাড়তে লাগল যেন জীবন এর ভালো সময়গুলো সব দূরে সরে যেতে লাগলো ,

আত্মসম্মান হানি এবং অভাবের কালো মেঘটা যেন ঘিরে ফেললো আমার গোটা সংসারটাকে |

লকডাউনের প্রথম দিকে আমার কাছে কিছু টাকা ছিলো সেই দিয়ে এবং আমার স্ত্রী তার এক মাসের মাইনে পেয়েছিল সেই দিয়ে লকডাউনের অনেকটা সময় আমরা কাটিয়েছি | 

কিন্তু সেটা আর কতদিন ,

লকডাউনের এক মাস যেতে না যেতেই আমরা অভাবের সম্মুখীন হলাম |

ঘরে সমস্ত রেশন শেষ কি খাওয়াবো ওহকে

কিছুই বুঝতে পারলাম না |

কি করে বলি ওহকে যে ঘরের সমস্ত রেশন শেষ |

আমি সেটা আর ওহকে বলে উঠতে পারলাম না |

একদিন সকালে কি হলো ,

ওহ আমায় বলল আমায় একটু চা খাওয়াবে আমি বললাম ,

নিশ্চই কিন্তু সত্যি বলতে আমি নিজেও জানতাম না যে চাপাতা টুকুও ঘরে শেষ হয়ে গেছে |

আমি চা করতে গিয়ে লজ্জায় পরে যাই,

ওর চোখ এড়িয়ে কোনো মতে আমি আমার মানি ব্যাগটা খুলে দেখি একটা খুচরো পয়সা অবধি সেখানে নেই | 

আমি রান্নাঘরেই চুপ করে কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইলাম ,

ওর সামনে যাওয়ার মতো ক্ষমতা রইলো না আমার |

হঠাৎ দেখি ওহ কখন আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছে |

আমি ওর দিকে তাকাতেই একটু হেসে বললো ,

চাপাতা শেষ ?

থাক আমার চা চাই না

তুমি পাশে আছো ,

আমার কাছে এটাই অনেক | 

অভাব যতই আসুক না কেন ,

তোমার থেকে আমাকে কেউ আলাদা করতে পারবে না |

অনেকটা অসহায় লাগছিল সেদিন নিজেকে | 

যে এমন দিন এসে গেছে সামান্য ওর পেট চালানোর ক্ষমতাটুকু আমার আজ নেই |

কত চেষ্টা করেছি একটা কাজের যাতে ,

সংসারের হালটা শক্ত করে ধরতে পারি | 

দুবেলা দু মুঠো ওহকে খেতে দিতে পারি ,

কিন্তু শত চেষ্টা করেও কিছু হচ্ছিল না |

তার সাথে দিনের পর দিন এভাবে অনাহারে আমার স্ত্রী অসুস্থ এবং দুর্বল হয়ে পড়লো |

ডাক্তার দেখানোর টাকাটুকু আমার কাছে ছিল না ,

কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না |

একদিকে অসুস্থ স্ত্রীকে বিছানায় পরে এভাবে কষ্ট পেতে দেখতে পারছিলাম না ,

অপর দিকে রোজ সকালে লকডাউন চলাকালীন বাড়ি ভাড়া দিতে না পারায় ,

বাড়িওয়ালা দরজায় এসে নানান ভাবে অপমান করে যেত |

সেটাও সহ্য করাটা অসম্ভব হয়ে উঠছিল |

এমন সময় আমি শুধু ভগবানকে ডাকতে লাগলাম যে সাহায্য করো |

এই সময় চলাকালীন হঠাৎ আমার এক সহকর্মী এবং তার সাথে আমার বড় দাদা বলাটা ভুল হবে না ,

আমায় ফোন করলেন খোঁজ নেওয়ার জন্যে পাশেই থাকতেন উনি আমাদের |

আমি দাদাকে আমাদের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললাম ,

সেই দিনটার কথা আমার আজও মনে আছে ,  

দাদা বলেছিলেন তোমরা চিন্তা করোনা

আমি সব সময় তোমাদের পাশে আছি |

আজ যতটাই কষ্ট তোমরা পাচ্ছ এর পরের সময়টা ,

তোমাদের ততটাই ভালো কাটবে 

ঈশ্বর আছেন উনি সবার ভালো করবেন |

উনি আমাকে ছোট ভাই হিসাবে স্নেহ করেন 

ঠিক তেমনি আমার স্ত্রীকেও ছোট বোনের মতো স্নেহ করেন |

ওনার সাথে হয়তো আমার কাজের সূত্রে সম্পর্ক ,

কিন্তু ওনার ব্যবহারে তাড়াতাড়ি সেই সম্পর্কটা পারিবারিক হয়ে উঠলো ,

ওনার বাড়িতেও আমি বেশ কয়েকবার গিয়েছি নানান অনুষ্ঠানে ,

কিন্তু বিয়ের আগে অবশ্য |

এই মহামারী এবং অভাবে দাদা সত্যি

যেন ঈশ্বরের দূত হয়ে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন |

যখন সব দরজা বন্ধ হয়ে গেলো ,

তখন যেন একটা দরজা খুলে গেল দাদার আসার কারণে |


উনি আমায় একদিন ফোন করলেন সকালে

জিগেস করলেন বাড়ি আছো ?

উত্তরে বললাম হ্যা আছি ,

তার কিছুক্ষণের মধ্যেই উনি আমার বাড়ির কাছে এসে ,

আমাকে এক মাসের রেশনটা দিয়ে যান |

বললেন শেষ হলে বলো আমি আবার দিয়ে যাবো |

আর এও বলে গেলেন যখন যেরকম পারবো ,

আমি নিশ্চই করবো তোমাদের জন্যে |

তোমাদের খাবারের কোনো অসুবিধা আমি হতে দেবো না |

যখন আমি খেতে পাচ্ছি ,

তাহলে তোমাদেরকে ক্ষুদার্ত কি করে রাখি |

আর তোমরা তো হলে আমার নিজের লোক |


সত্যি বলতে সেই দিন থেকে ,

আমি দাদার কাছে ঋণী হয়ে গেলাম |

হয়তো আমি হাজার চেষ্টা করলেও তার এই ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না |

ঈশ্বরের কাছে শুধু এইটুকু চাইলাম আমার দাদা কে সব সময় ভালো রেখো ,এবং তার পরিবারকেও |

তার পরে কয়েক মাস কেটে গেছে লকডাউন উঠে গেলো ,

আমি বেশ কয়েক জায়গায় কাজের চেষ্টা করলাম ,

এক জায়গায় চাকরির কথা বলে চাকরি ঠিক করে আসলাম |

শুধু মনে এই বিশ্বাস টুকু ছিলো যে অসম্ভব কেও সম্ভব করা যায় চেষ্টা করলে |

তাই হয়তো চাকরিটাও পেয়ে গেলাম |

ম্যানেজার এর পোস্ট ছিল দায়িত্বও ছিলো অনেক |

একদিন কি হলো আমার কাছে কিছু টাকা কম পড়লো ,

বাড়িতে কিছু নিয়ে যাওয়ার ছিল সেই কারণে |

দাদার বাড়ির কাছেই ছিলো আমার কাজের জায়গাটা ,

প্রায়ই দাদা আসতেন দেখা করে যেতেন |

সেদিনও উনি এসেছিলেন ,

আমায় চিন্তিত দেখে 

আমায় জিগেস করলেন কি হয়েছে ?

উত্তরে আমি কারণটা বলতে উনি বললেন এইটুকু ব্যাপার ,

এই নাও এটা রাখো দেখলাম দুশো টাকা |

আমি ফেরত দিতে দাদা বললেন ,

আরে ঠিক আছে তুমি এখন রাখো পরে ফেরত দিয়ে দেবে আমি হিসাব রাখছি

বলে একটু হাসলেন |


পরে বললেন বাড়িতে বাচ্চার জন্যে 

দুধ কেনার ছিলো |

যাই হোক আমার ভাই এর জন্যে ,

একটা দিন আমি আমার বাচ্চার দুধটা নয় বাকিতেই নিয়ে নেবো ,

আর দোকানদার চেনে আমায় তেমন অসুবিধা কিছু হবে না |

বলে উনি চলে গেলেন ,

হাসতে হাসতে ||


এই হলেন আমার দাদা "সাহাজাদা হোসেন" ||


ভেবেছিলাম মহামারী এবং অভাবের পরিণতি মৃত্যু হবে | কিন্তু তোমার মতো একজন ঈশ্বরের দূত এর আগমনে ,

হয়তো নতুন জীবন ফিরে পেলাম আমরা |

তোমার কাছে ঋণী হয়ে থাকলাম |

ঈশ্বরের কাছে তোমার এবং তোমার পরিবারের ভালো চাইলাম ||




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy