STORYMIRROR

Aviraj Sharma

Drama Tragedy Inspirational

4  

Aviraj Sharma

Drama Tragedy Inspirational

অধ্যায়

অধ্যায়

5 mins
443


প্রথম অধ্যায়


আমার নাম কাবেরী,

জন্ম আমার ওপার বাংলায়

খুলনার রায় চৌধুরী নামক জমিদার পরিবারে,

তিন দিদির পর আমার জন্ম শেষ বারে

বাবা ছিলেন নিরঞ্জন রায় চৌধুরী,

মা ছিলেন গীতা রায় চৌধুরী

যখন নয় মাস বয়স আমার,

তখন মাকে হারাই

মাতৃহীন শৈশবে আমি,

শুধু বাবাকেই পাই

আমার আগেই ছিল আরো তিন জন,

দিদি,মেজদি এবং ছোটদু

ছিলাম আমি সবার আদূরে ছোট বোন,

যদিও টুকটুকি নাম রাখা হয়েছিল আমার

কিন্তু আজও টুকু নাম ধরে শৈশব আমায় ডাকে বারবার

সেইবার মায়ের মৃত্যুর পর,

বাবা ভেঙে পড়লেন

কারণ মাকে সে খুবই ভালবাসতেন এবং চোখে হারাতেন

আমার বাবারা ছিলেন এক বোন তিন ভাই

মায়ের আদর কিন্তু আমি প্রথম ছোট কাকিমার থেকেই পাই

তাছাড়া ছোট কাকারও ছিলাম আমি ভীষণ প্রিয়

ছোট ছিলাম বলে পেতাম সবার আদরও

আমার পিসিমা ছিলেন সবার বড়,

তার মতো মন হবেনা কারো

সত্যি ঈশ্বরের দূত হয়ে এসেছিলেন পিসেমশাই পিসিমার জীবনে,

সন্তান রূপে ভালোবাসা দিয়ে রেখেছিলেন আমায় মনে

মা হারা ছিলাম আমি পাইনিগো মাকে দেখতে,

পিসিমার আদরে মনে হলো মা আবার পেলাম তোমায় কাছেতে

মায়ের মৃত্যুর পরেই পিসিমা এলো দেশের বাড়ি,

কার্য শেষে বাবাকে বলে আমায় নিয়ে সে দিল কলকাতা পাড়ি


তখন আমি অনেক ছোট কিন্তু সবই মনে আছে,

শৈশব যেন আমার আজও শৈশবেরই কাছে

দেশের বাড়ি ছেড়ে যখন শহরে আমি আসি,

পিসিমার কাছেই গল্প শুনে এই কলকাতাকে ভালোবাসি 


পড়াশোনা শুরু আমার পিসিমার বাড়িতেই,

প্রথম স্কুলে যাওয়া আমার লি মেমোরিয়ালেই

পিসিমার ভালোবাসাতেই বুঝিনি সময় কিভাবে কেটে গেলো,

স্কুলের গন্ডি আমার কখন এক থেকে আটে এসে পড়লো


তারপরে পিসে মশাইয়ের মৃত্যুর কারণে,

পিসিমা আমায় বাবার কাছে রেখে আসে যত্নে

বাবা তখন তিন দিদিদের নিয়ে 

একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতো,

পিসিমা ছাড়া আমার থাকাটা ছিলো বড় শক্ত 

কিন্তু বাবা বুঝিয়ে বললেন,

মা গত হওয়ার পর পিসিমা ও পিসেমশাই তোমার জন্যে অনেক করেছেন

এখন তাদেরও বয়স হয়েছে আর তারা কিভাবে করবেন


তাছাড়া আমিও তখন বেশ বড় বুঝলাম বাবার কথা,

সত্যিই তো মা হারা ছিলাম আমি বাবা ছাড়া কে ছিলো আমার

পিসিমা না থাকলে কেই বা বুঝতো,

আমার মা হারানোর ব্যাথা

একমাত্র সেই তো ছিলো যার কোলে মাথা রাখলে মনে হতো 

মায়ের কোলেই আছি মায়ের কাছেই আছি

যার হাতের ছোয়ায় মায়ের স্পর্শ অনুভব করতাম

যার কাছে রোজ ঘুমানোর আগে রূপকথার গল্প আমি শুনতাম

জানি পিসিমারও কষ্ট হয়েছে আমায় এভাবে ছেড়ে যেতে

শুধু সময়েরই যেন কষ্ট হয়না আমার কান্না দেখে

যাই হোক বাবার কথা মতো আমি পরের পড়াশোনাটা আবার শুরু করলাম

দেখতে দেখতে দশম শ্রেণী আমি উত্তীর্ণ হলাম


দ্বিতীয় অধ্যায়


তখন আমার জীবনে হঠাৎ একজনের প্রবেশ,

সেই অনুভূতিটা ভালোলাগার ছিলো ভালোবাসায় হলো শেষ

তাকে ভালোবাসতে মন আমার চেয়েছিলো,

যদিও ভালোবাসি তোমায় প্রথম সেই বলেছিলো

তাকে বিশ্বাস করতে মন চাইলো

দুজনের মন বিবাহ বন্ধনে বাঁধা পরলো

বয়স তার ছিল তেমন নয়

কিন্তু পুরুষ তার মতো খুব কমই হয়

সমস্ত ঘটনাটা ঘটলো দুই পরিবারের অমতেই,

শশুর বাড়ীতে প্রথম পরিচয় আমার আমি সকলের নিন্দাতেই

মন খারাপ হয়েছিল ঠিকই

কিন্তু ওর সুখের জন্যে আমি সেখানেই থেকে গেলাম,

নিন্দুকদের ঘরে আমি ভালোবাসার ঘর বাধলাম


বেশ কিছুদিন পরে আমি গর্ভবতী হলাম,

শাশুড়ি মায়ের অত্যাচারে আমি প্রথম সন্তান হারালাম

ভেঙে পড়লাম আমি শারীরিক এবং মানসিক ভাবে,

ভাবতাম এ যন্ত্রনাটা কবে দূর হবে


তার উপর নানান অশান্তির ঝড় সংসারে রোজ উঠতে লাগলো,

শেষ অবধি একই সংসারে আমাদের আলাদা থাকতে হলো

একই ছাদের তলায় পৃথক সংসারের অনুভূতি ভালো ছিলোনা,

পৃথক সংসারটা কোনদিন আর এক হলোনা

বেশ কিছুদিন পর আমি আবার গর্ভবতী হলাম,

ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের আমি জন্ম দিল

াম

আমার স্বামীর আনন্দের কোনো শেষ ছিলনা,

বলেছিলো "টুকু লক্ষী এসেছে গো আমাদের লক্ষী মা"


অজানা কোনো খুশি যেন দিয়েছি তাকে আমি,

নাম রাখা হয়েছিল আমাদের মা লক্ষীর মৌসুমী

অন্নপ্রাশন হয়েছিল খুব বড় করে তার,

স্বামী শুধু নয় তার মতো বাবা সত্যিই মেলা ছিল ভার

সেই দিনটায় মানুষ শুধু খেয়েই নয় আনন্দে ছিলো মাতোয়ারা,

ভুরিভোজ ও আপ্যায়নে মানুষের মনে ফেলেছিলো সারা

কিছুদিনের পর মিমা একটু বড় হলো,

স্কুলে যাবার দিন ক্যালেন্ডারে তার জলদি যেন এলো

ও তার আগেই বলি মীমা বলে ডাকতো শুধুই ওর বাবা ওকে,

বাবার আদর পেলে তাকে আর পায় কে

আমার সাথে মান অভিমান ছিলো তার বাবার কাছে দাবি,

ছোট থেকেই জানতো সে যে বাবার কাছেই সুখের চাবি

আমার রাগ হয়না কারণ,

আমার মেয়ে সে তো আমাকেও ভালোবাসে

কাজ শেষে ক্লান্ত হয়ে পরি যখন, মেয়েইতো আমার জন্যে 

গ্লাসে জল ভরে নিয়ে আসে

পাঁচ বছরের মাথায় আমার আরও দুটি সন্তান হলো,

এক ছেলে এক মেয়েকে পেয়ে বাড়িতে খুশির জোয়ার এলো

অভিষেক ও তানিয়া নাম রাখা হলো তাদের,

তিন সন্তানের সাথে দিন কাটলো সুখে আমাদের

জানিনা কার নজর লেগেছিল আমার সুখের সংসারে,

ভালোবাসার মানুষটাকে

হঠাৎ আসা এক ঝড় নিয়ে গেলো কেড়ে

সধবা থাকতে আমায় নিয়ে নিন্দা করেছে যারা,

বিধবার ওই সাদা শাড়িতে দাগ দিয়েছিল তারা

এরা শশুর বাড়ির লোক নামে পরিচিত,

তারা এমনি মানুষ সৎ কর্ম না করেও গর্বিত

আমার স্বামী বাড়ির প্রতিটা লোকের জন্যে ভাবতো এবং করতো,

আজ সে না থাকায় তিন সন্তান নিয়ে আমি ঘর থেকে বিতাড়িত

শুধু অবাক লাগে যাদের আমার স্বামী মনে করতো এক পরিবার,

তারাই একদিন আমাদের অবর্তমানে ঘরে তালার উপর তালা দিয়ে শুরু করলো অত্যাচার

রাত্রি তখন বেশ,

কি করবো চিন্তার ছিলোনা শেষ

অনেক কাকুতি মিনতি করলাম বুঝলেন

বললাম,

কে দিলো দরজায় তালা আমার?

খুলে দাও না একবার

পায়ে পরি তোমাদের,

ঘরে যেতে দাও আমাদের

খুলে দাও,খুলে দাও দরজাটা

দয়া করে দরজাটা খুলে দাও

এই এত রাত্রে আমি এই তিন সন্তান নিয়ে কোথায় যাবো ?

ওরা তো এই বংশেরই রক্ত আমাকে নয় নাই মানলেন

কিন্তু কি দোষ ওদের ?

উত্তরে শুনলাম,

যখন সন্তানই রইলোনা তখন কি পরিচয় তোমাদের

যে দেবরকে নিজে রেঁধে খাইয়েছিলাম,

দিয়েছিলাম সন্তান স্নেহ

সেই দরজায় তালা দিয়ে,

আমাদের বের করে দিলো


তৃতীয় অধ্যায়


তিন সন্তান নিয়ে একটা ভাড়ার ঘরে উঠলাম,

বিধবা আমি কোনো মতে একটা চাকরির সন্ধান পেলাম

একা যদি হতাম তাহলে হয়তো কবেই যেতাম মরে,

শুধুই সন্তান স্নেহ আমায় রেখেছিলো ধরে

সন্তানগুলির মুখ যখনই ভেসে উঠতো চোখে,

মনে হলো জীবন বলল আমায় আরেকটা সুযোগ দিলাম তোকে

সকাল হলেই শুরু হতো আমার ঘড়ির সাথে লড়াই,

সংসারের কর্ম সেরে আমি অফিস যাই

সাতটা পাঁচের লোকাল ট্রেনে আমার অফিস যাওয়া,

অফিস ফেরত বাজার করে,তাদের জন্যে খাবার নেওয়া

ওদের কথা ভেবেই আমার এতো পরিশ্রম করা,

বড় মেয়ের হাতের প্রথম রান্না আমার মন কাড়া

অফিস যখন আমায় কাজ করাতো,

তখন বড় হয়ে আর একজন ভাই,বোনেদের পড়তে বসিয়ে,স্নান করিয়ে খাইয়ে দিত

ওদের বড় হওয়াটা একটা স্বপ্নের মত ছিল আমার কাছে,

পড়াশুনা শেষের পর বিয়ে দিলাম ওদের দায়িত্ব নিয়ে সাথে

কিভাবে যে সময় এতোটা পেরিয়ে গেলো,

বার্ধক্য যেন জীবন অনেক তাড়াতাড়ি নিয়ে এলো


আজ আমি শুধু আর মা নই,

আজ আমি কারো দিদুন আবার কারোর ঠাম্মিও

হ্যা ঠিকই শুনেছেন,

আমার ছানারা বিয়ের পর আজ

ছোট্ট ছোট্ট ছানাদের মা বাবা হয়েছে

বড়জন এক কন্যা সন্তানের মা হয়েছে,

মেজজন এক পুত্র সন্তানের বাবা হয়েছে,

এবং ছোটজন এক কন্যা সন্তান ও এক পুত্র সন্তানের মা হয়েছে


আমার আর কি,

থাকি নিজের মতো

সন্তানেরা নাতি নাতনিদের নিয়ে দেখা করে যায় সময় মতো


শুধু একটাই প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে আমার জীবনের কাছে,

আজও কি কোনো অধ্যায় তোমার অসম্পূর্ণ হয়ে আছে ???


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama