আমার স্বাধীনতা দিবস
আমার স্বাধীনতা দিবস
আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আজ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। হঠাৎ আমার এক পাকিস্তানি বন্ধু Happy Independence Day বলে জরিয়ে ধরলো। তখন মনে পড়লো আজ স্বাধীনতা দিবস। তারপর যখন ঘরে এসে মোবাইলটা ঘাটলাম। তখন দেখলাম একদল লোক, নিজেদের ডিপিতে ভারত পতাকা ছবি দিয়েছেন। আরেক দল লোক কিছু দেশপ্রেমিক এর ছবি দিয়েছেন। আর একজন দেখলাম লিখেছেন, ডিপি বদলে স্বাধিনতা দিবস পালন করে লাভ নেই , শাষক বদলাও আসল স্বাধীনতা পেতে।
শ্রদ্ধা বোধহয় ভাগ হয় না। শ্রদ্ধায় কোন রঙ হয়না। তবু ও বুঝতে অসুবিধা হলো না দেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন নিয়ে রাজনৈতিক দল গুলো , শক্তি পরীক্ষা খেলায় মেতে উঠেছে। তবে আমি ঠিক এখন আর এই রকম ভাবে স্বাধীনতা দিবস কিংবা প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করতে উৎসাহিত হতে পারি না মন থেকে । তবে ছোট বেলায় হতাম। কারণ পতাকা তোলার পর , জিলিপি খাওয়ানো হতো যে।
কিন্তু সব আসতে আসতে বদলে গেলো আমার স্বাধীনতা দিবস পালন ধারণা টা ।দোলন দিদি মুনি আসার পর সব বদলে গেলো আসলে। অঙ্কের শিক্ষক হিসাবে এসেছিলো। কিন্তু ইতিহাস, ভুগোল, সাহিত্য সব পড়াতো। ও কখন গল্পের ছলে আমাদের সিলেবাসের পড়া গুলো শিখিয়ে দিতো। আবার সিলেবাসের বাইরে জিনিস পড়াতো। ও বুঝিয়ে ছিলো পড়াশোনা করে ডিগ্রী নেওয়া শুধুমাত্র ভালো চাকরি পাবার জন্য নয় । অনেক কিছু অজানা কে জানা তে পারি আমরা পড়াশোনা করে।
আমাদের গ্রামের লাইব্রেরী টা দিদিমণি সাজিয়ে তুলেছিল। আমরা ওকে আমাদের পরিবারের একজন ভাবতাম তাই সবাই মাষ্টার , দিদিমণি কে আপনি উনি, করলে আমরা দোলন দিদি বলেই ডাকতাম ওকে। আমি উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়া পর ও জোর করে শহরে পাঠিয়েছিলো। আমাকে শহরে পড়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। কিন্তু ওর বিপদের সময়, আমরা কেউ ওর পাশে দাঁড়াতে পারে নি। ওর অপরাধ ছিলো, আমাদের জঙ্গলটা ও অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করার আবেদন করা। ও গ্রীন ট্রাবুন্যালের কাছে বারবার আবেদন করেছিল জঙ্গলটাকে অভয়ারণ্য ঘোষণার জন্য। তাই প্রথমে অস্ত্র পাওয়া গেছে বলে ওকে গ্রেফতার করা হয় । পরে বলা হলো, ও দেহব্যবসা করতো। ও জেলের মধ্যে আত্মহত্যা করেছিলো।
দিনটা আমি ভুলি নি। কারণ ঐ দিনটা দিদি মুনির অনুরোধে আমি শেষবারের মতো গ্রামে স্বাধীনতা দিবস পালন করছিলাম, গ্রামের বাচ্চাদের নিয়ে। ও বললো তো " এই একটা দিনতো বাচ্চারা জানুক বলিউড এর খানরা আমাদের দেশের আসল হিরো নয়"... জানেন আমরা চেষ্টা করেলে হয়তো স্বীকৃতি পেয়ে যেতো আমাদের জঙ্গলটা ও অভয় অরন্য হিসাবে। কিন্তু সাহসে কোলাই নি। তবে অনেক হিসেবে নিকেষ ছিলো এর পিছনে। যদি সেটা না করতাম, আমার আর বিদেশে আসা হতো না। এরকম লাইফস্টাইল থাকতো না।
আজ আমাদের জঙ্গলটা নেই অনেক রিসোর্ট হোটেল হয়েছে। আমরা আমাদের জমি বেচে বিদেশে আসতে পেরেছি আরকি চাই। আপনি বলবেন অভয়ারণ্য হওয়াটা জরুরী ছিলো। কিন্তু অভয়ারণ্য হবে না হবে সেটা ঠিক করে বড় বড় কর্পোরেটরা। উদাহরণ চাই।
এই কয়দিন আগে মহারাষ্ট্রে একনাথ সিন্ধে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে প্রথম যে অর্ডারটা দিয়েছে, -- মুম্বইয়ের ২০০০ একর এর "আরে বনাঞ্চল"-এই মেট্রোর কারশেড হবে। আরে-র আদিবাসী এবং মহারাষ্ট্রের পরিবেশপ্রেমী মানুষদের দীর্ঘদিনের প্রতিবাদের ফলে ২০২০ সালের অক্টোবরে মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব আরের ৮০০ একর -কে "সংরক্ষিত বনাঞ্চল" বলে ঘোষণা করে, এবং মেট্রো কারশেড প্রকল্প সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। উল্লেখ্য, আরের বনাঞ্চলে শুধু কারশেড নয়, প্রাইভেট শহর (রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্স, এয়ারপোর্ট ইত্যাদি নিয়ে) হবার পরিকল্পনা ছিল। মেট্রো কারশেড হলে সেসব হবার জট খুলত। আরের ৮০০ একর "সংরক্ষিত বনাঞ্চল" ঘোষণা করে দেবার ফলে সে গুড়ে বালি পড়ে। তাই হয়তো সরকার বদলে গেলো।
দোলন দিদিমণি তাই হয়তো সেদিন দেহ ব্যাবসায়ী বদনাম নিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিলো। কারণ ও প্রতিটা পদক্ষেপ অসাধু ব্যবসায়ীদের বিপদে ফেলছিলো। তাই আমি স্বাধীনতা দিবস পালন করি না কারণ এদেশে স্বাধীনতা আমাদের জন্য নয় ।
জানেন গত পাঁচ বছরে কর্পোরেট লোন মুকুৰ (written off) হয়েছে বার্ষিক ২ লক্ষ কোটি টাকা করে। মুকুব হবার অপেক্ষায় প্রতি বছর জমছে এর প্রায় পাঁচ গুণ করে বাজে লোন (MPA) ।2022 সালের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবাজেট ৮৬ হাজার কোটি, শিক্ষাবাজেট ১ লক্ষ কোটি, বিদ্যুৎত্ৰাজেট ১৬ হাজার কোটি, কৃষিবাজেট ১.৩ লক্ষ কোটি, টেলিকম বাজেট ৮৫ হাজার কোটি, ক্রীড়াবাজেট ৩ হাজার কোটি, পরিবেশবাজেট ৩ হাজার কোটি টাকা। তাহলে হিসেবে করে দেখুন প্রমানিত হবে খুব সহজেই আপনার আমার চেয়ে সরকার চোখে, আম্বানিরা অনেক বেশি গরীব। কারণ কোন দিন তো কৃষকদের শস্য বেশি দামে কেনার জন্য ওদের কাছে পয়সা থাকে না।
এদেশে চোর নেতাদের জন্য ছাত্ররা পথে নামে। কিন্তু দলোন দিদিমুনি বাঁচাতে, কোন ছাত্র এগিয়ে আসে না। নিরব দর্শক মতো নাটক দেখে। আর সোস্যাল মিডিয়াতে বড় বড় কথা লিখে , নিজেদের বড় দেশপ্রেমিক প্রমানিত করার অক্লান্ত চেষ্টা চালিয়ে যায়।