সবচেয়ে বড়ো মিথ্যে
সবচেয়ে বড়ো মিথ্যে


আমার সখা শ্রীকৃষ্ণ
জানি না কিভাবে আমার কথা
মুখ ফুটে না বলতেই বুঝতে পারতো ,
ঘন্টার পর ঘণ্টা আমার সাথে কথা বলতো ।
দুনিয়াদারির কথা , প্রেমিকা রাধার কথা ,
ব্রজের নানা কথা , গোপিনীদের কথা ,
এসব কথা আমাকেই তো বলতো ।
কৃষ্ণার সখা শ্রীকৃষ্ণ, যে আমার লজ্জাকে
সম্পূর্ণ নিজের লজ্জা মনে করেছিল ,
অন্ধ রাজার রাজসভায় নিবারণ করেছিল
আমার চীরহরণের বীভৎস লজ্জা ।
দূর্যোধনকে আমি শুধুই
তার সামনেই পরাজয় স্বীকার করতে দেখেছি ,
কতো প্রচেষ্টাই করেছিল তাকে বন্দী করার ।
কিন্তু যার জন্মই কারাগারে
তাকে বন্দী করে কার সাধ্য ?
সামনে আর কোনো পথ নেই
কোনো পথ কোনোদিনই ছিল না ,
তাকে যে পরাস্ত করতে চেয়েছে
তাকেই উল্টো পথে ফিরতে হয়েছে
মেনে নিতে হয়েছে পরাজয়ের অক্ষমতা ।
এখন শুধু হিমালয় আমাকে
আশ্রয় দিক নিজের বক্ষে ,
অন্ধ না হয়েও অন্ধত্ব আনুক তাদের চক্ষে
যারা নির্বিকারে দেখেছিল
আমার বক্ষের বিভাজিকা ,
বক্ষদেশ থেকে সরে যাওয়া
রাজবধূর অস্তায়মান ব্রীড়া ।
ক্রুর শকুনির দাবা খেলার
একটি অগ্নি স্ফুলিঙ্গ
দাবানল হয়ে গ্রাস করলো
হস্তিনাপুরের রাজবংশকে ,
পুড়িয়ে ভস্ম করে দিল
কৌরবদের অস্তিত্
বকে ।
যজ্ঞের কুন্ড থেকে জন্মেছি
আমি যাজ্ঞসেনী ,
কৃষ্ণকে জানাই ধীক্কার !
সেতো অন্তর্যামী , সৃষ্টির পালনহার ,
দিব্যচক্ষু দ্বারা পূর্বেই দেখেছিল
আমার আব্রুহণন ,
তবুও জনসমক্ষে ঘটতে দিয়েছিল
পূর্ব প্রতিরোধটুকু করেনি সে ।
ভরত রাজবংশীর কুলবধূ
আমি মহাভারতী ,
দৃষ্টিহীনদের সভায় দাঁড়িয়ে
করছি এই অঙ্গীকার -
যে রাজ্যে ধূলোয় মেশে সতীত্ব ,
যে রাজ্যে উন্মোচিত হয় নারীর আভূষণ
সেই রাজ্যের পতন অবশ্যম্ভাবী ।
পঞ্চ স্বামীকে বরণ করে
আমি পঞ্চমী ,
কিংকর্তব্যবিমূঢ় আজ এ রাজসভায় ।
সকলেই রক্ষা করেছেন নিজ নিজ ধর্ম ,
ভাতৃমান রক্ষাধর্ম , রাজধর্ম , সখ্যতা ধর্ম ,
সত্য ধর্ম , জয় - পরাজয় ধর্ম , নীতি ধর্ম
আরো , আরো অনেক ধর্ম ।
কিন্তু স্ত্রী ধর্ম , স্ত্রীর মান রক্ষা ধর্ম ,
কুলবধূর মান রক্ষার ধর্ম ,
নারীর আব্রুরক্ষার ধর্ম
এসবই চাপা পড়ে গেছে
রাজসভার সকলের নিজস্ব ধর্মরক্ষার স্বার্থে ।
ধর্ম , ধর্ম , ধর্ম
তবে এই ধর্মই কি রাজসভায়
নারীশোষণের ,বস্ত্রহরণের অধিকার দিয়েছে,
হয়তো বা দিয়েছে , হয়তো নয় ।
সমগ্র মনুষ্য সমাজের কাছে আমার
এক করুণ আর্তি ,
আছে এর কোনো উত্তর ?
কি বলে আপনাদের মনুষ্য ধর্ম ?