সান্ত্বনা
সান্ত্বনা
আমি একবারও ভাবিনি যে --
আমার দুঃখে তুমি চোখের জল ফেলবে।
দুঃখ-কষ্ট নিয়েই তো জীবন,
তাই,
এতো দুঃখেও আমার কান্না আসে না।
ভাবি --
দুঃখ তো একদিন কাটবেই,
কষ্ট তো একদিন নিজের ওপর আস্থা হারাবেই --
তো, সেদিন না হয় হাসবো।
সেদিনই এই পৃথিবীটাকে নতুন করে ভাববো।
মানুষের হৃদয় -- সে তো গলবেই;
দুঃখের গনগনে আঁচে সে তো
মোমের মতো নিজেকে বিসর্জন দেবেই;
তাই বোধহয় পারোনি তুমি নিজেকে সামলে রাখতে --
কি নরম মন যে তোমার।
মনকে শক্ত বাঁধতে শেখোনি আমার মনের মতো।
আমি রয়েছি কেমন শান্ত --
সেই আদি ও অকৃত্রিম জড়,স্থবিরের মতো
নিরুদ্বিগ্ন, নিরুচ্ছ্বাস, নিরুদ্বেল।
কত ঝড়, কত ঝঞ্ঝা গেছে বয়ে।
মহীরুহের মতো অটল, অনড় হয়ে
সেই কবে থেকে আছি দাঁড়িয়ে।
তুমি ভয় পেয়েছো -- তাই বলছো
মহীরুহেরও তো পতন ঘটে বায়ু হিল্লোলে।
আমি স্বীকার করি।
কিন্তু কখন ঘটে সে ঘটনা জানো কি --
মহীরুহের যখন আর দাঁড়াবার থাকে না শক্তি,
পায় না সে কারো সাহায্য,
যখন সে হয়ে পড়ে ক্লান্ত, শ্রান্ত, অবসন্ন;
তখনই বিক্রম দেখিয়ে যায় বাতাস।
আমার সে ভয়টা কোথায় --
পায়ে জোর পাই না সে কথা ঠিকই,
শ্রান্ত হয়ে পড়েছি সে কথাও মানি,
সে শ্রান্তি দূর করতে তুমি তো আছো।
তোমার স্নেহ, প্রীতি, আবেগ, ভালোবাসা দিয়ে
তোমার শক্তি, তোমার উদ্যম, তোমার উৎসাহ দিয়ে
সোজা করে রেখেছো আমায়।
তোমার ছোঁয়ায় আমার ওপর
ঝঞ্ঝার দাপট গেছে কমে,
তুমি আমায় আড়াল করে আছো।
তুমিই দাও শক্তি, জোগাও প্রেরণা।
আমি সাহস পাই মনে, শরীরে শান্তি।
কিন্তু, তুমিই পাচ্ছ ভয়;
ভাবছো, কতদিন আর এমনি করেই আগলে রাখবে।
চিন্তার কিছু নাই --
দুঃখ, দৈন্য তো সর্বত্রই;
বেদনা তো জীবনের সাথী;
তবু --
তার মাঝেও তো সাহস করে নিতে হয় --
মুখের হাসিটুকুও হয় রাখতে।
দেখো, দুঃখ টা আমার, আর
তোমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছি আমিই,
যেন তুমিই চিরদুখী।
আসলে, তুমি যে ভাগ করে নিয়েছো আমার দুঃখ,
লাঘব করেছো আমার কষ্টে,
এই উপলব্ধিই আসেনি আমার মনে।
হয়তো তোমার চোখের জলই আমার সান্ত্বনা;
তবুও, আমার দুঃখে তোমার কান্নায়
দিশাহারা আমি, তোমাকে শোনাই অভয়বাণী;
ভয় নাই, আর ভয় নাই;
কষ্টেরে মোরা ভাগ করে নিয়ে সুখেই থাকিতে চাই।

