রাধিকাপুর
রাধিকাপুর
ছোটোবেলায় ফুট ওভার ব্রীজটা পেরোতাম,
কারোর না কারোর হাত ধরে ।
দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকতো ফাঁকা ফাঁকা ঐ
কাঠের ধাপগুলোর ওপরে ।
তখনও জানিনা রেল লাইন গুলো,
চলে গেছে যে কতটা দূরে।
সময়ের সাথে কাঠের ধাপ উঠে গেল,
পুরো ফুট ওভার ব্রীজটা কংক্রিট হলো।
ওপরে ওঠার পর কেন জানি না,
পূর্ব দিকে তাকাতেই লাগে বেশি ভালো।
পশ্চিমে যেন দু-এক বার তাকালেই হলো !
জেনেছি ট্রেন গুলোর গন্তব্য পূর্বে রাধিকাপুর,
আর পশ্চিমে যায় কাটিহার।
বাবা মায়ের সাথে বারসই থেকে,
ট্রেনে করে তখন কলকাতা গেছি একবার।
বর্ধমানের মিহিদানাও ভোলাতে পারেনি মন,
পূর্ব দিকে রেলে করে বেড়াতে যাবার চিন্তা অনুক্ষণ।
আঠারো বছরে কলেজে যখন পড়ি,
নিজেকে তো তখন প্রাপ্তমনস্ক মনে করি ।
বন্ধুদের কাছে বললাম খুলে, আমার মনের ব্যাথা,
ওরা সবাই বললো এ আর এমন কি কথা !
একদিন সবাই মিলে গেলেই হলো
রাধিকাপুরে পিকনিক করতে অথবা বেড়াতে !
সেই মোতাবেক মনের খুশিতে,
বলি মায়ের কাছে গিয়ে এই কথাটা, ফিরে বাড়িতে।
মা তো রেগে আগুন ! গিয়ে কলেজে,
আমার নাকি গিয়েছে এবার গজিয়ে দুটো ডানা,
কেন আমাকে দেবেনা যেতে, সেটা আমিও বুঝিনা।
মনের দুঃখ মনেই চেপে রাখি, অপেক্ষায় থাকি।
অনেক বছর পরে, সপরিবারে,
দুর্গা পুজোয় গিয়েছি আমার স্বপ্নের রাধিকাপুরে।
ট্রেনটা ওখানে গিয়ে একেবারেই থেমে গেল,
এখন নাকি ওর রেস্ট নেবার সময় হলো।
সারাদিন এবার পড়ে পড়ে ও ঘুমাবে,
সন্ধ্যের আগে আমাদের সাথে নিয়ে তবে ফিরবে।
স্টেশন থেকে বেরিয়ে অটোতে চেপে বসলাম,
অটো আমাদের নিয়ে চলা শুরু করলো উদগ্রাম।
শ্বশুর মশাইয়ের কাছে শুনেছিলাম ,
দাদামশাই এখানকার টোলেই নাকি ছিলেন পন্ডিত!
ছাত্র পড়ানোর তরে এখানেই থাকতেন,
ছেড়ে এসেছিলেন নারায়নগন্জে নিজেদের ধাম।
দুর্গা ঠাকুরের সপ্তমি পূজোর আরতি হচ্ছিলো তখন,
সামনে সামীয়ানার নিচে বসে করছিলো মন কেমন।
ঘন্টা দুয়েক সময় যাবার পর,
তিনজনে মিলে আরও পূবে হাঁটা লাগালাম।
পাড়ার গাছপালার ভেতর দিয়ে গ্রামটা পেরোলাম !
এবারে যত দূরে চোখ যায় শুধু ফসলের মাঠ,
মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়া, যেন এক ফাঁটা ললাট।
অনেকটা দূরে, তবু যায় দেখা,
রয়েছে সীমান্ত রক্ষীরা অতন্দ্র পাহারায়
করিনি ওদের কোনওরকম বিরক্ত, ছিলাম শান্ত,
নাই বা ছুলাম ওদেশের মাটি,
দূর থেকে হলেও দেখা তো আমার হলো এই সীমান্ত।
