প্রাণবায়ু
প্রাণবায়ু
ঠাকুর,
এতদিন বলতাম "অসীম কৃপা তোমার",
মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে স্বস্তিতে পরিবার।
যা দিয়েছ তাতে আমার মোটামুটি দিন চলে,
দুবেলার খাবার, পরনের কাপড়, সবই তুমি দয়া করে দিলে।
বিশেষ চিন্তা নেই প্রাণবায়ু আছে যতক্ষণ,
চাঁদ সূর্যের মতোই তুমি আছো সর্বক্ষণ।
ছোটখাটো কাজকর্ম দিনের খোরাকি মেটায়,
চেয়েচিন্তে ধারকর্যে বাকিটা চলে যায়।
বড়ছেলেটা একজাম দিলো একটা কাজ পাবে বলে,
ছোটটা তো খেতে পায় রোজ ইস্কুলে গেলে।
ঠাকুর,
তোমায় বিশ্বাস করে মাসের সঞ্চয়টুকু মন্দিরে দিলাম,
মনে মনে বড়োই শান্তি পেলাম।
ওরা বলে গেল, এখন থেকে নাকে মুখে চাপা দিতে,
ছেঁড়া গামছাটা গলায় জড়িয়ে মুখের উপর রাখি পেতে।
বড্ড গরম পড়েছে এবার, ঘেমে নেয়ে সারা,
সবসময় মুখের ঢাকা রাখা যায়না কো পারা!
কিন্তু ঠাকুর,
এখন আমার এ কি হাল করলে?
প্রাণবায়ুটুকু ছিনিয়ে নিয়ে মেয়েটাকে মারলে!
পড়াশুনা করা ডাক্তার বলে নাকি কেনা বাতাস লাগবে!
শ্বাস নিতে তো পয়সা লাগে না, তাহলে আজ কেন এমন হবে?
হাসপাতালে নোটিস ঝোলা, ফাঁকা কোনো বেড নাই,
মেয়েটা ফুটপাথে শুয়ে মরে গেল তাই।
ছোটছেলেটার পড়া বন্ধ অনেকদিন ধরে,
খাবারের খোঁজে এদিক ওদিক উদাস চোখে ঘোরে।
বড়োটা পালালো মায়ের বালাটা চুরি করে,
কে যেন দেখেছে ওই ভোটের প্রচার ভিড়ে।
বউটা পাথর হয়ে শুধু গাছতলায় বসে থাকে,
কাজ পাইনা আর, আমাকে এখন শুধু মা গঙ্গাই ডাকে।
গিয়েছিলাম কুম্ভমেলায়, সঙ্গে বারোজন,
দেশের রাজা বলেছিল পবিত্রস্নানে হবে দুঃখ মোচন।
পাপমুক্ত হয়ে যেদিন ফিরে এলাম নিজের বাড়ি,
শ্বাস নিতে ভারী লাগে, তাই হাসপাতালে ঘুরি।
এখানে দেখি শয়ে শয়ে লোক মরে রোজ,
হাজারজনের হাহাকার, পরিজন নিঁখোজ।
ভয় পেয়ে বেরোই তোমার পায়ে মাথা রাখবো বলে,
শীতলা মন্দিরটার দরজার শিকলে তালা ঝোলে।
ঠাকুর,
তুমি এবার অন্তত মুখ ফিরিয়ে চাও,
আহার পরিবার জীবিকার সাথে বাতাসও ছিনিয়ে নাও?
দেশের রাজা বলেছে আরো বড় মন্দির হবে,
ঠাকুর,
এখন থেকে তুমি কি শুধু সেখানেই রবে?
