ফটিক চন্দ্র পাল
ফটিক চন্দ্র পাল
রোজের মতোই আজ সকালেও ফটিক চন্দ্র পাল,
হুড়মুড়িয়ে উঠলো বাসে, সিট্ পায়নি কাল৷
একটি ঘন্টা ঠায় দাঁড়িয়ে চরণ দুটি ঢিলে,
খানিক দেরী অফিস যেতে; বস চমকায় পিলে৷
তার উপরে শেষের বেলায় কাজ পড়লো মেলা,
তাড়াতাড়ি ফেরার আশায় শুকনো ছাইয়ের ঢ্যালা৷
ফেরার পথেও ভীড় বাসেতে জীবন জেরবার ,
একটি হাতে ঝুলতে ঝুলতে একটি ঘন্টা পার৷
ক্ষুব্ধ রিক্ত চিত্তে ফটিক বাসের থেকে নামে,
এ জীবন আর রাখবেনা সে; যাবে অমৃত ধামে৷
ভীষণ চেগে তীরের বেগে বাজার পানে ধায়,
কোন দোকানে ফাঁসীর দড়ি কিনতে পাওয়া যায়!
দোকানি বুড়ো শুধায় - বাবু কেমন দড়ি চাই?
ফটিক দেখে ফ্যালফেলিয়ে; বাক্যি বচন নাই |
কটমটিয়ে তাকায় বুড়ো - পাগল টাগল নাকি!
ফুড়ুৎ করে পালায় ফটিক - অন্য দোকান দেখি৷
খানিক বসে ভাবলো শেষে গলায় দড়ি থাক,
ঠান্ডা মাথায় অন্য উপায় খুঁজে দেখা যাক৷
"ছোরা ছুরি, গোলা গুলি আমার কম্মো নয়,
ইঁদুর মারা সেঁকো বিষ একটু যদি হয়"!
যেইনা ভাবা - নতুন জোশে ফটিক তেজিয়ান,
বিষের খোঁজে বিষয় ভুলে, বেগে ধাবমান |
চালাক চতুর ছোকরা বলে, কতখানি চাই?
ইঁদুর, ছুঁচো, গেছো, মেঠো - কারুর ছাড়ান নাই৷
ঘাবড়ে গিয়ে ফটিক চন্দ্র ঘেমে একাকার,
বলে - আমার মতো একটি প্রাণীর যতটা দরকার!
যেইনা বলা!! লাফিয়ে ছোকরা ফটিকচাঁদের পাশে,
পাঁচটি আঙ্গুল সটান বসে তাহার গন্ড দেশে৷
এক চড়েতে ফটিক চাঁদের ছুটলো মরার নেশা,
নতুন সুরে, নতুন ভোরে, বাঁচার নতুন আশা৷
জাঁকিয়ে বসে, ভাবলো কষে, উপায় একটাই,
বাসে উঠে জানলা ধারের সিট্ টা আমার চাই !
যেই ভাবা সেই কাজ ফটিকের; দৃপ্ত শপথ নিলো,
সাত সকালে, সবার আগে, বাস স্ট্যান্ডে এলো |
তড়িঘড়ি ফটিক চন্দ্র বাসে সওয়ার হয়,
লোকজন কম, ফটিক ভাবে - এতো মন্দ নয়!
ফুরফুরে মন, ভাবলো ফটিক, ভালই হলো এতে,
জানলা ঘেঁষে বসলো সেঁটে - খবর কাগজ হাতে৷
ফাঁকা বাসে দুলুনিতে ঘুম আসে দুই চোখে,
উঠলো ফটিক ধড়পড়িয়ে কন্ডাকটর এর ডাকে৷
বললো 'দাদা যাবেন কোথায় ঠাকুর পুকুর পার,
খানিক পরেই পৌঁছে যাবেন ডায়মন্ড হারবার'৷
শুনে ফটিক, দুঃখে রাগে, কেঁদে ফ্যালে প্রায়,
ভুল বাসে তে চড়ে এখন কি করি হায় হায় |
ভূত গ্রস্ত ফটিক চন্দ্র বাসের থেকে নামে,
উল্টো দিকের কোন বাসটা কখন এসে থামে!!
এলো সে বাস খানিক পরে, কোথাও ফাঁকা নাই,
ভীড়ের চাপে চ্যাপ্টা ফটিক - একটি পায়ে ঠাঁই৷
ফেরার পথে ফটিক ভাবে কোনো উপায় নাই,
আজকে আমার যে করে হোক ফাঁসির দড়ি চাই |
ভাবতে গিয়ে চড় খাওয়া সেই গালটা করে জ্বালা,
মরার ভাবনা মাথার থেকে এক্ষুনি তুই পালা৷
এই পৃথিবী অনেকটা সেই ভীড় বাস টার মত৷
ঠ্যালাঠেলি গুঁতোগুঁতি, তবু চড়ছে জীবন কত !!
তাইতো আজ খোশ মেজাজে ফটিক চন্দ্র পাল,
একটি পায়ে ঠায় দাড়িয়ে শিস দিয়ে গায় গান !!
পুনশ্চ: কবিতা এবং মূল চরিত্রের নাম শ্রী সত্যজিত রায়ের 'ফটিক চাঁদ' ছবিটি থেকে নেওয়া ৷